ভালোবাসার রং বদল Part:16

0
1668

#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islma
#Part:16

সেদিন কলেজ এর কথা মনে আছে তোর যখন সবাই মিলে আমার সাথে মজা করছিল আর খারাপ ব্যবহার করছিল। আমার সাথে রেগিং করছিল। সেদিন তুই একা সবার সাথে ঝগড়া করেছিলি। তখন সবাই তোকে ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু তোর মধ্যে ভয় এর কিছু ছিল না। তারপর থেকে কলেজে তোর নাম হয়ে ঝগরুটে। এর পর থেকে তোর সাথে আর কেউ ঝগড়া লাগত না। কলেজে তোর কোন বন্ধু ছিল না শুধু আমি ছাড়া।

[তুই জানিস কত ছেলে তোকে পছন্দ করত কিন্তু তোর মাইর খাওয়ার ভয়ে তোর কাছে পযর্ন্ত কেউ এসে বলতে পারে নি।সবাই আমার কাছে তোর কথা বলত। কিন্তু আমি ও তোর ভয়ে তোকে কখনও কিছু বলি না।]

(তুই ভালো হয়ে যা তাড়াতাড়ি তরপর একসাথে কলেজ কেম্পাস ঘুরবো। তুই যা যা খেতে চাস সব খাওয়াব। তোর পছন্দের টং এর চা ও খাওয়াব। ভালো হয়ে যা আনু। অভি একনাগাড়ে কথা গুলো বলে যাচ্ছে।)

[অনু অভির দিকে তাকিয়ে আছে। আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হয়ত এমন একটা ভরসা অপেক্ষা ছিল। কিন্তু সেটা অনেক দেরী হয়ে গেছে।]

{র্পদার আড়ালে দাঁড়িয়ে আর একজন চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। কত বড় ভুল করেছে সেটা ভেবে যাচ্ছে। অনুকে ভালোবেসেও নিজের ভুলে অনুকে হারিয়ে ফেলেছে। ভেবে চোখের পানি গুলো মুছে যাচ্ছে আহান। তাই তো অনুর এত বড় বিপদেও অনুর কাছে যেতে পারছে না।}

________________________

এতগুলি দিন ড্রাগ দেওয়া হয়েছে অভিকে। হঠাৎ করে সেটা বন্ধ করে দেওয়াতে দুপুর থেকে অভির শরীর খারাপ লাগছে। শরীর এর শক্তি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। নিজের শক্তিতে ওঠে দাঁড়াতে পারছে না। পানি পিপাসা গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কথা বলবে সেটাও পারছে না। চুপচাপ খাটের ওপর পরে আছে।

সাহারা বেগম কিছু একটা ভেবে উপরে এসে দেখে অভি এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে। তাই দৌড়ে অভির কাছে চলে আসে। এসে অভির শরীর এ হাত দিয়ে দেখে। শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। তাই দুই মেয়েকে ডাক দেয়।

মায়ের ডাকে দুই বোন দৌড়ে চলে আসে। অভির রুমে অভির অবস্থা দেখে কিছু টা ভয় পেয়ে যায়।

সাহারা বেগম মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“অতিরিক্ত টেনশনে এই রকম হয়েছে। পানির গ্লাস টা দেও চোখে মুখে পানি দিলে ঠিক হয়ে যাবে।”

(আহেলী মায়ের কথা শুনে পানির গ্লাস মায়ের কাছে দেয়।)

“”সাহারা বেগম পানির গ্লাস নিয়ে অভির চোখে মুখে পানির ছিটা দিলে অভি মিটমিট চোখে তাকায়। সাহারা বেগম অভিকে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে পানি খাইয়ে দেয়। “”

আহেলী ভাই এর কাছে বসে জানতে চায়,,,

–“ভাইয়া এখন তোমার শরীর ভালো লাগছে তো ভাইয়া। কোথাও কষ্ট হচ্ছে না তো।”

[অভি বোন এর কথায় মলিন হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল কোথাও কষ্ট হচ্ছে না।]

সাহারা বেগম ওখানে থেকে ওঠে চলে যাওয়ার সময় মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলল,,,

—“তোমরা এখন তোমার ভাইয়া সাথে থাকো। এখান থেকে কোথাও যাবে না। বলে উনি বাহির হয়ে চলে যায়।”

____________________________

[অভয় অনুর পাশে বসে কথা বলে যাচ্ছে। চোখের পানিও আর পড়ছে না। এটা একটা ভালো দিক। কারণ অভয় কথা গুলো অনুর মধ্যে অনুভুতি কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।]

অভয় তুই একটু একা এখানে থাক আমি একটু ডাক্তার এর সাথে কথা বলে চলে আসব। বলে ওঠে ওখান থেকে দরজার কাছে এসে আবার অনুর কাছে ফিরে গিয়ে বলল,,,

—-“জানিস কখনও তোকে কোন ছেলের কথা কেন বলি নি। তার কারণ হলো আমি কখনো তোকে আমার থেকে দূরে যেতে দিব না তাই। আর আমার পছন্দ ছিল না তুই অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাবি। কারণ বাকি সবার থেকে আমি তোকে খুব বেশি ভালোবাসি। কিন্তু ভয় হতো কথাটা জানার পর যদি আমাকে ভুল বুঝিস তাই আর কখনো বলা হয় নি। কথাটা বলে অভি বাহির হয়ে যায়।”

“অনুর মধ্যে অভির শেষ এর কথা গুলো বারবার অন্য রকম একটা অনুভব হচ্ছে। কিন্তু কি হচ্ছে সেটা অনু বুঝতে পারছে না। বাঁচার যে আশাটা অনু হারিয়ে ফেলেছিল সেটা। একটু একটু ওর অচেতন মনের মধ্যে বাসা বাদছে।”

প্রায় ২৪ ঘন্টা পর অনুর শরীরে মেডিসিন কাজ করা শুরু করেছে। অনু আগের থেকে কিছুটা ভালো রেন্সপন্স করছে। এটা একটা প্লাস পয়েন্টে ছিল ডাক্তার কাছে।

আর বাকি সবার কাছে আলোর আশা দেখাচ্ছিল। অনুর ভালো হবার সম্ভাবনা বাড়ছে।

“আহান হসপিটাল থেকে বাড়ি চলে আসে। নিজের অপরাধ বোধ আহান কে খুব কষ্ট দিচ্ছে। নিজেকে সব সময় অপরাধী মনে হচ্ছে। এ অনু আহান কে এতটা ভালোবাসত আর বিশ্বাস করত। আহান অনুর সাথে এতটা খারাপ ব্যবহার করেছে। সেটা ভেবে আহান এর মধ্যে অজানা একটা কষ্ট বাধা বেধেছে।”

অন্যদিকে আনিকা আহান কে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আহান ফোন রিসিভ করছে না।

শেষে খুব বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করে জানতে চায় কি সমস্যা তোমার। এতবার করে ফোন দিচ্ছ কেন। আনিকা আহান এর কথা শুনে রেগে বলল,,,

—“তোমার কি সমস্যা ফোন তুলছ না কেন। দেশে এসে দেখা করার কথা ছিল সেটাও করলে না। কি চাইছ তুমি ধমক এর শুরে বলল।”

আনিকা ধমক শুনে আহান প্রচুর রেগে বলল,,,

—“তোর সাহস কি করে হয় আমার সাথে ধমক দিয়ে কথা বলার। তোর সাথে রিলেশন করার জন্য আমার পেয়ে পরে থাকতি। শুধু তোর জন্য আমি অনুর মতো একজন ভালো মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছে। আমার জীবনে সবথেকে বড় ভুল করেছে।”

অনুর কথা শুনে তেলে বেগুনে রেগে যায় আনিকা। রাগে গজ গজ করে বলল,,,

–“কত ভালোবাসতি সেটা আমার জানা ছিল। তাই তো একবার বলার পর অনুকে ছেড়ে আমার কাছে চলে এসেছিস। তা আজকে ওর জন্য দরদ উতলে ওঠেছে কেন। অনু মরে যাচ্ছে তাই। অনু ভালো করেছে তোর মতো একটা দুমুখো সাপকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে। ”

আহান এর আনিকার থেকে দুমুখো সাপ কথাটা শুনে নিজের প্রতি আর আনিকা প্রতি রাগ কয়েকগুন বেড়ে যায়। যার ফলে ফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। দুই হাতে মাথা ধরে বসে আছে। আর চোখ থেকে পানি পড়ছে।

অভির সমস্যা একবার দেখা দেয়। তারপর আর তেমন কোন খারাপ লাগছে না। তাই গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে যায়। কিছু ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং শেষ করে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।

অভয় হসপিটাল মেনেজমেন্ট কাছে যেয়ে বলল,,,

–“আমি কালকে জয়ন করতে চাই। আর অনু পরবর্তী চিকিৎসা দায়িত্ব আমার আন্ডারে করাতে চাই।”

[হসপিটাল কর্তৃপক্ষ অভয় এর মতো একজন ইফিশিয়ান্ট ডাক্তার হাতছাড়া করতে চায় না তাই তারা অভয় সব শর্ত মেনে নেয়।]

“অভি খুশি হয়ে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ কে ধন্যবাদ দিয়ে ওখান থেকে বাহির হয়ে অনুর কেবিনে চলে যায়।”

[অনুর পাশে বসে অনুর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। জানিস একটু গুড নিউজ আছে। আমার এই হসপিটালে জব কনর্ফাম হয়ে গেছে। আর তুই আমার আন্ডারে চিকিৎসা নিবি বুঝলি। এখন বল আমার উপর তোর বিশ্বাস আছে তো। ]

{অনু চোখ গুলো অভয় দিকে ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে। আজ অনুর চোখ গুলো অনেক কথা বলে যাচ্ছে। ঠোঁট এর কোনে হালকা হাসি ফুটে ওঠেছে।}

“অভয় বই এর মতো অনুর চোখের ভাষা গুলো পড়তে পারছে। যেটা ভাষা শুধু অভয় জন্য লিখা হয়েছে। যেটা অভয় ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবেনা। অভয় অনুর মাথার মধ্যে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে”।

অনু পরম শান্তিতে চোখ গুলো বন্ধ করে নিয়েছে।
হয়ত এই সুখটার জন্য চাতক পাখির জন্য অপেক্ষা করে গেছে এতগুলো মুহুর্ত।

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে