মনের অরণ্যে এলে তুমি পর্ব-১৩

0
781

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৩

” ভাবি! ”

আমোদে আত্মহারা হয়ে হৃদির পানে ছুটে গেল রায়না। উষ্ণ এক আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে ঘোর কেটে গেল মেয়েটির। তাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে রাখা মেয়েটির পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই অধর কোণে ফুটে উঠলো খুশির ছোঁয়া।

” রায়না বেবি! ”

বাহুবন্ধন হতে মুক্ত হয়ে সম্মুখে দাঁড়ালো রায়না। একগাল হেসে বললো,

” ইয়েস ভাবি। তোমার রায়না বেবি ইজ ব্যাক। ”

হৃদি অতি প্রসন্ন হয়ে ওকে পুনরায় আলিঙ্গন করলো। হৃ’হাম এর বিবাহের পর থেকেই রায়নার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে ওর। দু’জনের মধ্যকার বয়সের ব্যবধান অতি স্বল্প। হৃদি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে তো রায়না প্রথম বর্ষে। যদিওবা তাদের ভার্সিটি ভিন্ন। বিবাহের পর থেকেই ওদের পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এতদিন পর দেখা। স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত দু’জনে। ওদের এত মাখোমাখো ভাব দেখে ইনায়া মুখ ফুলিয়ে ফেললো। সোফা ছেড়ে এসে দাঁড়ালো ওদের পাশে।

” এটা কিন্তু ঠিক না। রায়নাপু’কে পেয়ে আদরের নন্দিনীকে ভুলে গেলে ভাবি? ”

হৃদি ওর দিকে ঘুরে তাকালো। ওর ফুলো কপোল টিপে দিয়ে দুষ্টুমি করে বললো,

” কি যে বলো না নন্দিনী। আমরা তো দো জিসম এক জান। কি করে যাই ভুলে এই প্রাণ? ”

ওলটপালট কথাবার্তা শুনে সশব্দে হেসে উঠলো ইনায়া। অভিমান পালালো পেছনের দ্বার দিয়ে। তখনই সোফায় বসে থাকা রাহিদ বললো,

” ইনু রে! সবাইকে ভোলা সম্ভব হলেও তোর মতো তাঁরছেঁড়াকে ভোলা মুশকিল। একদম অসম্ভব দ্যা ইম্পসিবল। ”

এতবড় কথা! ইনায়া তেড়ে গেল। রাহিদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল তাক করে বললো,

” একদম বাজে কথা বলবে না। আমার কয়টা তাঁর ছেঁড়া যে ফালতু কথা বলছো? ”

রাহিদ তৎক্ষণাৎ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দু হাত উঁচুতে তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিমা করলো।

” ওরে মা! ভয় পাইলাম তো তোর দস্যি রূপ দেখে! ”

পরক্ষণেই হাত নামিয়ে আদেশ প্রদান করলো,

” দুদিনের নিব্বি! আঙ্গুল তুলে কিনা তেড়ে আসছিস? আঙ্গুল নামা। নামা বলছি। ”

ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো ইনায়া। ধীরগতিতে আঙ্গুল সরিয়ে নিলো। তখনই পেছন হতে ওর ডান হাতটি টেনে ধরলো হৃদি। বসালো নিজের পাশে সোফায়। এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হাসিমুখে রাহিদকে শুধালো,

” তো ভাইয়া। কেমন আছেন? কতদিন পর দেখা। ”

রাহিদ মুচকি হাসলো।

” এই তো ভাবি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আপনার কি অবস্থা বলেন? ভাইয়ার চক্করে পড়ে বোবা হয়ে যাননি তো? ”

সশব্দে হেসে উঠলো হৃদি। নেতিবাচক মাথা নেড়ে বললো,

” আরে না। কি যে বলেন। এই হৃদি শেখকে বোবা বানানো ওনার কম্ম নয়। উল্টো দেখবেন দু’দিন পর উনিই পকপক করতে শুরু করেছেন। ”

অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো দু বোন। রায়না কোনোমতে হাসি চেপে প্রশ্ন করলো,

” শুধুই পকপক করবে ভাবি? নাকি হাঁসের মতো প্যাক প্যাকও করবে? ”

ইনায়ার চক্ষু চড়কগাছ। ভীত মেয়েটা দ্রুত ডানে বামে মাথা ঘুরিয়ে নিশ্চিত হতে লাগলো ভাইয়া আছে কিনা। শুনলে সাড়ে সর্বনাশ! তবে ভাগ্য প্রসন্ন ছিল। ইরহাম অনুপস্থিত। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ইনায়া। কর্ণ কুহরে পৌঁছালো হৃদির জবাব,

” প্যাক প্যাক করলে করুক গে। ভ্যা ভ্যা না করলেই হলো। ”

জোরে হেসে উঠলো রায়না। হাই-ফাইভ করলো বামে বসে থাকা ভাবীর সঙ্গে। রাহিদ দাঁত কেলিয়ে হেসে বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে থাম্বস আপ দেখালো ভাবিকে। হৃদি এতে আরো হেসে উঠলো। অবশেষে হাসাহাসি কোনোমতে সমাপ্ত হলো। বড় করে শ্বাস পড়ছে ওদের। এত হাসাহাসি হয়েছে না! হৃদি ওষ্ঠাধর গোলাকার করে তপ্ত শ্বাস ফেললো। নিজেকে ধাতস্থ করে রায়নাকে প্রশ্ন করলো,

” হেই বেবি! তোমরা তাহলে আজ এখানেই থাকছো তো? ”

রায়না উৎফুল্ল হয়ে ইতিবাচক সম্মতি জানালো।

” জ্বি ভাবিজি। আমরা আজ এখানেই থাকছি। ”

হৃদি ও ইনায়া সমস্বরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো,

” ইয়ে! ”

রাহিদ ও রায়না তা অবলোকন করে মৃদু হাসলো। সহসা ওদের আনন্দ আড্ডায় ব্যাঘাত ঘটলো। গটাগট কদম ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে চৌধুরী সাহেব। পড়নে তার বাহিরে যাওয়ার পরিচ্ছদ। মানে বাইরে যাচ্ছে। হৃদি একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ঢঙ দেখে বাঁচা মুশকিল! হুহ্! এমনভাবে জুতা মাড়িয়ে হাঁটছে যেন উত্তরবঙ্গ অবধি হাঁটার শব্দ পৌঁছে যাচ্ছে। ইরহামের উপস্থিতি টের পেয়ে উঠে দাঁড়ালো রাহিদ। একগাল হেসে সালাম দিলো,

” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ”

থমকে গেল ইরহাম। একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অতীব গম্ভীর স্বরে সালামের জবাব দিলো,

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”

” কেমন আছো ভাইয়া? ”

রাহিদ এগিয়ে এলো। ভাইকে আলতো করে আলিঙ্গন করলো। এর মধ্যেই ঘটলো অনাকাঙ্ক্ষিত অঘটন! সহসা বৃদ্ধাঙ্গুলে যাতনা অনুভূত হচ্ছে। বড় পীড়াদায়ক যাতনা। অস্ফুট স্বরে মৃদু আর্ত মুখনিঃসৃত হলো। শক্তপোক্ত পাঁচটে খসখসে আঙ্গুল যেন ওর বৃদ্ধাঙ্গুল চুরমার করে দিচ্ছে। ঝটকা মে রে শক্ত বলয় হতে আঙ্গুলটি রক্ষা করতে সক্ষম হলো রাহিদ। দ্রুততার সহিত ভাইয়ের বাহুবন্ধন হতে সরে গেল। জোরপূর্বক ব্যথাতুর হাসলো। ইরহামের অগ্নিবৎ নভোনীল চক্ষু জোড়া ওর পানেই নিবদ্ধ। যেন চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো ওর সীমারেখা। বড্ড নি ষ্ঠুর সে চাহনি! শুকনো ঢোক গিললো রাহিদ। তড়িঘড়ি করে প্রাণ বাঁচাতে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। এদিকে আর ভ্রুক্ষেপ করলো না ইরহাম। মৃদু স্বরে পূর্বের জবাব দিলো,

” আলহামদুলিল্লাহ্ আ’ম ফাইন। ”

অতঃপর ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ হতে বেরিয়ে গেল ইরহাম। রয়ে গেল আশ্চর্যান্বিত রাহিদ! নারীবৃন্দ এসবে নেই। তারা তো নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মগ্ন।
.

অন্তরীক্ষে মেঘমালার আড়ালে উঁকিঝুঁকি দিয়ে চলেছে দ্বিজরাজ। তার দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। উন্মুক্ত বাতায়ন হতে দেখা মিলছে এ অভূতপূর্ব দৃশ্যের! তবে সেসবে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই রমণীগণের। বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে তিনজন। ইনায়া ও রায়নার মধ্যমণি তাদের প্রিয় ভাবী হৃদি। হৃদির হাতে স্মার্টফোন। তাতে প্রদর্শিত হচ্ছে একের পর এক ইউটিউব রিলস্। হাস্যরসাত্মক রিলস্। হাসতে হাসতে সে ভিডিও উপভোগ করে চলেছে ওরা। আলাপণ করছে নিজেদের মধ্যে। আজ রাতটি এভাবেই আনন্দ উচ্ছ্বাসে অতিবাহিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। হৃদি তো এখানে ব্যস্ত। ওদিকে তার স্বামী মহাশয় কি করছেন!
__

উন্মুক্ত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ইরহাম। শ্রবণেন্দ্রিয়ে ঠেকে ফোন। ফোনের অপর প্রান্তে বিশ্বস্ত সহচর সাহিল।

” আগামীকাল আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে গোটা আয়োজনের যথাযথ তত্বাবধান করবে। কোথাও যেন বিন্দুমাত্র সমস্যা না হয়। ঠিক আছে? ”

সাহিল ওকে আশ্বস্ত করতে বললো,

” ভাই আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা আছি তো। ছেলেরা ঠিক কাজে লেগে পড়েছে। ”

” কোনোরূপ সমস্যা হলেই আমাকে ইমেডিয়েটিলি কনফার্ম করবে। ওকে? ”

” জ্বি ভাই। ”

আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো মানুষটা। মোবাইল পুরে নিলো ট্রাউজারের পকেটে। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো আঁধার অন্তরীক্ষে। তার মনন ও ভাবনায় এ মুহূর্তে শুধুমাত্র আগামীকালের আয়োজন। ভিন্ন কিছু নয়। মিসেস চৌধুরী তো সম্পূর্ণ এ ভাবনা বহির্ভূত।

রৌদ্রজ্জ্বল এক দিন। দিবাকরের উত্তপ্ত কিরণে ঝলসে যাচ্ছে কায়া। ললাট কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে স্বেদজল। পরিহিত পোশাক বিন্দু বিন্দু ঘামে ভিজে লেপ্টে দেহে। বিশালাকার প্রশস্ত জায়গা জুড়ে জনসমাগম। অগণিত মানুষের আগমন হয়েছে নয়া পল্টনের এ স্থানে। কেউ ছবি তুলছে, কেউ দল বেঁধে নানা স্লোগান দিচ্ছে। দলে দলে বিভিন্ন স্থান হতে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছে। হাতে রয়েছে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার। সমাবেশ সুষ্ঠু রূপে আয়োজিত করার জন্য আশপাশে বিভিন্ন স্থানে টাঙানো হয়েছে বেশকিছু মাইক। কয়েকটি পয়েন্টে বসানো হয়েছে প্রজেক্টর। মঞ্চের আশপাশে তিল ধারণের জায়গা নেই। সমাবেশের সামনে স্থান না পেয়ে নেতা-কর্মীরা আশপাশের সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ মঞ্চে। শ্বেত রঙা বিশাল এক ব্যানার টাঙানো। যার মধ্যখানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বড় বড় অক্ষরে ছাপা ‘ সমাবেশ ‘. লেখাটির দু পাশে বড় আঙ্গিকে দৃশ্যমান দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং দলীয় বয়জ্যেষ্ঠ এক আদর্শ নেতার দু’টো ফটো। ব্যানারের সম্মুখভাগে লম্বা আকৃতির এক টেবিল। যার ওপাড়ে পাশাপাশি চেয়ারে বসে দলীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে এসবের ভিড়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তরুণ প্রজন্মের আদর্শ। হয়তো আগামীর দৃঢ়-শক্ত কাণ্ডারী। শুভ্র পাঞ্জাবি, পাজামা পড়নে তার। রিমলেস চশমার অন্তরালে লুকায়িত বুদ্ধিদীপ্ত-তেজস্বী অক্ষি যুগল। সকলের উদ্দেশ্যে দৃঢ় স্বরে পেশ করছে তার যুক্তিসম্পন্ন বক্তব্য,

” বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস এবং ঐতিহ্য এতোটাই উজ্জ্বল যে এখনো আমরা সগৌরবে স্মরণ করি। জাতীয় রাজনীতি কিংবা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে যুগে যুগে ভূমিকা পালন করে এসেছে ছাত্র রাজনীতি। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, বাষট্টি’র শিক্ষা কমিশনের আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের এবং ছাত্র রাজনীতির অবদান বর্তমান প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সর্বদা মনে রাখবে। তাদের সেই কৃতকর্ম এ দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং আজীবন থাকবে। তবে আজ কোথায় সেই স্বর্ণালী দিন? কেন কালো থা”বায় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছে সে-ই শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি? জানা আছে কারোর? ”

নীরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করছে জনসমাগম। যাদের অর্ধভাগ তরুণ প্রজন্ম। আগামীর ভবিষ্যৎ।

” একদা ছাত্র রাজনীতির নামে দেশসেবা হতো। আর আজ? রাজনীতি নামক হা তিয়ার ব্যবহার করে লু*টপাট, রা-হাজানি, ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে। কারণ ব্যর্থ আমরা। আমাদের পূর্বপুরুষরা শত চেষ্টা সত্ত্বেও আমাদের সুপথে চালনা করতে পারেননি। অর্থ, ক্ষমতার লো ভ আমাদেরকে এমনভাবে জেঁকে ধরেছে যে আমরা চোখ থাকতেও আজ অন্ধ। যে তরুণ প্রজন্ম আমাদের ভাষা সংগ্রামের মাধ্যমে মাতৃভাষা পাইয়ে দিয়েছে, একাত্তরে র-ক্ত ঝড়িয়ে স্বাধীনতা ছি-নিয়ে এনেছে সে-ই বর্তমান তরুণ প্রজন্ম আজ ভ’ঙ্গুর। প ঙ্গু। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারিনা। ব্যর্থ আমরা। ”

ইরহাম চৌধুরীর বক্তব্যে সহমত উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ। তাদের নীরবতা এবং অবনত মস্তক তা-ই বহিঃপ্রকাশ করছে। আজ থেমে নেই ইরহাম। ছাত্র রাজনীতির একাল ও সেকাল নিয়ে লম্বা ভাষণ দিলো। সবশেষে বললো,

” যেদিন এ সকল প্রশ্নের যথার্থ উত্তর মিলবে, আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুপথে চালনা করতে পারবো ইনশাআল্লাহ্ সেদিন সফলতা ধরা দেবে। স্বাধীনতার চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে গড়ে উঠবে শক্তিশালী, ন্যায়পরায়ণ ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। কি গড়ে উঠবে না? ”

ব’জ্রদৃঢ় প্রশ্নে সমস্বরে জবাব দিলো জনগণ,

” উঠবে। ”

সুক্ষ্ণ হাসির রেখা ফুটে উঠলো বক্তব্য প্রদানকারী মানুষটির অধরে। ঘর্মাক্ত মুখশ্রীতে শোভা পাচ্ছে সুন্দর, সুষ্ঠু এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা… উন্নত দেশ গড়ার অতি মূল্যবান স্বপন।

তমস্র রজনী। বিছানায় শায়িত মায়াবিনী কন্যা। এলোকেশে আড়াল মুখশ্রীর ডান পাশ। বক্ষস্থলে দু পাশে ডানা মেলে রাখা প্রেমময় উপন্যাসের বইটি। এলোমেলো পরিহিত ওড়নার একাংশ। গভীর নিদ্রায় মগ্ন সে। কক্ষে জ্বালানো আলো তার নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে ব্যর্থ। সে এখন স্বপ্নপুরীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেথায় শুধুমাত্র সে এবং তার স্বপ্নপুরুষগণ। একঝাঁক বিনোদন জগতের তারকার মধ্যিখানে একেলা সে সাধারণ মানবী। উচ্ছ্বসিত বদনে আলাপণ করে চলেছে তারকাদের সঙ্গে। আকস্মিক ধূলোমাখা দমকা হাওয়া বইতে আরম্ভ করলো। সে হাওয়ায় এলোমেলো রূপে ছোটাছুটি করতে লাগলো ভীতসন্ত্রস্ত তারকারা। নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে উদগ্রীব তারা। সকলের ভীড়ে বড় একাকী হয়ে পড়লো মেয়েটা। মায়ায় ভরপুর ভীত আঁখি যুগল এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলো। একটুখানি ভরসাযোগ্য হাতের জন্য ছটফটে হৃদয়। ডানে বাঁয়ে সামনে পিছে কোথাও কেউ নেই। সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলো না কেউ। ভীত রমণী চিৎকার করে সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগলো। কেউ এলো না। কেউ না। বরং ধূলোমাখা ঝড়ে নিজ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো সে। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো বিবর্ণ পথে। নোনাজলে ভরে গেল নয়ন জোড়া। কোথাও কেউ নেই। কেউ নেই। সহসা এক প্রবল হাওয়া ধেয়ে এলো। বড় আ-ক্রমণাত্মক সে হাওয়ার বেগ। সবটা ধ্বং-স করে তবেই ক্ষ্যা ন্ত হবে এমন। তবে সে কর্মে সফল আর হতে পারলো না। কেননা..

চলবে.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে