ভাড়াটে বউ
লেখকঃ সানভি আহমেদ সাকিব।
পর্ব ৮ -৯
.
সানভি বুঝতে পারেনা রিহার মনে কি চলছে।
তবে এটুকু বুঝতে পারে সানভির জন্য রিহার মনে একটু হলেও জায়গা আছে আর রিহাও তাকে ভালোবাসে শুধু প্রকাশ করছেনা।
রিহা মাথা নিচু করে বসে থাকে।
.
– কফি বানিয়ে আনো দুই কাপ।(সানভি)
– দুই কাপ কেনো?(রিহা)
– একটা তোমার একটা আমার।(সানভি)
– কিন্তু আমিতো কফি খাইনা””(রিহা)
– ওহ তাহলে চা নিয়ে আসো যাও।(সানভি)
– আচ্ছা।(রিহা)
.
রিহা চা বানিয়ে আনতে গেলে সানভি উঠে বসে।
তারপর টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে।
সিগারেটের ধোয়ায় কষ্টের মতো জ্বরটাও চলে গেলে খারাপ হতোনা। মনে মনে ভাবে সানভি। একটা সিগারেট শেষ করেই আরেকটা ধরায়। দুই টান দিতেই রিহা ঘরে ঢুকে পড়ে।
হুট করে রিহা চায়ের কাপ রেখেই সানভির হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়।
.
ঘটনার আকস্মিকতায় সানভি থ মেরে যায়। হঠাৎ কি হলো রিহার।
– স্যার আপনাকে বলছিনা এসব খাবেন না এগুলা শরিরের জন্য খারাপ?(রিহা)
.
– ও হ্যা খারাপ তো কিন্তু এটা ছাড়া ভাল্লাগে না।(সানভি)
.
– ভালো না লাগলেও ছাড়তে হবে। এইসব ভালোনা বুঝছেন।(রিহা)
.
– এতো সুন্দর করে বুঝালে যে কেউই বুঝবে।(সানভি)
.
সানভি বুঝতে পারে রিহার কষ্ট হয় সানভি সিগারেট খেলে।
আলাদা একটা টান অনুভব করে সানভির জন্য। ভালো না বাসলে কখনো এসব করতো না। নষ্ট জিনিসের মুল্য ভালো না বাসলে কেও দেয় না।
রিহা মনে মনে ভাবে সানভি এখন কি ভাবছে তারর সম্পর্কে।
যাই ভাবুক তাতে আমার কি? আমিতো ভুল কিছু করিনি।
উনার ভালোর জন্যই করছি।
রিহা লজ্জা পেয়ে চলে যায়।
কিছুক্ষন পর ফিরে এসে দেখে সানভি চা এখনো খায়নি।
– কি হলো চা খান নাই কেনো এখনো? ঠান্ডা হয়ে গেলো তো।(রিহা)
.
– তুমি কই গেছিলা? একসাথে খাবো বলে দুই কাপ বানাইতে বলছি আর তুমি চলে গেলা?(সানভি)
.
– আমিতো খেতে গেছিলাম।(রিহা)
.
– ভালো করছো এইবার ঠান্ডা চা খাও।(সানভি)
.
– আমি আবার বানিয়ে আনতাছি।(রিহা)
.
– কখনো ঠান্ডা চা খাইছো?(সানভি)
.
– ঠান্ডা চা আবার খাওয়া যায় নাকি?(রিহা)
.
– ছোটবেলা থেকেই আমি ঠান্ডা চা খাই।(সানভি)
.
– এ্যা?
– এ্যাা না হ্যা আজকে তুমিও খাবা আমার সাথে।(সানভি)
.
– আমি খেতে পারবোনা কেমন লাগবে আল্লাহই জানে?(রিহা)
.
– সেই লাগবে একবার খেয়েই দেখো। ওইযে ওইখান থেকে বিস্কুট নিয়ে আসো।(সানভি)
।
রিহা বিস্কুট নিয়ে আসে।
– এবার কি করবো?(রিহা)
.
– বিস্কু্ট পিষে ফেলো হাতের মধ্যে একদম গুড়া করে ফেলো।(সানভি)
.
– তারপর?(রিহা)
.
– এবার চায়ের মধ্যে দিয়ে দাও আর চিনি দাও।(সানভি)
.
– তারপর?(রিহা)
.
– এইবার চামচ দিয়ে মিশিয়ে ফেলো।(সানভি)
.
– স্যার এইটা কি চা নাকি স্যুপ কোনটা? (রিহা)
.
– যেটা ইচ্ছা মনে করে খেতে পারো। তবে ভালো লাগবে।(সানভি)
.
– স্যার আমি খাবোনা।(রিহা)
.
– আমি বলছি একবার খেয়ে দেখো?(সানভি)
.
রিহা ভয়ে ভয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
আল্লাহ জানে কেমন লাগবো খেতে।
রিহা একটু খেয়ে বুঝতে পারে সে যেমন ভেবেছিলো ঠিক তার উল্টোটা হয়েছে। হালকা গরম চায়ের মধ্যে এইসব দিয়ে চা টা পুরাই অস্থির লাগতাছে।
রিহা হাসতে হাসতে নিজেও অস্থির হয়ে যায়।
সানভি আনমনে দেখতে থাকে রিহার হাসিমাখা মুখটা।
এই হাসিটা দেখার জন্যই তো এতোকিছু।
মেয়েটার বাচ্চা বাচ্চা হাসি দেখে সানভি নিজেও হেসে ফেলে।
.
– স্যার আপনি এই সুত্র পাইছেন কোথায় বলেন তো? আমি এতো চা খাই কোনোদিন এভাবে ট্রাই করিনাই।(রিহা)
.
– বলছিলাম না ভালো লাগবো। আমি গরম চা খেতে পারিনা জ্বিব পুড়ে যায় তাই ছোটবেলা থেকেই এভাবেই চা খাই।আম্মু শিখাইছিলো খাওয়া।(সানভি)
।
মায়ের কথা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে যায় সানভির।
আজ আম্মু থাকলে কত খুশিই না হতো। নিজের হাতে খাইয়ে দিতো। অনেক মিস করি আম্মুকে।
.
– স্যার কি হইছে চুপ হয়ে গেলেন কেনো?(রিহা)
.
– আম্মুর কথা মনে পড়ে গেলো।(সানভি)
.
– স্যার আপনার জ্বর আছে এখন? নাকি নাই?(রিহা)
.
– আছে কিন্তু কম।(সানভি)
.
– বিশ্রাম নেন চলে যাবে আর মন খারাপ কইরেন না।(রিহা)
.
– হুমম চলে গেলেই ভালো।(সানভি)
।
সারাদিন দুজনে আড্ডা দেয়। রিহার সাথে কথা বলে এক অন্যরকম আনন্দ পায় সানভি। যেটা অন্যকারো সাথে পায়না
রিহাও ভাবে প্রেমে বুঝি পড়েই গেলাম।
সানভি ছেলেটা এমন কেনো?
বুঝতে পারেনি রিহা।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধা নামে জ্বর আবার বেড়েছে সানভির।
এই নিয়ে চিন্তা বেড়েছে রিহার। থাকবে নাকি চলে যাবে?
একটা অবিবাহিত মেয়ে আরেকটা অবিবাহিত ছেলের সাথে এক বাড়িতে রাত কাটালে নিশ্চই মানুষ এটাকে ভালোভাবে নিবেনা। আর মাকেই বা কি উত্তর দিবো
মনে হয় চলে যাওয়াই ভালো হবে।
সানভি বুঝতে পারে রিহার মনে কি চলছে।
– রিহা শোনো।(সানভি)
– হ্যা বলুন।(রিহা)
– খাবার এখানে রেখে যাও আর ঔষুধ ও।।তারপর তুমি যেতে পারো”(সানভি)
– কিন্তু স্যার আপনার এই অবস্থায় রেখে চলে যাবো আমি?(রিহা)
– কিছু হবেনা তুমি যেতে পারো।(সানভি)
.
রিহা খাবার আর ঔষুধ সবকিছু হাতের কাছে রেখে দিয়ে চলে যায়।
পর্ব ৯
.
রিহা চলে আসে ঠিকই কিন্তু মনটা সানভির কাছে থেকে যায়।
বারবার মাথায় একটাই কথা মাথায় ঘুরে সানভির কিছু হয়ে যাবে নাতো?সানভি নিজেও মনে হয় এতোটা ভাবেনা নিজেকে নিয়ে যতটা না রিহা ভাবছে তাকে নিয়ে।
রিহা তাকে ভালোবেসে ফেলছে এটা সত্তি তবে এটাও সত্তি রিহা ভাবতাছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিবে এসব ভালোবাসা মায়া আবেগগ থেকে।কি লাভ শুধু শুধু কষ্ট পেয়ে।
এই মাস শেষে চাকরিই ছেড়ে দিবে।অন্য চাকরি খুজতে থাকি দেখি পাওয়া যায় কিনা।
.
সানভি রিহার কথা ভাবতেছে।রিহা কি ঠিকমতো বাসায় পৌছে গেছে কোনো বিপদ হয়নি তো রাস্তায়। নাহ মেয়েটাকে একটু আগেই ছেড়ে দিতে হবে।ঢাকা শহড়ে বলা যায়না কখন কি হয়।
।
মাথাটা খুব ধরেছে।সারাদিন শুয়ে থাকার কারনে মাথা ভাড়ি হয়ে আসছে।গোসল করা দরকার।সানভি আস্তে আস্তে উঠে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায়।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে,
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নিলা ফোন দিছে,
– হ্যালো।(নিলা)
– হ্যা বলো।(সানভি)
– শুনলাম আপনার নাকি জ্বর?(নিলা)
– হ্যা।
– তো মেডিসিন নিছেন?
– হুমম নিছি।
– ভালো করছেন এখন কি করেন?
– গোসল করবো রাখো তুমি এখন।
– এখন গোসল করলে তো জ্বর বাড়বে আরো।
– কিছু হবেনা তুমি রাখো পরে কথা বলবোনি।
– আচ্ছা সাবধানে থাইকেন আপনার তো আবার বউ নাই। হিহিহি।
.
এইযে ফোন দিছিলো আরেকজন।
অফিসে জয়েন করার পরের দিন থেকেই পেছনে লেগে আছে। এদের প্যারা আর নিতে পারিনা।
মনে মনে কথাগুলা বলে বাথরুমে ঢুকে সানভি।
ট্যাব টা ছেড়ে দিয়ে শরিরটা ভিজিয়ে নেয়।
শীত লাগলেও ভালো লাগতাছে। মাথাটা ভালো করে ধুয়ে নেয় সানভি। প্রায় বিশ মিনিট পর বাথরুমম থেকে বের হয়।
মাথাটা এখন আর ভাড়ি লাগতাছেনা।
ভালোই লাগতাছে তবে জানিনা এরপর কি হবে।
।
ঝটপট খাবারটা খেয়ে ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সানভি।
ওদিকে রিহাও ঘুমাচ্ছে।
সকালে উঠে দেখে জ্বর সেই লেভেলের বেড়ে গেছে।
রাতে গোসল করার ফল এটা।
রিহার ঘুমটা আজ দেরিতে ভাঙছে। এদিকে সানভির ক্ষুদা লাগছে প্রচুর পরিমানে।
রিহা ঘুম থেকে উঠে দেখে আটটা বেজে গেছে।
তারাতারি ফ্রেস হয়ে রওনা দেয় সানভির বাসার দিকে।
চিন্তা হচ্ছে ভিষন এমনিতেই কালকে বিকেলে জ্বর বেড়েছে তারওপর আবার আজকে লেট। খারাপ কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবেনা রিহা।
.
চিন্তায় ঘাম ছুটে গেছে রিহার।
মেজাজটাও খারাপ হচ্ছে খুব। এতো ঘুম আসলো কোথা থেকে। বারবার পার্থনা করছে যাতে সানভির কিছু না হয়।
,
প্রতিদিনের মতো আজকেও দরজা খোলা পেয়ে কিছুটা দৌড়েই সানভির রুমে ঢুকে পড়ে রিহা।
সানভি তখন জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বলতাছে,
রিহা প্রথমে না বুঝতে পারলেও পরে বুঝতে পারে অতিরিক্ত জ্বরের কারনে এরকম অবস্থা।
ঠান্ডা পানি আর কাপড় এনে সানভির কপালে দেয় রিহা।
আধা ঘন্টা পর অবস্থা কিছুটা ভালো হলে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে রিহা। ঘটপট রান্না করে এনে খাইয়ে দেয় সানভিকে।
তারপর ঔষুধ খাইয়ে দিয়ে সানভির পাশ থেকে উঠতেই সানভি হাত ধরে ফেলে।
হ্যাচকা টান লাগায় রিহা সানভির ওপড় পড়ে যায়।
রিহার মেজাজটা হঠাৎ করে বিগড়ে যায়।
সে ভাবে সানভি ইচ্ছা করে করেছে এটা।
ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে রাগে চলে আসে বাসায়। রিহা মনে মনে বলে,
সব ছেলে একরকম। সুযোগ পেলেই নিজেদের আসল রুপ দেখিয়ে দেয়।
ইচ্ছে হচ্ছে আর দুইটা মেরে দিলে ভালো হতো।
ওকে ভালো ভাবছিলাম বাট ও নিজেরর আসল রুপ দেখিয়ে দিলো।
রিহার মনে ভুল ধারনা জন্ম নেয়।ওদিকে সানভি হাত ঠিকই ধরেছিলো তবে এরকম কোনো ইচ্ছা বা মানসিকতা কখনোই তার ছিলোনা।সে তো যাস্ট ওকে আরেকটু বসতে বলার জন্য হাত ধরেছিলো।
.
রিহা মনে মনে ভাবে আর চাকরি করবে না।
দরকার নাই এতো টাকার।নিজের সতিত্ব বিলিয়ে দিয়ে টাকা উপার্জন করার কোনো দরকার নাই। নতুন কোনো চাকরি খুজে নিবো। যেখানে মাথা উচু করে চলা যাবে।
.
সানভি জ্বরের ঘোরে তখনো পুরো ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেনি।
শুধু এটুকু বুঝেছে যে তার গালে কেও চড় মেরেছে।
কারনটাও বুঝতে পেরে গেছে।
শুধু এটুকু বুঝেনি রিহা কেনো বুঝলোনা তার এরকম কোনো ইচ্ছা ছিলোনা।
সারাদিন আর কিছু খেতে পারেনা সানভি।
রিহা নাই তাই আর রান্নাও হয়নি।সন্ধাবেলা দাড়োয়ান রুমে এসে দেখে সানভি ফ্লোরে পড়ে আছে।
সে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তারপর আবার বাসায় চলে আসে।
.
পরের দিন রিহা সানভির কাছে দেখা করতে আসে।
শেষ দেখা। চাকরিটা ছেড়ে দিবে তাই।
কিন্তু দাড়োয়ান ঢুকতে দেয়না।
– কোথায় যাচ্ছেন? (দাড়োয়ান)
– ভিতরে।(রিহা)
– কেনো?(দাড়োয়ান)
– তোমার স্যারের সাথে দেখা করতে।(রিহা)
– কিন্তু উনিতো নাই এখানে।(দাড়োয়ান)
– কোথায় গেছে?(রিহা)
– হাসপাতালে।(দাড়োয়ান)
– কেনো?(রিহা)
– গতকাল সন্ধায় আমি রুমে ঢুকে দেখি অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে আছে পড়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছি।(দাড়োয়ান)
.
রিহার মাথা ঘুরে যায় দাড়োয়ানের কথা শুনে।
সানভি তাহলে ইচ্ছে করে ওটা করেনি।
আর আমি ভুল বুঝলাম সানভিকে।
রিহা কাদতে থাকে।
তার জন্যই এইসব হয়েছে।
কালকে রাগ না করে চলে না আসলে আজ এসব হতো না।
.
চলবে?