মাফিয়ার_ভালোবাসা পর্বঃ ০৪
– আবির খান
আবির ক্লাসে ঢুকতেই দেখে মেয়েটা ওর কিছু বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে। আর হাসাহাসি করছে। আবির মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখছে।
সাইমাঃ দোস্ত আবিরকে না আমার প্রথম দেখাই ভালো লাগছে। কিন্তু ও এত্তো জোস ওর জন্য পুরা ভারসিটির প্রায় সব মেয়েই পাগল। উফফ কি যে হ্যান্ডসাম লাগছে না। দেখ আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
মেয়েটা একবার আবিরের দিকে তাকিয়ে ওর বন্ধবীদের বলে,
মেয়েঃ কই আমিতো পাগল হইনি। আমিতো তার কাছে যাই নি।
শিমুঃ তুমি কেন যাবা?? আমরা আশাও করিনা তুমি যাবা আবিরের কাছে। তুমি যে ভদ্র মেয়ে বাবাহ!! দেখতে সবচেয়ে সুন্দরী কিন্তু ছেলেদের পাত্তা দেও না। অবশ্য ভালোই হইছে। নাহলে আমরা কোনো ছেলে পাইতাম নাহ। হাহা।
মেয়েঃ ধুহ তোরা যে কি বলিস। আমার এসব ভালো লাগে না। আমি বরং লাইব্রেরিতে যাই। স্যার মনে হয় আজকে আসতে লেট করবে। কাল বলেছিলো ওনার একটা মিটিং থাকতে পারে। আমি যাই।
সাইমাঃ আচ্ছা আচ্ছা যা। তোর মতো সুন্দরী মেয়ে পাশে থাকলে আবির আমাদের দিকে এমনেও তাকাবে না।
মেয়েটা চলে যাচ্ছিলো। আবিরের কাছে আসতেই আবিরের হৃদয়ে যেন কম্পন ধরে যায়। মেয়েটা একবার আড় চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
মেয়েটা লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা বই নিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে পড়ছে। হঠাৎই পাশ থেকে কারো হাল্কা কাসির শব্দ ভেসে আসে। মেয়েটা তার পাশে তাকিয়ে দেখে আবির বসে আছে। মেয়েটা কিছুটা না অনেকটাই অবাক হয়।
আবির একটু বইটার কভার পেইজটা দেখে বলে,
আবিরঃ উমম…এই গল্পের লাস্টে নায়ক মারা যায়। আর সেই শোকে মেয়েটাও মারা যায়।
আবিরের কথা শুনে মেয়েটা যেন থমকে যায়। কতদিন ধরে বইটা পড়ছিলো আর বেটা সব শেষ করে দিলো। মেয়েটার মুখে রাগের চাপ স্পষ্ট।
আবিরঃ ওহ সরি আমার মনে হয় লাস্টটা বলা ঠিক হয়নি।
মেয়েঃ আপনি আসলেই একটা….আমি কি আপনার কাছে জানতে চেয়েছি এর লাস্টটা?? আপনি বললেন কেন?? বিগত ১ সপ্তাহ যাবত পড়ছি এই গল্পটা। আর আপনি!!!! অনেক রেগে।
একজনঃ আস্তে কথা বলো। এটা লাইব্রেরি।
আবিরঃ সরি সরি। আপনাকেও সরি। আসলে গল্পটা আমার পড়াতো তাই মুখ ফোসকে বেড়িয়ে গিয়েছে। আমি অনেক সরি।
মেয়েঃ হয়েছে আর সরি বলতে হবে না। আপনি এখানে কেন?? চাপা কণ্ঠে।
আবিরঃ Happy Friendship Day….
মেয়েঃ লাইক সিরিয়াসলি?? এটা বলার জন্য এখানে এসেছেন?? আর বাই দা ওয়ে… আমি আপনার ফ্রেন্ড কবে হলাম??
আবিরঃ হওনি কিন্তু এখন হবে৷ হায় আমি আবির খান। একজন মাফ…না কিছু না। আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি?? হাত বাড়িয়ে।
মেয়েঃ নাহ সরি। আমি কারো বন্ধু হতে চাইনা। নো নিড। প্লিজ লিভ মি এলন। বিরক্ত কণ্ঠে।
আবিরঃ আচ্ছা নামটা তো বলো।
মেয়েঃ নট পসিবল!!! গম্ভীর কণ্ঠে।
আসলে মেয়েটার অনেক রেগে হচ্ছে আবিরের উপর। কারণ আবির ওর এতো দিনের কষ্ট সব পানিতে মিশিয়ে দিয়েছে৷ মেয়েটা উঠে ওর ক্লাসে চলে যায়। সাথে আবিরও।
আবিরঃ কি রাগটা কি বেশি করেছেন?? সরি বললাম তো।
মেয়েঃ আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেন??
আবিরঃ আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমরা একি ক্লাসে পড়ি।
মেয়েঃ হুম। আপনি আগে যান।
আবিরঃ না লেডিস ফাস্ট। আপনি যান আমি আপনার পিছনে আসছি।
মেয়েঃ আচ্ছা ভারসিটিতে এতো মেয়ে আপনার জন্য পাগল আপনি আমার পিছনে কেন পরে আছেন?? বিরক্ত হয়ে।
আবিরঃ ওই যে বন্ধুত্ব। আমার বন্ধু হতে চাই??
মেয়েঃ নাহ।
আবিরঃ অন্তত নামটা তো বলুন।
মেয়েঃ নাহ।
হঠাৎই পিছন থেকে কে জেনো ডাক দিয়ে উঠলো।
একটা মেয়েঃ মায়া… এই মায়া দাড়া।
আবিরঃ মায়া। আহ কি সুন্দর নাম। তা আপনার নাম মায়া।
মায়াঃ ধুহ!! নামটা জেনে গেলো। (মনে মনে)
মায়াঃ না আমার নাম মায়া না।
আবিরঃ তাহলে ওর ডাকে দাঁড়িয়েছেন কেন?? হাহা।
মেয়েঃ দোস্ত তোর সাথে একটা কথা আছে চল। আরে আবির তুমি। আমি সাইমা। মায়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।
আবিরঃ ওহ গ্রেট। মায়া না ওকে। বাই তাহলে।
সাইমাঃ ওকে।
আবির ক্লাসে চলে যায়।
সাইমাঃ কিরে তুই না লাইব্রেরিতে গেলি তাহলে আবিরের সাথে কি??
মায়াঃ আরে বলিস না। বন্ধু হতে চায়। তাই পিছু নিয়েছে।
সাইমাঃ কিহ!! সত্যিই?? আবির নিজে থেকে তোর বন্ধু হতে চায় আর তুই ওকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস?? তুই কি পাগল নাকি?? এরকম একটা প্রিন্সচার্মিং ছেলেকে কেউ ফিরিয়ে দেয়। বোকা মেয়ে।
মায়াঃ থামতো। আমার এসব ভালো লাগে না। তুই বল আমাকে ডাক দিলি কেন??
সাইমাঃ আরে আমার এসাইনমেন্ট এ সমস্যা হচ্ছে একটু হেল্প করবি চল।
মায়াঃ স্যার আসবে এখনি। ক্লাসে চল।
সাইমাঃ হুম চল। বাট হেল্প করিস কিন্তু।
মায়াঃ আচ্ছা বাবা করবো।
ওরা সবাই ক্লাসে চলে যায়। মায়ার ঠিক পাশেই আবির বসেছে৷ মায়ার কেমন জানি লাগছে। তাই একটু পর পর আড় চোখে দেখছে মায়া আবিরকে। আবির কেমন করে যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ার অসস্থি লাগছে।
মায়াঃ আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?? বিরক্ত কণ্ঠে।
আবিরঃ কই আমিতো জানালার বাইরে দেখছিলাম।
মায়াঃ মিথ্যা। আমি দেখেছি আপনি আমাকেই দেখছিলেন।
আবিরঃ তাহলে তো এখন বলতে হয় তুমিও আমায় দেখছিলে। কি কেন দেখছিলে??.
মায়াঃ যাহ আমি নিজেই ফেসে গেলাম। মনে মনে।
মায়াঃ আমি কারো দিকে তাকায় নি। সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।
আসলে এই প্রথম মায়ারো কাউকে অনেক ভালো লেগেছে। আসলে আবির এমনই। ওকে দেখলেই সবার ভালো লাগে। কিন্তু এই ভালো লাগার পিছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর মাফিয়া। যার মানুষ মারতে বিন্দুমাত্র হাত কাপে না।
এভাবে পুরা ক্লাস আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলো। আর আবিরের দিকে তাকিয়ে সব মেয়েরা।
ছুটির সময়,
আবিরঃ মায়া….
আবিরের মুখে মায়া ডাকটা শুনে মায়ার কেমন জানি এক ফিল হলো। মনে হলো কোনো আপনজন ডাক দিয়েছে।
মায়াঃ হুম???
আবিরঃ বন্ধু হতে পারি???
মায়াঃ জানি না। আপনি আমার গল্প পড়াটাই নষ্ট করেছেন। আপনার সাথে কোনো বন্ধুত্ব নাই।
মায়ার কথা শুনে আবিরের মনটা খারাপ হয়ে যায়। আর তা দেখে মায়া মনে মনে হাসতে হাসতে চলে যায়।
মায়া ভাবে,
আচ্ছা আমি হাসছি কেন?? আমিতো কোনো ছেলের সাথে এভাবে কথা বলি না। তাহলে আবিরের সাথেই কেন বা এরকম করলাম। উহহ। এই আবিরটা বড় ঝামেলা। এতো মেয়ে থাকতে শুধু আমার পিছু নিয়েছে। ব্যাপারটা কি?? নাহ আর ভাবতে পারছি না। আর আমি ভাবছি বা কেনো?? মায়া এসব ভাবতে ভাবতে চলে যায় বাসায়।
রাফিঃ কিরে বন্ধু কিছু হলো???
আবিরঃ নারে। ও তো বন্ধুই হতে চায় না।
শুভঃ আরে ভাই ওকে খুশি কর আগে।
রাফিঃ হ্যাঁ শুভ ঠিক বলছে।
আবিরঃ আচ্ছা। তাহলে তাই হবে। তবে শুন তোদের এক কাজ করতে হবে।
শুভঃ কি??
রাফিঃ কি??
আবিরঃ শুন….যা যা বলছি কাল সকালে যেনো সব রেডি থাকে।
শুভঃ আচ্ছা।
রাফিঃ হয়ে যাবে।
আবিরঃ তাহলে চল বাসায় যাই। এখানে থাকলে মেয়েরা আমাকে আর বাসায় যেতে দিবেনা।
আবির, শুভ আর রাফি একটা বন্ধ ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যায়।
মায়ার বাসায়,
মায়ার মাঃ কিরে মা কেমন গেলো তোর ভারসিটি আজ??
মায়াঃ আর বলো না মা…. না ভালোই গিয়েছে মা। মিথ্যা বলল।
মাঃ কি বললি বুঝলাম না তো।
মায়াঃ বলেছি ভালো গিয়েছে।
মাঃ আচ্ছা তোর বাবা এসেছে দুপুরে অস্ট্রেলিয়া থেকে।
মায়াঃ কি?? সত্যিই?? কই বাবা কই??
মাঃ আরে ব্যাস্ত হোস না। রেস্ট নিচ্ছে। তুই ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। তখন বাবার সাথে কথা বলিস।
মায়াঃ আচ্ছা। আসছি।
মায়ার মা চলে গেলো। মায়ার মনটা আজ অনেক খুশি লাগছে। বাবাকে মায়া খুব ভালোবাসে। কারণ মায়াকে অনেক আদর করে। যখন যা বলে তাই এনে দেয়। আর মায়া যে ছেলেদের সাথে মিশেনা এতে মায়ার বাবা মায়ার প্রতি আরো অনেক খুশি।
কিন্তু মায়া ভাবছে,
একটু আগে সে মায়ের সাথে মিথ্যা কথা বলেছে। শুধু মাত্র আবিরের জন্য। কোনো ছেলের প্রতিই মায়া টান অনুভব করেনা। কিন্তু এই আবিরটা আজ একদিনেই ওকে বড্ড জ্বালিয়েছে। উফফ কি সুন্দর দেখতে। ভারসিটির সব মেয়ে তার বন্ধু হতে চায়। আর সে এসেছে আমার বন্ধু হতে। মায়া এসব ভেবে নিজে নিজে হাসছে আর হাসছে। আমি কি পাগল হয়ে গেলাম নাকি?? কি একা একা হাসছি। না এই ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। যাই ফ্রেশ হয়ে এসে বাবার কাছে যাই। মায়া ফ্রেশ হতে চলে যায়।
এদিকে আবিরের বাসায়,
আবির ওর রুমে রকিং চেয়ারে বসে মায়ার কথা ভাবছে। মায়ার সেই হাসি, রাগ, মজা সব আবিরকে কেমন জানি করে দিচ্ছে। মায়াকে যেভাবে হোক পেতেই হবে৷ আবির ওর ফোন দিয়ে কাউকে ফোন দেয়।
আবিরঃ হ্যালো রকি!!
রকিঃ জ্বি স্যার??
আবিরঃ মায়া।….. এই ভারসিটিতে ১ম বর্ষে পড়ে। ওর ফোন নাম্বার সহ যাবতীয় সবকিছুর ডিটেইলস আমি নেক্সট ওয়ান এওয়ারের মধ্যে আমার ফোনে চাই।
রকিঃ স্যার আমি হাফ এওয়ারের মধ্যেই সব পাঠাচ্ছি।
আবিরঃ ওকে। আম ওয়েটিং।
এদিকে মায়া তার বাবাকে পেয়ে অনেক খুশি। প্রায় ১০ দিন পর তার বাবা বিদেশ থেকে এসেছে। বাবার একমাত্র প্রিয় মেয়ে মায়া।
এই হলো মায়া চৌধুরী। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। খুব শান্ত আর ভদ্র। সবসময় মার্যিত পোশাকে চলে। বড় ঘরের মেয়ে হলেও সবাইকে সম্মান আর শ্রদ্ধা করে। মায়ার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ অহংকার নেই। তার গরীব অসহায় বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে অনেক ভালো লাগে। মায়ার মতো মায়াবী সুন্দরী আর অপরূপা মেয়ে পাওয়া খুবই দায়। হাজার জন ছেলে তার জন্য পাগল থাকলেও তার কাউকেই ভালো লাগে না। বাবা বলেছে ছেলেদের কাছ থেকে দূরে থাকতে ব্যাস আর কোনোদিন কোনো ছেলের সাথে মায়া মিশে নি। কিন্তু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে মায়ার জীবনে।
মায়া খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাবাকে বিদায় দিয়ে উপরে গিয়ে একটু রূপচর্চা করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় ঘুমানোর জন্য। কাল সকালে আবার যেতে হবে পার্কে বাচ্চাদের কাছে। প্রতিদিন সকালে মায়া জগিং শেষে বাচ্চাদের সাথে কিছু সময় পাড় করে আর ওদের খুশি করে। মায়ার চোখদুটো ঠিক যখনই লেগে আসবে তখনই হঠাৎ….
চলবে…
কোন ভুল হলে জানাবেন।