ভালোবাসার_রং পর্ব-০৪

0
2808

#ভালোবাসার_রং (❣️You are my Lifeline ❣️)

#Part_4

#Ishita_Rahman_Sanjida_(Simran)

আনহা: আকিব,,,,,দিলে তো আমার প্রেস্টিজ পাংচার করে,,,,, এখন ওরা কি করবে জানো,,
বাইরে গিয়ে সবাইকে সবটা বলে দিবে,, আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না,,,,উফফফ যত জ্বালা আমার ঘাড়ে এসে পড়ল,,,,, শোন আকিব এখান থেকে বাড়িতে গিয়েই আমরা ডিভোর্সের এ্যারেন্জ করব ওকে,,,, আমার এসব আর ভালো লাগে না,,,,

আকিব: ওকে ওকে,,,,
আনহা: আর একটা কথা,,,,এবাড়ির কারো সাথে কোন কথা বলবে না,,,, ঠিক আছে,,,

আকিব: ঠিক আছে,,,, (নিচু স্বরে)

আনহা রুম থেকে বের হয়ে যায়,,,,আকিব যেন হাফ ছেড়ে বাচল,,,,

আকিব: আল্লাহ বাঁচা গেল,,,নাইলে যে রণচণ্ডীর রূপ ধারণ করেছিল মনে হচ্ছে এখনই আমার গলাটা কেটে নিবে,,,উফফফ

বিকেল বেলা আনহার কাজিনরা আনহা আর আকিবকে জোর করে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যায়
তারপর একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল,,, আকিব খাবার অর্ডার দিতে গেল,,,,

__ আনহা,,,, ভেবেছিলাম আমরা তোর দেবরের সাথে একটু লাইন মারবো,,, কিন্তু এখন তো সবকিছু লাইন ছেড়ে বেলাইনে চলে গেল,,,,রে,,,, (হেসে)

আনহা: বকর বকর করে আমার মাথা খাইস না,,, এমনিতেই মাথাটা ভারি হয়ে আছে,,, যতসব আবর্জনা,,,

__ শোন,,, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এরকম হ্যান্ডসাম ছেলেকে হাজবেন্ড হিসেবে মেনে নে
তাহলে তোরই ভালো,,,,
আনহা: ওয়াট কি বলছিস এসব,,,,

__ হুম মামা মামী তো সেটাই বলা বলি করছে
তুই উল্টা পাল্টা কিছু করবি তো ঘর ছাড়া হবি,,,,
আনহা আর কিছু বলতে পারলো না,,, কারণ তখনই আকিব চলে আসে,,,, খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা সবাই বাড়িতে ফেরে,,,,আনহা ওর কাজিনের কথায় চিন্তায় পড়ে যায়,,, কারণ এখন যদি ও আকিবকে ডিভোর্স দেয় তাহলে তো ওকে ওর বাবা বাড়িতে আসতে দেবে না তাহলে ও যাবে কোথায়,,,, এব্যাপারে ও আকিবের সাথে কথা বলবে,,, ভাবলো আনহা

পরেরদিন আনহা আর আকিব বাড়ি ফিরে যায়,,,, রাতে আনহা চুপচাপ বসে ভাবছে,,, তখন আকিব রুমে আসলো,,,,,

আকিব: কি ব্যাপার ভাবি,,,, থুড়ি,,আ আ আ আনহা,,,,(অনেক কষ্টে বলল) কি হয়েছে,,,

আকিবের এমন কথায় আনহা হেসে উঠলো,,, ওর হাসি যেন থামছেই না,,, আকিব বোকার মত আনহার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,আনহা হাসি থামিয়ে দিল,,,

আকিব: আমি কি এমন হাসির কথা বললাম যে এতো হাসছো,,,,
আনহা: না কিছু না,,, বল কি বলবে,,,,
আকিব: না মানে তোমাকে আপসেট দেখাচ্ছে তাই বললাম কিছু হয়েছে কি,,,,
আনহা: হুম হয়েছে তো অনেক কিছু,,,,
আকিব: কি হয়েছে,,,,
আনহা: আকিব তোমার সাথে আমার ডিভোর্স হলে আমার পরিবার ও আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না,,,আমাকেও ঘরছাড়া করবে,,,,
আকিব: কি,,,,
আনহা: হুম,,, এখন কি করব,,, (মুখ গোমড়া করে)

আকিব: আচ্ছা তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলো,,,,, ওর সাথে সবকিছু ঠিকঠাক করে নাও,,,, আর তাছাড়া ডিভোর্সের পর তুমি তো ওকেই বিয়ে করবে,,,,

আনহা: কথাটা মন্দ বলো নি,,,,চলো আজকেই দেখা করি ওর সাথে,,,,
আকিব: আমি কেন যাব,,,,
আনহা: তুমিই তো সোহানকে সবটা বললে ও বিশ্বাস করবে,,,,
আকিব: আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাব,,,,
আনহা: আচ্ছা সোহানকে একটা কল করি,,,

আনহা সোহানকে কল করছে কিন্তু ওর ফোন সুইচ অফ বলছে,,,,, কমপক্ষে পনের বিশ বার কল করা হয়ে গেছে ওর,,,আকিব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনহার কান্ড দেখতাছে,,,,

আকিব: ভাবি তুমি এখন থামো,,,,, হয়তো কোন কারণে ফোন বন্ধ,,, আমরা পরে দেখা করে নিব,,,ও তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না,,,

আনহা থেমে গেল,,,,

দুদিন পর শ্বশুর বাড়ির সবার অনুমতি নিয়ে আনহা আর আকিব একসাথে ভার্সিটিতে যায়
ভার্সিটিতে গিয়ে আনহা বাইক থেকে নামতেই আকিবের সব ফ্রেন্ডসরা এসে ওকে ধরে,,,,,

রিসাদ: আরে আকিব যে,,,
নয়ন: কি রে আকিব,,, এতো দিন পরে এলি,,, মনে হচ্ছে তোর ভাইয়ের না,,, বিয়েটা তোরই ছিল,,,,
আকিব চোখের ইশারায় আনহাকে চলে যেতে বলল,,,আনহা ও চলে গেল,,,

আকিব: বাজে বকিস না তো,,,, চল আড্ডা দেই,,,,,
ওরা সবাই মিলে আড্ডা দিতে চলে যায়,,,
ক্লাসে যাওয়ার পথে মারিয়া (আনহার বেস্টু)
আনহার পথ আটকায়,,,,,আনহা মারিয়া কে কে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে,,,,

আনহা : কি রে মারিয়া,,,, এতদিন কোথায় ছিলি,,,, একটা কলও করলি না,,,,
মারিয়া: সরি ইয়ার,,,, আসলে তোর বিয়েতে গিয়ে তোর সাথে দেখা করতে পারিনি,,তখনই
সবাই বলাবলি করছিল যে বর নাকি পালিয়েছে,,,, আর সেসময় বাড়ি থেকে ফোন আসলো বাবা নাকি স্ট্রোক করেছে তাই চলে এসেছিলাম,,,
আনহা: সরি রে আমার উচিৎ ছিল তোকে কল করার,,,,
মারিয়া: ওসব কথা বাদ দে,,,, শুনলাম তোর বিয়ে নাকি তোর দেবরের সাথে হয়েছে,,,
একথা বলতেই আনহা ওর মুখ চেপে ধরে,,,,

আনহা: চুপ,,,, একথা একদম মুখে আনবি না

আনহা মারিয়াকে ক্লাস রুমের এক কর্ণারে নিয়ে গিয়ে সব বলল,,,
মারিয়া: বাহ,,, তোর গল্পটা একদম সিনেমার মতো,,, আচ্ছা চল এখন ক্লাসে যাই,,,
দুজনে ক্লাসে চলে যায়,,,, ক্লাস শেষে আনহা আকিবকে খুঁজতে চারুকলা ভবনের দিকে যায়,,,আকিবের ক্লাস আগেই শেষ হয় আর আকিব ওখানেই আনহার জন্য অপেক্ষা করে
আর আনহা ও খুব ভালো করেই জানে যে এখন আকিবকে চারুকলা ভবনেই পাওয়া যাবে কারণ,,, ওখানে বসে আকিব ছবি আঁকে
আকিবের হাতে আঁকা ছবি খুব সুন্দর হয়,,,
বাড়িতেও ছবি আঁকার সব সরঞ্জাম আছে আকিবের,,,,, বাড়িতে বসেও আকিব অনেক ছবি আঁকে,,,,আকিব চেয়েছিল চারুকলা নিয়ে পড়তে,,,,, কিন্তু পারেনি ওর বাবার কারণে,,,, ওর বাবার জন্যই ব্যবসায় শাখা নিয়ে পড়তেছে,,,,, কারণ ওর বাবার ইচ্ছা আকিব তার ব্যবসা সামলাক,,,, যাই হোক এখন আনহা আকিবকে খুঁজতে সেখানে যাচ্ছে,,,
আনহা দূর থেকে দেখল আকিব ছবি আঁকছে ও গিয়ে আকিবের পিছনে দাঁড়িয়ে ওর ছবি আঁকা দেখছিল,,,
আকিব: তুমি এসে গেছো,,,, আমার পেইন্টিং ও শেষ,,, আর দু মিনিট লাগবে,,, (পিছনে না ঘুরে)
আকিবের কথায় আনহা বেশ অবাক হয়,,,
আনহা: না দেখে বুঝলে কিভাবে যে আমি এসেছি,,,
আকিব: তোমার ইউস করা পারফিউম টা আমি চয়েজ করেছিলাম,,,,তাই চিনতে কষ্ট হয়নি,,,,,
আনহা আর কিছু বলল না,,,, সত্যিই পারফিউম টা ও আকিবের বাড়ি থেকে দেওয়া,,,ছবি আঁকা শেষে আকিব হাত ধুয়ে নিল,,,, তখনই আকিবের বন্ধুরা এসে হাজির,,,,,
নয়ন: কি রে আকিব,,,,তোর ভাবির সাথে বাকি সবার পরিচয় করিয়ে দিবি না,,, হুম,,

আকিব: আর কি পরিচিত হবি তোরা,,,,

সামান্তা: অনেক ভাবে,,,, এখন চল তোদের জন্য অপেক্ষা করছে সবাই,,,,
আকিব আনহা দুজনেই ঘাবড়ে গেল,,,,আনহা চোখের ইশারায় আকিবকে কিছু করতে বলল আকিব ও মাথা নাড়ায়,,,,আকিব সবাইকে ধমকে,,,,আনহাকে ওখান থেকে চলে আসে
আকিবের বন্ধুরা সবাই হা হয়ে যায়,,,,

নয়ন: কি এমন বললাম যে আকিব রেগে বম হয়ে গেল,,,
রিসাদ: সেটা তো আমিও ভাবছি,,,,
সামান্তা: এমন রিয়েক্ট করলো যেন ওর ভাবি না বউ হয়,,,,হুহ,,,,এই তোরা আর ওর ভাবিকে নিয়ে কিছু বলবি না,,, বেশি শেয়ানা

নয়ন: ঠিক বলছোস তুই,,,, এখন চল তো,,,,

আকিব বাইক চালাচ্ছে,,,,আনহা পিছনে বসে আছে,,,,,
আনহা: আকিব তোমার বন্ধুরা আমাদের পিছনে এভাবে পড়ে আছে কেন,,,,
আকিব: ওরা এরকমই,,,,
আনহা: আচ্ছা রিধি কোথায়,,, অনেক দিন হলো দেখি না,,,,
আকিব: রিধি ওর কাজিন দের সাথে ট্যুরে গেছে,,,,তাই বিয়েতে ও আসতে পারে নি,,,, ভাগ্য ভালো আমার বুঝেছো,,,, না হলে আমি শেষ হয়ে যেতাম ওইদিন,,,
আনহা: রিধি আসবে কবে,,,,
আকিব: জানি না,,, শুধু এটুকু জানি ওর আসতে দেরি হবে,,, ফোনেও যোগাযোগ নেই ওর সাথে,,,, ও যেখানে গিয়েছে ওখানকার নেটওয়ার্ক সমস্যা আছে,,,,

আনহা: কিন্তু রিধি এসে যদি জানতে পারে সবকিছু তাহলে,,,,
আকিব: তার আগেই ডিভোর্স কর্নফার্ম করতে হবে,,,,
আনহা: হুম ঠিকই বলেছ,,,,,
কথা বলতে বলতে ওরা বাড়িতে চলে আসে
দুজনে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে নেয়,,,,,

রাতের বেলা,,,,,

আনহা টেবিলের উপর খাবার সাজাচ্ছে,,, এমন সময় তানভীর আর রিমি এলো,,, আকিবের মাও এলো,,,,,
আনহা: আপু আকিবকে আর বাবাকে একটু ডাকো,,,,,
রিমি: বাবাকে ডাকি,,,,বাট আকিব আসবে কি না জানি না,,,,
আনহা: কেন??
রিমি: কেন আবার,,,,ওনি তো রাজপুত্র,,,, ডিনার ওনাকে খাইয়ে দিতে হয়,,, না হলে উনি খায়না,,,,যতসব ঢংয়ের গাছগাছালি,,,

আনহা: ওহহহ এই কারণেই আমাদের বাড়িতে আকিব ডিনার করেনি,,,,সবাই অনেক জোর করেও ওকে খাওয়াতে পারেনি

রিমি: দেখলে মা তোমার ছেলের কান্ড,,,,
তানভীর: আহ রিমি থামো,,, সবসময় শালা বাবুর পিছনে লেগে থাকো,,,
মা: রিমি যা তো আকিবকে ডেকে আন আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি,,,

রিমি আকিবকে ডেকে আনে আকিবের মা আকিবকে খাইয়ে দেয়,,,,,
এই হলো আকিবের বদ অভ্যাস এর মধ্যে একটা,,,, ছোট বেলা থেকেই ওর অভ্যাস রাতের বেলায় ও নিজের হাতে খায় না,,,, এমনিতে খেতেও ইচ্ছে করে না আকিবের,,, শুধু কফি হলেই হয়ে যায় ওর,,, কিন্তু এভাবে রাতে না খেয়ে খেয়ে একবার অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল আর ডক্টর ওকে টাইম টু টাইম খেতে বলেছিল তাই ওকে খাইয়ে দিতে হয়,,, সে যেই হোক আকিবের মা,,, বা,,,, রিমি,,,,,

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষে যার যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,,,
সকালে ঘুম থেকে উঠে আনহা বাড়ির কাজে যায়,,,, কিন্তু এতে আকিবের মা বাঁধা দেয়,,,,

মা: তোমার এসব করতে হবে না আনহা,, তুমি বরং ভার্সিটিতে যাও,,,
আনহা: না মা আজকে যাব না,,,
মা: সেকি কেন,,,
আনহা: আজকে ইম্পর্টান্ট কোন ক্লাস নেই,,, আজকে আকিব যাক,,,,
আনহার শ্বাশুড়ি কিছু বলল না,,,,
আকিব একাই ভার্সিটিতে চলে গেল,,, ও আনহার ব্যাপারটা বুঝতে পারলো,,,, যে আকিবের বন্ধুদের কারণেই আজকে আনহা আসলো না,,,,

একসপ্তাহ কেটে গেল,,,,,,

আকিব রুমে গিয়ে দেখল আনহা বিছানা ঝাড়ছে,,,,আনহা আকিবের দিকে তাকায়

আনহা: কি ব্যাপার আকিব আজকে এতো খুশি লাগছে কেন,,,,
আকিব: তুমি শুনলে তুমি ও খুশি হবে,,,,
আনহা: তাই,,,, তাহলে বলো কি এমন সুখবর

আকিব: ডিভোর্সের এ্যারেন্জ করে ফেলেছি

আনহা: সত্যি,,,, খুশিতে আনহার চোখ দুটো চকচক করছে,,, কিন্তু মুহূর্তে ওর খুশি গায়েব হয়ে যায়,,,
আকিব: কি হলো,,,
আনহা: কিন্তু,,,সোহান তো এখনো ফোন অন করেনি,,,
আকিব: আরে ওটা নিয়ে ভেবো না,,, আগে ডিভোর্স হোক তারপর দেখা যাবে,,,, ডিভোর্সের পরও না হয় এখানে তুমি কিছুদিনের জন্য থাকলে,,, কেউ তো আর জানবে না,,,, ততদিনে তুমি সোহানকে ঠিক পেয়ে যাবে,,, আমি ও হেল্প করবো তোমাকে,,

আনহা: ঠিক আছে,,,, খুশি হয়ে,,,,তা কবে হবে ডিভোর্স,,,,
আকিব: আরে সবে তো শুরু,,,, কালকে আমরা দুজনে যাব উকিলের সাথে কথা বলতে,,,, আমাদের দুজনের মতামত নিয়ে তারপর উকিল পেপার রেডি করবে,,, কালকে
বিকালে রেডি হয়ে থেকো,,,,,

আনহা: ওকে,,,,,

পরের দিন বিকালে আনহা আর আকিব উকিলের কাছে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল
বিশাল একটা ভবনের গেইটের সামনে এসে দুজনে নামলো,,,,আস্তে আস্তে গেইট পেরিয়ে দুজনে ভিতরে যেতে লাগলো,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে