#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Part:5
অভির আজকে বেন্ডেজ খুলতে হসপিটাল গেছে। অভির সাথে আহেলী কুহিলী আর সাহারা বেগম গেছে। অনু একা বাড়ির মধ্যে আছে। হঠাৎ করে আজ অনুর মাথা ধরে আছে। তাই এক কাপ কফির জন্য নিচে চলে যায়। ওখানে কাজের মেয়ে ময়না দুপুরের জন্য রান্নার তরকারি কাটছে। ও দেখে জানতে চায় আরে ভাবি আফনে এহানে ক্যান আইছেন।অনু মাথা খুব ধরে আছে। এককাপ কফি হলে খুব ভালো হতো। এই জন্য এক কাপ কফি বানাতে আসছি।
আফা আফনে এহানে দাড়ান আমি আফনারে কফি বানাইয়া দিতাছি। জানেন আফা এই বাড়িতে কম দিন হয় নাই। কিন্তু আফনার মতো প্রতিবাদী বউ একটাও দেহি নাই আফনে তাগ লগে এই রহম কইরা লড়াই করেন দেইখা বাইচ্চা আছেন নয়তো কবে মইরা যেতেন।
অনু ময়নার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,
— এই বাড়িতে আরো বউ ছিল নাকি সত্যি করে বল। তুমি সব সময় অর্ধেক কথা বল এখন সবটা সত্যি বল। আর এখন কেউ বাড়ি নাই। তাই তোমার কথা কেউ জানতে পারবে না। আমাকে সব কিছু সত্যি করে বল। ময়না কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল আফনা আফনারে আমি হগল কথা কমু কিন্তু আফনে কথা দেওয়ন লাগব কারো কাছে কিছু কইবেন না।
অনু কিছু একটা ভেবে বলল,,
— ঠিক আছে তুমি বল আমি কাউকে কিছু বলব না।ওরা কেউ কিছু জানতে পারবে না।
ময়না অনুর কথা বিশ্বাস করে বলতে শুরু করে। অভি ভাই এর আগে আরো দুইটা বউ আছিল। একজন তো মইরা গেছে। আর একজন কন হানে আছে কেউ জানে না। অভি ভাই কিছুদিন তারে খুজছিল কিন্তু তার কয়দিন পরে আফনে আইলেন।
অনু ময়নার কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারল না নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,
— বাকি দুইজন এর বাড়ির লোক কিছু বলে নি। অভির বিরুদ্ধে কেস করে নি। আফা আফনে যে কি কন তারা কি আর বড়লোক ছিল। তারা সবাই গরীব ঘরের ছিল। তার ওনাদের ক্ষমতা সাথে কেউ পারত নাকি। জানেন নি আফা বড় বউডা কত ভালা মানুষ ছিল আমাগো কত ভালোবাসত। দেখতে ও খুব সুন্দর ছিল দুধ সাদা গায়ের রং। হেরে কি মারা না মারত কত পায়ে ধরত কেউ শুনত না সবাই খারাপ এই বাড়ির সবাই জানোয়ার শুধু ছোট ভাই ছাড়া ছোড ভাই অন্য রকম ছিল আর অভি ভাই এর এক খালাতো ভাই যে এই বাড়ি থাকত তারা দুইজন ভালা ছিল ওদের সামনে তার ভালা সেজে থাকে।
এরা বাসায় থাকলে বউ গো লগে বহুত ভালা ব্যবহার করত।একবার কি করছে জানেন ভাই বিড়ি সিগারেট খাইয়া বড় ভাবির সারা মুখে আগুন লাগাই দিছে। ভাবি অনেক কষ্টে পাইছে পরে নিজে নিজেরে শেষ কইরা দিছে। বলে ময়না আচল দিয়ে বারবার চোখের পানি মুছে যাচ্ছে। এখন কাজ গুলো শেষ কইরা লই বলে চলে যায়।
অনু নিজ মনে বসে ভেবে যাচ্ছে এটা কোন নরকে এসে পড়েছি আমি। এখান থেকে কি করে মুক্তি পাব। নিজ মনে ভেবে চলেছে। হঠাৎ গাড়ির শব্দে ধ্যান ভেঙ্গে যায়। অনুর ভাবনা থেকে বাহির হয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
অভি আহেলী আর কুহেলী ভসে ভেবে যাচ্ছে। কি করে অনুকে জব্দ করা যাবে। অভি মা বোনের কথাতে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। অনুকে কোন ভাবে জব্দ করাতে। অভি বারবার মাকে বলে যাচ্ছে। মা এইসব করার কোন দরকার নাই তোমরা অনুকে কিছু বলো না। ওর সাথে যা বুঝার আমি বুঝে নিব তোমরা কেউ কিছু বলো না।
সাহারা বেগম এই মেয়ের মধ্যে তুই কি পাইছিস যে ওর পিছে পরে আছিস।এত গুলো মেয়ে তো তোর জীবনে আসছে এর মধ্যে কি এমন আছে বল যে এত পাগল হয়ে আছিস।
অভি কিছুক্ষন ভেবে বলল,,,
— মা বিড়াল তো সবাই পোষ মানাতে পারে। কিন্তু সবাই তো আর সিংহী কে পোষ মানাতে পারেনা।আমি এবার সিংহীকে পোষ মানাব বলে নিজের মনে হেসে রুমে চলে আসে।
অনু নিজের মত করে বাড়ান্দায় দাড়িয়ে আছে,,,
অভি অনুর পাশে দাড়িয়ে বলল,,,
–মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, মেঘের অন্তরালে হাজারো নক্ষত্র, চারদিকে নিস্তব্ধতা, ঘুন ঘুনে অন্ধকার, দুর দিগন্তের জোনাকিপোকার মৃদু আলো, পোকামাকড়ের কিচিরমিচির, চারদিকে সবুজ প্রকৃতির সমাহার। শিঁশিরভেজা ঘাস। কোথাও কেউ জেগে নেই, পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে। গভীর রজনীতে দাড়িয়ে, মধ্য রাতের স্নিগ্ধতার শীতল বাতাস অসাধারণ লাগছে, তবে কিছু একটা শূন্যতা অনুভব করছি।
আমি একা একা দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি এই তুমি আসো না! পরনে নীলশাড়ি, হাত ভর্তি নীল চুড়ি, খোলা চুলে। চোখে কাজল লাগিয়ে, শাড়ির আঁচল শিঁশিরভেজা ঘাসের উপর বিছিয়ে বসে দুইজন মিলে আকাশ দেখব আর গল্প করব।
–অনু অভির দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে। অনুর কাছে আজকে অভিকে সবথেকে বেশি বিরক্ত মানুষ বলে মনে হচ্ছে। এতটা ভালো মানুষ এর পিছনে শয়তান এর চেহারা লুকিয়ে আছে।
অভি নিজ মনে বলে যাচ্ছে,,,
বসে থাকতে থাকতে এমন সময় তুমি হুট করেই বলে উঠবে! ওই চলুন হাটবো, গ্রুমের নির্জন রাস্তায় হাটতে খুব ইচ্ছে করছে।তোমার এই কথা শুনে দুইজন রাস্তা দিয়ে হাটা শুরু করব।
তুমি আমার হাতের বাম পাশে দাঁড়িয়ে হাটবে!
আর আমি তোমার ডান হাতের অর্নামিকা আঙুলটা চেপে ধরে হাটবো!
.
হাটতে হাটতে অনেক দুর যাব! রাস্তার দুইপাশে জোনাকিপোকা দেখে তুমি আমায় বলবে ওই আমাকে একটা জোনাকিপোকা ধরে দিবে।
.
তখন আমি তোমার ইচ্ছে পুরুন এর জন্য জোনাকিপোকার পিছনে ছুটবো এবং ধরে এনে আপনার হাতে দেবো তুমি তখন অনেক খুশি হবে।
অনু অভির কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলল,,,
— আপনার এই আজাইরা প্রলাপ শোনার কোন ইচ্ছে আমার নেই। বলে ওখান থেকে চলে আসার সময় অভি অনুর হাত দেয়াল এর সাথে চেপে ধরে গলার মধ্যে মুখ গুজে দেয়।
অনু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু অভির শক্তির সাথে পেরে ওঠছে না।
চলবে,,,,