মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৯

0
1913

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_19
#Writer_NOVA

৭ দিন পর…….

ফিহা এখন অনেকটা সুস্থ। অবশ্য তা সম্ভব হয়েছে আকশির জন্য। এই সাতটা দিন আকশি ফিহার সাথে আঠার মতো লেগে ছিলো।ফিহার কোনটা প্রয়োজন,কি খাবে,ঠিকমতো ঔষধ খেয়েছে কি না?কোথায় যাবে,কি করবো ইত্যাদি ইত্যাদি। সবকিছুর খেয়াল রেখেছে আকশি।১ম ১ম ফিহা বিরক্ত হলেও এখন হয় না।বরং আকশির কেয়ারিং গুলোর মাঝে ভালো লাগা খুজে পায়।একটা কেয়ারিং ছেলে সব মেয়েদের পছন্দ। অতিরিক্ত কেয়ার যদিও বা একসময় বিরক্তর কারণ হয়।তবুও মেয়েরা মন-প্রাণ দিয়ে ঠিকি যত্নশীল ছেলে চায়।ফিহাও তার ব্যাতিক্রম ছিলো না।কিন্তু অনির চিন্তা মাথায় আসার পর বিয়ের চিন্তাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলো।এখন আকশিকে দেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে।এক কথায় বলতে গেলে ৭ দিনে আকশির প্রতি ফিহা অনেকটা দূর্বল হয়ে গেছে।

ল্যাগেজে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে ফিহা।আজ সে চৌধুরী বাড়ি থেকে চলে যাবে।কল করে সাফানকে চলে আসতে বলেছে।ফিহার বর্তমানে ধারণা আকশি যেহেতু ফিরে এসেছে এখন এই বাড়িতে ওর থাকার কোন মানে হয় না। “এই বাড়ি থেকে চলে যাবে”কথাটা ভেবে গতকাল রাত থেকে কান্না করে মুখ, চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। অনিয়া,আনিস চৌধুরী ও টেবলেটকে আর দেখতে পারবে না মনে করে আরেকদফা কান্না করে নিলো।সাফান চলে এসেছে। সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে ফিহার কান্ড কারখানা দেখে মিটমিট করে হাসছে।

ফিহাঃ হাসছিস কেন?
সাফানঃ তুই যখন এদের ছেড়ে যেতেই পারবি না তাহলে ল্যাগেজ গুছচ্ছিস কেন?
ফিহাঃ কে বলেছে আমি যেতে পারবো না।এতদিন চৌধুরী বাড়ি সামলানোর কেউ ছিলো না। তাই আমি ছিলাম।এখন এই বাড়ির ছোট ছেলে এসে পরেছে। আমার কাজ শেষ। অফিস, সংসার,বাচ্চা সব তিনি সামলাবেন।আমাকে তো কোন প্রয়োজন নেই। তাই আমি চলে যাচ্ছি। আমি কারো ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

সাফানঃ কান্না করছিস কেন?

ফিহাঃ অনিকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।অনেক মিস করবো ওকে।তারপরেও চলে যেতে হবে।

সাফানঃ তুই তো মিসেস চৌধুরী। কথাটা ভূলে গেছিস। তোর সংসার,মেয়ে, শ্বশুর ছেরে চলে যাবি।

ফিহাঃ আমি তো সারাজীবন এই পরিচয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তা আর হলো কোথায়?আমরা তো অনেক কিছুই চাই। কিন্তু সব কি পূরণ হয়?

সাফানঃ তুই কি পাগল হলি ফিহু?তুই চলে গেলে অনির কি হবে ভেবে দেখেছিস।ঐ ছোট্ট দুধের বাচ্চাটা তোকে ছাড়া কিছু বুঝে না।তুই চলে গেলে ও মারা যাবে তোর শোকে।

ফিহাঃ একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবি না।আমি চলে গেলে সবাই ভালো থাকবে।আকশি চৌধুরী কোন ভালো মেয়েকে বিয়ে করে নিবে। তাহলেই তো অনি ভালো একটা মেয়ে পেয়ে যাবে।

সাফানঃ তোর মাথার কয়টা স্ক্রু ঢিলে হয়েছে আমাকে বলবি কি?তোর মতো যে অনিকে অন্য কেউ ভালবাসবে তার গ্যারান্টি কি?এমন হতে পারে তার অবহেলায়,অনাদারে,অযত্নে আমাদের মতো করে বড় হবে অনি।তুই কি এটা মেনে নিবি?বাচ্চাটার সাথে তুই এমনটা করিস না।ওর কি দোষ বল?

ফিহাঃ যদি আকশি চৌধুরী না আসতো তাহলে আমি পুরো পরিস্থিতি সামলে নিতাম।কিন্তু এখন তো উল্টো হয়ে গেছে। আমি এই বাড়িতে কোন পরিচয়ে থাকবো বল তো।আমি কারো বোঝা হতে চাইছি না।সুতরাং আমি চলে যাবো।কেউ আমাকে কিছু বলেনি।সবার থেকে অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু আমার মতো মেয়ের কপালে যে এসব নেই রে।আমি কারো দয়া নিয়ে বাঁচতে চাই না।

সাফানঃ এখানে দয়ার কি হলো?তুই এতোদিন যেভাবে ছিলি সেভাবেই থাকবি।

ফিহাঃ না, সেটা তো হয় না।আকশি চৌধুরী বেঁচে না থাকলে আমি মিথ্যা সম্পর্কে নিয়ে এই বাড়িতে থাকতে পারতাম।কিন্তু সে বেঁচে থাকা অবস্থা তার বাড়িতে মিথ্যে পরিচয়ে কি করে থাকি বল?আমি আজ চলে যাচ্ছি এটাই আমার শেষ কথা।তুই যদি আমাকে তোর সাথে নিতে চাস তো চুপচাপ নিয়ে চল।যদি নিতে না চাস তাহলে সাফ সাফ বলে দে।আমার ব্যবস্থা আমি করে নিবো।

সাফানঃ আমি সেটা বলিনি যেটা তুই বুঝেছিস।আমি অনিয়ার দিকে তাকিয়ে তোকে এখানে থাকতে বলেছি।তুই আকশি কে বিয়ে করার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যা।ছেলেটা ভীষণ ভালো। ওকে বিয়ে করলে এসব কিছু তোকে ছারতে হবে না।তুই মিসেস চৌধুরী পরিচয়ে বাঁচতে পারবি।

ফিহাঃ আমি এতদিন তাদের সবকিছু দেখে রেখেছি। সেই কারণে তার ঋণ চুকাতে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে।এছাড়া আর কিছু নয়।

সাফানঃ তোর ধারণা মিথ্যে।

ফিহাঃ আমি এসব ব্যাপারে আর কথা বলতে চাইছি না।তুই বাইরে অপেক্ষা কর আমি আসছি।

সাফানঃ আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর।তুই —-

ফিহাঃ প্লিজ সাফান,প্লিজ। আমি তোর কাছে হাত জোর করছি।তুই এসব কথা আর বলিস না।আমার অনির জন্য অনেক কষ্ট হয়।

🌿🌿🌿

কথাগুলো বলে ফিহা বেডে বসে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পরে।সাফান ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দরজার পাশে অনিকে কোলে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আকশি।ভেতরের সব কথাই সে শুনতে পেরেছে।মনের আকাশে একরাশ বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে।ফিহাকে নিয়ে সংসার করার যে সুপ্ত বাসনাটুকু জেগে উঠেছিল,তা এখন উড়ু উড়ু করে পালাতে চাইছে।সাফানকে আকশি পাঠিয়ে ছিলো ফিহাকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু কাজ হলো না।

সাফানঃ আই এম স্যরি ব্রাদার। আমার কথা মানলো না।ওর ধারণা তুমি ওর ওপর দয়া করেছো।তুমি ওকে বলে দেও না কেন?তুমি যে ফিহুকে ভালোবাসো।

আকশিঃ মেয়েরা নাকি কেউ ভালোবাসলে আগে থাকতে বুঝতে পারে। তাহলে ও কেন বুঝে না।এই কয়েকদিনে আমার সবটুকু দিয়ে আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তু ও বুঝতে চায়নি।সব কথা কি মুখে বলে দিতে হবে?আমার অপরাধ হয়ে গেছে। কাল রাতে যদি ডাইনিং টেবিলে বাবার সামনে ওকে বিয়ের কথা না বলতাম,তাহলে হয়তো ও আমাদের ছেড়ে যেতে চাইতো না।অন্তত পক্ষে আর কিছুটা দিন তো আমার চোখের সামনে থাকতো।বাবা বুঝালো,আমি বুঝালাম,অনির দোহাই দিলাম। তারপরেও কাজ হলো না।ওর আত্মসম্মান এতো বেশি। তাহলে চলে যাক ও। আমি মানা করবো না।আমি কখনও বলবোও না যে আমি ওকে ভালবাসি।ওর যদি আমাদের প্রতি কোন ভালোবাসা না থাকে তাহলে আমার ভালোবাসা তো পুরোই ফিঁকে।কি দরকার মিথ্যে সম্পর্কে বেঁধে রাখার?আমি ওর ওপর কোন দয়া করছি না।আমি ভালোবেসে ওকে বিয়ে করতে চাইছি।সারাজীবন নিজের কাছে রাখতে চাইছি।আমার কথা বাদ দিলাম।কিন্তু অনিয়া, অনি কি দোষ করছে?অনিকে এতবড় শাস্তি কেন দিতে চাইছে ফিহা?ও জানে না ওকে ছারা অনি বাঁচবে না।এখন ওর মায়ের দায়িত্ব কোথায় গেলো?কোন মা কি তার সন্তানকে এই অবস্থায় ফেলে যেতে পারে।তুমিই বলো সাফান।

সাফানঃ ফিহু মনে করছে তুমি ওর প্রতি দয়া করছো।এতদিন তোমাদের সবকিছু দেখে রেখেছে সেজন্য তুমি ওকে বিয়ে করতে চাইছো।কিন্তু ওর ধারণাটা সম্পূর্ণ ভূল।তুমি ওর ভূল ধারণাটা দূর করে দেও।ফিহা,ছোট বেলা থেকে কারো কাছে দায়বদ্ধ হয়ে থাকতে চাইতো না।ওর কথা মেয়ে হয়েছে বলে কি মাথা নিচু করে থাকবো নাকি।ছেলেদের সাথে সমান তালে মাথা উঁচু করে বাঁচবো। নিজের আত্মসম্মানে আঘাত জীবনেও মেনে নেয়নি।

আকশিঃ কিন্তু এখানে তো ওর আত্মসম্মানের কোন কথাই উঠছে না।ওর দিকে যাতে ভবিষ্যৎ কেউ চোখ তুলে তাকাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম।আজ ও বাড়ি থেকে চলে গেলে দুদিন আগে হোক বা পরে সবাই তো জেনে যাবে ফিহা আমার বউ ছিলো না।তখন ওর দিকে সবাই আঙুল তুলবে।কেউ জেনো আঙুল তুলতে না পারে সেজন্য আমি ওকে বিয়ে করতে চাইছি। ওর চরিত্রে কেউ যাতে দাগ লাগাতে না পারে।কিন্তু ফিহা তো আমাকে ভুল বুঝছে।সবচেয়ে বড় কথা আমি ওকে ভালোবাসি।ওকে ছাড়া অন্য কাউকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে আমি ভাবতে পারছি না।

সাফানঃ আমি তোমার ব্যাপারটা বুঝতে পারেছি আকশি।কিন্তু পাগলীটা কেন বুঝতে চাইছে না সেটা আমি বুঝছি না।

আকশি চোখের পানি মুছতে মুছতে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।সাফান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সিঁড়ির রেলিং ধরে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। আনিস চৌধুরীর মন খারাপ করে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে। টেবলেট ও তার পায়ের কাছে মুখ গুঁজে বসে আছে।চোখে পানি চিকচিক করছে।

(আপনাদের সবার হয়তো ফিহার ওপর রাগ উঠতে পারে।কারণ ফিহা একটু বেশি বুঝছে।কিন্তু ফিহা যেহেতু সিউর জানে না আকশি ওকে ভালোবাসে। এমনটা করাই স্বাভাবিক। আর ফিহার মনে ভূল ধারণা জেগেছে যে ফিহাকে আকশি দয়া করছে।তাই ফিহা এ বাড়িতে থাকতে চাইছে না।কিন্তু অনির দিকটা না দেখায় ওর ওপর রাগ করাটাই শ্রেয়।তবে ফিহার পরিস্থিতি নিজেকে দাঁড় করালে আপনার কাছেও নিজের আত্মসম্মানটাই আগে এসে হানা দিবে।পুরোটা পর্ব শেষ করে, একটু ভেবে দেখবেন।এর আগে ফিহার ওপর রাগ করেন না।)

🌿🌿🌿

ফিহা ল্যাগেজ টানতে টানতে নিচে নেমে এলো।সোফার দিকে তাকাতেই সবাইকে দেখতে পেলো।ফিহাকে দেখেই অনি তার ছোট হাত দুটো ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো।যা দেখে ফিহার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে ঝড় শুরু হয়ে গেল।বুক ফেটে চিৎকার আসছে।আনিস চৌধুরীও শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছেন।আদিয়াত কিছু সময় আগে এসেছে। দুই হাত ভাজ করে মুখটা গোমড়া করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। যত কিছু হোক ও তো আকশির বন্ধু। আকশির মনের অবস্থা ওর থেকে ভালো আর কে বুঝতে পারবে।ফিহাকে দেখে টেবলেট খুশি মনে ওর দিকে ছুটে এলো।ফিহা ল্যাগেজ রেখে হাঁটু মুড়ে টেবলেটের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

ফিহাঃ একদম দুষ্টুমী করবি না।সবার খেয়াল রাখবি।সবসময় তাদের পাশে থাকবি।তুই থাকতে অনির যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে তোকে আমি ছারবো না।অনেক রাগ,অভিমান,গাল মন্দ করেছি তোকে।প্লিজ মাফ করে দিস।পারলে আমায় ভুলে যাস।বাবার খেয়াল রাখবি।কখনও তাদের নজরের বাহিরে যাস না।ভালো থাকিস।

ফিহার গলায় কান্না জরিয়ে আসছে।টেবলেটের কাছ থেকে উঠে যেতে নিলে ফিহার হাতটা ধরে বসলো টেবলেট। করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো ফিহার দিকে।টেবলেটের চোখ দুটো জেনো বলছে,কোথাও যেয়ো না আমাদের ছেড়ে। ফিহা অন্য দিকে তাকিয়ে হাতটা ছারিয়ে নিলো।ভীরু পায়ে আনিস চৌধুরীর সামনে এসে বসলো।আনিস চৌধুরী ফিহাকে দেখে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলেন।

ফিহাঃ আমাকে ভূল বুঝবেন না বাবা।আমি কখনও আপনাদের খারাপ চাইনি আর চাইবো না।আজ ১ম আপনার কথায় অবাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। মাফ করে দিয়েন আমাকে।আমি কারো মনে কষ্ট দিতে চাইনি।(চোখ মুছে) ঔষধগুলো ঠিকমতো খাবেন।কোন কাজ করবেন না।যথাসাধ্য রেস্ট নিবেন।অবসর সময়ে অনির সাথে সময় ব্যয় করবেন।শরীরের যত্ন নিবেন।আমি নেই বলে অনিয়ম শুরু করে দিয়েন না।আমি প্রতিদিন ফোন করে আপনার খোঁজ নিবো।আপনার ছোট ছেলের জন্য একটা মিষ্টি চেয়ে বউ এবং অনির জন্য একটা পারফেক্ট মা খুঁজে নিয়েন।

আনিসঃ আমাদের জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না।আমরা তোমার কেউ হই নাকি যে আমাদের চিন্তা করবে।সবার কথা যদি সত্যি তুমি ভাবতে তাহলে আমাদের এভাবে একা ফেলে কখনও চলে যেতে পারতে না।অনিকে নিজের সন্তান মনে করলে আজ ফেলে রেখে চলে যেতে পারতে না।আমরা বাঁচি বা মরি তাতে তোমার কি?তুমি এখন আসতে পারো।

আনিস চৌধুরী রেগে কঠিন গলায় ফিহাকে কথাগুলো শুনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।ফিহা এক দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। চোখ দিয়ে অনরবত পানি ঝরছে।আঁচল দিয়ে চোখ মুছে আকশির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনি ফিহাকে দেখে ভীষণ কান্না করছে।হাত বাড়িয়ে অনিকে নিতে গেলে আকশি দু পা পিছিয়ে গেল।

ফিহাঃ একটি বার আমার কোলে দেন না অনিকে।এক মিনিটের জন্য দেন।আমি তো আর কোলে নিবো না।প্লিজ একটি বার দিন।(কাঁদতে কাঁদতে)

আকশিঃ মিছে মায়ায় জড়িয়ে কি লাভ ফিহা?তুমি তো চলেই যাবে।তাহলে অনির প্রতি দরদ না দেখালেই ভালো হয়।তুমি আমাকে ভুল বুঝলে।একবার আমাদের কথা চিন্তা করলে না।তোমাকে ছাড়া দুধের বাচ্চাটা কি করে থাকবে সেটাও ভাবলে না।আমি তোমাকে বিয়ে করে এই বাড়ির বউ হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে চেয়েছিলাম।অনির মা হিসেবে গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সে সুযোগটা তুমি দিলে না।
এখন অনিকে নিয়ে কি করবে তুমি?বাবার কথাও শুনলে না।তুমি চলে যাও।আর সম্পর্কের দোহাই দিয়ে আটকে রাখবো না তোমাকে।
ফিহাঃ সাফান চল।(কঠিন গলায়)

🌿🌿🌿

ল্যাগেজ হাতে নিয়ে সাফানের সাথে সদর দরজা পেরিয়ে বের হয়ে গেলো ফিহা।মাঝ রাস্তা পর্যন্ত এসে পেছনে তাকালো।নীরব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে আকশি ও আদিয়াত।টেবলেট ছুটে ফিহার পিছু আসতে চেয়েছিলো।কিন্তু আকশি আটকে রেখেছে।অনি প্রচুর কান্না করছে।দোতালার দিকে তাকাতে দেখতে পেলো আনিস চৌধুরী বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। চশমার ফাঁক দিয়ে চোখের পানি মুছছে।
গেইট পার হওয়ার আগে ফিহা শুনতে পেলো অনির কান্নার বেগ বেরেই চলেছে।ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

সাফানঃ আরেকবার ভেবে দেখ ফিহু।তুই ভুল করছিস।এখনো সময় আছে ফিরে যা।এটা তোর নিজের সংসার।আকশি তোকে অনেক ভালবাসে।কোন দয়া দেখাচ্ছে না।
ফিহাঃ আকশি আমায় ভালোবাসে!!(অবাক হয়ে)
সাফানঃ সবকিছু আগে আগে বুঝে যাস আর এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝলি না।পেছনে তাকিয়ে দেখ ও তোর জন্য কান্না করছে।

ফিহা পেছনে তাকিয়ে দেখলো আকশি শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছছে।অবাক চোখে ফিহা সাফানের দিকে তাকালো।
সাফানঃ তুই না অনির মা।কোন মা কি তার মেয়ে কে এভাবে ফেলে রেখে যায়।তুই চলে গেলে ওর কি হবে তুই ভেবে দেখ।অনি ও তো তাহলে আমাদের মতো বেড়ে উঠবে।তুই কি সেটা চাস বল?তুই কি ওর কান্না শুনতে পাচ্ছিস না।অনি তোর মেয়ে। সবার কথা বাদ দিয়ে ওর জন্য থেকে যা।মেনে নে পরিস্থিতিটাকে। আকশির সাথে বিয়ে হলে তুই অনেক সুখী হবি।

সাফান কথা শেষ করে পাশে তাকাতেই দেখলো ফিহা নেই। কারণ ফিহা দৌড়ে অনির কাছে যাচ্ছে। আকশি চোখের পানি মুছে উল্টো দিকে ঘুরেছে রুমে যাওয়ার জন্য। ঠিক তখনি কেউ ছোঁ মেরে ওর থেকে অনিকে কেড়ে নিলো।অনি তার কোলে গিয়ে শান্ত হয়ে গেল।সামনে তাকাতেই আকশি দেখতে পেলো ফিহা অনিকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে সারা মুখে চুমু খাচ্ছে।

ফিহাঃ কি হয়েছে আমার মাম্মামের?একদম কান্না করবে না।আমি যে তোমার মায়ায় সত্যি বাঁধা পরে গেছি।আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।কখনও যাবো না।আমি বাকি জীবন তোমাদের সাথেই কাটাবো।প্লিজ তুমি কান্না করো না।তুমি কান্না করলে আমার একটুও ভালো লাগে না।

টেবলেট সামনে এসে দাঁড়ালো। করুণ চোখে ফিহার দিকে তাকিয়ে পুরে ঘটনা বোঝার চেষ্টা করছে।আকশি অভিমান করে নিজের রুমে চলে গেল।ফিহা মুচকি হেসে অনিকে বললো।

ফিহাঃ তোমার বাবার আমার ওপর ভীষণ রাগ হয়েছে। এবার তোমার দাদুভাই ও বাবার রাগ ভাঙাতে আমার দফা রফা হয়ে যাবে।টেবলেট, তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?তোদের ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না আমি।
আদিয়াতঃ মায়ার বাঁধন ছেড়ে যেতে যখন পারবে না তাহলে এতো কিছু করার কি দরকার ছিলো। এবার আঙ্কেল ও আকশির রাগ ভাঙাতে তোমার মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে।তখন বুঝবে কত ধানে, কত চাল।

ফিহা প্রতি উত্তরে কিছু বললো না।শুধু মুচকি হেসে আদিয়াতের কথা হজম করে নিলো।সাফানকে উদ্দেশ্য করে বললো।

ফিহাঃ সাফান আমার ল্যাগেজটা নিয়ে ভেতরে চলে আয়।আমি এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।শ্বশুর বাড়িতে বাচ্চা ফেলে চলে গেলে সবাই আমাকেই বাজে মেয়ে বলবে।
সাফানঃ আমি আসছি।যাক বাবা,শেষ পর্যন্ত তোর সুমতি খুললো।

না,এই বাচ্চাটাকে ছেড়ে ফিহা কিছুতেই থাকতে পারবে না।আজ একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল।মায়া নামক বস্তুটা থেকে এত তাড়াতাড়ি ছাড়া পাওয়া মোটেও সম্ভব নয়।মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে ফিহা।বাকি দুই মি.চৌধুরীর রাগ কি করে ভাঙাবে এখন তার জন্য।
অনি নিজের ছোট হাত দিয়ে চোখ ডলছে।পাশে টেবলেট অনির শাড়ির আঁচল ধরে বসে আছে।ফিহা খুশি মনে অনিকে জরিয়ে ধরে কপালে কপাল ঠেকালো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে