ভালোবাসার রং বদল part:18

0
1558

#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#part:18

ছয় মাস পর আজকে অনু একটু নিজের আঙ্গুল গুলো নাড়াচাড়া করতে পারছে। এটাতে ডাক্তার নতুন আশার আলো দেখছে। অনু এখন ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে।

আর এই ছয়মাস অভি রিহেভ এ ছিল। ওখানে থেকে অভির চিকিৎসা হচ্ছে। আহান সব ছেড়ে দেশের বাহিরে চলে যায়। বিজনেস সম্পূর্ণ মাইশা সামলে যাচ্ছে। চৌধুরী পরিবারের সবাই নিজেদের ভুল একটু একটু করে বুঝতে পারছে। সাহারা বেগম নিজের ভুল বুঝে নিজে কষ্ট পাচ্ছে।

প্রায় ছয় মাস পর আজকে অভয় চৌধুরী বাড়ি এসেছে অভয় কে দেখে সবাই খুব খুশি। কিন্তু অভয় এর চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। কারো সাথে কোন কথা না বলে মায়ের রুমে চলে যায়। ওখানে যেয়ে মা কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,

—“আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে। আপনি এখন ফ্রি আছেন।”

সাহারা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“বল কি বলতে এসেছিস। এতদিন একবার ও মার খোঁজ নেওয়ার সময় হল না। দরকার ছাড়া মার কথা মনে পরল না।”

মার কথায় অভয় রেগে গিয়ে বলল,,,

—“আমার আপনার সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে নাই। আমি এখানে যেটা বলতে এসেছি সটা বলেই চলে যাব। দেখুন অনুর জ্ঞান ফিরে আসছে। হয়ত কয়েকদিন এর মধ্যে জ্ঞান চলে আসবে। আর অনু সুস্থ হয়ে গেলেই আপনার ছেলেকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। আপনি আপনার ছেলেকে নিষেধ করবেন যেন অনুকে কোন ভাবে বিরক্ত না করে। বলে ওখান থেকে চলে যায়।”

সাহারা বেগম চোখের কোনার পানিটা মুছে বলল,,,

—“এত গুলো দিনে একবার ও পরিবারের কথা মনে পড়ল না। সব সময় অনুকে নিয়ে পরে আছিস। তুই তো জানতেও চাইলি না তোর ভাই কোথায় আছে। আমার লোভ এর জন্য আজকে এত কিছু হয়ে গেল। কিন্তু আমি কিছু করতে পারছিনা। ভেবে ফুপিয়ে কেদেঁ ওঠে।”

___________________

মাইশা অফিস থেকে বাহির হয়ে গাড়িতে বসে ভেবে যাচ্ছে। সেদিন অভি ওকে বাসায় নেওয়ার পর সবাই মাইশাকে আপন করে নেয়। কিন্তু তার কিছুদিন পর অভি অনেক অসুস্থ হয়ে যাওয়া ওকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়। তখন ডাক্তার জানায়। অতিরিক্ত নেশা আর অনেক বছর নেশার ঔষধ দেওয়ার ফলে অভির এই অবস্থা হয়েছে। যার ফলে অভিকে সুস্থ করতে হলে রিহেবে দিতেই হবে। তাই অভির ভালোর জন্য ওকে রিহেবে দেওয়া হয়। তার পরেই আহান দেশ ছেড়ে চলে যায়। বিজনেস ডাউন হতে থাকে। মাইশা নিজ থেকেই সাহারা বেগম এর কাছে বিজনেস এ যোগ দেওয়ার কথা জানায়।

সাহারা বেগম সেদিন কোন চিন্তা না করে মাইশাকে সব কিছুর দায়িত্ব দিয়ে দেয়।
সেই থেকে মাইশা বিজনেস দেখে যাচ্ছে। অফিস শেষ করে রোজ অভির সাথে দেখা করে। ওর সাথে সময় কাটিয়ে বাসায় চলে যায়। চৌধুরী পরিবার মাইশা কে নতুন করে বেঁচে থাকার স্থান খোঁজে দেয়।হাঠাৎ ড্রাইভার এর ডাকে ভাবনা থেকে বাহির হয়ে আসে। আপা আমরা চলে এসেছি।

মাইশা গাড়ি থেকে নেমে অভির কাছে চলে যায়। অভি চুপ করে বসে আছে মাথা নিচের দিকে দিয়ে। মাইশা অভির পাশে বসে বলল,,,

—“আপনি ভালো আছেন তো শরীর এখন কেমন লাগছে এখানে থাকতে কোন সমস্যা হচ্ছে না তো।”

অভি মাথা তুলে মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“আমি ভালো আছি আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না। এখানে সব কিছু ঠিক আছে। শুধু খাওয়া একটু সমস্যা হচ্ছে।”

[মাইশা অভির দিকে তাকিয়ে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে এখানে খাবার খেতে অভির কষ্ট হচ্ছে। এইরকম পরিবেশে কখনও থাকে নি। তাও এতগুলো দিন মানিয়ে নিয়ে এখানে থাকছে। এটা খুব বড় বিষয়।]

মাইশা নিজের ভাবনা থেকে বাহির হয়ে এসে বলল,,,

—“আপনি চিন্তা করবেন আমি আজকে অথরিটি সাথে আবার কথা বলব। দেখবেন ওরা আপনার জন্য ভালো খাবার এর ব্যাবস্থ করে দিবে।”

অভি মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“এটা করার দরকার নাই এখানে সবাই যে ভাবে থাকবে আমি ও সেই ভাবে থাকব। আপনি বাসায় যান অনেকক্ষন হয়ে গেছেন এখানে এসেছেন।”

মাইশা অভির দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“ঠিক আছে আমি আজকে চলে যাচ্ছি কালকে আবার আপনার সাথে দেখা করতে আসব। আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন বলে চলে যায়।”

[কিন্তু দরজা কাছে যেতে অভি পেছন থেকে ডাক দেয়। একা কথা বলার ছিল।]

মাইশা অভির দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—-বলুন কি বলতে চান? কিছু কি দরকার আপনার?”

অভি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,,,

—“অনু কেমন আছে। অনুর কোন খোঁজ পেয়েছেন। অনু কি আগের থেকে একটু ভালো হয়েছে।”

মাইশা অভির কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,

—“অনু ভালো আছে একটু একটু রেন্সপন্স করছে।হয়ত খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে। এখন আমি আসি আপনি সাবধানে থাকবেন বলে ওখান থেকে বাহির হয়ে যায়।ডাক্তার এর সাথে দেখা করার জন্য।”

[ডাক্তার এর চেম্বারে বসে আছে। ডাক্তার রাউন্ডে গেছে। তাই মাইশা বসে অপেক্ষা করছে।]

স্যরি স্যরি আপনাকে অনেকক্ষন অপেক্ষা করিয়েছি। বলে ভেতরে ঢুকে আসে ডাক্তার কৌশিক।

মাইশা ডাক্তার এর কথা শুনে মুখে হালকা হাসি রেখে বলল,,,

—“ব্যাপার না। আমি রোজ আপনার কাছে এসে আপনাকে বিরক্ত করি। তারপর বলুন ভালো আছেন। আর মিস্টার চৌধুরী এখন কি অবস্থা।”

[কৌশিক নিজের মনে বিরবির করে বলছে। কখনও তো নিজের জন্য আসতে পারেন। না সব সময় মিস্টার চৌধুরীর জন্য আসেন। আপনি কি কিছু বুঝতে পারেন না। আপনাকে আমার কতটা ভালো লাগে।]

মাইশা এই যে ডাক্তার সাহেব কি এত বিরবির করছেন। আমার প্রশ্নের তো উওর দিলেন না।

কৌশিক নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,,

—“উনি এখন প্রায় সুস্থ হয়ে গেছে। আর দুইতিন দিন এখানে থাক তারপর বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।কিন্তু মিস্টার চৌধুরী চলে গেলে আর এই মুখটা দেখতে পাব না হয়ত। ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।”

মাইশার কাছে কৌশিক এর ব্যবহার কিছুটা অন্য রকম লাগছে। হয়ত অনেক কিছু বুঝতে পারছে তাও কিছু না বলে বলল,,,

—“এটা তো খুব খুশির সংবাদ। মিস্টার চৌধুরী ভালো হয়ে গেছে। এটা শুনলে বাসার সবাই খুব খুশি হয়ে যাবে। আমি আজকে আসি। কালকে আবার দেখা হডে। বলে ওঠে চলে যায়।”

কৌশিক চেয়ারে বসে নিজে নিজে বলল,,,

—“মিস্টার চৌধুরী চলে গেলে আপনি মাজে মাজে এখানে আসবেন তো। আপনাকে অনেক মিস করব।”

[মাইশা একবার পেছনের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের মতো করে চলে যায়। বাসায় এসে সবাইকে নিচে আসার জন্য ডাকে। মাইশার ডাকে সবাই নিচে চলে আসে। সাহারা বেগম মলিন মুখে জানতে চায় কি হয়েছে। আজকে তোমাকে এত খুশি লাগছে।]

মাইশা সাহারা বেগম এর কাছে যেয়ে বলল,,,

—“অভি চৌধুরী ভালো হয়ে গেছে আন্টি উনাকে দুই একদিন এর মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমরা ওনাকে দুই একদিন মধ্যে বাসায় নিয়ে আসব।””

[অভি ভালো হয়ে যাওয়ার কথা শুনে সাহারা বেগম প্রান ফিরে পায়। চোখে মুখে আনন্দের ছাপ ফুটে ওঠে। খুব উৎসাহ নিয়ে বলে। আমার ছেলের ফিরে আসবে। ওর জন্য সবকিছু নতুন করে সাজাতে হবে। এইরকম এলোমেলো আমার অভির পছন্দ না। তাই দুই মেয়েকে আদেশ দেয় যেন সব কিছু নতুন করে সাজিয়ে তোলার জন্য।]

আহেলী কোহেলী মার কথা শুনে নিজেদের কাগে নেমে যায়। সব কিছু নতুন করে সাজানোর। মাইশা নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেস হওয়ার জন্য। ফ্রেস হয়ে বিছানা হেলান দিয়ে ভাবতে থাকে ডাক্তার কৌশিক ওকে খুব পছন্দ করে সেটা ওনার চোখ দেখলে বুঝা যায়। কিন্তু এতগুলো দিন অভির সাথে থেকে মাইশা অভিকে খুব পছন্দ করে ফেলে। সেই দোটানায় ভুগছে কি করবে। অভি কি মাইশা কে মেনে নিবে।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে