#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_islam
#Part:7
অনু চুপ করে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে রাত পার করে দেয়। চোখ গুলো ফুলে আর লাল হয়ে আছে। দেখে যে কেউ ভয় পাবে। সকাল হতে অনু ওয়াশরুমে চলে যায়।একঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বাহির হয়ে আসে। এসে নিচে বাগানে চলে যায়। ওখানে চুপচাপ বসে আছে।
_________________
সাহারা বেগম সকাল থেকে রান্না আয়োজন করে যাচ্ছে। সব কিছু নিজে করে যাচ্ছে। কারো উপর ভরসা করছে না। আহেলি কুহেলী সবাই রুম সাজাতে ব্যস্ত।
অনু নিজের মত করে আছে। বাবা মার সাথে কথা বলার জন্য অভিকে সকাল থেকে বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছে না।অভির কোন খোঁজ পাচ্ছে না। যতবার দেখছে কোন না কোন বাহানা দিয়ে চলে যাচ্ছে।
দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে। অনু নিজের মতো করে খাবার খেয়ে যাচ্ছে কোন কথা বলছে না। সাহারা বেগম অনুকে উদ্দেশ্যে করে বলল,,,
—“অভয় আর আহান যতদিন বাসায় থাকবে ভদ্র ভাবে থাকবে। তোর ওইসব বাজে ব্যবহার ওদের সামনে করবে না। ছেলে দুইটা এত বছর পর দেশে ফিরে আসছে। তাই আমি চাই না ওদের উপর এই সব এর কোন প্রভাব পরুক।”
অনু খাওয়া শেষ করে চলে যাওয়ার আগে বলল,,
—” আমার সাথে যে যেমন ব্যবহার করবে আমি তার সাথে ওই রকম ব্যবহার করব ভালো করলে ভালো আর খারাপ এর নমুনা তো আপনারা এতদিনে দেখে নিয়েছেন বলে ওখান থেকে চলে যায়”
আহেলি রাগে গজ গজ করতে করতে বলল,,,
—” এই মেয়ে সোজা কথার মেয়ে সোজা কথার মানুষ না ঘার তেরা একটা।কি দেখে ভাইয়া যে এরে বিয়ে করে এনেছে আল্লাহ ভালো জানে। ভলে সবাই নিজের মত খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়।
_________________
বাসার গেট দিয়ে সাদা একটা গাড়ি ডুকছে অনু বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে। গাড়ি থেকে তিনজন বাহির হয়ে এসেছে অভি আহান আর অভয়। সন্ধ্যায় হালকা অন্ধকার তাই কারো মুখ দেখা যাচ্ছেনা। অনুর কোন ইচ্ছে নেই ওদের সাথে কথা বলার তাই ওখানে বসে আছে।
হঠাৎ কলিং বেল এর শব্দ শুনে সাহারা বেগম দড়জা আভয় আর আহান কে দেখে খুশিতে চোখের পানি ফেলছে।
আহান আর অভয় মুখ কালো করে বলল,,,
—কি হলো মা আমরা এসেছি তাই তুমি খুশি না হয়ে কান্না করছ। ঠিক আছে আমরা তাহলে এখনি চলে যাচ্ছি। বলে দুইজনে বেগ নিয়ে দরজা থেকে ঘুরে যায়। ঠিক তখনি সাহারা বেগম দুইজন দুই কান ধরে বলল,,,
—” অনেক বড় হয়ে গেছিস তাই তো। কিন্তু আমার কাছে তোরা দুইটা এখনো অনেক ছোট। আয় ভেতরে আয়। আর জানিস তো সব কান্না সব সময় কষ্টের হয় না। কিছু কিছু কান্না আনন্দের ও হয়।”
আহান একটু মুখ গভীর করে বলল,,,
— ” অভয় বুঝলি চোখের পানির দুইটা রং হওয়ার দরকার ছিল। তাহলে আম্মা আমাদের দেখে খুশিতে নাকি কষ্টে কান্না করেছে বুঝা যেত। বলে সবাই এক সাথে হাসতে শুরু করে।
সাহারা বেগম একটু রাগি রাগি মুখ করে বলল,,,
— আমাকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি হয়েছে এখন যে যার রুমে যেয় ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আয় নয়ত খবর আছে আমি তোদের জন্য নাস্তা তৈরি করছি।
অভয় আর আহান কোন কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে ময়নার ডাকা সবাই নিচে চলে আসে।
আহেলি আর কুহেলী ভাইদের সাথে আড্ডায় মেতে আছে। সাহারা বেগম সবাইকে নাস্তার পেওয়লা দিয়ে যায়।
অনু নিচে এসে ময়নাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,,,
—“আমার নাস্তার পেয়ালা টা দেও আমি নাস্তা করব আর আমার রাতের খাবার রুমে পাঠিয়ে দিও।”
হঠাৎ কারো পরিচিত গলা গলা শুনে চুপ হয়ে যায় আহান আর অভয় সামনে থাকা মানুষটাকে দেখার জন্য দুইজনে ঘুরে তাকায়।
অনুকে এখানে দেখে আহান আর অভয় এর হাত থেকে পায়ালা টা পরে যায়।
কোন কিছু ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ শুনে ঘুরে তাকায় তাকিয়ে অনুর চোখ ছলছল করে উঠে এটা কি করে সম্ভব সেটাই ভেবে যাচ্ছে।
অন্যদিকে আহান আর অভয় এর মনে এক প্রশ্ন অনু এখানে কি করে এলো ওর তো এখানে থাকার কথা না।
সাহারা বেগম দৌড়ে এসে জানতে চায় এখানে কি হয়েছে। ওনার কথা শুনে সবাই ভাবনা থেকে বাহির হয়ে আসে। অনু নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে উপরে উঠে যায়।
আহান আর অভয় অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে কারো মুখে কোন কথা নাই। এমন কিছু দেখবে দেশে এসে এটা হয়ত ওরা ভাবতে পারে নাই।যার ফলে কিছু ক্ষন এর জন্য চুপ হয়ে যায়।
আহেলি আর কুহেলী ঝাকুনি তে নিজেদের সাভাবিক করে নেয় অভয় আর আহান। সাহারা বেগম গম্ভীর ভাবে জানতে চায়। কি হয়েছে তোদের অনুকে দেখে এই ভাবে চমকে গেলি কেন।
অভয় নিজেকে কিছুটা সাভাবিক করে বলল,,,
—” আচ্ছা মা অনু এখানে কি করে এল ওর তো এখানে থাকার কথা নয়।
সাহারা বেগম অভয় এর এমন প্রশ্ন করবে এটা হয়তো আশা করে নি। তাই একটু বিরক্ত হয়ে বলল,,
—” অনু এখানে থাকবে না তো কোথায় থাকবে। অনু এই বাড়ির বউ এই বাড়িতেই তো থাকবে। অভি অনুকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। তাই এখানে আছে। নে এবার নাস্তা করে নে। বলে ময়না কে আরো কিছু খাবার দিতে বলল।”
অভয় কিছুক্ষন চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,,
—“মা এখন আর কিছু খাব না অনেক জার্নি করে এসেছি মাথাটা একটু ধরে আছে আমরা রুমে যাচ্ছি। বলে আহান কে এক প্রকার টেনে হিচড়ে রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।”
_________________
অনু রুমে এসে ফ্লোরে বসে চোখের পানি পরে যাচ্ছে। আজকে কোন ভাবে চোখের পানি আটকাতে পারছে না। নিজেকে বড্ড বেশি অসহায় মনে হচ্ছে অনুর। এটা কি করে সম্ভব হলো ওরা এখানে কি ভাবে আসতে পারে। আর সবাই ওদের অভয় আর আহান কেন বলছে কোন ভাবে এই প্রশ্ন মিলাতে পারছে না। ভার্সিটিতে একজন এর নাম ছিল অনি চৌধুরী আর অন্যজন এর নাম ছিল আবির চৌধুরী কিন্তু ওদের সবাই অভয় আর আহান কেন বলছে। এই হিসাব কোন ভাবে অনু মেলাতে পাড়ছে না।
চলবে,,,,