ভাড়াটে বউ পর্ব-১১

0
1704

ভাড়াটে বউ
লেখকঃ সানভি আহমেদ সাকিব
পর্ব ১১
.
সানভি রিহার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
– এভাবে সারাজিবন দেখতে চাই তোমাকে।(সানভি)
– এটা সম্ভব না স্যার।(রিহা)
– কেনো সম্ভব না।তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?(সানভি)
– এসব কথা বাদ এখন। আপনার দুই মিনিট সময় শেষ।(রিহা)
– এজন্যই তো বলছি সারাজীবনের জন্য তোমাকে আমারর করে নিতে চাই।(সানভি)
– কফি খাবেন নাকি চা?(রিহা)
– চা।(সানভি)
– ওকে বসুন আমি আনতেছি।(রিহা)
.
সানভির মন খারাপ হয়ে যায়। ধুরর হুট করে এতো রোমান্টিক সময়টা শেষ হয়ে গেলো। ভালোলাগেনা আর।
রিহা ভাবতে থাকে,
সানভি খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়তেছে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় সে পুরোপুরি আমার ওপর ডিপেন্ড করে চলবে।
তার আগেই কিছু একটা করতে হবে।
হাজারো চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায় রিহার।
কেনো সে পারছে না মেনে নিতে সানভিকে,
যেখানে সে নিজেও জানে সে সানভিকে ভালোবাসে আর সানভিতো তাকে তার চাইতেও বেশি ভালোবাসে।
.
নিজের মনকে বুঝাতে পারেনা রিহা।
ওদিকে সানভি মন খারাপ করে বসে আছে।
কি আর করার এখন বসে বসে স্বপ্ন দেখি কবে রিহা তার হবে। কবে সব আশা পুর্ন হবে।
নাকি হবেই না। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ পড়ে যায় আলমারির দিকে।
একটা মাকড়শা। বেশ বড়ই দেখতে।
মাথায় বুদ্ধি এসে গেছে। রিহাকে এইবার মজা বুঝাবো দাড়াও।
সানভি চোখ রাখতেছে যাতে মাকড়শাটা চলে না যায়।
কিছুক্ষন পর রিহা রুমে ঢুকে।
চায়ের কাপ সানভির হাতে দেয়।
সানভি চায়ের কাপটা রেখে দিয়ে রিহাকে বলে,
– আলমারিতে থেকে একটা টিশার্ট বের করো তো।(সানভি)
– আচ্ছা দাড়ান বের করতেছি।(রিহা)
.
রিহা আলমারির কাছে যেতেই মাকড়শাটা সরে যায়।
যেটা রিহার চোখে পড়তেই চিৎকার করে উঠে। আর লাফাতে থাকে। সানভি ভাবছিলো তাকে জড়িয়ে ধরবে।
কিন্তু এসবের কিছুই হলোনা।
প্লানটা কাজ করলো না।
.
কিছুক্ষন পর রিহা রাগি লুক নিয়ে সানভির দিকে তাকালো।
সানভি এমন একটা ভাব নিলো যেনো সে কিছু জানেই না।
– কি হইছে এভাবে কেনো তাকিয়ে আছো? আর টিশার্ট কই?(সানভি)
– টিশার্ট না??(রিহা)
– হুমম টি-শার্ট কই??(সানভি)
– দাড়াও দেখাচ্ছি মজা….(রিহা)
.
বলেই রিহা সানভিকে মারতে শুরু করলো।
সানভিও মাইর খাইতে লাগলো। মাইর খাইতেও কেমন জানি ভালোলাগতেছে তার।
যদিও অসুস্থ কিন্তু তারপরও অসম্ভব রকমের ভালোলাগা কাজ করতেছে।
,
কিছুক্ষন পর রিহা বুঝতে পারলো কাজটা ঠিক হচ্ছেনা তখন সে নিজেই সরে গেলো,
– চা খান তারাতারি ঠান্ডা হয়ে যাচ্চ্ছে (রিহা)
– সমস্যা কি ঠান্ডা চা খেতে তো ভালোই লাগে তাইনা?(সানভি)
– হ্যা তাতো লাগেই তবে গরম অবস্থায় চা খেলে সেটার স্বাদ অনেক ভালো লাগে বুঝছেন।(রিহা)
– হ্যা আমিও তো সেটাই বলছি সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করলেই তো বেটার হয় তাইনা?(সানভি)
– আপনার প্যাচানো কথা আমি বুঝিনা আপনি থাকুন আমি যাই।(রিহা)
– কই যাবা? এখানে বসো চুপচাপ ঠিকআছে?(সানভি)
– আচ্ছা।(রিহা)
.
এভাবে সারাদিন আড্ডা দেয় দুজনে।
রিহা সানভিকে খাবার খাইয়ে দেয়। ঔষুধ খাইয়ে দেয়।
দেখতে দেখতে সন্ধা হয়ে যায়।
– স্যার নামাজ পড়বো কোথায়?(রিহা)
– উত্তর সাইটে একটা রুম আছে ওটাতে। (সানভি)
– ঠিক আছে।(রিহা)
রিহা অজু করে নামাজ পড়তে যায়।
নামাজ শেষ করে এসে বলে,
– বলুন কি খাবেন?(রিহা)
– চা।(সানভি)
– আরে ধুরর ওইটা না আমি বলছি রাতে কি খাবেন?(রিহা)
– ওহ রাতে ভাত খাবো সাথে ডিম ভাজি।(সানভি)
– এটুকুই আর কিছুনা?(রিহা)
– নাহ।(সানভি)
– ঠিক আছে আমি রান্না করতেছি শুয়ে থাকুন আপনি। উঠবেন না কেমন? (রিহা)
– আচ্ছা উঠবোনা যাও?(সানভি)
রিহা রান্না করতে চলে যায়।
রান্না করতে করতে গুনগুন করেরে গান গাইতে থাকে রিহা।
সানভি পাশের রুম থেকে মুগ্ধ হয়ে রিহার গান শুনতে থাকে।
কত সুন্দর গলা রিহার অন্তরটা জুড়িয়ে যায়।
.
আপনাদের কিছু বলে রাখি,
এগুলা কিন্তু সব মিথ্যা। আসলে প্রেমে পড়লে কাকের গলাও কোকিলের মতো লাগে তাই একটু ঝাড়ি মারি আপনারা আবার সত্তি মনে কইরেন না।
.
যাই হোক গল্পে ফিরি,
রিহা রান্না শেষ করে সবকিছু গুছিয়ে সানভির রুমে আসে।
– স্যার রান্না শেষ। খাবার আনবো নাকি পরে খাবেন?(রিহা)
– আনো খুব ক্ষুদা লাগছে।(সানভি)

আসলে ক্ষুদা লাগেনাই রিহার হাতে খাওয়ার জন্য বলছে খুব ক্ষুদা লাগছে।
রিহা খাবার নিয়ে আসে।
রিহার হাত খালি। কেমন জানি অপুর্ন লাগে সানভির।
– রিহা একটা কাজ করোতো।(সানভি)
– কি কাজ??(রিহা)
– আলামারিটা খুলো।(সানভি)
– স্যার আবারো?? এসব আর হবেনা ঠিক আছে।(রিহা)
– আরে ওইসব কিছুনা। তুমি আলমারিটা খুলোতো?(সানভি)
– সত্তি তো?(রিহা)
– হ্যা খুলো আগে তারপর বুঝবা সত্তি নাকি মিথ্যা।(সানভি)
– যদি খারাপ কিছু হয় তাহলে কিন্তু আপনি দায়ি।(রিহা)
– আরে কিছু হবেনা বললাম তো।(সানভি)
.
রিহা ভয়ে ভয়ে কাপা কাপা হাতে আলমারিতে হাত দেয়।
লকটা খুলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে।
কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খুলে তাকাতেই দেখে।
আলমারিতে লাল নিল হলুদ আর সবুজ রঙের কাচের চুড়ি রাখা আছে।
রিহা অবাক হয়ে সানভির দিকে তাকায়,
ভাবতে থাকে এতো কিছু ওর কাছে কিভাবে।
সন্দেহ হচ্ছে ও ছেলেতো নাকি মেয়ে।
শাড়ি চুড়ি সবকিছুরই কালেকশন আছে দেখছি।
কবে যে আবার কি দেখাবে আল্লাহই ভালো যানে।
হিহিহি।
.
রিহা কিছু না বুঝার ভান করে সানভির দিকে তাকিয়ে বলে,
– স্যার তারপর কি করবো?(রিহা)
– এখন চোখটা বন্ধ করে সামনে যা আছে ওইটা হাতে পড়ে নাও।(সানভি)
– আচ্ছা।(রিহা)

চুড়িটা পড়ার পর রিহা সানভির কাছে যায়।
– এইবার পরিপুর্ন লাগতেছে তোমাকে।(সানভি)
– ধুরর কি বলেন।(রিহা)
– এবার খাইয়ে দাও।(সানভি)
.
রিহা সানভিকে খাইয়ে দিতে থাকে।
হাতের চুড়ির শব্দে নিস্তব্ধ ঘরটায় অন্যরকম একটা অনুভুতির তৈরি হয়।একটা শব্দ টুং টাং টুং টাং।
খুব স্বাভাবিক তাইনা?
কিন্তু সানভির মনে হচ্ছে শব্দটা কোনো এক অদ্ভুত জায়গা থেকে আসছে। একটা অদ্ভুত অনুভুতি জাগাচ্ছে আর হ্রদয়ের গভিরে পৌছে যাচ্ছে। হঠাৎ কানের কাছে খুব বাজে একটা শব্দ শোনা গেলো।
সানভি ঘোর কাটিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে রিহা ডাকতেছে।
হঠাৎ করে রিহাকে পেত্নির মতো লাগতে শুরু করলো সানভির কাছে। সবসময় তো পরির মতো লাগে আজকে হঠাৎ এমন কেনো লাগতেছে সানভির।
বুঝে উঠার আগেই মুখের ভিতর কোনো কিছুর অবস্থান বুঝতে পারে।

– ওই কখন থেকে ডাকতেছি শুনতেছেন না কেনো?(রিহা)
– পেত্নি।(সানভি)
– কি পেত্নি কই??(রিহা)
– তুমি পেত্নি।(সানভি)
– কিহহহ।(রিহা)
– হ্যা তোমার মুখটা এতো বড় কেনো? আর এতো মোটা কেনো? খুব খাও তাইনা?(সানভি)
– স্যার কি বলছেন এসব। আমি ঠিক বুঝতেছিনা।(রিহা)
– ওহ সরি। তোমার চুড়ির মাতাল করা শব্দে কোথায় যেনো হারিয়ে গেছিলাম। তাই আবোল তাবোল বলছি।(সানভি)
– ধরেন খান। তারপর স্বপ্ন দেইখেন।(রিহা)
.
রিহা সানভিকে ভাত খাইয়ে দিয়ে ঔষুধ খাইয়ে দেয়।
তারপর অনেকক্ষণ অাড্ডা দেয় দুজনে।
অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর রিহা সানভিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসার সময় হঠাৎ সানভি হাত চেপে ধরে,
.
চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে