#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Part:8
মায়ের ডাকে অভয় আর আহান ইচ্ছে না থাকা শর্তেও খাবার টেবিলে আসে।
ময়না আর সাহারা বেগম সবাইকে খাবার দিচ্ছে।অভি সহ সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।শুধু অনু ছাড়া।
অভয় কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,,
—” অনু কোথায় অনু খাবার খেতে এল না কেন। অনু কোথায়।
সাহারা বেগম ছেলের কথায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,,,
—” ওই মেয়ে আসলে আসুক না হলে না আসুক তাতে তোর কি। তুই খেতে বস আমি তোদের খাবার দিচ্ছি।
অভয় মার কথা শুনে রেগে বলল,,,
—” তোমাদের খেতে হলে তোমরা খাও আমি অনুর কাছে যাচ্ছি বলে শিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যেয়ে থেমে আহান এর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে তুই যাবি আমার সাথে।”
আহান কোন কথা না বলে একবার সাহারা বেগম এর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার অভির দিকে তাকাচ্ছে। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।সাহারা বেগম অভয় কে উদ্দেশ্য করে বলল। তোর যদি ওই মেয়ের উপর দরদ বেশি থাকে তাহলে তুই যা আহান কোথায় যাবেনা। আহান তুই খেতে বস আমি তোকে খাবার দিচ্ছি। বলেই খাবার প্লেটে তুলে দেয়। আহান কোন কথা না বলে চুপচাপ টেবিলে বসে পরে।
অভয় খুব ভালো করে বুঝতে পারে আহান এখন এখান থেকে কোথাও যাবে না। তাই নিজে উপরে চলে যায়। কয়েকবার দরজা নক করে কোন সারা না পেয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। অভয় ভেতরে ঢুকে দেখে অনু সোফার কর্নারে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। অভয় কিছুটা এগিয়ে অনুর কাছে চলে যায়। অনুকে কয়েকবার ডাক দেয় কিন্তু অনুর কোন সারা না পেয়ে অনুর কাছে এগিয়ে যেয়ে অনুর কাধে হাত রাখে। কাধে হাত রাখার সাথে সাথেই কাপড় এর আচলটা সরে যায়। উনমুক্ত পিঠে নখের আচর বেল্ট এর বাড়ির দাগ গুলো কালো হয়ে আছে। অভয় দাগ গুলো দেখে নিজের অজান্তেই চোখ থেকে দুইফোটা জল অনুর পিঠে পরে। অনুর মুখটা অভয় এর দিকে ঘুরিয়ে দেখে।অতিরিক্ত কান্না করার ফলে চোখ ফুলে আছে। ঠোঁট গুলো লাল হয়ে আছে। অভয় অনুর অবস্থা দেখে নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে।
অনু টিপটিপ করে চোখ খুলে তাকিয়ে অভয় কে দেখে বলল,,,
—” আমি বাবা মার সাথে কথা বলতে চাই আমাকে ওদের সাথে কথা বলিয়ে দে বলে পরে যেতে নিলে অভয় অনুকে নিজের বাহুর সাথে মিলেয়ে নেয়।
অনুকে কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে আসে। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মাথার পাশে বসে থাকে। নিজে মনে বারবার ক্ষমা চাইছে অনুর আছে।
________________________
অভি খাবার খেতে খেতে আহান কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—” আহান অনুকে অভয় কি করে চিনে। আর অনুর প্রতি অভয় এর যে টান সেটা একদিন বা দুইদিন এর হতে পারে না। তুমি কিছু যেনে থাকলে আমাদের বল আহান।
আহান মাথা নিচের দিকে করে বলল,,,
—” ভাইয়া আসলে অনু আমাদের সাথে পড়াশোনা করত ছোট থেকে। অভয় আর অনু ক্লাস এইট থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তারপর আমরা একসাথে স্কুল কলেজ আর ভার্সিটি শেষ করি। তারপর হায়ার স্টাডি করার জন্য আমি আর অভয় বিদেশ চলে যাই কিন্তু অনু যেতে পারে নি। তারপর কি হয়েছে আমি কিছু জানি না। বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে যায়।
পেছন থেকে আহেলী বলল,,,
—” ভাইয়া তুমি তো কিছু খাও নি। না খেয়ে চলে যাচ্ছ। কিছুতো খেয়ে যাও। আহান পিছনের দিকে তাকিয়ে বলল আমার আর খাওয়ার ইচ্ছে নেই। আমি রুমে যাচ্ছি বলে চলে যায়।”
সাহারা বেগম অভয় কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—” এখন তো আরেক নতুন ঝামেলা শুরু হয়ে গেল। ওই মেয়ে তো অভয় কে সব কিছু বলে দিবে। আর তোর ভাইকে তো চিনিস। ঠিক ওর বাবার মত হয়েছে। যেটা ভালো বুঝবে সেটাই করবে ওর ডিসিশন বদলানো যাবে না। একরোগা একটা ছেলে।”
_______________________
অনুর ধীরে ধীরে চোখ খুলে উঠে বসেছে চারদিকে তাকিয়ে দেখে রুমটা খুব সুন্দর ভাবে গুছানো। কিন্তু এটা তো ওর রুম না ভেবে পাশে তাকিয়ে দেখে অভয় চোখ বন্ধ করে বসে আছে খাটের সাথে হেলান দিয়ে। অনু অভয় এর হাতের উপর হাত রাখতেই অভয় চোখ খুলে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—” কিরে এখন ভালো লাগছে তোর। কিছু খাবি তোর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।অনু অভয় এর কথা শুনে ওর দিকে একবার তাকিয়ে বলল,,,
— “অাহান কোথায় আহান কি একবার ও আমাকে দেখতে আসে নি। আহান এর সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”
অনুর থেকে আহান এর কথা শুনে কিছুটা রেগে অভয় বলল,,,
—” যা দরকার আমাকে বল আহান কে কি দরকার তোর। আমার কাছে বল তোর কি চাই। আর একটু অপেক্ষা কর আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। এখানে বসে থাকবি কোথাও যাবি না। আর তোর সব কথা আমি এসে শুনছি বলে রুম থেকে বাহির হয়ে যায়।”
অভয় কে নিচে আসতে দেখে সাহারা বেগম অভয় কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—“ওই মেয়ের সেবা করা শেষ হলে খেতে বস আমি তোর খাবার দিচ্ছি। অনেক করেছিস ওই মেয়ের জন্য আর কিছু করতে হবে না। এবার ওর ব্যবস্থা তোর ভাই করবে।”
[মার কোন কথার জবাব না দিয়ে অভয় ময়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল ময়না একটা প্লেটে কিছু খাবার বেড়ে দেও তাড়াতাড়ি। এখন আমার কাছে কথা বলার সময় নেই।]
“ময়না অভয় এর কথা শুনে একপ্রকার দৌড়ে খাবার নিয়ে আসে। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল খাবার বেড়ে কারো বলার জন্য অপেক্ষা করছে।”
কুহেলী একটু বিরক্ত নিয়ে অভয় কে প্রশ্ন করল,,,
—” মা এত কষ্ট করে তোদের জন্য এত খাবার রান্না করল আর তোরা কিছু খাচ্ছিস না। পরে আছিস ওই একটা ফালতু মেয়েকে নিয়ে।”
[কুহেলী কথা শুনে অভয় রাগ চরম হয়ে যায়। টেবিল এর চেয়ারে একটা লাথি মের বলল,,,
—” কাকে তুই ফালতু মেয়ে বলছিস। ওর নখের যোগত্যা তোর মধ্যে আছে বলে আমি মনে করি না। আর একটা কথা ভালো ভাবে শেনে রাখ অনুকে কিছু বলার আগে একশোবার ভেবে নিবি।”
অভয় এর রাগ দেখে সাহারা বেগম বলল,,,
—” অনুকে নিয়ে ভাবার জন্য অভি আছে। অভি অনুর স্বামী।।
অভয় খাবার প্লেট নিয়ে উপরে যেতে যেতে বলল সেটা নিয়ে পরে কথা বলব। এখন অনুকে খাবার খাওয়ানো খুব দরকার।বলে উপরে নিজের রুমে চলে যায়। কাউকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দেয় নি।রুমে এসে দেখে অনু হাত গুলো ভাজ করে হাটুর মধ্যে মাথা দিয়ে বসে আছে।
অভয় অনুর কাছে বসে বলল,,,
—“খাবার টা খেয়ে নে ঔষধ খেতে হবে যে। তার খাবার টা একাবারে খেয়ে শেষ করবি।
অনু কোন কথা বলছে না ওই ভাবে বসে আছে। অভয় আর কোন কথা না বাড়িয়ে অনুকে খাইয়ে দিচ্ছে অনু চুপচাপ খাবার খেয়ে যাচ্ছে কোন কথা বলছে না। খাবার খাওয়ানো শেষ করে অনুকে ঔষধ দেয় খেয়ে নেওয়ার জন্য।
অনু একবার ঔষধ আর একবার অভয় এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,,
—” এই গুলো কিসের ঔষধ। আর তুই ঔষধ আনতে গেলি কেন আমার তো কিছু হয় না।”
অভয় অনুর কথা শুনে চরম রাগ নিয়ে বলল। চুপচাপ ঔষধ খাওয়া শেষ কর।আর এটা ভুলে যাস না আমার কাছে ডাক্তারি লাইসেন্স আছে। অভয় এর কথা শুনে অনু কিছুটা লজ্জা পেয়ে ঔষধ গুলো খেয়ে নেয়। ওর কান্ড দেখে অভয় ঠোঁট এর কোনায় হাসি ফুটে ওঠে।
চলবে,,,,,,,