মনের অন্তরালে পর্ব-১৩+১৪

0
1029

#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৩
প্রহেলী অবাক হয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে আছে।সামনে থাকা ব্যক্তিটি বললেন,
~ভিতরে আসতে পারি?
প্রহেলী বললো,
~আসুন।
বলেই সে দরজা থেকে দূরে সরে দাড়ালো সেই ব্যক্তিটি ভিতরে ঢুকে পরলো।তখনই সেখানে উপস্থিত হলো পরশ। পরশ সেই ব্যক্তিটিকে দেখে বললো,
~আরে শশুড় মশাই এতো সকাল সকাল আমার বাসায়?
আমরুল সিকদার এসেছেন প্রহেলীর বাসায় পরশের প্রশ্ন শুনে আমরুল সিকদার বললেন,
~আসলে মাহিনের ব্যাপারে কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।
প্রহেলী বললো,
~কী হয়েছে মাহিনের?
আমরুল সিকদার বললেন,
~মাহিন একটা মেয়েকে পছন্দ করে আর সেই মেয়েকেই বিয়ে করতে চায়।
পরশ মুচকি হেসে বললো,
~তাহলে করিয়ে দিন।এতে ভাবাভাবির কী আছে?
আমরুল সিকদার বললেন,
~একটু ভাবা উচিত মেয়ের পরিবার বস্তিতে থাকে আর মেয়ের চরিত্রও বেশ ভালো না।একবার বিয়ে ভেঙ্গেছে সেই মেয়ে কী ভালো হবে?
প্রহেলী বললো,
~বিয়ে ভেঙ্গেছে বলে যে মেয়ের চরিত্র খারাপ হবে এই কথা আপনাকে কে বললো?সব খোজ নিয়ে তারপর মতামত পোষণ করবেন।
আমরুল সিকদার বললেন,
~তোমার মায়ের সাথে কথা আছে একটু ডেকে দেও।
প্রহেলী আর কিছু না বলে মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো পরশ বললো,
~মেয়ের সব ঠিকানা আপনার কাছে আছে আমাকে দিন আমি সব খোজ খবর নিয়ে দিচ্ছি।
আমরুল সিকদার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পরশের হাতে দিয়ে দিলো।পরশ সেটায় চোখ বুলিয়ে বললো,
~আমি দেখছি।
আমেনা সিকদার উপস্থিত হলেন সেই জায়গায় প্রহেলী বললো,
~আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
বলেই সে চলে গেলো পরশও চলে আসলো তার রুমে আর অফিসের জন্য রেডি হতে লাগলো।
আমরুল সিকদার বললেন,
~আমেনা,বাসায় ফিরে চলো এভাবে মেয়ের বাসায় থাকাটা ভালো দেখায় না।
আমেনা সিকদার বললেন,
~যদি কখনো মনে হয় মেয়ের পরিবারে আমার জন্য সমস্যা হচ্ছে তাহলে বৃদ্ধাশ্রম চলে যাবো।এতে কোনো সমস্যা নেই আমার কিন্তু আপনার বাড়িতে আর আসা হবে না।
আমরুল সিকদার আশাহত হয়ে বললেন,
~এতো বড় শাস্তি দিলে আমায় তাও এই শেষ বয়সে এসে।
আমেনা সিকদার বললেন,
~কোনো শাস্তি দেইনি আমি বাবা মারা যাবার আগে তাকে ওয়াদা করে ছিলাম এ সংসার সামলে রাখবো। তাই সবকিছু দেখেশুনে রেখেছি কিন্তু এখন নয়না আর মাহিন বড় হয়েছে এখন এই সংসার তাদের।তারা দেখে রাখবে আর প্রতিদিনের ঝগড়াও কম হয়ে যাবে আমাকে নিয়ে। মারিয়াও এখন ভালো থাকবে আর আমার বয়স হয়েছে এসব ভালো লাগে না।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আমেনা সিকদার থামলেন।আমরুল সিকদার বললেন,
~তাহলে কী এতোবছর বাবার জন্য সংসারটা সামলে রেখেছিলে?
আমেনা সিকদার বললেন,
~এসব কথা বাদ দিন আমার শরীরটা খারাপ লাগছে আমি একটু বিশ্রাম নিবো।
আমেনা সিকদার উঠে তার নিজের রুমে চলে গেলেন।আমরুল সিকদার সেখানেই বসে রইলেন আসলেই জীবনে তিনি অনেক ভুল করেছেন আর সেই ভুলের তো ক্ষমা হয়না।

______________

প্রলয়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে নয়নার পিট পিট করে চোখ খুলে প্রলয়কে দেখতে পায়।নয়না তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে নিজেকে ঠিক করলো প্রলয় নয়নাকে দেখে বললো,
~রেডি হয়ে নিচে এসে নাস্তা করে নেও কলেজের জন্য লেইট হয়ে যাবে তোমার।
নয়না এতোদিন পড়ালেখার কথা ভুলেই গিয়েছিল নতুন নতুন কলেজে ভর্তি হয়েই ২সপ্তাহ বন্ধ দিয়েছে।নয়নার চিন্তিত মুখ দেখে প্রলয় বললো,
~তোমার প্রিন্সিপালের সাথে আমি কথা বলে নিবো।তোমার টেনশন করতে হবে না।
নয়নার মুখে হাসি ফুটে উঠলো সে খুশি মনে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে কলেজ ড্রেস পরে বোরখাটা আর ব্যাগটা হাতে নিয়ে নিচে নেমে আসলো।প্রলয় সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।নয়না নিচে নেমে বললো,
~রেডি হয়েছি।
প্রলয় ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে নয়নার দিকে তাকালো মেয়েটাকে কলেজ ড্রেসে আরো পিচ্চি লাগছে।প্রলয় বললো,
~নাস্তা করে রওনা দিবো।রত্না খালা নাস্তা টেবিলে দিয়ে দিন।নয়না,আমার আগের কাজের লোকটা গ্রামে চলে গেছে এই খালা নতুন এসেছে।
নয়না মাথা দুলিয়ে চেয়ারে বসে পরলো রত্না খালা টেবিলে খাবার রেখে চলে গেলেন।নয়না আর প্রলয় খাবার মুখে দিলো প্রলয় তো খাচ্ছে কিন্তু নয়না খাবার মুখ থেকে বের করে ফেললো তা দেখে প্রলয় বললো,
~কী হয়েছে?
নয়না বললো,
~পরোটা এতো শক্ত কেন?প্রহেলী আপু কতো নরম পরোটা বানাতো আর সবজি তো একদম বাজে।
প্রলয় বুঝতে পারলো নয়নার এরকম খাবার পছন্দ করেনি প্রলয়ের তো সব খাবারই চলে।নয়না চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো তারপর চলে গেলো রান্নাঘরে।প্রলয় তা দেখে বললো,
~তুমি কী রান্না করতে পারো?
নয়না বললো,
~প্রহেলী আপু সব শিখিয়েছে।SSC এর পর ছুটির দিন গুলোতে আপু সব শিখিয়েছে।
প্রলয় আলতো হেসে আবার বসে পরলো।নয়না নিজ কাজে লেগে গেলো সে মনে মনে বললো,
~কাল থেকে তাড়াতাড়ি উঠে রান্নাটা সেই করবে।
পরশ অফিসের জন্য বের হতে যাবে তখনই প্রহেলী এসে বললো,
~একটা কথা আছে আপনার সাথে?
পরশ বললো,
~বলো।
প্রহেলী বললো,
~বাড়ির পাশে একটা স্কুল আছে সেখানে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে যদি আপনি অনুমতি দিন তাহলে সেখানে একটা সুযোহ নিতে চাই।
পরশ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
~তোমার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে করো আমি কোনো বাঁধা দিবো না।
প্রহেলী খুশি হয়ে পরশকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ধন্যবাদ মাও আমাকে অনুমতি দিয়েছেন।
পরশ বললো,
~All the best.আমি জানি তুমি সব কিছুতে সেরা এটাও handle করতে পারবে।

_________________

পরশ অফিসের জন্য বের হয়ে যাওয়ার পর প্রহেলী ঘরের সমস্ত কাজ শেষ করে মায়েদের কাছে চলে গেলো।রুমানা তালুকদার প্রহেলী কে দেখে বললেন,
~প্রহেলী,আজ আমার বোন আসবে তাই ভালোমন্দ নাস্তা তৈরি করো।
প্রহেলী বললো,
~অবশ্যই মা।কিন্তু খালাম্মা আমাদের বিয়েতে কেন আসিনি?
রুমানা তালুকদার বললেন,
~না এসেছে তাই ভালো হয়েছে অনেক কথা বলে আজ আসছে তাই আমার অসহ্য লাগছে।আমার বোন যদি কোনো কথা বলে দেয় তোমাদের তাহলে তোমরা কষ্ট পাবে না তো?
আমেনা সিকদার বললেন,
~নাহ আপা কী বলছেন?আমরা কেন কষ্ট পাবো সব ঠিকই হবে।
বিকেলবেলা কলিংবেল বেজে উঠলো প্রহেলী দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেলো একজন মহিলা দাড়িয়ে আছে।প্রহেলী সালাম দিয়ে বললো,
~আপনি কে?
তখনই পিছন থেকে রুমানা তালুকদার বলে উঠলেন,
~রুম্পা তুই এসে পরেছিস?
রুম্পা বেগম প্রহেলীকে ঠেলে বাসার ভিতরে ঢুকে পরলো আর বললো,
~আপা,কেমন আছিস?আমাকে তো ভুলেই গিয়েছিস ছেলের বিয়ে একা একা করে ফেললি।
রুমানা তালুকদার বিরক্তি নিয়ে বললেন,
~সেসব ছাড় আমার প্রহেলীকে দেখ আগে।প্রহেলী এখানে আয়।
প্রহেলী ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো রুম্পা বেগম বললেন,
~আপা,একটা মাত্র ছেলে তোমার আরেকটু খোজখবর নিয়ে বিয়ে করালে কী হতো?
রুমানা তালুকদার বললেন,
~কোটিতে একজন আমার প্রহেলী মা।
রুম্পা বেগম বললেন,
~আচ্ছা সেসব ছাড়ো তা প্রহেলী কেমন আছো?
প্রহেলী হাসি দিয়ে বললো,
~ভালো আছি খালাম্মা। আপনি কেমন আছেন?
রুম্পা বেগম বললেন,
~আছি বেশ ভালো।জানো তো আপা আমি নতুন বাসায় উঠেছি ধানমন্ডিতে।তুমি কিন্তু একদিন যাবে আর নিরব তো আমেরিকা যাচ্ছে।
রুমানা তালুকদার বললেন,
~তাই নাকি?
রুম্পা তালুকদার বললেন,
~হ্যাঁ।
তখনই আমেনা সিকদার সেখানে উপস্থিত হলেন রুম্পা বেগম তাকে দেখে বললেন,
~উনি কে আপা?
রুমানা তালুকদার বললেন,
~আমার আরেক বোন প্রহেলীর মা।
রুম্পা বেগম বললেন,
~নিশ্চই বেড়াতে এসেছেন।
প্রহেলী বললো,
~না খালাম্মা মা এখানেই থাকবেন।
রুম্পা তালুকদার বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললেন,
~তোমার মাকে কী যৌতুক হিসেবে নিয়ে এসোছো।আর আপা এসব কী?
রুমানা তালুকদার বললেন,
~তুই এসব কী বলছিস?
রুম্পা বেগম বললেন,
~কী আর বললাম?তোমার সংসার তুমিই নষ্ট করছো।
প্রহেলী বললো,

______________

~এরকম তো কিছুই হয়নি যে আপনি এভাবে কথা বলছেন খালাম্মা। মা আমার সাথে থাকলে কেন সংসারে অশান্তি হবে?
রুম্পা তালুকদার বললেন,
~বাহ ভালোই তো কথা শিখেছো দেখছি।
রুমানা তালুকদার কিছু বলবেন তার আগেই পরশ বলে উঠলো,
~আপনি আমার বউয়ের সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?
তার পাশে দাড়ানো আছে নয়না আর প্রলয় তারা তো দেখা করতে এসেছিল এসব দেখে তারা থমকে যায়।
নয়না আমেনা সিকদারকে গিয়ে বললো,
~বড় মা,তুমি রুমে চলো।
আমেনা সিকদার আর কিছু না বলে নয়নার সাথে চলে যায়।রুমানা তালুকদার বললেন,
~রুম্পা তুই কী আমার সংসারে অশান্তি করতে এসেছিস?দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
রুম্পা বেগম বললেন,
~আপা তুমি এসব কী বলছো?আমি এরকম করবো।
পরশ বললো,
~অনেক তামাশা করেছেন।আপনি কেন আমার বাসায় আসেন?মা তোমার কী মনে নেই যখন বাবা মারা যায় তখন এই মহিলা আমাদেরকে একটা ফোনও করতো না।তাদের বাসায় একদিন আমরা গিয়ছিলাম তখন এই মহিলার স্বামী আমাদের অপমান করে বলেছিলেন।আমরা টাকার জন্য তাদের বাসায় গিয়েছি আরো কতো কী?
পরশের গলা ধরে এলো কথা গুলো বলার সময় প্রলয় পরশের কাঁধে হাত রাখলো।প্রহেলীর চোখ বেয়ে পানি পরছে রুমানা তালুকদার বললেন,
~বোনকে তো ভোলা যায় না তাই ক্ষমা করে দিয়েছিলাম কিন্তু আজ যা করেছে তার জন্য ক্ষমা হয় না।রুম্পা আমার বাসায় তই আর কোনোদিন আসবিনা।
বলেই সে রুমে চলে যায় পরশও নিজ রুমে চলে যায় প্রহেলী পরশের সাথেই চলে আসে।প্রহেলীর অনেক খারাপ লাগছে এসব নাহলে কী খুব খারাপ হতো?

চলবে

#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৪
পরশ রুমে এসে শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলে দেয় দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পরলো।চোখ দিয়ে কিছু নোনাজল গড়িয়ে পরলো অতীতের কিছু বেদনাদায়ক পৃষ্ঠা তার সামনে ভাসছে মনটা বিষাদে ভরে যাচ্ছে তার।যদি জানতো এখন বাসায় ফিরলে এতোটা কষ্ট অনুভব করবে তাহলে বাসায় ফিরতো না।পরশ মাথা ছেড়ে দিয়ে হাঁটুতে মুখ গুজে বসে রইলো প্রহেলী রুমের ভিতর প্রবেশ করতেই পরশকে এভাবে দেখে তার হ্রদপিন্ডটা কেঁপে উঠলো।প্রহেলী ধীরপায়ে পরশের কাছে বসে পরলো প্রহেলীর অস্তিত্ব টের পেয়ে পরশ প্রহেলীকে জড়িয়ে ধরলো।প্রহেলীর চোখ বেয়ে পানি পরছো এই মানুষটার কষ্ট দেখে তার মন চাইছে সবকিছু শেষ করে দিতে।প্রহেলী বললো,
~হয়েছে তো এরকম করলে মা আরো কষ্ট পাবে।আপনি কী তাই চান?
পরশ প্রহেলীকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~জানো প্রহেলী,বাবা যখন মারা যায় তখন আমি সবে
মাত্র এসএসসি দিয়েছি রেসাল্টও পাবলিশ হয়নি।যেদিন পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফিরে আসলাম সেদিন বাবা বাজার থেকে বড় একটা ইলিশ মাছ এনে মায়ের হাতে দিয়ে বলেছিল,
“আমার ছেলের জন্য আজ ইলিশ পোলাও রাঁধবে আর সাথে খাসির মাংস ছেলেটা কতো কষ্ট করে পরীক্ষা গুলো শেষ করলো”
বাবার কথা মতো মা সবকিছু করে দুপুরের দিকে বাবা ফিরে আসলেন সেদিন শেষবার আমি, মা, বাবা একসাথে খাওয়া-দাওয়া করি।বাবা খাবারের পরপরই বাসা থেকে বের হয়ে দোকানে চলে যায় বিকেলের দিকল বাবা ফিরে আশে কিন্তু নিজ পায়ে নয় দুজন মানুষের কাঁধে চড়ে।হার্ট এ্যাট্যাক করে মারা যায় আমার বাবা সেদিন থেকে আমার নতুন সংগ্রাম শুরু হয় দোকান সামলানোর পাশাপাশি পড়াশোনাও শুরু করি।পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি পাই তাই আজ সুখের দিন আমাদের এসব আত্মীয়স্বজন তখন কোথায় ছিল?আমার মা সবকিছু একা সামলিয়েছেন আমি নিজের আর মায়ের কারণে আজ এখানে।
প্রহেলী চুপ করে পরশের কথা গুলো শুনলো তারপর বললো,
~জীবনের পথচলা অনেক কঠিন আমাদের সেই কঠিন পথকেই সহজ করে নিতে হয় নিজের অদ্যম চেষ্টা দিয়ে।এখন মায়ের কাছে চলুন মাও তো কষ্টে আছে তাকে কী আপনার সামলাতে হবে না?
পরশ বললো,
~আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
প্রহেলী হাসিমুখে বললো,
~ঠিক আছে।
প্রহেলী রুমানা তালুকদারের রুমে গিয়ে দেখলো সে জায়নামাজে বসে আছেন।প্রহেলীকে দেখে সে জায়নামাজ ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,
~আরে প্রহেলী, নয়না আর প্রলয় এসেছে ওদের জন্য নাস্তা রেডি করো।
প্রহেলী বললো,
~আজ আপনার হাতের নাস্তা খেতে মন চাইছে আপনি আজকে স্পেশাল কিছু করেন।
রুমানা তালুকদার বললেন,
~অবশ্যই আমেনা আপাকে একটু দেখে আসি।
প্রহেলী বললো,
~তাহলে আজ দুইমা একসাথে নাস্তাটা তৈরি করে ফেলেন।
রুমানা তালুকদার বললেন,
~আচ্ছা তুমি যাও ওদের সাথে কথা বলো।আমি দেখছি সব।
প্রহেলী হাসি-মুখে সোফার রুমে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।কিছুক্ষন পর পরশ এসে পরলো আর সে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো রুমানা তালুকদার আর আমেনা সিকদার কথা বলছে আর কাজ করছে।পরশ একটু এগিয়ে গিয়ে রুমানা তালুকদারকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~মা,তুমি কী কষ্ট পেয়েছো?
রুমানা তালুকদার বললেন,
~নাহ তুই যা করেছিস ঠিক করেছিস।আমার ভুল ছিল
পরশ বললো,
~না মা তুমি তো সরল তাই এসব মানুষদের উল্টো কথা বুঝতে পারো না।
রুমানা তালুকদার বললেন,
~তুই সবার সাথে বসে পর আমরা নাস্তা নিয়ে আসছি।
পরশ রুমানা তালুকদারকে ছেড়ে দিয়ে আমেনা সিকদারের দিকে তাকিয়ে হেসে বাহিরে চলে গেলো।
আমেনা সিকদার বললেন,
~লাখে একটা ছেলে আপনার।কতোটা খেয়াল রাখে সবার।
রুমানা তালুকদার বললেন,
~আমার বউমাও লাখে একটা বুঝতে পেরেছেন।
আমেনা সিকদার আর রুমানা তালুকদার হেসে উঠলেন।

__________________

প্রলয় আর পরশ অফিসের নানান বিষয় নিয়ে কথা বলছে। নয়না আর প্রহেলী তাদের রেখে রুমে চলে আসলো নয়না পা গুটিয়ে বিছানায় বসে পরলো প্রহেলী ঠিক তার সামনে নয়না বললো,
~আমি বড় মাকে কিছুদিনের জন্য নিয়ে যাই?
প্রহেলী বললো,
~এখন না কিছুদিন পর মা এখন রাজি হবে না।
নয়না বললো,
~মাহিন ভাইয়ের খবরটা শুনেছো মা আমাকে ফোন করে বলেছে।
প্রহেলী বললো,
~তোর দুলাভাই সব খোজ-খবর নিয়েছে মেয়ে ভালো আর বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ হলো মেয়ের বাবা যৌতুক দিতে পারেনি তাই।
নয়না বললো,
~দেখেছো আপা মানুষ কতো খারাপ টাকার জন্য এরকমটা করে কেউ?
প্রহেলী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~টাকার নেশারে ছোট অনেক খারাপ নেশা।
নয়না বললো,
~তোমার কী মনে হয় বাবা রাজী হবে?
প্রহেলী বললো,
~সন্তানের সুখের জন্য রাজী হবে আর মেয়ে অনেক ধার্মিক আমার মনে হয় সংসার আগলে রাখতে পারবে।আর রইলো কথা টাকা-পয়সার সেটা দিয়ে কী হবে বল?আজ আছে কাল নেই।
নয়না বললো,
~দেখতে কী সুন্দর?
প্রহেলী ফিক করে হেসে বললো,
~অনেক সুন্দর।
নয়না বললো,
~তাহলে মাহিন ভাইয়ের মতো ছেলেকে কেন পছন্দ করলো?
প্রহলী চোখ গরম করে বললো,
~কেন রে আমার ভাই কী ভালো না?
নয়না বললো,
~তা তো বলোনি।
একটুপর সবাই একত্রিত হয়ে নাস্তা করতে লাগলো প্রলয় বললো,
~আমি ভাবছি তোদের বাসার সামনেই একটা বাসা নিয়ে নেই তাহলে কোনো প্রবলেম হবে না।
পরশ বললো,
~এতো বেশ ভালো কথা আমিও তাই ভাবছিলাম।
প্রলয় বললো,
~আর নয়নার কলেজ+কোচিং টাও সামনে এখান থেকে। আর ১০দিন পর আমাকে দেশের বাহিরে যেতে হবে তাই নয়নাকে তোরা দেখেও রাখতে পারবি।
প্রলয়ের দেশের বাহিরে যাওয়ার কথা শুনে নয়নার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।সে প্রলয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রলয় ভাবলেশহীন ভাবে খাচ্ছে।রুমানা তালুকদার বললেন,
~নতুন বউ রেখে কেউ এভাবে দূরে থাকে।
প্রলয় হেসে বললো,
~আন্টি কিছুদিনের ব্যাপার কাজ শেষ করে চলে আসবো।
নয়না নীরবতা পালন করছে সে কিছুই বলছেনা প্রলয় আবার বললো,
~আগামীকাল একটা বাসা দেখতে যাবো নয়নার পছন্দ হলে সেটাকেই ঠিক করে ফেলবো।দ্রুত সবকাজ করে ফেলাই ভালো।
প্রহেলী বললো,
~হুম তাই ঠিক হবে।আর নয়নার চিন্তা আপনি করবেন না সব ঠিক ভাবেই হয়ে যাবে।
প্রলয় বললো,
~হুম আল্লাহ ভরসা।

______________

নয়না আর প্রলয় রাতের খাবার খেয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো নয়না কোনো কথা বলছেনা।সে চুপচাপ বসে আছে প্রলয় বললো,
~কোনো সমস্যা নয়না?
নয়না বললো,
~কোনো সমস্যা নেই আর সমস্যা থাকলেও আপনাকে কেন বলবো?আপনি তো আর আমাকে কিছুই বললেন না।
প্রলয় বুঝতে পারলো নয়না রেগে আছে প্রলয় নয়নাকে বললো,
~কাজের জন্য যাচ্ছি কাজ শেষ করেই চলে আসবো।
নয়না বললো,
~আমি মানা করেছি যান আপনি আমি কী আপনাকে ধরে রেখেছি?যত্তসব ঢঙ্গ
প্রলয় বললো,
~আমার ফ্রেন্ডের জন্য কিছু কিনতে হবে কালকে শপিংমলও যেতে হবে।তোমারও যেতে হবে।
নয়না বললো,
~পুরুষ মানুষের জিনিস কিনতে আমি যাবো কেন?
প্রলয় বললো,
~পুরুষ মানুষ কে বললো?আরে সে তো মেয়ে আর মেয়ের জিনিস তো আমি কিনতে পারবোনা।
নয়না বললো,
~আপনার মেয়ে ফ্রেন্ড আছে।
প্রলয় বললো,
~হ্যাঁ মেয়ে ফ্রেন্ড আমি তো ওর বাসায়ই থাকবো।
নয়না বললো,
~যেখানে মন চায় সেখানে থাকবেন তাতে আমার কী?
প্রলয় বললো,
~পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে।
নয়না বললো,
~দেখেন আপনার শার্টে তো আগুন লাগেনি।
প্রলয় বললো,
~আমার শার্টে নয় তোমার মন পুড়ছে।
নয়না বললো,
~আপনার যেমন মেয়ে ফ্রেন্ড আছে তেমনি আমারো ছেলে ফ্রেন্ড আছে।
নয়নার কথা শুনে প্রলয় গাড়ি থামিয়ে দিলো আর বললো,
~তোমার ছেলে ফ্রেন্ড আছে?কীভাবে তুমি তো গার্লস কলেজে পড়ো।
নয়না বললো,
~কোচিংয়ে তো আছে।
প্রলয় বললো,
~কোচিং যাওয়া বন্ধ বাসায় টিচার রেখে দিবো।
নয়না বললো,
~এখন জানি কার মন পুরছে।
প্রলয় চিৎকার করে বললো,
~একদম এসব বিষয় নিয়ে মজা করবে না।তোমার সাহস কীভাবে হয় অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলার।
আমি কী মরে গেছি?
প্রলয় রাগে ফুসছে নয়না তা দেখে ভয় পেয়ে গেলো সে প্রলয়কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।এতে প্রলয় অনেকটাই অবাক হয়ে যায় সে নয়নাকে বললো,
~কী হয়েছে?

_______________

নয়না বললো,
~এমন ভাবে কথা বলছেন আপনি বলেছেন তাই আমিও বলেছি।
প্রলয় নিজেকে ঠান্ডা করে বললো,
~সরি আর এমন হবে না।তুমি তো জানো আমি রেগে যাই।
নয়না প্রলয়ের শার্ট খামচে ধরে বললো,
~আপনি কেন চলে যাচ্ছেন আমাকে একা করে?
প্রলয় বললো,
~আরে পাগলী আমি তো এসে পরবো তুমি কেন কাঁদছো?
নয়না বললো,
~কেন জানি অনেক খারাপ লাগছে?
প্রলয় আলতো হেসে নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
~খুব তাড়াতাড়ি এসে পরবো সোনা।
সকালে প্রলয়,নয়না,প্রহেলী,পরশ বাসা ফাইনাল করে শপিংমলে চলে গেলো।কিছু কেনাকাটা করে তারা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো
তখনই প্রহেলীর ফোনে আমরুল সিকদারের ফোন আসলো প্রহেলী ফোন রিসিভ করতেই আমরুল সিকদার বেশ গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
~বাসায় আসো সবাইকে নিয়ে।যত তাড়াতাড়ি পারো চলে আসো।
প্রহেলী বললো,
~কী হয়েছে?
আমরুল সিকদার বললেন,
~তোমরা বাসায় আসো তারপর বলছি।
সে ফোন রেখেদিল প্রহেলী বললো,
~পরশ সিকদার ভিলায় চলেন।
পরশ বললো,
~কী হয়েছে?
নয়না বললো,
~কোনো সমস্যা আপু?
প্রহেলী বললো,
~তাড়াতাড়ি চলো সেখানে গিয়েই সব জানতে পারবো।
পরশ আর কোনো কথা না বলে গাড়ি ঘুরিয়ে রওনা হলো সিকদার ভিলায়।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে