মনের অরণ্যে এলে তুমি পর্ব-১২

0
1116

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১২

কক্ষে স্বামীর উপস্থিতি অনুধাবন করে হৃদি ফোনে তড়িঘড়ি করে বিদায় জানালো,

” দোস্ত উনি আসছেন। এখন রাখি। পরে কথা হবে। ”

আফরিন দুষ্টু হেসে টেনে টেনে বললো,

” হায়! চৌধুরী সাহেব আসছেন! ওখে বান্দুপি। স্বামী সেবা করো। সওয়াব কামাও। বাই। ”

” বাই। ”

দ্রুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো হৃদি। অতঃপর ভাব দেখিয়ে হেডবোর্ডে রাখা লম্বালম্বি বালিশে হেলান দিয়ে বসলো। মনোযোগ নিবদ্ধ স্মার্টফোনে। ঠিক তখনই ভিড়িয়ে রাখা দ্বার উন্মোচন করে ভেতরে প্রবেশ করলো ইরহাম। হৃদি আড়চোখে তা লক্ষ্য করে মোবাইল টিপতে লাগলো। ইরহাম পাঞ্জাবির বোতাম উন্মুক্ত করতে করতে ডিভান হতে রিমোট নিয়ে এসির তাপমাত্রা কমিয়ে দিলো। দাঁড়ালো ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে। রিমলেস চশমা রেখে রিস্ট ওয়াচ খুলে ফেলল। পাঞ্জাবির পকেট হতে বের করলো মোবাইল, ওয়ালেট। অতঃপর স্বল্প সময়ের মধ্যেই দু হাত উঁচু করে খুলে ফেলল পরিহিত সফেদ পাঞ্জাবি। ফলস্বরূপ অনাবৃত হলো তার পেশিবহুল পেটানো দেহ। সবটা হৃদির চোখের সামনেই ঘটলো। হতবিহ্বল মেয়েটি দ্রুত ডান পাশে মুখ ঘুরিয়ে বসলো। ক্রমবর্ধমান হারে স্পন্দিত হচ্ছে হৃদযন্ত্রটি। ইশ্! বেলাজ পুরুষ। ঘরের মধ্যে এক যুবতী মেয়ে। তার সামনে উদোম দেহে ঘুরঘুর ঘুরঘুর করছে। লাজশরম নেই নাকি! ওর হঠাৎ এভাবে মুখ ঘুরিয়ে নেয়া ঠিক লক্ষ্য করলো মানুষটি। কুঞ্চিত হলো তার ভ্রু যুগল। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে অগ্রসর হলো কাবার্ডের ধারে। প্রয়োজনীয় পোশাক এবং তোয়ালে নিয়ে পা বাড়ালো ওয়াশরুমে। তার প্রস্থান উপলব্ধি করে সোজা হয়ে বসলো মেয়েটা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

আঁধারে তলিয়ে বিশালাকার কক্ষটি। নরম বিছানায় ঠিক মধ্যিখানে আড়াআড়ি ভাবে হয়ে শায়িত এক রমণী। এলোকেশে লুকায়িত তার তৈলাক্ত মুখখানি। ডান কপোলের নিচে ঠাঁই পেয়েছে এক হাত। পাতলা কাঁথা পড়ে রয়েছে হাঁটু বরাবর। গভীর নিদ্রায় মগ্ন সে। হঠাৎ তার নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটলো। বাহু বরাবর উপলব্ধি করলো একজনার স্পর্শ। বিরক্তিতে কুঁচকে গেল চোখমুখ। ঘুমকাতুরে অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো,

” আ ম্মু! ঘুমাই। ”

আম্মু একথা মানতে নারাজ। আবারো বাহু ধরে ডাকতে লাগলো। ঘুমন্ত কন্যার কর্ণ কুহরে পৌঁছাচ্ছে তার নাম। ডেকে চলেছে বারবার। কিসের জন্য ডাকছে! কান খাঁড়া করে শুনতে পেল নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। নামাজ! কোন ওয়াক্তের? বিরক্তিকর শব্দ নিঃসৃত হলো মুখ হতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সোজা হয়ে শুলো। বাহু হতে জোরপূর্বক সরিয়ে দিলো আম্মুর হাত।

” উম্! বিরক্ত করছো কেন? ঘুমাচ্ছি না? ”

” কোনো ঘুম নয়। ওঠো বলছি। ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। ওঠো। ”

আম্মুর বদলে কর্ণ কুহরে স্পষ্ট রূপে পৌঁছালো ভরাট পুরুষালি কণ্ঠস্বর। হকচকিয়ে গেল মেয়েটি। নিভু নিভু চোখ মেলে তাকালো। ঝাঁপসা নজরে বন্দী হলো স্বামীর মুখখানা। ইরহাম দাঁড়িয়ে। অস্ফুট স্বরে হৃদির মুখনিঃসৃত হলো,

” আ প নি! ”

” হাঁ আমি। ওঠো‌। চারটা পঁচিশ বাজে। নামাজ পড়বে। ওঠো। ”

আদেশ প্রদান করে সামনে হতে সরে গেল ইরহাম। প্রস্তুতি নিতে লাগলো জামায়াতে সালাদ আদায় করতে যাওয়ার। প্রিয় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় বিরক্ত হলো মেয়েটি। বাঁ কাত হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে দিলো। এভাবেই আবার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গেল। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পেল না। স্বামীর রাশভারী কণ্ঠে ঘুমকে বিদায় জানিয়ে উঠতে বাধ্য হলো। এলোমেলো পদচারণায় অগ্রসর হলো ওয়াশরুমে। ওকে পাঠিয়ে দিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো ইরহাম।

‘ আনন্দাঙ্গন ‘. লিভিংরুমে সোফায় বসে এজাজ সাহেব। মালিহা পাশেই বসে। স্বামীর অফিস ব্যাগে সব গুছগাছ করে রাখছেন উনি।

” এই যে তোমার ব্লু কালার ফাইল রেখেছি। আর এই চেইনে ল্যাপটপ। ”

ব্যাগের চেইন আঁটকে উনি বললেন,

” তুমি তাহলে একটু বসো। আমি তোমার লাঞ্চ প্যাক করে দিচ্ছি। ”

এজাজ সাহেব আপত্তি জানালেন,

” না না। এখন লাগবে না। লেট হয়ে যাচ্ছে। তুমি লাঞ্চের আগে আগে ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ো। ”

” তা কেমন কথা? তুমি একটু বসো। আমি এখুনি নিয়ে আসছি। দেরি হবে না। ”

মালিহার কথা অমান্য করে উঠে দাঁড়ালেন এজাজ সাহেব। তাড়া দেখিয়ে বললেন,

” আমার অত ফ্রি টাইম নেই। আসছি। ”

এজাজ সাহেব ওনার অফিস ব্যাগে হাত রাখতেই শোনা গেল,

” পাপা! ”

একরাশ বিরক্তি নিয়ে পিছু ঘুরে দাঁড়ালেন উনি। কাঠিন্যতা মিশ্রিত কণ্ঠে হৃদিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

” তোমার কি কমনসেন্স বলে কিছু নেই? দেখতে পাচ্ছো না অফিস যাচ্ছি? এরমধ্যে সার্কাস শুরু করেছো কেন?”

মলিনতা লুকিয়ে এগিয়ে এলো মেয়েটি। অধর প্রসারিত করে হাতে থাকা হটপট এগিয়ে দিলো।

” তোমার টিফিন পাপা। ”

এজাজ সাহেব বিদ্রুপ করে হাসলেন,

” হাহ্! টিফিন! টিফিন আর লাঞ্চ বক্সের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে সেটা বুঝি তোমার জানা নেই? ”

” জানা আছে তো। তবে কি বলো তো.. তুমি তো এখনো দাদিমার বুড়ো খোকা। তোমাকে রোজ মনে করে লাঞ্চ দিয়ে দিতে হয়। এরপর তুমি অফিসে বসে লাঞ্চ করো। হলো না তা একধরনের টিফিন? পা পা? ”

টেনে টেনে নিজস্ব মতামত পেশ করলো হৃদি। মালিহা না চাইতেও মুখ টিপে হেসে উঠলেন। হৃদি ওসবে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত হস্তে অফিস ব্যাগে লাঞ্চ বক্সটি রেখে দিলো। আঁটকে দিলো চেইন। হাসিমুখে শ্বশুড়ের দিকে ব্যাগটি বাড়িয়ে দিলো। সুমিষ্ট স্বরে ডাকলো,

” পাপা এই যে। ”

এজাজ সাহেব তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে ব্যাগ হাতে গটাগট পায়ে প্রস্থান করলেন। যাওয়ার পূর্বে সালাম দিতে ভুললেন না অবশ্য। হৃদি উঁচু স্বরে বলে উঠলো,

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সাবধানে যেয়ো পাপা। ”

মালিহা এবার সশব্দে হেসে উঠলেন। দুষ্টুমি করে কন্যাসম পুত্রবধূর বাহুতে চাপর মে রে দিলেন।

” দুষ্টু মেয়ে। ”

” না মা’জী। আ’ম নটি গার্ল। ”

একগাল হেসে বললো হৃদি। আলিঙ্গন করলো মা’কে। মালিহা হাসিমুখে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এ দৃশ্য আজ সরাসরি অবলোকন করলো একজন। ডাইনিংয়ে চেয়ারে বসে সে। হাতে পানির গ্লাস। পানি পান করার পাশাপাশি সরাসরি এমন দৃশ্যের সাক্ষী হলো সে। ফলস্বরূপ অধরে বুঝি সুক্ষ্ম রেখার দেখা মিললো!

ভানু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। শহরের ব্যস্ত সড়ক ধরে এগিয়ে চলেছে গাড়ি। প্যাসেঞ্জার সিটে পাশাপাশি বসে ভাই-বোন যুগল। রায়নার বদনে খুশির ঝিলিক। সে পাশে বসে থাকা বড় ভাইকে একপেশে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো।

” থ্যাংক ইয়্যু সো মাচ ভাইয়া! কতদিন পর তোমার সান্নিধ্য পাচ্ছি। আজকের দিনটা ইনশাআল্লাহ্ সেরা একটা দিন হতে চলেছে। আই লাভ ইয়্যু ভাইয়া। ”

রাহিদ মুচকি হেসে বোনকে বাঁ হাতে আঁকড়ে ধরলো।

” তাই বুঝি? ভাইয়া সময় দিচ্ছে বলে লাভ ইয়্যু। আর সময় দিতে না পারলে হেট ইয়্যু? ইটস্ নট ফেয়ার বনু। ”

রায়না কিশোরীর ন্যায় গাল ফুলিয়ে ভাইয়ের বাহুবন্ধন হতে সরে গেল। তীব্র প্রতিবাদের স্বরে বললো,

” একদম বাজে কথা বলবে না! আমি কখন হেট ইয়্যু বললাম? তুমি আমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র ভাইয়া। তাকে কি করে হেট করতে পারি? ”

রাহিদ দু কাঁধ ঝাঁকিয়ে অবুঝের মতো বললো,

” কি জানি? তোর তো আবার আরেক ভাইয়া আছে। ইরহাম ভাইয়া। তাকে পেলে সবাই তো আমায় রীতিমতো ভুলেই যায়।”

” ইশ্ মিথ্যে কথা। তুমি তোমার জায়গায়। ইরু ভাইয়া তার জায়গায়। নো কমপ্যারিসন। ওকে? ”

বোনের গাল টিপে সম্মতি জানালো রাহিদ,

” ওকে। ”

রায়না হেসে উঠলো। এবার কৌতুহল দমাতে না পেরে শুধালো,

” আচ্ছা আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি? সিনেপ্লেক্সে নাকি রেস্টুরেন্ট? ”

রাহিদ রহস্যময় হেসে বললো,

” সারপ্রাইজ। ”

” ওয়াও সারপ্রাইজ! আ’ম সো এক্সাইটেড ভাইয়া। ”

উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো মেয়েটা। ওর খুশিতে আত্মহারা মুখখানি মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করলো জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাহিদ। আলতো করে বোনের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলো। রায়না মন থেকে সে স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। এ স্নেহের পরশ যে বড় বিরল!
.

নিজস্ব কক্ষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মেয়েটি। ওয়াশরুম থেকে দ্রুততার সহিত বেরিয়ে এলো সে। পড়নে তার র’ক্তিম অল ওভার প্রিন্টেড কামিজ এবং প্যাস্টেল ল্যাভেন্ডার রঙা প্লাজো পাজামা। সিক্ত কুন্তল (চুল) গড়িয়ে পড়ছে জলকণা। সে জলের অস্তিত্বে পৃষ্ঠে লেপ্টে কামিজের একাংশ। দ্রুত হস্তে সিক্ত কুন্তলে তোয়ালে চালনা করতে করতে হেঁটে চলেছে হৃদি। এমনতর কাণ্ডে মেঝে যে জলে ভিজে যাচ্ছে সে খেয়াল কি রয়েছে? নেই বোধহয়। থাকলে এমনটি করতো না। সে মুহূর্তে মোবাইল স্ক্রল করতে করতে কক্ষে প্রবেশ করলো ইরহাম। হাঁটাচলার ধ্বনিতে চোখ তুলে তাকালো। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো তার সদ্য স্নাতা অর্ধাঙ্গীতে। পরক্ষণেই মেঝেতে থাকা পানি লক্ষ্য করলো। গম্ভীর স্বরে শুধালো,

” এসব কি? চুল মুছছো নাকি ঘর? ”

হঠাৎ স্বামীর কণ্ঠ শুনে পিছু ঘুরে তাকালো হৃদি। প্রশ্নটি বুঝতে না পেরে শুধালো,

” কিহ্? ”

ইরহাম চোখের ইশারায় মেঝে দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। সে মোতাবেক মেঝেতে তাকিয়ে বোকা বনে গেল মেয়েটা। জিভ কা’মড়ে হাসলো।

” পুরনো অভ্যাস। মানে বদভ্যাস। ”

” শুধরে ফেলো। ”

মানুষটির অলক্ষ্যে ভেংচি কাটলো হৃদি। খালি জ্ঞান দেয়। এছাড়া আর কিছু পারে কি? এর তো রাজনীতিতে না জড়িয়ে মাস্টার-মশাই হওয়া উচিত ছিল। বেশ কাজে দিতো। হুঁ।

আনমনে বকবক করে হৃদি পা বাড়ালো বেলকনির উদ্দেশ্যে। ঠিক সে মুহূর্তে ভেজা মেঝেতে পা পিছলে গেল। মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো মেয়েটি। কোমর ভেঙে যাওয়ার ভয়ে স্বয়ংক্রিয় ভাবে বদ্ধ হলো নেত্রজোড়া। ঘন শ্বাস পড়তে লাগলো। ভীতসন্ত্রস্ত মেয়েটি কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়া স্বত্বেও কোনোরূপ বেদনা অনুভব করলো না। বরং নিজেকে এক সুরক্ষিত বলয়ে অনুধাবন করতে পারলো। এহেন কাণ্ডে সাহস করে আস্তে আস্তে আঁখি পল্লব মেলে তাকালো। স্বামী নামক পুরুষের সুরক্ষিত বলয়ে আবদ্ধ সে। পুরুষালি শক্তপোক্ত বাঁ হাতের ভারী থাবা ডেবে তার পৃষ্ঠের কোমল ত্বকে। তাকে কোনোরূপ আঘাতের সম্মুখীন হতে দেয়নি মানুষটি। বরং সযতনে আগলে রেখেছে। কোমল মেয়েলী হৃদয় এরূপ আচরণে বেশ প্রসন্ন হলো। ধীরজ ভঙ্গিতে স্বামীর হাত হতে দৃষ্টি সরিয়ে চোখ তুলে তাকালো হৃদি। থমকে গেল তৎক্ষণাৎ। ধক করে উঠলো বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটি। এক জোড়া চক্ষু তাহাতেই নিবদ্ধ। সে চাহনিতে অগাধ মুগ্ধতা বিরাজমান! গতানুগতিক ধারার বাহিরে এ নভোনীল আঁখিদ্বয়। সুবিশাল সাগরের ন্যায় শান্ত এবং গভীর। যার গভীরতায় একটিবার প্রবেশ করলেই হারিয়ে যায় অতল গহ্বরে। তেমনিভাবে ধীরগতিতে সে গভীরতায় ডুবে গেল মেয়েটি। ইরহামের চশমাবিহীন স্পষ্ট আঁখিদ্বয়। বিমুগ্ধ চাহনি ঘুরে বেড়াচ্ছে অর্ধাঙ্গীর মুখশ্রীর এধার ওধারে। ডাগর ডাগর আখিতে অমোঘ আকর্ষণ। সুডৌল নাসিকা পেরিয়ে নিম্নে অসীম মা-দকতা। ওষ্ঠাধরের মৃদু কম্পনে প্রকম্পিত হতে লাগলো তার পাথর দিল। তৃষ্ণা অনুভূত হচ্ছে অভ্যন্তরে। বেসামাল বেকাবু হচ্ছে পৌরুষ চিত্ত। বড় অশান্ত রূপ ধারণ করলো হৃদয়। নিজেকে সামাল দেয়া হয়ে উঠলো দুষ্কর।

তবুও নিজেকে সামলানোর সর্বোচ্চ প্রয়াস চালালো ইরহাম। এক ঝটকায় স্ত্রীকে সোজা দাঁড় করালো। নিজে উল্টো দিকে মুখ করে ঘুরে দাঁড়ালো। আকস্মিক কাণ্ডে হতবিহ্বল হলো হৃদি! পিছিয়ে গেল কয়েক পা। ওর দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে মানুষটি। ঘন শ্বাস পড়ছে তার। এখনো ধক ধক করছে অন্তঃস্থল। নিজেকে চূড়ান্ত রূপে ধাতস্থ করতে বড় বড় কদম ফেলে কক্ষ হতে বেরিয়ে গেল ইরহাম। পেছনে রেখে গেল এক রমণীকে। যার হৃদয়ে সদ্য বোপন হলো ভালোবাসা নামক ম-রণঘাতীর ক্ষুদ্র এক বীজ!
.

করিডোর ধরে ধীরপায়ে হেঁটে চলেছে মেয়েটি। একের পর এক সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে উপস্থিত হলো লিভিংরুমে। কয়েকজনের আলাপণে কিচিরমিচির পরিবেশ। সেসবের কিছুই হৃদির শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে পৌঁছাচ্ছে না। তার মনে যে এখনো কিয়ৎক্ষণ পূর্বের দৃশ্যপট ঘুরে বেড়াচ্ছে। দ্রুত গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে হৃদযন্ত্র। আকস্মিক মেয়েটির অসীম ভাবনায় ছেদ পড়লো। কেননা…

চলবে.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে