ভালোবাসার রং বদল Part:13

0
1680

#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Part:13

অনু অভির কথা শুনে নিজেকে অভির থেকে ছাড়িয়ে বাবা মার কাছে যেতে নিলে। গুলির শব্দে থমকে দাঁড়ায়। পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে অভি হাওয়াতে শুট করছে।

অভি শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,,,

—“এখান থেকে আর এক পা এগিয়ে গেলে পরের গুলিটা তোমার বাবার মাথায় লাগবে।বলে বন্ধুকটা কপাল এর পাশে স্লাইট করছে।”

অনু ভয়ে ওখানে বসে বলল,,,

—“দয়া করে আমার বাবাকে ছেড়ে দিন। ওরা তো আপনার সাথে কিছু করে নি তাহলে ওদের এই ভাবে কষ্ট দিচ্ছেন কেন।ওদের ছেড়ে দিন।”

অভি অনুর সামনে এসে হাটু মুরে বসে বলল,,,

—“তোমার বাবা মাকে ছেড়ে দিব।যদি তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হও তাহলে ওদের আর কিছু করব না।”

অনু অভির কথা শুনে রেগে বলল,,,

—তোর মতো একটা শয়তান কে আমি কোনদিন ও বিয়ে করব না। কথাটা বলার সাথে সাথে গুলির শব্দ আর বাবার চিৎকার অনুর কানে আসে। অনু পেছনে তাকিয়ে দেখে বাবার পা থেকে রক্ত পড়ছে। বাবার ওই অবস্থা দেখে বসা থেকে উঠে বাবার কাছে যেতে নিলে। অভি অনুর চুলের মুঠি ধরে বলল,,,

—তোর বাবাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবি না। যত চেষ্টা করিস তার থেকে ভালো আমাকে বিয়ে করে নে নয়তো তোর বাবাকে আর জীবিত দেখতে হবে না দেখ কত রক্ত পড়ছে।
অনু একবার বাবার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার অভির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে। আর বলছে। আমার বাবাকে ডাক্তার কাছে নিয়ে যেতে দিন নয়ত আমার বাবা মরে যাব। আমার বাবাকে নিয়ে হসপিটালে যেতে দিন প্লিজ।

রায়হান সরকার শরীর ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চোখ গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমেনা বেগম কান্না করতে করতে বলছে,,,

—“তোর বাবা কে বাঁচা মা নয়ত তোর বাবা মরে যাবে। এই শয়তান তোর বাবাকে বাঁচতে দিব না। বলে কান্না করছে।”

অভি অনুর পাশে বসে বলল,,,

—“কি ডিসিশন এখন তোমার বিয়ে করবে আমাকে নাকি নিজের বাবা কে ধীরে ধীরে মারা যেতে দেখবে।”

অনু চোখের পানি মুছে বলল,,,

—আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি। প্লিজ আমার বাবা কে ছেড়ে দেন।”

অভি কয়েকজন লোককে ডেকে ভেতরে আসতে বলল,,,

[লোকগুলো কাজি নিয়ে এসেছে আর সাথে একজন ডাক্তার এসেছে।]

অভি অনুর পাশে বসে বলল,,,

–“তুমি আমাকে কবুল বলবে। তার পরেই তোমার বাবার চিকিৎসা শুরু হবে। বলে উঠে ওখান থেকে চলে যায়।”

অনু চোখের পানি ফেলতে বলল,,,

—আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আপনি আমার বাবার চিকিৎসা ব্যবস্থা করুন। অভি একটা কাগজ আর একটা কলম এনে অনুর সামনে দিয়ে বলল,,,

[নেও এটার মধ্যে সাইন করে দেও। তাহলে তোমার বাবা ও সুস্থ হয়ে যাবে।]

অনু কাগজের দিকে না তাকিয়ে বলল,,,

—“কলম টা নিয়ে কাগজে সাইন করে দেয়। সাইন দিয়ে বাবার কাছে দৌড়ে চলে যায়। বাবার মাথাটা তুলে কান্না শুরু করে দেয়।”

ডাক্তার রায়হান সরকার এর পা থেকে গুলি বাহির করে বেন্ডেজ করে বলল,,,

—“উনি এখন বিপদ মুক্ত আছে কিন্তু শরীর থেকে অনেক ব্লাড লস হয়েছে তাই এখন একটু সাবধানে রাখতে হবে।বলে ডাক্তার চলে যায়।”

অভি অনুর হাত ধরে বলল,,,

—তোমাকে এখন আমার সাথে যেতে হবে। বলে অনুর হাত ধরে বলে। অনু রাগি দৃষ্টি নিয়ে বলল,,,

[আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। বলে বাবার কাছে ফিরে আসে। ]

অভি অনুর হাত ধরে টেনে অন্য পাশে নিয়ে বলল,,,

—“এখন আমার সাথে এখান থেকে ভালো ভাবে না গেলে পরের গুলিটা তোমার মায়ের গায়ে লাগবে। তাই চুপচাপ এখান আমার সাথে চলে আস। আর তোমার বাবা মা সঠিক সময় সঠিক যায়গা পৌঁছে যাবে।”

[অনু বাবা মার দিকে একবার তাকিয়ে অভির সাথে বাহির হয়ে যায়। ]

[অনুর বাবার কথা শুনে আকাশ আহান আর অভয় সবার চোখ থেকে পানি পড়ছে। ]

অভয় বসা থেকে উঠে অভির সামনে এসে বলল,,

—“অভা চৌধুরী আমি আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করব না।আপনি এতটা নিচ সেটা আমার জানা ছিল না। ছি ঘিনা করছে আপনাকে দেখে আমার। লজ্জা করল না এত নিচে নামাতে নিজেকে। চলে থান এখান থেকে। নয়ত আমি কি করব সেটা আমার নিজের ও জানা নেই।””

অভয় কথা শুনে অভি কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়। নিজেকে আজ খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে। নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। অভি নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করার জন্য বারে চলে যায়।
বারে ঢুকে টেবিলে বসে ড্রিংক করে যাচ্ছে। নিজের ইচ্ছে মতো ড্রিংক করে যাচ্ছে। ড্রিংক শেষ করে টলতে টলতে বার থেকে বাহির হয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। নিজের উপর কোন কন্ট্রোল নেই অভির। অতিরিক্ত ড্রিংক এর জন্য শরীর মস্তিষ্ক ওর বিরুদ্ধে কাজ করছে।

গাড়ি নিয়ে কোন ভাবে গাড়িতে ঢুকে দরজায় বেল দিতে সাহারা বেগম দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে অভির দিকে তাকিয়ে চমকে যায়।

অভি ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। পা গুলো কাপছে ঠিক মতো দাড়াতে পারছে না। সাহারা বেগম ছেলেকে ধরে সাবধানে ভেতরে নিয়ে যায়। অভিকে নিজের রুমে শুয়ে দেয়। অভি নিজের মনে কথা বলছে আমি কি খুব খারাপ। আমি কি সবার জীবন নষ্ট করে দিছি। আমার জন্য কি সবার সব সময় ক্ষতি হয়।

সাহারা বেগম ছেলের পাশে বসে বলল,,,

–“তুই কোন ভুল করিস নি বাবা। তোর কি দোষ বল ওই মেয়ে গুলো খারাপ ছিল। এখন তুই ঘুমিয়ে যা বাবা। বলে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে ওখান থেকে চলে আসে।”

_________________________

আনিকা আহান দেশে আসার কথা প্রথম থেকে জানতে পারে। কিন্তু দেশে এসে আহান এর কোন খোঁজ পাচ্ছে না এটা আনিকা কে খুব ভাবাচ্ছে। কার কাজ থেকে আহান এর খোঁজ পাবে ভেবে অভয় এর আগের ফোন নাম্বার এ ফোন দেয়। খোলা আছি কিনা চেক করার জন্য।

অভয় এর ফোন এর টোন শুনে ফোনটা চেক করে দেখে অচেনা নাম্বার তাই ধরবে কিনা কিছুক্ষন ভেবে। ফোন রিসিভ করতে ওপাশ থেকে আনিকা বলল কি ব্যাপার কেমন আছো। দেশে এসে কি হাওয়া হয়ে গেছ।

এই ধরনের ইয়াকি কথায় অভয় অনেকটা রেগে যায়। একটা ধমক দিয়ে বলে। কে বলছেন পরিচয় দেন। এই ধরনের ফাজলামি ভালো লাগছে না।

আনিকা অভয় এর কথায় কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,

—“আমি আনিকা সাইফ কোথায় দেশে আসার পর থেকে ওর কোন খোঁজ পাচ্ছি না। আহান কি তোমার সাথে আছে।”

অভয় আনিকা কথায় কোন উওর না দিয়ে বলল তোমার সাথে আহান এর কি সম্পর্ক।

আনিকা একটু সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল আমি আর সাইফ দুইজন দুজনকে ভালোবাসি। আচ্ছা সাইফ কি তোমার পাশে আছে থাকলে ওকে একটু ফোনটা দেও। অনেক দিন হয়ে গেছে কথা হয় না। প্লিজ ফোনটা দেও।

অভয় আহান এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

নে ধর gf ফোন করে তোকে চাইছে কথা বল। বলে ফোনটা আহান এর হাতে দিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।

আকাশ অভয় পিছনে যেয় বলল,,,

এখন কি করবি অনুর অবস্থা ভালো না। আর তোর ভাই এর কাছে থাকলে অনু মরে যাবে। আর আহান এর সাথে অনুর অনেক আগে সম্পর্ক। শেষ হয়ে গেছে। সেটা তো সবাই জানে।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে