Monday, October 6, 2025







“মেঘনাদ”পর্ব ৪…

“মেঘনাদ”পর্ব ৪…

এইবার আমার ঘুম সকাল ছয়টায় ভাঙল। আজ কলেজে নয়টার আগে যেতে হবে বিধায় আমি তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে আমার ভাগের খাবার টমিকে খাইয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। যতদূর জানি, ওই জায়গাটা হিংস্র প্রাণীর কারণেই পরিত্যক্ত পড়ে আছে। ওখানে আলো দেখার তো প্রশ্নই আসে না। আমি যথারীতিতে জঙ্গলের ডানপাশের গণ্ডি পেরিয়ে বামপাশের দিকে এগুতে লাগলাম। আলিয়া কাল রাগের ছুটে এতদূর এসেছিল?
আমি যখন ওই জায়গায় পৌঁছলাম, তখন থমকে দাঁড়ালাম। এখানে একটি সুন্দর পরিপাটি বাড়ি আছে। পাশে ছোটখাটো একটি গ্যারেজ। জঙ্গলের ভেতরই কেন এসব.. হঠাৎ সাবরিনার কথা আমার কাছে মনে পড়ল, আমাদের সবচেয়ে কম বয়সের পূর্বপুরুষ। পরী জগতের সর্দারের পর তিনিই প্রথম এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, তাঁর ভালোবাসাকে খুঁজতে। তিনি আদিলকে পেয়ে যান। কিন্তু তারই মাঝে কিছু হিংস্র লোকের কারণে তার জীবনে বিপদ নেমে আসে। সাবরিনা প্রতিকূলতা পার করে স্বামীকে নিয়ে এরকমই একটি জঙ্গলে বাড়ি বেঁধে বাস করতে শুরু করেন। সাবরিনা আরও অনেক বিপদে পড়েছিলেন। মায়ের কাছে শুনেছি, দুইবছর আগে তিনি পরী জগতে ফিরে যেতে পেরেছেন। সেই সঙ্গে তার মৃত স্বামীর আত্মাকেও শরীরে প্রবেশ করিয়ে সর্দার জ্বিনের রূপ দান করেছেন। শুনেছি, তাঁদের মেয়ে সাবিলাকে নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সে অর্ধপরী এবং অর্ধমানব সন্তান। তাকে আকাশে নিয়ে যেতে সর্দার অক্ষম হওয়ায় জঙ্গলের বাবার বাড়িতেই জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন-যাপন করতে। এই বাড়ি, ওই হিংস্র প্রাণী এসবকিছু তো তাদের ওই ঘটনার সাথেই মিলে। সাবরিনাদের কথা ভাবতে ভাবতে দেখলাম, আবির স্যার বাসা থেকে বেরিয়েছেন। তিনি এখানেই থাকেন? ওহহো, ক্লাসের মধ্যে অনেকবার তার স্ত্রীকে নিয়ে তাকে চিন্তিত হতে দেখেছি। তবে তিনিই কি সেই সাবিলার স্বামী? তিনি সম্ভবত কলেজের জন্যই বেরুচ্ছেন। ইশ, কলেজের সময় হয়ে গেল। আমি চিন্তিত হয়ে বাসায় চলে এলাম।
আমার আজকের কলেজের সময়টা খুবই খারাপ গেল। ভাবতে লাগলাম, পূর্বপুরুষদের মাঝে একজন সাবরিনা যে কিনা সর্দারের সাথে থাকে, তাঁর এখানে আসা-যাওয়া থাকলে আমার ধরা পড়ার চান্সেস কতটুকু? কী সম্ভাবনা আমি ধরা পড়ব না? তার শক্তি পাওয়া সাবিলাই বা কি আমার জন্য বিপদ বয়ে আনবে না? আর কয়েকটা বছর যদি পৃথিবীতে থাকতাম ভালো হতো। আকাশের জায়গাটা আমার ভালো লাগে। সবসময় একরোখা রঙই দেখতাম। যদি আমি নিজেকে বাঁচাতে চাই, তবে এই জায়গাটা শীঘ্রই ত্যাগ করতে হবে। কেননা আমরা নিজেদের মানুষের মতো করে তৈরি করতে পারলেও নিজেদের পুরোপুরি মানুষের ন্যায় দেখাতে পারি না। উৎকৃষ্ট নমুনা হলো, আমার রূপ। কতই না এর তীব্রতা কমিয়েছি! তবু স্বর্গীয় একটা ভাব রয়েই গেছে।
অচিরে আমি এই চিন্তা থেকে কিছুটা রেহাই পেলাম বিকালে সাঈদের ফোন পেয়ে। তারা সবাই আলিয়ার বাসায় গিয়েছে। পুলিসেরা ইনভেস্টিগেশন শুরু করছে। সেদিন পার্টিতে উপস্থিত থাকা প্রতিটা সাক্ষিকে আলিয়ার বাসায় ডাকিয়েছে। গ্লানি মুছে যাওয়ার জন্যই আমি ওখানে গেলাম।
গিয়ে যখন কয়েকটা ইন্সপেক্টরের মাঝে আবির স্যারকে দেখলাম, তখন আমার মাথায় পুনরায় আগের আতঙ্কটা জাগ্রত হলো। তার স্ত্রী আমার মতোই। এদিক থেকে তিনি আমায় সন্দেহ করতেই পারেন। এরপর আমি আবারও দিশাহারা হয়ে পড়লাম, যখন শুনলাম, আরিয়ান নামে যে আসিয়ার কেস হেন্ডেল করবে, আবির তারই আপন ভাই। বিপদ আমাকে দেখি চারিদিক থেকে ওতপ্রোতভাবে ধরেছে! যদি এই জায়গা ত্যাগ করি, তবে কেসের দিক থেকে এরা আমায় সন্দেহ করবে। যদি থাকি, তাও সমস্যা।
যারা এখানে এসেছে, তারাই সেরাত পার্টিতে ছিল। কারও মস্তিষ্কের বর্তমান চিন্তা পড়ে কোনো সন্দেহ হলো না। আজাদ নামে আলিয়াদের এক প্রতিবেশী আলিয়ার বাবাকে বললেন, ‘তুমি তো জানো, আবির লাশটা কোথায় পেয়েছে। তোমরা হয়তো মনে মনে সন্দেহ করতেই পার, আবির জঙ্গলে কী করছিল। সেই কেন লাশটা পায়। আসলে ওরা দু’জন আমার খুবই পরিচিত। জঙ্গলের কিছু অংশ আমিই ওদের দিয়েছি। সেই তাগিদে আবিরের ওইদিকে যাওয়া। আবিরকে সন্দেহ করো না। আর ও আরিয়ানের সাথে এই কেসটা দেখবে।’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

আঙ্কেল বললেন, ‘আরে না। আমি কেন সন্দেহ করব? বরং ওর কাছে আমি আগেই শুকরিয়া আদায় করেছি, আমার নিখোঁজ মেয়েকে সময় থাকতে আমার কাছে পৌঁছানোর জন্য। নইলে ওই নির্জন জঙ্গলে কে ওকে পেয়ে আনত!’
আজাদ সাহেব বিদায় নিলেন। আবির আর আরিয়ান স্যার রয়ে গেলেন। তারা সবার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। আরিয়ান স্যার আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শেষবার আসিয়াকে রাত কয়টায় দেখা যায়?’
আঙ্কেল আলিয়ার দিকে তাকালেন। সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তার দিকে তার ফুফি বিরক্তিকর ভঙ্গিতে চেয়ে আছেন। হয়তো পরিচিত হতে যায়নি বলেই। তাঁর মস্তিষ্ক পড়া যায় না। আলিয়া হয়তো পিতৃসূত্রেই দুর্বলতা পেয়েছে। আঙ্কেলের রক্তের প্রতি দুর্বলতা না থাকলেও আলিয়া তা পেয়েছে, কিন্তু ভিন্নভাবে। সে রক্তকে ভয় না পেয়ে কাটাছেঁড়াকে ভয় পায়।
আঙ্কেল আন্দাজে বললেন, ‘খাওয়ার পর পার্টি আবারও শুরু হলে।’
‘কয়টায় খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়?’
‘এই, সাড়ে দশটার দিকে।’ তিনি বিশদভাবে ঘটনাগুলো বলছেন, ‘সেইরাত পার্টিতে আসিয়া এসে আমাকে নাচতে নিয়ে যেতে চাইল। আমি গেলাম না। সেসময় আমাদের উভয়ের চোখ এককোণায় পড়ল, মুনতাহার ওপর। ওর বয়ফ্রেন্ড জিসান এবং সে নাচছিল। তারা একে অপরকে পছন্দ করে হিসেবে মুনতাহা ছেলেটির গায়ে পড়ে নাচতেই পারে। কিন্তু আসিয়া আসিয়াই। সে এসব দেখে ফুঁসে উঠে মুনতাহার কাছে যেতে চাইল। আমি ওকে থামাই, বলি, “ওরা যাই করুক, তুই ওদের বাধা দিস না।”
“বাবা দেখুন, জিসানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুনতাহা কীভাবে ওর গায়ে পড়ছে। জিসান এতোটা আনইজি ফিল করবে, আর আমি দেখে থাকব?”
“এটা ওদের বিষয়। তুই ওদের মাঝখানে যাওয়ার চেষ্টা করিস না। তোর অধিকার নেই।”
“বাবা, আপনার কথায় অনেকদিন চুপ করে থেকেছি। প্লিজ, আমায় যেতে দিন। জিসান ওকে ডিজার্ভ করে না। ও যদি জানতে পারে, আমি তাকে কতটা ভালোবাসি, তাহলে সে আমাকে কষ্ট দিতে পারবে না।”
আমার রাগ উঠে। কারণ আমি আমার আর আমার প্রথম স্ত্রী শাহানার মাঝে আরেকজনকে আসতে দিয়ে যে ভুলটা করেছি, তা আসিয়াকে করতে দিতে চাইনি। আমি ওর হাত ধরে থেকেছিলাম। সে যাওয়ার জেদ ধরায় আমার ধৈর্য ফুরিয়ে আসে। আমি রেগে,গিয়ে তার গালে চড় বসাই। সে অপমানে, অভিমানে, রাগে কাঁদতে কাঁদতে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি যদি চড়টা না দিতাম, তবে সে পার্টিতে আমার চোখের সামনে থাকত। এভাবে নিখোঁজ হতো না।’ কথাগুলো তিনি আলিয়াকে হয়তো হুবহুই বলেছিলেন। নইলে কালকে সে আমার প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করত না।
আবির আর আরিয়ান স্যার ওই আন্দাজে সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। আঙ্কেলের বন্ধুরা বললেন, তাঁরা খাওয়ার পর বিদায় নিয়েছেন, ছোটদের ফুর্তি করতে দিয়ে। আমরা আসিয়া সহপাঠীরা বললাম, আমরা এগারোটা পর্যন্ত পার্টিতে মশগুল ছিলাম। আমাদের মাঝে কেবল দুইজন আসিয়াকে তার রুমের দিকে চলে যেতে দেখেছে। আর বেরুতে দেখেনি। আর আলিয়া সেসময় নেচে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় রুমে ঘুমাচ্ছিল। মেহজাবিন, মুনতাহার বড়বোন, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় আলিয়ার ফুফিও এগারোটার দিকে চলে যান। মুনতাহাকে জিসান ভাই পরে দিয়ে আসে। আলিয়ার ফুফাতো ভাই মাহিনকে নাচেও দেখা যায়নি। কিন্তু উপস্থিত ছিল। সে বলল, তার গানবাজনা ভালো লাগে না। মাথা ব্যথা শুরু হওয়ায় সেও এগারোটার আগে বেরিয়ে পড়ল। আঙ্কেল দশটা চল্লিশের দিকে শুয়ে পড়েছিলেন বিধায়, তিনি আর কিছুই জানাতে পারলেন না। কে আসিয়ার রুমে গেল, আসিয়া কবে বেরুল, কীভাবে বেরুল কেউই জানে না। বাসার সবকিছু যিনি দেখাশোনা করে, মজিদ জানাল, সে সবাই যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। বাসার এবং গাড়ির একটি করে চাবি বাবার পর তার কাছেই আছে এবং সে আঙ্কেলের নির্দেশ ব্যতীত কাউকে তা দেয় না। সবশেষে আবির স্যাররা আলিয়ার কাছে বসলেন, কারণ আঙ্কেলের চেয়ে সেই আসিয়ার অতিরিক্ত ক্লোজ ছিল। ইতোমধ্যে তাদের অতিথিরা যেতে শুরু করেছে।
শুরুতেই প্রশ্ন করা হলো, ‘আসিয়া কেমন মানসিকতার?’
আলিয়া কোনো একদিকে হারিয়ে গিয়ে বলল, ‘ও অনেক ভালো। অনেক। আমাকে সৎবোন বলে কখনও ভাবেনি। কারও প্রতি তার হিংসা ছিল না। তবে আপনারা তো জেনেছেন, মুনতাহাকে সে অপছন্দ করত। এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া তার আর কোনো নেগেটিভ দিক ছিল না।’
তাদের সে জানায়, তাদের সম্পর্কের ইতিহাস, আঙ্কেল কীভাবে এখানে এক পরিবার নিয়ে থেকেছিলেন। তার মায়ের মৃত্যুর পর কীভাবে আলিয়াকে নিয়ে এলেন, সংক্ষেপেই সে জানায়।
আরিয়ান স্যার আবির স্যারকে বললেন, ‘কেসটা ততটা সিরিয়াস নয়। সম্পত্তির কারণেই হয়তো খুনটা হয়েছে।’
আলিয়া পাল্টাভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে আমি কেন জীবিত আছি?’
আবির স্যার আরিয়ান স্যারের দিকে তাকিয়ে হাসলেন, ‘ভালো প্রশ্ন করল। জবাব দে।’
‘আজকাল অনেককিছুই সম্ভব। আপন বোনও অনেককিছু করতে পারে। এসবকিছুতে আগে যার অধিকার, যে এতদিন কিছুই পায়নি, শেষেও এখানে এসে দেখল উত্তরাধিকার আরেকটি আছে, সেও তো কাজটা করতে পারে।’
আরিয়ান স্যার আলিয়াকে মিন করলেও সে রাগল না। সে হয়তো ভেবেছে, এটাই ইনভেস্টিগেশনের অংশ, কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখা যাবে না। আমি ওদের কথাবার্তায় মনোযোগ না দিয়ে আবির স্যারের দিকে দিলাম। লোকটা ভাবছে, “আলিয়াকে জিজ্ঞেস করতে হবে, কালকে সে আমাকে আর সাবিলাকে দেখেছিল কিনা। সে জঙ্গলে গিয়েছে। নইলে আমাদের আশেপাশে থাকা রক্ষাকারী পশুগুলো গর্জন করবে কেন?” অসম্ভব একটা মেয়ে! সে তাদের দেখেছে? আহা! আমাদের নিষেধাজ্ঞা… আলিয়া আমার দিকে তাকাল। তার দৃষ্টি লক্ষ করে আবির স্যার আমাকে ডাকলেন। “ছেলেটি অতিরিক্ত সুন্দর! একদম সাবিলার মতো।” আহ্! তিনি সন্দেহ করছেন।
আমি গেলে আবির স্যার আলিয়াকে বললেন, ‘আমি এই পর্যন্ত ঘটা এখানের প্রতিটা ঘটনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে জানলাম, কালরাত তুমি জঙ্গলে গিয়েছিলে। কী দেখতে গিয়েছিলে? ওখানে কী দেখেছিলে?’
‘কিছুই দেখতে যাইনি।’
‘তুমি জানো না, জঙ্গলটা ভয়ানক? ওখানে যে-কারো জান যেতে পারে।’ কাকে বলছেন কথাটা? আলিয়ার রাগ উঠলে সে নিজেকেই চেনে না।
‘রাগের ওপর কন্ট্রোল ছিল না।’ রাইট।
আমাকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি জঙ্গলে ওকে কীভাবে পেলে?’ আলিয়া উৎসুক।
‘আমার সন্ধ্যার পর কাজ থাকে না। প্রতিদিন একটু বেরুই। কাল আসিয়ার লাশ পাওয়া জায়গাটা আমার দেখতে ইচ্ছে করল। আমি ওখানে গিয়ে কিছু দেখলাম না। মানে গর্তটা খুঁজে পেলাম না। তবে কিছু একটা ঝোপ করে পড়ার আওয়াজ শুনলাম। দৌড়ে গিয়ে দেখি, আলিয়া বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে।’ বললাম না, আলিয়ার হৃদস্পন্দন শুনেই তাকে ট্রেস করে পেয়েছি।
স্যার বললেন, ‘আলিয়া, তুমি কী কী দেখেছ?’
‘সাপ, বাঘ, হরিণ, গাছ, মাটি, ঝোপঝাড়,’ হাহাহা.. ‘অন্ধকার, কিছু কিছু জায়গায় চাঁদের আলো… ‘

উভয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ওই বাড়িতে আরিয়ান স্যারও থাকেন। আলিয়া কিন্তু জানতে পারেনি বলে তাদের ভালো লাগল। তারা আজকের মতো এইটুকু জিজ্ঞাসাবাদ করে তাড়ায় চলে গেলেন। কারণ সাবিলা অসুস্থ। আবির স্যার সবসময় তার আশেপাশে থাকতে চান। ভাগ্যিস, আবির স্যারের সুগন্ধটা আমারই অনুরূপ হওয়ায় তিনি আমারটা আলাদা করে বুঝতে পারলেন না। আলিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আবির স্যার কী ভাবছিলেন?’
‘বাপরে!’
‘কী?’
‘তার মস্তিষ্ককে পড়ার কথাটা ধরে ফেলেছ?’
‘বলো না, প্লিজ।’
‘তিনি ভাবছিলেন, কালরাত পশুগুলো কাকে দেখে হিংস্র হয়েছিল এবং কেউ তাদের দেখে ফেলেছে কিনা।’
‘তোমার কিছু উদ্ভট লাগছে না?’
সে রিয়্যাক্ট করেনি। তার মানে তাদের সে দেখেছে। ভাবছে আমার থেকেও কিছু গোপন নেই। ‘পশুগুলো থাকার সত্ত্বেও তারা কীভাবে ওই জঙ্গলে বাস করছেন? আর বাস করলেও এতে লুকানোর কী আছে?’
‘ওইগুলো হয়তো পালিত পশু।’
আমি উদ্বিগ্নতা দেখালাম, ‘তুমি ওখানে আর কী কী দেখেছ?’
সে ঢোক গিলল, ‘স্যারকে তার স্ত্রীর সাথে দেখেছি। কেন?’
‘না, এমনিই। তার স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। দেখনি, কীভাবে এখান থেকে যাওয়ার তাড়ায় ছিলেন? তার স্ত্রীর জন্যই।’
‘সে হয়তো অসুস্থ।’
‘তুমি কী করে জানো?’
‘কারণ সে পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারছিল না।’ অসম্ভব মেয়েটা!
‘ওহ্। মেয়েটিকে একবার দেখতে ইচ্ছে করছে।’
‘কেন?’
কারণ সে অর্ধ-পরী এবং অর্ধ-মানব। তার মতো কোনোদিকে কেউই নেই। আমার ভেতরের অভিমানটা আমি প্রকাশ করলাম, ‘তোমাকে কেন বলব?’
‘সরি। সকালের জন্য।’
আমি হাসিমুখে সুতার ওই অংশটা বের করলাম, ‘আমি আবারও জঙ্গলে গিয়েছি। ওখানে পেয়েছি।’ আসলে কালই পেয়েছি।
‘অসম্ভব… এতবড় জঙ্গলে..’
‘যেখানে তোমার ওড়না, হেয়ার ব্যান্ড পেয়েছিলাম, ওখানেই পেয়েছি। একটু আগেই বলেছি, আমার সন্ধ্যার পর কোনো কাজ থাকে না। কোনো একটা কিছু নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখি।’
সে আগের আংটিটা খুলে ফেলেছিল। আমি এইবার নিজ হাতে পরানোর সাহস পেয়ে তার হাত ধরলাম। কেন যেন আলিয়ার কাছ থেকে আমি বিকর্ষিত হলাম, যেন কিছু একটা আমাকে তার থেকে ঠেলছে। আমি বিকর্ষণটা বেশি সইতে না পারায় কিছুক্ষণ ইতস্তত করলাম। গম্ভীর হয়ে এইবারও সুতাটি পরাইনি, ‘তুমি নিজে পরে নাও।’
‘এইটুকু কিন্তু একটি আঙুলে পেঁচানোর জন্য যথেষ্ট লম্বা নয়।’
‘হুম, তবু এটা সাথে রাখবে।’ আমি সুতাটি সোফায় তার পাশে রেখে চলে এলাম।
আমি বাসায় ফিরে এসে কিছুক্ষণ চিন্তিত রইলাম। আলিয়ার পাশে এর আগে কখনও এতটা অদ্ভুত লাগেনি। সময় যেতে থাকল। একসময় হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠল। রিসিভ করার পর আলিয়া কাঁপা কণ্ঠে গড়গড় করে বলে গেলাম, ‘ধ্রুব, একটু আগে আসিয়াকে দেখেছি আমি। সে পুরোপুরি দেখা দেয়নি। মানে আমার লাগছিল, সে বাতাসের সাথেই মিশে আছে। অর্থাৎ ওর পেছনের বস্তুগুলোও ওকে ভেদ করে দেখতে পারছিলাম।’
কী? এমনটা আমি এর আগে কয়েকদিকে দেখেছি, সাধারণত যারা মৃত্যুর পর অতৃপ্ত হয়ে ফিরে আসে। আমি আতঙ্কিত হয়ে বললাম, ‘তুমি কি নিশ্চিত ওকে দেখেছ?’
‘হ্যাঁ। আমাকে প্লিজ পাগল মনে করে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিও না।’
‘না, না। মানুষের ভ্রম হয় ঠিক, কিন্তু তুমি যেভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছ, আমার লাগছে তুমি সত্যই দেখেছ। আমাদের মাঝে অনেকসময় এমন কিছু ঘটে, যা অকল্পনীয়। অনেক মৃতের অতৃপ্ত আত্মা ফিরে আসে। আমার লাগছে, আসিয়ার আত্মা সন্তুষ্ট নয়। অনেকের মার্ডার হলেও খুনিদের ধরিয়ে দিতে আত্মা ফিরে আসে না। কিন্তু ওর এসেছে। আমার লাগছে, ওর কিছু চায়। তুমি চেষ্টা করো ওকে আনার। হয়তো সে খুনিদের ধরিয়ে দিতে চায়, নয়তো অন্য কিছু।’
সে কেঁদে কেঁদে বলল, ‘আমার বোন হয়তো আর আসবে না। আমি ওকে ধাক্কা দিয়েছি।’
‘হোয়াট? কেন?’
‘আমি জানি না আমার বোনকে আমি কেন ধাক্কা দিয়েছি। হয়তো ভয় পেয়েছি। তুমি কি কাল আমার বাসায় আসতে পারবে?’
‘কাল কি আবির স্যাররা আসবে?’ আমি তার সামনে আর পড়তে চাই না।
‘বিকেলের দিকে স্যার কলেজ থেকে ফিরেন। তখনই হয়তো আসবেন।’
‘ওহ্, আমি হয়তো কলেজে যাব। অন্য কোনো সময় দেখা হবে।’
‘কিন্তু বিকেলে এলে সমস্যা কী?’
‘ওরা ইনভেস্টিগেশন করতে আসবে। আমার ভালো লাগবে না সেসময় গেলে।’
সে চুপ করে গেল।
‘তুমি কলেজে কখন থেকে যাওয়া শুরু করবে?’
‘আমি প্রতিটি জায়গায় আসিয়ার অভাব বোধ করছি। কলেজে যাওয়া হবে না। আমার ওই শক্তি নেই।’
‘আচ্ছা, তবে নিজের খেয়াল রেখো। চিন্তা করো না। আসিয়া হয়তো আবার আসতে পারে।’
ফোনটা সে রেখে দেয়। আলিয়ার আমাকে প্রয়োজন। সে হয়তো আমাকে সবকিছু খুলে বলতে চায়। কিন্তু… তা সম্ভবপর নয়।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ