#মনের অন্তরালে
#পর্ব_৩
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি
রাতে বাসার ছাদে গিয়ে বসে আছি। আকাশে আজ চাঁদ উঠেছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবছি এই কয়দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো। কিছুক্ষণ আগেই আমাকে আপুরা নিয়ে এসেছে, আয়াশ ভাই সাথে আসেনি। ওনার নাকি অফিসে কি এক জরুরি কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারে নি। কিন্তু আমি জানি এটা মিথ্যে কথা ছিল, উনি আমার সাথে না আসার জন্য এই মিথ্যে কথা বলেছেন।এখন হয়তো গিয়ে উনি ওনার ভালোবাসার মানুষটির রাগ ভাঙাবেন। হয়তো বলবেন এই বিয়ে টা উনি নিজে থেকে করেন নি, জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আচ্ছা, আয়াশ ভাইয়ের প্রেমিকা কি অনেক সুন্দরী? মনে হয় সে অনেক সুন্দরী। আমি যদি আজ সুন্দর হতাম তাহলে আয়াশ ভাই আমাকে বিয়ের রাতে ওভাবে অপমান করতেন না। বসে বসে এসবই ভাবছি তখন আপু ছাদে এসে আমার পাশে বসল।
কিরে, আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিস?
কিছু না আপু, আমার জীবনের কথাই ভাবছিলাম।
মন খারাপ করিস না আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
হুম, বলে আপুর বুকে মাথা রাখলাম। আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।
কিরে আয়াশ কি হয়েছে তোর?মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন?চিল কর, সবসময় যাকে চেয়েছিস তাকেই তো পেয়েছিস।
কি চিল করবো, ভাল্লাগে না।
শোন,ভালোই যখন লাগছে না তখন মেহুলের সাথে খারাপ ব্যবহার করলি কেন? বিয়ের রাতেই ডির্ভোস পেপার দিচ্ছিলি। শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দিলি, তার উপর অর্থি আপু কে শিখিয়ে দিলি যে, মেহুল কে যেন বলে যে তুই অন্য কাউকে ভালো বাসিস।
কষ্ট দিয়েছি বেশ করেছি। এতো দিন তো ও আমাকে কষ্ট দিয়েছে।এখন নিজে একটু কষ্ট পাক। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রিহানের সাথে প্রেম করতে যেত, আমার বুঝি তখন কষ্ট হতো না?আরে ওই গবেট কি জানে নাকি যে একদিনে ডির্ভোস পেপার তৈরি হয় না।
জানেনা বুঝলাম, তাহলে ওটা কি ছিল?
আরে ওটা এমনিতেই একটা কাগজ ছিল,মেহুল তো সেটা দেখেও নি,টান দিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে।
বাহ্ দেখেছিস মেহুল তোকে কতটা ভালোবাসে?
আয়াশ হেসে বলল,
ভালো বাসে না ছাই,যদি ভালোই বাসতো তাহলে আর রিহানের সাথে প্রেম করতো না।ওর মনের অন্তরালে কে আছে জানি না কিন্তু আমার মনের অন্তরালে তো শুধু সেই আছে।
রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলছে আয়াশ আর তার একমাত্র বন্ধু সূর্য।মেহুলকে আয়াশ মনে প্রানে ভালোবাসে। কিন্তু মেহুল কে বলতে পারে নি। তার কারণ সে আগেই অন্য একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে।যখন আয়াশ জানতে পারলো যে মেহুলের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তখন আয়াশ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল সে দেশের বাইরে চলে যাবে আর কখনো ফিরবে না। নিজের ভালোবাসার মানুষ টিকে অন্য কারো সাথে সে দেখতে পারবে না।যেদিন আয়াশ চলে যাবে সেদিন জানতে পারলো মেহুলের বিয়ে ভেঙে গেছে আর তার সাথে বিয়ে হচ্ছে। খবর টা শুনে খুব খুশি হলেও মনে মনে এতো দিন ধরে কষ্ট পাওয়ার রাগ টা পুষে রেখেছিল।আর তাইতো বিয়ের রাতে আর পরদিন এইসব করলো।
বাসা থেকে ফোন এলো আয়াশের,
আয়াশ কোথায় তুই?
এইতো আপু সূর্যের সাথে বসে আছি। কেন কিছু হয়েছে কি?
না। বাসায় কখন আসবি তুই?
একটু পরেই আসছি, বলে ফোন কেটে দিল আয়াশ। সূর্যের সাথে গল্পে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।
আপুর সাথে ছাদ থেকে নিচে নেমে দেখি,বসার রুমে বড় মামা,মামি,বড় মামার ছেলে আশিক ভাই বসে আছে। আমাকে দেখে আশিক ভাই বলল,
মেহুল এতো তাড়াতাড়ি তুমি বিয়ে করে ফেললে আর আমাকে বললেও না?
বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছিল তো খুব তাই বিয়েটা করে ফেলেছি। কেন তোমাদের কে তো দাওয়াত দেয়া হয়েছিল আমার বিয়েতে। তোমরা আসনি কেন?
আমার কথা শুনে মামী বললেন,
আমরা তখন বাসায় ছিলাম নারে,তোর মামার ব্যবসার জন্য ঢাকায় যেতে হয়েছিল তাই আসতে পারি নি।
মামা বলল, সমস্যা কি এখন তো চলে এসেছি।
আমি বললাম, তোমরা গল্প করো আমি আমার রুমে যাই, ভালো লাগছে না এখন। বলে আমি আমার রুমে চলে এলাম। এসে দরজা বন্ধ করতে যাবো তখনি আশিক ভাই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। আমি অবাক হয়ে বললাম,
কি ব্যাপার আশিক ভাই? আমার রুমে এসেছো কেন এখন?
আশিক ভাই কোন কথা না বলে দরজা বন্ধ করে আমার বিছানায় বসে পরলো। বসে বললো,
একটা কথা বলবো মেহুল?
তুমি একটা না সাতটা কথা বলতে পারো কোন সমস্যা নেই কিন্তু তুমি দরজা টা বন্ধ করলে কেন?
দরজা বন্ধ না করলে যে কেউ চলে আসবে তখন সমস্যা হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কি বলবে বলো।
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মেহুল। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
কি? এসব কি বলছো তুমি আশিক ভাই?
আমি সত্যি বলছি মেহুল। তোমাকে আমি অনেক বার বলতে চেয়েছি এই কথা কিন্তু তুমি শুনতে চাওনি।আর আজ যখন শুনলাম তোমার আয়াশের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে তখন আমার মনে হলো তোমাকে এবার আমার মনের কথা বলে দেওয়া উচিত।তাই বলতে চলে এসেছি আজ।প্লীজ মেহুল তুমি আয়াশ কে ছেড়ে আমার কাছে চলে এসো। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, খুব ভালো রাখবো তোমাকে।
আশিক ভাইয়ের কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেল আমার। দরজা টা খুলে দিয়ে বললাম, এখুনি বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে। তোমার লজ্জা করছে না একটা বিবাহিত মেয়েকে এভাবে ভালোবাসার কথা বলতে। তার উপর বলছো আয়াশ ভাই কে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এক্ষুনি বেরিয়ে যাও।
আমার কথা শুনে আশিক ভাই উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, না আমার লজ্জা করছে না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে একটা থাপ্পর মারলাম আশিক ভাই কে। তার পর ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।কত বড় সাহস আমাকে জড়িয়ে ধরে।নোংরা মানসিকতার লোক একটা। আমি আগেও আশিক ভাই কে এড়িয়ে চলতাম ওনার বাজে স্বভাবের জন্য।
আমার হাতে থাপ্পর খেয়ে আশিকের রাগ হলো খুব। মনে মনে বললো,এই থাপ্পরের শোধ আমি কিভাবে নেই তোমার থেকে সেটা শুধু দেখতে থাকো মেহুল। বলে দরজার সামনে থেকে সরে গেল। আমি ওয়াশরুমে ঢুকে ত্রিশ মিনিট ধরে গোসল করে বের হলাম। এই রাতে গোসল করার ইচ্ছে ছিল না মোটেও কিন্তু ওই বদমাশ আশিকের ছোঁয়া আমি আমার গায়ে রাখতে চাই না। তাই এই রাতে গোসল করতে হলো।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শুনি আপু দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর ডাকছে আমাকে। আমি গিয়ে দরজাটা খুললাম।
কি হয়েছে আপু?ডাকছো কেন?
কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোকে সাড়া দিচ্ছিলি না কেন?আর এই রাতে তুই গোসল করেছিস কেন মেহুল?
আপু একটু খারাপ লাগছিল তো তাই গোসল করলাম।ডাকছিলে কেন?
খেতে আয়।মামারা আর আমরা সবাই একসাথে খেতে বসবো আয়।
না আপু আমার এখন খিদে নেই। আজ খাবো না আমি। তুমি যদি এখন আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করো তাহলে তোমার সাথে কোন কথা নেই।
আপু আমার এমন কথা শুনে কটমট করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। তার পর বললো, ঠিক আছে জোর করছি না আমি আর। তবে পরে বলিস না যেন আমি তোকে খেতে ডাকিনি।
আমি মাথা নাড়িয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।এখন চোখে শুধু বিছানা আর বালিশ দেখতে পাচ্ছি।আর কিছু না ভেবে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।রাত একটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল ফোনের শব্দে। এতো রাতে কে ফোন করতে পারে আমাকে?
(চলবে)….. কি?