ভালোবাসার রং বদল Part:20

0
1710

ভালোবাসার_রং_বদল
Abanti_Islam
Part:20

সারাবাড়ি বিয়ের সাজে সাজানো হয়েছে। ভেতরে সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। মাইশাকে পালারের লোকেরা বউ সাজাক্ছে। কোন কিছুর কমতি রাখে নি অভি।

অনু একপাশে চেয়ারে বসে সব কিছু দেখছে।

অভি একা সব কিছুর আয়োজন করে যাচ্ছে। যা যা দরকার সব নিজ হাতে করছে।

হসপিটালে অনুর চেকাপ করার পর জানতে পারা যায় অনু দুই বছর আগের সব কিছু ভুলে গেছে। এতে সবাই খুব খুশি হয়েছে। অনু পুরোনো সব কিছু ভুলে গেছে।

অভি হসপিটালে এসে অভয় এর কাছে ক্ষমা চায়। অভয় কোন ভাবে অভিকে ক্ষমা করার জন্য রাজি ছিল না।

কিন্তু মাইশা অভয় কে সব কিছু বলে রাজি করায়।

___________________

ডাক্তার কৌশিক আর মাইশা একটা কফি হাউজে বসে আছে।

দুইজনে চুপ করে বসে থেকে নিরবতা পালন করে যাচ্ছে। কৌশিক নিরবতা ভেঙ্গে বলল,,,

—“আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে। আমি আমার বাবা মাকে নিয়ে কালকেই আপনার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে চাই।”

মাইশা লজ্জা লাল হয়ে যাচ্ছে। মুখে হালকা হাসি এনে বলল,,,

—“ডাক্তাররা আন রোমান্টিক হয় সেটা জানতাম কিন্তু আপনাক দেখার পর এখন শিওর হয়ে গেছি।”

[কৌশিক নিজের মনে ভাবছে। এই ভাবে বিয়ের কথা না বললেও হতো। যদি রাজি না হয় তাহলে কি করব ভেবে যাচ্ছে।]

মাইশা টেবিল থেকে ওঠে এক কদম এগিয়ে যেয়ে বলল,,,

—“আপনার বাবা মাকে নিয়ে কখন আসবেন সেটা মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েন। বলে ওখানে না দাঁড়িয়ে ওখান থেকে চলে আসে।”

[মাইশা কথা শুনে ডাক্তার কৌশিক এর নাচতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু ইচ্ছে টাকে মনের মধ্যে আটকে রেখে ওখান থেকে বাসায় চলে যায়। বাসায় এসে বাবা মাকে সব কিছু বলে। উনারা ছেলের মুখে হাসি তেই খুশি।]

পরেরদিন বিকালে,,,

কৌশিক আর ওর বাবা মা অভির বাসায় চলে আসে।সাহারা বেগম আর অভির সাথে কথা বলে সব কিছু ঠিক করে ফেলেন। ওনারা খুব ছোট করে অনুষ্ঠান করে মাইশা কে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।

সবাই কৌশিক এর বাবা মার কথায় রাজি হয়।

কিন্তু অভির কাছে সেটা পছন্দ হয় নি। তাই তিন দিনের মধ্যে সবকিছুর আয়োজন করে ফেলে। সব আত্মীয়দের আসতে বলে। অভয় কে বলে অনুকে এখানে নিয়ে আসা হয়। অনুকে আজকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে অভি। সেটার জন্য কষ্ট হলেও চুপচাপ সব সহ্য করে কাজ করে যাচ্ছে।কাউকে কিছু বুঝতে দিচ্ছে না।

বর এসেছে বলে সবাই ছোটছুটি করছে। সাহারা বেগম অভয় কাধে হাত রেখে বলল,,,

এখন সবার উপর রাগ করে আছিস আমাদের ক্ষমা করে দে। বর চলে এসেছে এখনো এই ভাবে বসে থাকবি।তোর ভাই সকাল থেকে সব কাজ একা একা করে যাচ্ছে। ভাইয়ার কাছে যা বাবা। অভি তাহলে খুব খুশি হবে।

অভয় মার কথা শুনে ভাবনা থেকে বাহির হয়ে এসে ভাই এর কাছে চলে যায়। দুই ভাই কৌশিক কে স্টেজ পযর্ন্ত নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়।

কাজি এসে ওদের বিয়ে পরাতে শুরু করে। কবুল বলার সময় কৌশিক খুব লজ্জা পাচ্ছিল। অভয় কৌশিক পাশে বসে বলল,,,

—“কি ডাক্তার সাহেব কবুল বলতে এতো লজ্জা পাচ্ছেন। তাহলে কি আমার বোনকে আপনার পছন্দ হয় নি বিয়ে ভেঙে দিব।”

[অভয় কথা শুনে কৌশিক কিছুটা ভয় পেয়ে সাথে সাথে কবুল বলে দেয়। অভয় কৌশিক এর অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসছে।]

বিয়ে খুব সুন্দর ভাবে শেষ হয়ে যায়। চলে যাওয়ার সময় মাইশা সাহারা বেগম কে ঝড়িয়ে ধরে খুব কান্না করেছে। সবার চোখে জ্বল ছল ছল করছে পরিবেশটা একদম নিরব হয়ে আছে।

মাইশা অভির কাছে যেয়ে বলল,,,

—“অনুকে তুমি ডিভোর্স দিও না অনুকে তোমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আস। সব কিছু অনুকে বলে অনুর কাছে ক্ষমা চেয়ে সব ঠিক করে নেও।”

মাইশার কথা শুনে অভি মাইশার চোখের পানি মুছে বলল,,,

—“সেসব নিয়ে এখন ভাবতে হবে না তুমি শুধু মন দিয়ে সংসার করে যাও। ওখানে সবাইকে খুশি রাখবে আর কিছু দরকার হলে আমাকে ফোন দিবে।”

মাইশা কোন কথা না বলে অনুর কাছে চলে যায়। অনুকে ঝড়িয়ে ধরে। অনু হালকা হাতে মাইশার পিঠে হাত রাখে। ভালো থাকবেন আপনার সাথে পরে একদিন পরিচিত হব ভালো ভাবে। মাইশা অনুকে নিজের থেকে একটু দূরে সরিয়ে একটা ডাইরি অনুর হাতে দিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।

অনু কিছু একটা ভেবে ডাইরিটা নিজের পার্স এ ডুকিয়ে নেয়। মাইশা চলে যাওয়ার পর অনু সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

___________________

মাইশা বাড়ি এসে ক্লান্ত হয়ে রুমে চলে যায়। ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরে। ডাইরির কথা একদম ভুলে যায়।

কয়েদিন পর,,,

আমেনা বেগম কি হলো মা এত সকালে কোথায় যাচ্ছিস।

অনু মার কথা শুনে মার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“কি মা তুমি কালকে তো বললাম আমি অনার্স এর সাটিফিকেট গুলো তুলতে যাচ্ছি মাস্টাস এর জন্য এপ্লাই করব। আর বিদেশি ভার্সিটি জন্য এপ্লাই করতে হবে।”

আমেনা বেগম মেয়ের কথা শুনে বলল,,,

—“মাটাস্ট এখানে করলে কি সমস্যা আছে বল। তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে কোথায় আমাদের সাথে থাকবি। না তুই চাইছিস অতদূরে বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য।তোকে ছাড়া আমরা কি ভাবে ভালো থাকব বল মা।”

রায়হান সরকার নিজের স্ত্রী কে থামিয়ে বলল,,,

—“আমাদের মেয়ে যে কাজ করে খুশি আমরা সেটাতেই খুশি। তোর যা ভালো লাগে মা তুই সেটাই কর মা। তোকে আর তোর মা কিছু নিয়ে বাধা দিবে না।”

অনু বাবার কথা শুনে খুশি হয়ে বাবাকে ঝড়িয়ে ধরে বলল,,,

—“আমার ভালো বাবা। আমি এখন আসি। রাতে তোমার সাথে কথা বলব বলে বাসা থেকে বাহির হয়ে যায়। ”

কলেজ এসে সাটিফিকেট তোলার জন্য এপ্লাই করে। এপ্লাই এর এক কপি জমা দিয়ে অন্য কপি বেগে নেওয়ার সময় মাইশা দেওয়া ডাইরিটা চোখে পরে। অনু কাগজ গুলো নিয়ে লাইব্রেরি চলে যায়। ওখানে বসে ডাইরি পরা শুরু করে দেয়।

ডাইরিতে অনুর অভির বিয়ের সব কিছু লিখা ছিল। বিয়ের পর যা যা ঘটনা ঘটে গেছে। ডাইরিতে সব কিছু লিখা ছিল। ডাইরির শেষ পেজে মাইশার ফোন নাম্বারটা দেওয়া ছিল। অনু লিখা গুলো পড়ে চুপচাপ বসে আছে। চোখ দিয়ে পানি পরে যাচ্ছে। অনু চোখের পানি মুছে ডাইরিতে থাকা মাইশার ফোন নাম্বারটায় ফোন দেয় কয়েকটা রিং হতেই মাইশা ফোন রিসিভ করে জানতে চায় কে। অনু নিজের পরিচয় দেওয়ার পর মাইশা বলল,,,

—“ডাইরিটা এতদিনে পড়েছ তুমি। আমি ভেবেছিলাম অনেক আগে আমাকে ফোন দিবে। আমি তোমার ফোনের অপেক্ষা ছিলাম।”

অনু মাইশার কথা শুনে বলল,,,

—“আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। আমার সাথে তুমি দেখা কর।”

মাইশা অনুকে নিজের বাসা ঠিকানা দিয়ে বলল,,,

—“তুমি আমার বাসায় চলে আস তোমার সাথে আমার এখানে কথা হবে।”

অনু ফোন কেটে অভয় কে ফোন দিয়ে মাইশার বাসায় আসতে বলে ফোন রেখে দেয় আর কোন কথা বলার সুযোগ দেয় না।

কিছুক্ষন এর মধ্যে অনু আর অভয় মাইশার বাসায় চলে আসে। অভয় বাসায় ডুকে মাইশার সাথে রাগারাগি করছে কেন অনুকে সব কিছু বলে দিয়েছে তার জন্য।

মাইশা কি বলবে বুঝতে পাড়ছে না চুপ করে সব কিছু শুনে যাচ্ছে।আর চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। আমি তো শুধু ওদের ভালো করার জন্য এই কাজটা করেছি। আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না বিশ্বাস কর।

অনু মাইশার কথা শুনে বলল,,,

অভয় যা যা হয়েছে সব কিছু আমাকে সত্যিটা বল। কি কি হয়েছে আর আমি কি কি ভুলে গেছি?

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে