ভালোবাসার রং বদল Part:14

0
1618

#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Part:14

অভয় কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,,,

—“কিছু চিন্তা করিস না সব ঠিক করে দিব আমি। এখন তুই বাড়ি চলে যা দরকার হলে তোর খোঁজ করব। বলে আকাশ কে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।”

[অভয় ওখানে চুপ করে বসে আছে কি করব কিছু মাথায় আসছে না।]

রায়হান সরকার অভয় মাথায় হাত রেখে বলল,,,

—“যা হবার সেটা হয়েছে। অনুর ভাগ্য যা ছিল সেটা হয়েছে। এখন আমি চাই আমার মেয়ে কোন ভাবে বেঁচে থাকুক। তুমি কিছু একটা করো বাবা। অনুকে এই ভাবে শেষ হতে দিও না।”

অভয় অনুর বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,,,

—“আমি সব ঠিক করে দিব আঙ্কেল আপনি কিছু চিন্তা করবেন না বলে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।”

_______________________

[সকাল থেকে বিছানায় গা এলিয়ে বসে আছে অভি। মাথাটা অনেক ভার লাগছে। কিছুতেই কোন কিছু ভালো লাগছে না।]

দরজার বেল বেজে যাচ্ছে। ময়না দরজা খুলে দেয়। অভয় দেখতে পেয়ে বলল,,

–“ভাইজান ভাবি ভালা আছে নি। ভাবি বাড়ি কবে আইব।”

অভয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,,

—“বাসার বাকিরা সবাই কোথায়। আর অনু ভালো নেই। আমি একটু রুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসি বলে ওখান থেকে চলে যায়। রুমে এসে চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর ফ্রেস হয়ে নিচে চলে আসে।”

অভয় কে দেখে সাহারা বেগম এগিয়ে এসে বলল,,

—“পরের মেয়ের জন্য যে তোর এত মায়া কোথা থেকে আসে আমি সেটা বুঝতে পারছি না। ওই মেয়ে মরে গেলে কি এমন সমস্যা হবে। যে এয দরদ দেখাচ্ছিস।”

মায়ের কথা শুনে অভি রাগে ডাইনিং টেবিল এর গ্লাস গুলো সব ফেলে দিয়ে মার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলল,,,

—“আর কত গুলো মেয়ে মারা গেলে তুমি খুশি হবে বলতে পার। নিজেকে অর কত নিচে নামাবে তুমি। তোমার লজ্জা করে না। নিজে একটা মেয়ে হয়ে এত গুলো মেয়ের জীবন তুমি নষ্ট করে দিয়েছ। ভাইয়া তোমার নিজের ছেলে না হয়েও। তোমাকে নিজের মার থেকে ভালোবাসা দিয়েছে। তার জীবনটা এই ভাবে নষ্ট করে দিয়ে তুমি কি আনন্দ পাচ্ছ। ”

[অভয় এর চিৎকার আহান আর অভি ডাইনিং রুমে চলে আসে।]

অভি অভয় দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—” কি হলো এই ভাবে মার সাথে চিৎকার করছিস কেন। দিন দিন নিজের সীমার বাহিরে চলে যাচ্ছিস তুই।”

অভয় কথা শুনে অরো রেগে দিয়ে টেবিল এর মধ্যে লাথি দিয়ে বলল,,,

–“কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করা ঠিক না। জীবনে একবার তোর জানা উচিৎ ছিল। তোর মা সব সময় তোর সব অন্যায় তোকে সাপোর্ট করে কেন। কখনও তোকে শাসন কেন করেনা।”

অভি মাথা নিজের দিকে নিয়ে বলল,,,

—“মা আমাকে ভালোবাসে তাই কখনো শাসন করে না। সব সময় আমার ভালোর কথা চিন্তা” করে।

অভয় ভাই এর কথা শুনে হাত তালি দিয়ে বলল,,,

—“এই মহিলা কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারে বলে তোর বিশ্বাস হলেও আমার তো বিশ্বাস হয় না। এই মহিলা নিজের ছাড়া কারো ভালো দেখতে পারে না।”

আহান অভয় এর কাছে এসে বলল,,,

—“খালামনি যদি নিজের টাই বুঝত তাহলে আমাকে এত ভালো করে মানুষ করত না। খালামনি সবার কথা ভাবে। তুই শুধু খালামনিকে ভুল বুঝছিস।”

অভয় আহান কথা শুনে একবার আহান এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“তোদের ধারনা মা তোদের ভালোবাসে। তাহলে শুন এই মহিলা তোদের কতটা ভালোবাসে। তোর বাবা মা মারা যাওয়ার পর সব সম্পত্তি তোর নাএ হয়ে যায়। আর ছোট খালু মেনশন এর ৪০ লাখ টাকা পায়। ওই টাকা তোর খালামনি নিজের কাজে ব্যবহার করে।এটাই তো ভালোবাসা আর ওই টাকার হিসাব যেন কেউ না চায় তাই তোকে মানুষ করেছে। আরো আছে শুনবি বলতে বলতে ঠাস করে সাহারা বেগম অভয় গালে চর বসিয়ে দেয়। চুপ একদম চুপ আর একটাও কথা বলবি না।”

অভয় নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,,

—“কেন বলব না সবাই সবটা জানুক কেন তুমি ওদের এতো ভালোবাস। বলে ভাই এর কাছে এসে বলল। মা তোকে কোনদিন ভালোবাসে নি। এই যে এত সম্পত্তি দেখছিস সব তো বড় মার ছিল। আর বড় মা মারা যাওয়ার পর সব সম্পত্তির মালিক তুই হয়েছিস। তাই তোকে বড় করেছে। কিন্তু তোর মধ্যে এত খারাপ ছিল না কখনও।মা তোকে প্রতিদিন নিজের হাতে একটু একটু করে তোর খাবার এর সাথে নেশার ঔষধ মিশিয়ে দিত। তোর মনে আছে মা সব সময় তোর জন্য আলাদা একটা আইটেম রান্না করত যেটা শুধু তোর জন্য থাকত। অন্য কেউ পেত না। সেটার মধ্যে সব সময় নেশার ঔষধ মিশিয়ে দিত। তাই আজকে তোর অবস্থা। প্রথম ভাবি মায়া কে তুই ভালোবেসে বিয়ে করেছিস। ভাবি তোকে খুব ভালোবাসত তাহলে ভাবি কেন সুইসাইড করল। কোন উওর আছে তোর কাছে। কথাটা বলে অভির দিকে তাকিয়ে দেখে। অভি মাথার নিচের দিকে দিয়ে রেখেছে। আমি জানি তোর কাছে কোন উওর নাই থাকবে কি করে তুই কি করতি সেটা তুই নিজেও জানিস না। তুই জানিস ভাবি প্রেগনেন্ট ছিল। মারা যাওয়ার আগের দিন ভাবির সাথে তুই কি কি করেছিস তুই সেটা নিজেও জানিস না।
সেদিন ও মা তোর খাবার এ নেশার ঔষধ মিশিয়ে দেয়। আর ডোজ একটু বেশি দেয় যেন তুই নিজের মধ্যে না থাকিস। খাবার খেয়ে যখন তুই নিজের রুমে যাস তখন মা তোর কাছে যেয়ে বলেছিল ভাবি অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করে পেটে বাচ্চা নিয়ে তোর নামে চালিয়ে দিতে চাইছে। তুই যেন কোন ভাবে এই বাচ্চা মেনে না নিস।”

[অভি অভয় এর কথা শুনে নিচে বসে পরে।]

[অভয় ভাই এর কাছে বসে বলতে শুরু করে। তারপর তুই ভাবিকে কতটা মেরেছিস সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভাবির মুখে সিগারেট এর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিস। শেষে ভাবি তোর পা ধরে বলেছিল এই বাচ্চাটা তোর অন্য কারো নয়। কিন্তু তুই ভাবির কথা বিশ্বাস না করে ওর পেটের মধ্যে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছিলি যার ফলে ভাবির রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। আর বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া আর নিজের ভালোবাসার মানুষ এর অবিশ্বাস ভাবি সহ্য করতে পারে নি তাই। সেদিন গলায় দড়ি দিয়ে মারা যায়।]

—কিন্তু তোর ভালো মা তোকে কি বলেছিল ভাবির চরিত্র খারাপ ছিল। আর সেখান থেকে ভাবি বাচ্চা হয় কিন্তু। ভাবির চরিত্র সবাই যেনে যাবে তাই গলায় দড়ি দিয়েছে কিন্তু তুই কত বোকা ছিলি যে মেয়েটা তোকে ভালোবেসে সব কিছু ছেড়ে চলে এসেছে তাকে তুই বিশ্বাস করতে পারলি না।

[তারপর তন্নিকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিস। ওর উপর তুই প্রতিদিন অত্যাচার করেছিস। কিন্তু তন্নি যেহেতু তোকে ভালোবাসত না তাই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। যার জন্য তন্নি ভাবি এখনো বেঁচে আছে। আর খুব ভালোভাবে বেঁচে আছে।]

—আর বাকি অনু ওর জীবন তো তুই শেষ করে দিয়েছিস। এখনো তোর ভালো মা বলবে তোর কোন দোষ নেই। সব দোষ অনুর যে মেয়েটা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। সব দোষ সেই অনুর।

যার বাবা মাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তুই বিয়ে করেছিস।যেই অনুর সুন্দর জীবন টাকে তুই নরক বানিয়ে দিয়েছিস। তুই কি ভাবছিস এই সব কিছু সাজা তোদের হবে না। কেউ কিছু বলে না। তাই পার পেয়ে যাবি। শুনি রাখ অভি চৌধুরী এই সব কিছুর সাজা একদিন ঠিক পাবি। সেদিন বুঝতে পারবি কত বড় ভুল করছিস সবাই। ওই সব গুলো মেয়েদের সাথে।

আর মা তোমার নিজের দুইটা মেয়ে আছে। ওদের বিয়ে দিতে হবে। একটা কথা যেনে রেখ পরের জন্য গত করলে সেই গর্তে কিন্তু মানুষ নিজেই পরে। ওদের জীবনে এই রকম হলে তখন তুমি কি করবে। বলে মার দিকে জিগ্যেসা দৃষ্টিতে তাকায়।

[সাহারা বেগম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কোন কথা বলছে না।]

অভি চুপ থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বলল,,,,

—“চুপ করে কেন আছ তুমি কথা বল কেন কিছু বলছ না। কেন শেষ করে দিলে এত গুলো মেয়ের জীবন শেষ।”

সাহারা বেগম ছেলের ধমকে চমকে যায়। নাজেকে শক্ত করে সোফার মধ্যে বসে বলল,,,

–কি করতাম আমি। কলেজের সব থেকে সুন্দর মেয়ে ছিলাম আমি। আর তোর বাবা আমাকে ছেড়ে আমার বান্ধবীর সাথে প্রম করত। যাকে আমি সব থেকে বেশি ভালোবাসি তাকে অন্য কারো সাথে আমার সহ্য হত না। তাই তোর বাবাকে অনেক ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছি আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু তোদের বাবা আমার কথা বুঝে না বুঝার মত করে চলে যেতে। আর এতে আমার রাগ আরো বেড়ে যায়। কিন্তু তাতে কি তোর বাবা তো আমার দিকে ফিরেও তাকাত না। বলে চুপ করে যায়।”

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে