মনের অন্তরালে পর্ব -০৬

0
1254

#মনের অন্তরালে
#পর্ব_৬
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

রুমে এসে বসে রইলাম। মাথা কাজ করছে না আমার।কে এই মানুষ টা। এইরকম এসএমএস কেন দিল আমাকে? আচ্ছা এসব রিহান করছে না তো? কিন্তু রিহান এসব কেন করবে,সে তো আমাকে ভালোবাসে না। তার কাছে থেকে এসব আশা করা যায় না। তাহলে কে করছে এসব?এসব ভাবতে ভাবতেই আপু আমার রুমে এলো। এসে বসলো।

কি ব্যাপার মেহুল? তুই কি ভাবছিস? কিছু হয়েছে কি আবার?

কিছু না আপু। এমনিতেই একটা কথা ভাবছিলাম। আশিক ভাই কে এইভাবে কে মারলো?
আমার কথা শুনে আপু বললো,
কে মারে মারুক, সেটা জেনে তোর তো কোন কাজ নেই। তুই এখন একটু ঘুমা তো। তাহলে ভালো লাগবে তোর।

ঠিক আছে, তুমি যাও আমি ঘুমাই তাহলে। আপু চলে গেল। আমি দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আজকে ও রাত একটার দিকে ফোনের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে বসে হাতে ফোনটা নিলাম। নিয়ে দেখি সেই আননোন নাম্বার থেকেই ফোন এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করলাম। আজ জানতে হবে আমাকে যে ফোনের ওপাশের মানুষ টা কে?

হ্যালো কে বলছেন আপনি?
কোন উত্তর এলো না। আমি আবার বললাম,
সন্ধ্যার দিকে আপনি আমাকে একটা এসএমএস করেছিলেন কিন্তু কেন?কে আপনি? আপনার পরিচয় দিন তাড়াতাড়ি।
আমার এতো গুলো প্রশ্ন শুনে হয়তো ওপাশের মানুষ টা জ্ঞান হারালো। ফোনটাও কেটে গেল। আমি হা করে বসে রইলাম। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে আমার। দুই দিন ধরে কে এই মানুষ টা যে গভীর রাতে ফোন করছে আবার কোন কথা না বলেই ফোন কেটে দিচ্ছে। কাল কে তো আপু কে বলতেই হবে এই কথা টা। ফোনের ব্যাপার টা কালকের জন্য স্থগিত রেখে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙল আমার। এখনো ভালো করে সূর্যের আলো ফুটে উঠে নি। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন টা হাতে নিলাম।দেখি কিছুক্ষণ আগেই একটা এসএমএস এসেছে। ওপেন করলাম এস‌এম‌এস টা।

“রোজ রাতে ফোন করছি দেখে বিরক্ত হচ্ছো তাই না? কিন্তু তুমি বিরক্ত হলেও করার কিছু নেই কারণ তোমার গলার আওয়াজ টা শুনার জন্য সারাটা দিন বেকুল হয়ে থাকি আমি। রাতে যখন তোমার গলার আওয়াজ টা শুনি তখন মনে হয় তুমি আমার খুব কাছেই আছো।আর শোনো এই ফোনের ব্যাপারে কাওকে কিছু বলো না যেন।না, তোমার কিছুই হবে না মাঝখান থেকে আমাকে অস্থির করে রাখবে তুমি।”
আমি মাথায় হাত দিলাম।আজ আমি আপুকে ফোনের ব্যাপার টা বলবো এটা ওই লোকটা কি করে জানতে পারলো? এসএমএস দেখে তো ওপাশের মানুষ টাকে ছেলে বলেই মনে হচ্ছে। আবার কোন ছেলে জিন নয় তো? কথা টা মনে হতেই হাসি পেল আমার। জীনের কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? আমার মতো মেয়ে কে কেন জালাতে যাবে। তবে একটা ব্যাপার ভালো লাগছে যে ছেলেটা হয়তো আমাকে ভালোবাসে না হলে কি এইভাবে এসএমএস আর ফোন করতো না কি?এই ভাবে যদি আয়াশ ভাই আমাকে ভালোবাসতো তাহলে কতই না ভালো হতো। ধুর আমি কি ভাবছি, উনি আমাকে কেন ভালো বাসবেন।
আমি রুম থেকে বের হয়ে রাস্তার দিকে হাঁটতে গেলাম। সকাল বেলা হাঁটতে খুব ভালো লাগে আমার। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরে এলাম। বাসায় আসার পর মা আমাকে খেতে বসতে বললো। আমি গিয়ে আপু আর দুলাভাইয়ের মাঝখানে বসে পড়লাম। ওদের প্রেম করতে দেবনা আমি এখন। আপুর দিকে ওর রিয়েকশন টা কেমন হয়েছে সেটা বুঝার জন্য তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আপুর ঠোঁটের কোণে নিলচে কালো দাগ হয়েছে। এটা দেখে আপু কে জিজ্ঞেস করলাম,
আপু তোমার ঠোঁটে ওই কালো দাগ টা কিসের? কোন পোকা কামড়েছে না কি?
আপু আমার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে লাজুক হাসি হেসে বললো, হয়তো কোন পোকা কামড়েছিল। আমি এখন যাই তোরা খাওয়া কর। আমি পরে খাবো।বলেই আপু আর দাড়ালো না। সঙ্গে সঙ্গে উঠে চলে গেল। আমি আপুর কাহিনী কি বুঝলাম না। ঠোঁটে পোকা কামড়েছে এতে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে? পোকার সাথে কি আপু লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে গিয়েছিল না কি? হয়তো গিয়েছিল তাই এমন লজ্জা পেয়ে চলে গেল। আপুর যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। আমার কথা শুনে এদিকে দুলাভাই হাসতে শুরু করেছে। দুলাভাই কে হাসতে দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
দুলাভাই আপনি এতো হাসছেন কেন? আমি কি কোন জোকস্ বলেছি।
আমার কথা শুনে দুলাভাই বললো,
জোকস্ না তবে জোকসের মতোই।
আমি না বুঝে তাকিয়ে থাকলাম। তখন মা খাবার নিয়ে এলেন। আমি আপুর ব্যাপার নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে খেতে লাগলাম। খাওয়ার পর আমি পেনিসিলিন হাতে নিয়ে আপুর রুমে গেলাম। আমাকে দেখে আপু জিজ্ঞেস করল,
কিরে তুই এখানে এখন?
আমি আপুর পাশে বসে বললাম, আপু তোমার ঠোঁটে তো পোকা কামড়েছে তাই আমি পেনিসিলিন নিয়ে এসেছি। হাত টা সরাও আমি পেনিসিলিন লাগিয়ে দিচ্ছি। তোমার নিশ্চয়ই খুব ব্যাথা করছে তাই না।দেখিও আমি তোমার রুমে যদি পোকা টাকে খুঁজে পাই তাহলে মেরেই ফেলবো। আমার এমন কথা বার্তা শুনে আপু আমার হাত থেকে টান দিয়ে পেনিসিলিন টা নিয়ে বললো,
না বোন,তোর আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না। তুই যা আমি নিজেই এটা লাগিয়ে নিতে পারবো।আর আমার একটুও ব্যাথা করছে না তাই তুই যদি পোকা টাকে খুঁজে পাস তাহলে মারিস না। বেচারা কি করে জানবে যে আমার একটা উগান্ডা মার্কা বোন আছে।যে কিছুই বুঝে না।
আপুর কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম, আমাকে তুমি উগান্ডা মার্কা বললে আপু? কথা নেই তোমার সাথে। আমি চললাম তোমার রুম থেকে। তুমি ওই পোকা টাকে বিয়ে করে ওর সাথেই সংসার করো। তোমার সাহায্য করতে এলাম আর তুমি আমাকে উগান্ডা বললে হুহ। বলে আমি চলে গেলাম আপুর রুম থেকে। আমার চলে আসার পর আপু বিড়বিড় করে বললো,ওই পোকার সাথেই তো সংসার করছি সেটা কি আর তোকে বলতে হবে।
আমি নিচে মায়ের কাছে চলে এলাম। আমাকে দেখে মা বললেন,তোর ফুপি একটু পরেই আসছে আমাদের বাসায়। সাথে আয়াশ আর অর্থি ও আসছে। তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।অর্থি আজকেই ওর শশুর বাড়ী চলে যাবে তাই বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না।
মায়ের কথা শুনে আমি আমার রুমে চলে এলাম। রুমে এসে ভাবছি শাড়ি পরবো না কি থ্রী পিচ। কোন টা পড়লে ভালো হবে সেটাই ভাবছি। ধুর এতো কিছু ভেবে লাভ নেই আমি শাড়িই পরবো। কিছুক্ষণ পর শাড়ি পরে হালকা সাজুগুজু করে আমি রেডি। হালকা সবুজ রঙের শাড়ি পরেছি আর তার সাথে ম্যাচিং করে সবুজ রঙের চুড়ি। আমার কাছে আমাকে সুন্দর লাগছে।রেডি হয়ে নিচে এলাম আমি। এসে দেখি আয়াশ ভাই,অর্থি আপু আর ফুপি বসে আছে। দুলাভাই আসেনি।আয়াশ ভাই কে দেখি আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম না উনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন?
আমি গিয়ে ফুপি কে সালাম দিয়ে ফুপির পাশে বসলাম। ফুপি আমাকে বললেন, মাশাআল্লাহ আমার বউমা টাকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে। আমি ফুপির কথা শুনে হাসলাম শুধু।
আয়াশ মনে মনে ভাবছে,এই মেয়েটার সাথে কি করে খারাপ ব্যবহার করি আমি? ওকে দেখলেই তো নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।প্রতি মুহূর্তে প্রেমে পড়ে যাই।আর এতো সাজগোজ করার দরকার কি ছিল তার?ও কি জানেনা যে তার সাজ গোজ আরেকজনের হার্টবিট বাড়িয়ে দেয়।
আমি আয়াশ ভাই কে আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম,
কি ব্যাপার আয়াশ ভাই আমার প্রেমে পড়ে গেলেন না কি?
আয়াশ ঘোরের মধ্যেই বললো,
তোর প্রেমে তো আমি কবেই পড়েছি,,,,
কথা টা শুনে মনে হলো আমি সপ্ন দেখছি। তাই আবার জিজ্ঞেস করলাম, কি বললেন, আবার বলেন তো।
আমার প্রশ্ন শুনে আয়াশ ভাইয়ের হুশ এলো। হালকা কাশি দিয়ে বলল,
তুই কি আমার থেকে এই কথা টা এক্সপেক্ট করছিলি নাকি? ভুলে ও করিস না কারণ আমি এই কথা তোকে কখনো বলবো না।
এইবার মনে হলো আমি বাস্তবে আছি।কারন আয়াশ ভাই আমাকে এমন কথা কেন বলবে যখন ওনার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমি ফুপির পাশে চুপচাপ বসে রইলাম। আমার এমন চুপচাপ হয়ে যাওয়া দেখে অর্থি আপু মিটিমিটি হাসছে। আপুর হাসি দেখে বললাম,
আপু তুমি হাসছো কেন?
অর্থি আপু বললো, কিছু না এমনিতেই হাসছিলাম।
আপুর দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থাকলাম। আমার তাকানো দেখে আপু অবাক হয়ে বললো, এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন মেহুল?
আমি বললাম, না কিছু না।
তখন মা আমার পাশে এসে বসল।ফুপির সাথে আমার ব্যাপারে কথা বলতে লাগলো। আমি ওখানে আর বসে না থেকে উঠে বাইরে চলে আসলাম। ভাবছি, আয়াশ ভাই আমাকে কবে ভালো বাসবে?
কিন্তু কি করে ভালো বাসবে আমাকে?ওর তো ওই সাকচুন্নি গার্লফ্রেন্ড আছে তার জন্য তো আমাকে তার মনে জায়গাই দিবে না। এইসব ভাবতে ভাবতেই একটা গান মনে পড়ে গেল আমার। গান গাওয়ার উদ্দেশ্য রিহানের দেওয়া ধোকা। গুনগুন করে গাইতে লাগলাম,

তোর রক্তে মিইশা গেছে মিথ্যা বলার স্বভাব,,
কোন কারনে ছাইড়া গেলি দিবি কি তার জবাব,,
তোর রক্তে মিইশা গেছে মিথ্যা বলার স্বভাব,,
কোন কারনে ছাইড়া গেলি দিবি কি তার জবাব,,
বুকের ভেতর অনল আমার ভাটার মতন জলে রে,,
তোর কারনে চোখ দুটি হায় মোমের মতন গলে,,
চাইলাম তোর আলতো পরশ দিয়া গেলি না,,
আমার থেকে তোরে তুই কইরা নিলি ভাগ,,,😥😥
(চলবে……. কী)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে