#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Part:15
অভি সহ বাকি সবাই সাহারা বেগম এর কথায় অবাক হয়ে যায়।
অভয় মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
–“তাহলে তোমার বাবার সাথে কি ভাবে বিয়ে হলো।”
সাহারা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
–“আমরা সবাই সেকেন্ড ইয়ার পরীক্ষা শেষ করে বাসায় চলে যাই। কিন্তু তোর বাবা আর মা কাজি অফিস যেয়ে বিয়ে করে বাসায় যায়।” অভিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
অভি : আচ্ছা বাবা মা বাসায় যাওয়ার পর কেউ কিছু বলে নাই।বা বাসায় কোন সমস্যা হয় নি।
সাহারা বেগম অভির দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—“তোর মা বাবা মার একমাত্র মেয়ে ছিল। আর তোর নানু তোর মাকে খুব ভালোবাসত।তাই উনার কাছে মেয়ের কোন ভুল করবে। এটা বিশ্বাস করত না।তাই তোর মা বিয়ে করেছে এটাতে তার কোন সমস্যা ছিল না।
কিন্তু তোর দাদু তোর বাবা কে বাড়ি থেকে বাহির করে দেয়। কিন্তু তোর নানু তোর বাবা কে নিজের ছেলে করে নিয়ে যায়। তোর বাবার পড়াশোনা করায়। পাশাপাশি ব্যবসা শিখাতে শুরু করে। আর তোদের বাবার ইচ্ছে শক্তি খুব বেশি ছিল। তাই অল্পদিনে সব কিছু শিখে নেয়। আর তোর নানু তোর বাবার আগ্রহ দেখে সব কিছু তোর বাবার উপর দিয়ে দেয়। তোর বাবা সব কিছু খুব ভালো ভাবে সামলে নেয়। কিন্তু যেদিন তুই এই পৃথিবীতে এসেছিস সেদিন তোর মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।
অভি মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
–“বড় মার কি হয়েছিল যে সবাইকে ছেড়ে চলে গেল।”
[সাহারা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করে। তোর বড় মা হওয়ার প্রথম থেকেই অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু মা হওয়ার ইচ্ছে ছিল অনেক তাই সব কিছু তাছিল্য করে অভি কে পৃথিবীতে আনার অপশন বেছে নেন।]
[অভি জন্ম নেওয়ার দিনে প্রচুর ব্লাডিং শুরু হয়। আর বাহিরের ব্লাড শরীর নিতে পারছিল না যার ফলে আর তোর মাকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি। অভিকে উদ্দেশ্য করে বলল। ]
[অভি মাথা নিচু করে বসে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে কোন কথা বলছে না।]
অভয় মা কে উদ্দেশ্যে করে বলল,,,
–“তাহলে তুমি বাবার জীবনে কি ভাবে এলে। বাবা তোমাকে মেনে নিয়েছিল।”
সাহারা বেগম ছেলের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,
(আয়শা মানে অভির মা।) মারা যাওয়ার আগে অভির সব দায়িত্ব আমার কাছে দিয়ে যায়। সাথে তোর বাবাকে দেখে রাখার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে যায়। আয়শা মৃত্যু তোদের বাবা কোন ভাবে মেনে নিতে পারছিল না। দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল। অভি তখন দুধের শিশু ওকে কি করবে এইসব কিছু ভেবে। অভির নানু আমার বাব আর সাথে কথা বলে তোদের বাবার সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে। তোর বাবা সবার কথা রাখতে আমাকে বিয়ে তো করে। কখনও মন থেকে আমাকে মেনে নিতে পারে নি। আমার জন্য তার মধ্যে কোন ভালোবাসা ছিল না।
আর সেটা আমার মধ্যে রাগ আর অভিমান বাড়তে থাকে। আমি ও কখনো অভিকে মন থেকে মেনে নিতে পারি নি। কিন্তু সেটা কখনও কাউকে বুঝতে দেই নি। বলে চোখের পানি ফেলছে।
অভয় মায়ের চোখের পানি দেখে বলল,,,
–“এখন চোখের পানি ফেলে কি হবে। তোমার জন্য চারটা জীবন শেষ হয়ে গেছে মা। এই সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী তুমি ভাইয়ার সাথে এই রকম না করলে। ভাইয়া আজকে এত খারাপ হতো না। আর এত গুলো জীবন নষ্ট হতো না। কথা গুলো বাসা থেকে বাহির হয়ে যায়।”
______________________
অনুর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সিচুয়েশন ডাক্তারদের কন্ট্রোল এর বাহিরে চলে যাচ্ছে। অভয় বড় বড় সব ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কোন আশার কথা বলতে পারছে না। সবাই অনুর কেস হিস্টরি শুনে এক কথা বলছে। উনি নিজে চেষ্টা না করলে কিছু হবে না।
[এর মধ্যে অনু অভির ফ্রেন্ড সবাই হসপিটালে চলে এসেছে। যে যার মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছে।]
তপশ অনেকক্ষন যাবত চুপ করে বসে কিছু একটা ভেবে চলেছে। হঠাৎ করে বসা থেকে উঠে অভয় এর কাছে যেয়ে বলল,,
–“অনুকে একমাত্র তুই বাঁচাতে পারিস। অন্য কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
তপশ এর কথায় সবাই অবাক হয়ে তপশ এর দিকে তাকিয়ে আছে। অভয় তপশ এর কাছে যেয়ে বলল,,,
তোর এত সিরিয়াশ মুহুর্তে মজা করতে ইচ্ছে করছে। যেখানে বড় বড় ডাক্তার কিছু করতে পারছে না। এখানে আমি কি করে অনুকে বাঁচাতে পারব বল।
তপশ অভয় কাথে হাত রেখে বলল,,,
—দেখ ভাই আমি মাইন্ড অফ লজিক নিয়ে পড়াতে তোরা সব সময় আমার সাথে মজা করে গেছিস। কিন্তু এখন আমি মজা করছি না। যা বলছি ভেবে বলছি। মানুষ যখন কোন খারাপ পরিস্থিতি তে পরে তখন কি চায়। ওই পরিস্থিতে লড়াই করার জন্য একটা সাপোর্ট। ঠিক এখন অনু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। ওর জন্য এখন একটা বিশ্বস্ত মানুষ দরকার। কিন্তু আহান অনুর সাথে যা করেছে সেটা আমাদের সবার জানা। আর অভি ভাইয়াকে অনু পছন্দ করে না। আর বাকি আছিস শুধু তুই।
[এখন তুই আর অনু খুব ভালো বন্ধু সেটাও ছোট থেকে। তাই সবাইকে বাদ দিয়ে অনু তোকে খুব বিশ্বাস করে। আর তার থেকেও বড় কথা তোরা দুইজন শিকার করিস আর না করিস তোর একে অপর কে মনে মনে ঠিক ভালোবাসিস। যেটা তোরা নিজেরাও কখনও বুঝতে পারিস নি। আর একটা কথা চিরন্তর সত্যি দুইজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ কখনো বন্ধু থাকতে পারে না এক সময় না এক সময় ওদের মধ্যে ভালোবাসা হয়ে যায়। যেটা কেউ বুঝতে পারে কেউ বুঝতে পারে না। তোদের টা তোরা কখনও বুঝতে পারিস নি। তাই আমার কথা বিশ্বাস কর অনু বাঁচাতে চাইলে একমাত্র তুই বাঁচাতে পারবি। অনু কিন্তু সব বুঝতে পারছে। কথা হয়তো বলছে না। অনু বারবার ঠকেছে তাই বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তুই একমাত্র যাকে অনু বিশ্বাস করে তাই আমি বলছি অনুকে বাঁচাতে পারলে তুই বাঁচাতে পারবি আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।
[তপশ এর কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু অভয় কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। এটা সত্যি অভয় প্রকাশ করুক বা না করুক অনুকে অভয় প্রথম থেকে খুব ভালোবাসত।]
রায়হান সরকার অভয় সামনে হাত জোর করে বলল,,,
—“আমার একমাত্র মেয়ে অনু ওকে বাঁচিয়ে দেও বাবা। আমার মেয়ের কিছু হয়ে গেলে আমরাও মরে যাব। বলে অভয় এর সামনে হাতজোর করে দাঁড়িয়ে আছে।”
অভয় কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
তপশ সহ বাকি সবাই বলল,,,
[আর ভেবে লাভ নেই তুই অনুর কাছে যা। অনুর সাথে কথা বল। দেখ অনুর কোন পরিবর্তন আসে কিনা।]
(অভয় সবার দিকে তাকিয়ে অনুর কেবিন এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধীর পায়ে অনুর কেবিনে ঠুকে যায়। নার্স কে উদ্দেশ্য করে বলে যেন কেবিন থেকে বাহির হয়ে যায়।)
[নার্স কিছু বলতে গেলে। অভয় চোখ লাল করে নার্স এর দিকে তাকায়। তাই নার্স আর কথা না বাড়িয়ে কেবিন থেকে বাহির হয়ে যায়।]
অভয় অনুর কাছে বসে অনুর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়।
{অনু অভয় দিকে ঘুরে তাকায় অনুর চোখ থেকে পানি পড়ছে।}
অভয় অনুর চোখের পানি মুছে বলল,,,
একদম চোখের পানি ফেলবি না তুই জানিস আমি তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারি না। তোর কষ্ট হলে আমার ও খুব কষ্ট হয়। তুই কেন বুঝতে পারছিস না। অনু মনে আছে তোর সেই প্রথম দিনের কথা। তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব কিভাবে হয়েছিল। আমি কত বোকা আর ভিতু ছিলাম কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে পারতাম না। সবাই আমাকে নিয়ে কত মজা করত। কত ভাবে আমাকে ক্ষেপাত। কিন্তু তুই তার সম্পূর্ণ বিপরীতে ছিলি।
চলবে,,,