#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১১
তারা ৪জনই রাতের খাবার শেষ করে হোটেলে চলে আসলো। ১২টা বাজতে ৫মিনিট বাকি তাই প্রলয় নয়নাকে নিয়ে হোটেলের পিছন গেইট দিয়ে চলে যায়।
পরশ প্রহেলীর চোখ একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয় প্রহেলী অনেকটাই অবাক হয়ে বললো,
~কী করছেন চোখ কেন বাঁধছেন?
পরশ বললো,
~হুসস একদম চুপ থাকো সব বুঝতে পারবে।
প্রহেলীর হাত ধরে পরশ তাকে হোটেলের ভিতর প্রবেশ করালো।তারপর পরশ প্রহেলীর চোখ থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিলো প্রহেলী পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো পুরো হোটেল অন্ধকারে আচ্ছন্ন।প্রহেলী ঘাবরে গিয়ে আশেপাশে পরশকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পেলো না।হঠাৎ হোটেলের সব লাইট জ্বলে উঠলো আর সবাই একসাথে বলে উঠলো,
~Happy birthday to you.
প্রহেলী অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।পুরো হোটেল সুন্দর করে সাজানো প্রহেলী তো ভুলেই গিয়েছিল আজ তার জন্মদিন।নয়না প্রহেলীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~Happy birthday আপুনি।
প্রহেলী বললো,
~ধন্যবাদ।
প্রলয় এগিয়ে এসে বললো,
~Happy birthday.এটা তোমার জন্য
হাতে থাকা বক্সটা এগিয়ে দিলো সে প্রহেলীর দিকে
প্রহেলী বললো,
~ধন্যবাদ।আর আপনাদের সবার মনে ছিল
তখনই পরশ বললো,
~কেন মনে থাকবেনা?
প্রহেলী পরশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~মা,দাদী,ফারিহা,আর নয়না ছাড়া কেউ wish করেনা তাই এমনটা বললাম।
পরশ বললো,
~এখন থেকে সবার মনে থাকবে।
প্রহেলী মুচকি হেসে সামনে এগিয়ে গেলো পরশ প্রহেলীর হাত শক্ত করে ধরে বললো,
~Happy birthday proheli my queen.
তারপর প্রহেলী কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলো।বাড়ির সবার সাথে আর ফারিহার সাথে ভিডিও কলে কথা বললো।সবাই তাকে wish করলো সব কিছু শেষে পরশ আর প্রহেলী নিজ রুমে এসে পরলো।রুমে গিয়ে তো প্রহেলীর মুখ হা হয়ে গেলো পুরো রুম গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো।পরশ প্রহেলীর হাত একটা প্যাকেট দিয়ে বললো,
~এটা পরে আসো।
প্রহেলী হাতে থাকা প্যাকেটটা দেখে বললো,
~এতে কী আছে?
পরশ বললো,
~ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে নেও।
প্রহেলী ওয়াশরুমে গিয়ে প্যাকেট খুলে দেখলো একটা কালো গাউন।প্রহেলীর মুখে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো সে আর দেরি না করে গাউনটা পরে নিলো সাথে আছে কালো পাথরের গহনার সেট।প্রহেলী চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে বাহিরে এসে দাড়ালো পরশ তখন মোবাইল নিয়ে বসে আছে প্রহেলী বললো,
_____________
~আমি রেডি।
প্রহেলীর কন্ঠস্বর শুনে পরশ মাথা তুলে তার দিকে তাকালো।পরশ প্রহেলীকে দেখে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো পরশ ধীর পায়ে উঠে প্রহেলীর একদম কাছে গিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।প্রহেলী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো পরশ প্রহেলীকে ছেড়ে দিয়ে কোলে তুলে নিলো।প্রহেলী পরশের দিকে তাকালো পরশ ধীর পায়ে হেঁটে বারান্দায় নিয়ে গেলো।প্রহেলীকে কোল থেকে নামিয়ে দোলনায় বসিয়ে দিলো প্রহেলীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
~প্রহেলী,তুমি জানো আমি কোনদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম?
প্রহেলী ভ্রুকুচকে বললো,
~জানবো না কেন?৬ মাস আগে বাবাই তো আপনাকল বাসায় নিয়ে গিয়ে ছিল?
পরশ হালকা হেসে বললো,
~নাহ তোমাকে আমি প্রথমদিন দেখেছিলাম ৭মাস আগে তাও রাস্তায়। তুমি ভার্সিটি যাচ্ছিলে তখন তুমি একটা বস্তির বাচ্চাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছিলে।সেদিন থেকেই আমি তোমার সব ইনফরমেশন কালেক্ট করতে থাকি।
প্রহেলী বললো,
~এর মানে আমার পিছে পিছে ঘুরছিলেন তাও আমার অগোচরে।
পরশ হেসে বললো,
~জ্বী ম্যাডাম। এই কাজটা করেই তো তোমাকে বাঁচাতে পেরেছি।
প্রহেলী বললো,
~বাঁচাতে পেরেছেন মানে?
পরশ দাড়িয়ে পরলো তারপর বললো,
~তোমার বাবা তোমাকে মারার প্লান করেছিল।
প্রহেলীর জন্য এতটুকু কথাই যেনো যথেষ্ট ছিল তাকে গুড়িয়ে তোলার জন্য তার নিজ বাবা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।এতোটা ঘৃণা করেন আমায় নিজ মেয়েকে এতোটা ঘৃণা করেন সে।
পরশ বললো,
~সেদিনই আমি তোমার বাবার সাথে দেখা করি আর বলি যে তোমাকে যাতে কোনো ধরনে আঘাত না করে।আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর সকল সম্পত্তি তার নামে করিয়ে দিবো।কিন্তু আমি জানি সে কতোটা নিচ তাই আমিই তোমাকে বলি সকল সম্পত্তি ভাগ করে দিতে।
প্রহেলী নিশ্চুপ হয়ে সব কথা শুনলো পরশ প্রহেলীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার গালে হাত রেখে বললো,
~আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্য করেছি তুমি কী আমার উপর অভিমান করেছো।
প্রহেলী নিজ নীরবতা ভেঙ্গে বললো,
~আপনি তো আমার পর হয়ে কতোটা ভালোবেসেছেন আর আমার বাবা আমাকে কতোটা ঘৃণা করেছে।আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই আর আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আপনার সাথে কিছু একটা চলছে তাই তো চুপ ছিলাম।
বলেই সে পরশকে জড়িয়ে ধরলো পরশ প্রহেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
রাত গভীর হচ্ছে ঘুম নেই প্রহেলীর চোখে পরশ তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। প্রহেলী ঢাকা ফেরার পরপরই সে আমরুল সিকদারের সাথে কথা বলবে।
প্রলয় ঘুমিয়ে পরেছিল কিন্তু কারো ফুঁপানোর আওয়াজ শুনে ভেঙ্গে যায় প্রলয় সোফা থেকে উঠে বিছানার দিকল তাকিয়ে দেখলো নয়না কাঁদছে। প্রলয় তাড়াহুড়ো করে বিছানায় গিয়ে বসে নয়নাকে বললো,
~নয়না কী হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন?
বলতে বলতে সে নয়নার শরীরে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো নয়নার অনেক জ্বর উঠেছে।
_____________
প্রলয় নয়নাকে নিজের কাছে ঘুরিয়ে বললো,
~বলেছিলাম এতো পানিতে ঝাঁপাঝাপি করো না কিন্তু আমার কথা কে শুনে?
প্রলয় নয়নাকে বিছানায় ভালোমতো শুইয়ে দিয়ে কম্বল দিয়ে তাকে ডেকে দিলো।প্রলয় হোটেল রিসিপশনে ফোন করে বললো,
~এক বাটি ফ্রেশ পানি ৩০৪ নং রুমে পাঠিয়ে দিন আর একটা থার্মোমিটারের ব্যবস্থা করুন।
প্রলয় ফোন রেখে আবার নয়নার কাছে গিয়ে বসে পরলো হঠাৎ নয়না উঠে বসে প্রলয়ের উপর বমি করে দেয়।সবচেয়ে আজব ব্যাপার হলো প্রলয় এতে কোনো রাগ দেখালো না উল্টো নয়নাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে মুখ-হাত ধুইয়ে দিলো।নয়নার জামা-কাপড় নষ্ট হয়নি বলে প্রলয় মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া জানালো।
বেডশিট নিজেই চেঞ্জ করলো হোটেলের কার্বাডে একস্ট্রা বেডশিট ছিল।তারপর নয়নাকে শুইয়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দরজায় কেউ নক করলো।প্রলয় দরজা খুলে দেখলো হোটেলের স্টাফ প্রলয় হাত থেকে বাটিটা আর থার্মোমিটার নিয়ে নিলো তখনই সেই ছেলেটি বললো,
~স্যার,জ্বরের ঔষধটা।
প্রলয় বললো,
~ঔষধ কোথা থেকে পেলো।
সেই ছেলেটি বললো,
~আসলে অনেক guest দেরই এই প্রবলেম টা হয়ে যায় তাই আমরা ডাক্তারের সাথে কানেক্ট হয়েই থাকি কিন্তু রাত হওয়ার কারণে ডাক্তার আসতে পারিনি।কিন্তু ফোন করে এই ঔষধটার নাম জেনে নিয়েছি।
প্রলয় বললো,
~আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রলয় দরজা বন্ধ করে দিলো নয়নার কাছে গিয়ে জলপট্টি দিতে লাগলো থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করলো।নয়নার কোনো হেলদোল নেই প্রলয় সারা রাত নয়নার সেবায় কাটিয়ে দিলো।
সকালে আধো আধো চোখ খুলে নয়না প্রলয়কে নিজের অনেক কাছে পায়।দূর্বলতার কারণে সে উঠে বসতে পারলোনা প্রলয়ের ঘুমটাও ভেঙ্গে যায়।প্রলয় নয়নাকে দেখে বললো,
~তোমার শরীরটা এখন কেমন?
নয়না বললো,
~অনেক খারাপ লাগছে মাথা ব্যাথা করছে।
প্রলয় বললো,
~ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নেও দেখবে ভালো লাগবে।
নয়না বললো,
~হেটে যেতে পারবো না।
প্রলয় নয়নাকে কোলে তুলে নিলো তারপর ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে বললো,
~ফ্রেশ হয়ে বের হও।
প্রলয় নাস্তার অর্ডার দিয়ে পরশকে ফোন দিলো পরশ ফোন উঠাতেই প্রলয় বললো,
~নয়নার ভীষন জ্বর আমি রুমেই নাস্তার অর্ডার দিয়েছি তোরা চলে আয়।
পরশ বললো,
~কী বলিস?নয়নার জ্বর
প্রহেলী পরশের দিকে তাকালো পরশ আশ্বাস দিলোসব ঠিক আছে।
___________
প্রহেলী নয়নার পাশে বসে আছে নয়নার শরীরটা অনেকটাই ভালো।কিন্তু নয়না ঢাকায় ফিরতে চায় আর পরশও তাই চাইছে।প্রলয় বললো,
~তাহলে ১ঘন্টা পর রওনা হই।
পরশ বললো,
~হুম
নয়না বললো,
~আমার জন্য আপুরা কেন যাবে তারা থাকুক না।
প্রহেলী বললো,
~একদমই না আর আমরা দুজনই আমাদের বাসায় যাবো এখান থেকে।মা আর দাদীও সেই বাসায়।
প্রলয় বললো,
~তোমাদের বাসায় যেতে হবে না।
প্রহেলী বললো,
~আমি যা বলিছি তাই হবে।
১ঘন্টা পর তার রওনা হলো প্রহেলী নয়নাকে জড়িয়ে ধরে আছে নয়নার জ্বরটা আরো বেড়েছে।
প্রলয় অনেটাই চিন্তিত ডাক্তার দেখাতেই হবে না হলে প্রবলেম বাড়বে।তাই প্রলয় বললো,
~ঢাকায় পৌছে আগে ডাক্তার দেখাতে হবে।
পরশ বললো,
~হুম ঠিক বলেছিস।
প্রহেলী বললো,
~জ্বর কিন্তু বেড়েছে।
প্রলয় কিছু না বললো না সে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)