#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Part:21
অভয় অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—“ওইসব কথা তোর মনে করার দরকার নাই। তুমি আমার সাথে এখান থেকে চলে আয়।ওইসব কিছু তোর মনে করতে হবে না।আর তুমি কাজটা ঠিক কর নি।মাইশা কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
মাইশা চোখের পানি মুছে বলল,,,
—“আমি ওদের ভালোর জন্য এটা করেছি আমাকে বিশ্বাস কর। আমি চাই অনু আর অভি ভালো থাক ওদের সব ঝামেলা শেষ করে এক সাথে থাকুক।”
অভয় মাইশাকে ধমক এর সুরে বলল,,,
—“এটা কখনও সম্ভব না। অনুকে আমি আবার কোন ধরনের বিপদে ফেলতে পারি না। ওর জীবন আর নষ্ট হতে দিব না। এমনি জীবনে অনু অনেক কষ্ট পেয়েছে। আর কষ্ট পেতে হবে না।”
মাঈশা অভয় দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,,,
—“তুমি এটা কি বলছ তুমি জানো তোমার ভাইয়ার অবস্থা তখন কেমন ছিল সেটাও তুমি ভালো করে জানো।তাহলে এখন এইরকম কথা কেন বলছ। অভি এখন আর আগের মতো নেই নিজেকে অনেক পরিবর্তন করে ফেলেছে।এখন অভি অনুকে অনেক ভালোবাসবে। আমার কথা তোমাদের বিশ্বাস না হলে কৌশিক কে জিগ্যেসা করে দেখ। ”
ডাক্তার কৌশিক এতক্ষন চুপ করে ওদের কথা শুনে যাচ্ছিল। কোন কথা বলে নি। কিন্তু মাইশা কৌশিক এর নাম নেওয়াতে কৌশিক বলতে শুরু করে।
দেখ অভি চৌধুরী অবস্থা আগে অনেক খারাপ ছিল কিন্তু রিহেব এ থাকার পর আমি নিজে ওটার ট্রিটমেন্ট করেছি। ওনি আর আগের মতো নেই অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। অভি চৌধুরী বদলে গেছে। সভাবিক জীবনে চলে এসেছে।
অনু সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—“তোমরা সবাই নিজেদের মতো যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছ। আমার ইচ্ছে অনিচ্ছা কথা শোনার কোন দরকার আছে কি তোমাদের।”
অনুর কথা শুনে অভয় মাইশা আর কৌশিক সবাই অনুর দিকে তাকায়।
অনু সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—“আমার জীবন এর সিদ্ধান্ত আমি একা নিতে পারি। কারো কথা শুনার কোন দরকার নেই আমার।কিন্তু আমার সাথে কি কি হয়েছে সব কিছু আমাকে অভয় তুই জানাবি কিনা সেটা বল।”
অভয় অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—“তুই শান্ত হয়ে বস আমি তোকে সব কিছু বলছি। বলে অনুর পাশে বসে কিছু বলতে যাবে তার আগে অভয় ফোন বেজে ওঠে। অভয় ফোন হাতে নিয়ে দেখে অভির নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। তাই ওখান থেকে ওঠে একটু দূরে যেয়ে ফোন রিসিভ করে। কথা বলে অনুর কাছে এসে বলল,,,
—“আমার সাথে এখনি চল। আমাদের এখন যেতে হবে। মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—” তোমরাও আমাদের সাথে এস।”
সবাই অভয় কথা শুনে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে। অভয় চোখ লাল হয়ে গেছে। মুখে ভয় আর চিন্তার ছাপ পরে আছে।
অনু অভয় কাছে যেয়ে জানতে চায় কি হয়েছে বলবি তো। কে ফোন করেছিল আর সবাইকে কোথায় যাওয়ার কথা বলছিস।
অভয় অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—“এখন এত কথা বলার সময় নেই। তাড়াতাড়ি চল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে। অবস্থা ভালো না।হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছে।”
অভয় কথা শুনে মাইশা অনেক বড় একটা সক পায়। দাড়ানো থেকে বসে পরে। ডাক্তার কৌশিক মাইশাকে ঝড়িয়ে ধরে। মাইশা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,
—‘আমরা কেন এখনো এখানে আছি।তাড়াতাড়ি হসপিটালে যেতে হবে চল এখনি।”
মাইশার কথা শুনে সবাই হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাস্তায় যেতে যেতে অভয় মাকে ফোন করে হসপিটালে চলে আসতে বলে।
________________________
হসপিটালে পৌঁছে জানতে পারে অভির অবস্থা ভালো না। অপারেশন করতে হবে তার জন্য আই সিও তে রাখা হয়েছে লাইফ সাপোর্ট এ। ডাক্তাররা বাড়ির লোকের জন্য অপেক্ষা করে যাচ্ছে।
অভয় ডাক্তারদের সাথে কথা বলে জানতে পারে অভির অবস্থা খুব খারাপ। রাস্তায় একটা বাচ্চাকে বাঁচাতে যেয়ে নিজের গাড়ি ট্রাক এর সাথে বাড়ি লেগে যায়। যার ফলে গাড়ি ছিটকে রাস্তার পাশে থাকা গাছের সাথে বাড়ি লেগে নিচে পরে আগুন ধরে যায়। কিন্তু স্থানীয় মানুষরা অভিকে কোন ভাবে গাড়ি থেকে বাহির করে হসপিটালে নিয়ে আসে।
অভির মাথার মগজে রক্তে জমাট বেধে গেছে ঘারের কিছু রগ ছিড়ে গেছে। বাঁচানোর কোন চাস ডাক্তারদের জানা নেই।
অভয় চোখের পানি মুছে ডাক্তার কেবিন থেকে বাহির হয়ে আসে। অভয়কে আসতে দেখে সবাই দৌড় অভয় কাছে চলে আসে। অভির কি অবস্থা সেটার জানার জন্য আগ্রহ নিয়ে অভয় মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
অভয় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—*ভাইয়া অবস্থা খুব খারাপ হয়ত আর কিছু সময় ভাইয়ার হাতে আছে। অপারেশন করে লাভ হবে না।তাই ডাক্তার অপারেশন করাতে চাইছে না।তোমরা যেয়ে শেষ বারের মতো ভাইয়াকে দেখে আস।”
অভয় কথা শুনে সাহারা বেগম পরে যেতে নিলে আহেলী উনাকে ধরে ফেলে।
সাহারা বেগম নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়িয়ে অভয় কাছে এসে বলল,,,
—“যে ভাবে হোক আমার বড় ছেলেকে বা তোল। আমি অভিকে ছাড়া বাচতে পারব না। কিছু একটা তো উপায় আছে অভিকে ভালো করার। তোরা আরো বড় বড় ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ কর। দরকার হলে বিদেশ নিয়ে যা কিন্তু আমার ছেলেকে ভালো করে দে।”
মাইশা নিরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। কৌশিক মাইশাকে ঝড়িয়ে ধরে রেখেছে। কৌশিক কে ছেড়ে মাইশা অভয় এর সামনে এসে বলল,,,
—“যা করা দরকার কর। অপারেশন করা যাবে না কেন। এত ডাক্তার কি করতে আছে একটা অপারেশন করতে পারবে না। অভিকে ভালো হতে হবে।”
অভয় মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—“যদি কিছু করা সম্ভব হতো তাহলে কি আমি চুপ করে এখানে দাড়িয়ে থাকতাম। আমার ও ভাইয়ার জন্য তোমাদের থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়ার কাছে সময় খুব কম আছে। তোমরা ভাইয়ার সাথে শেষ বারের মতো দেখা করে আস। বলে ওখান থেকে চলে যায়।”
অনু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। এই মুহুর্তে কি করা উচিৎ সেটাও অনুর কাছে অজানা লাগছে।
সাহারা বেগম আর আহেলী কোহেলী মিলে অভির কেবিনে দাঁড়িয়ে আছে। অভির সারা মাথা বেন্ডেজ করা নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরছে। চেহারা বিভ্যৎস দেখা যাচ্ছে। অভির অবস্থা দেখে সাহারা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দুই বোন আর একজন নার্স উনাকে একটা কেবিনে নিয়ে যায়। ডাক্তার উনার চেকাপ করে জানায় সাহারা বেগম ব্রেন স্টোক করেছে। হঠাৎ করে এতবার শোক মেনে নিতে পারে নি। যার ফলে ব্রেন স্টোক করে।
মাইশা আর ডাক্তার কৌশিক আইসিও তে অভিকে দেখার জন্য যায়। মাইশা অভিকে এক পলক দেখে কৌশিক কে ঝড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে কৌশিক কে ঝড়িয়ে ধরে। কৌশিক মাইশা অবস্থা বুঝতে পেরে ওকে শক্ত করে ঝড়িয়ে ধরে মাইশাকে নিয়ে বাহির হয়ে আসে।
অনু ওখানে চুপচাপ বসে আছে। কি করবে সেটাই ভেবে যাচ্ছে।
চলবে,,,,