#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Part:11
আই সি উ লাল আলোটা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে অভয় দরজার সামনে চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর
ডাক্তার বাহির হয়ে আসে।
ডাক্তার কে দেখে অভয় এগিয়ে এসে জানতে চায় অনু কেমন আছে। ডাক্তার অভয় দিকে বলল,,,
— উনি মানুষিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে আমরা তো আমাদের মতো চলে চেষ্টা করছি কিন্তু উনাকেও তো চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু উনি কোন চেষ্টা করছে না। এটাই সব থেকে ভয়ের বিষয়।আর সব থেকে ভয়ের বিষয় হলো উনার শরীর রেন্সপন্স করা বন্ধ করে দিচ্ছি ধীরে ধীরে যার ফলে উনি কোমায় ও চলে যেতে পারে। উনাকে এখন আই সি উ তে রাখা হবে জ্ঞান ফিরলে দেখা করতে পারবেন। বলে ডাক্তার চলে যায়।
অভয় চুপ করে দাড়িয়ে আছে কোন কথা বলতে পারছে না আকাশ অভয় এর কাছে এসে বলল,,,
চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। আর অনুর বাবা মাকে খবর দে ওরা আসলে হয়ত অনু কিছুটা ভরসা পাবে।
আকাশ এর কথা শুনে অভয় কিছু একটা ভেবে ফোনটা বাহির করে অভিকে মেসেজ করল।মেসেজ করে হসপিটাল থেকে বাহির হয়ে যায়।
___________________
ফোনে মেসেজ এর শব্দ শুনে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে অভয় এর নাম লিখা। মেসেজ টা ওপেন করে গাড়ি বাড়ির দেকে ঘুরিয়ে নেয় অভি। আহান কেও ফোন দিয়ে বাসায় চলে আসতে বলেছে।
অভয় বাসায় এসে সোফায় বসে আছে। কারো সাথে কোন কথা বলছে না।সাহারা বেগম এগিয়ে এসে বলল,,,
—“অনুকে তুই কোথায় নিয়ে গেছিস। তোদের সাথে অভি বাহির হয়ে গেছে। এখনো বাসায় আসে নি। তোর ওই মেয়ের জন্য এত মাথা ব্যাথা করার কি আছে আমি তো বুঝি না। আর এইটুকু মাইরে কেউ মরে যায় নাকি।”
–কথাটা বলার সাথে সাথে টি টেবিলে একটা লাথি দেয় অভয় যার ফলে টেবিল এর গ্লাস ফ্লোরে পরে চুরচুরে হয়ে যায়। সোফা থেকে উঠে চিৎকার করে বলতে শুরু করে। ওই টুকু মাইর মনে হচ্ছে তোমার কাছে। মেয়েটার কি অবস্থা একবার জানতে চেয়েছ। তুমি তোমার ছেলে নিয়ে পরে আছ। আরে ও কারো মেয়ে। তোমার তো তাও আরো শন্তান আছে। আর অনু বাবা মার একটাই মেয়ে। বলে সমানের দিকে তাকিয়ে দেখে অভি আর আহান এক সাথে এসেছে।
আহান অভয় কাছে এসে বলল,,,
—“অনু কোথায়? আর এখন কেমন আছে। তুই অনুকে কোথায় নিয়ে গেছিস।” অভয় আহান দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—” আমি এখন তোর সাথে কথা বলতে চাই না বলে অভি দিকে এগিয়ে যায়। ভাইয়া অনুর অবস্থা ভালো না অনুর বাবা মা কোথায় ভাইয়া সত্যিটা বল। ওদের তুমি কোথায় লুকিয়ে রেখেছ। এখন ওদের অনুর সামনে আনলে অনু কে হয়তো বাঁচানো যাবে। আমি তোমার কাছে হাত জোর করে বলছি। অনুর বাবা মাকে বাহির করে দেও।
অভি অভয় দিকে তাকিয়ে বলল,,,
— অনুর কি হয়েছে সেটা। আর এখন অনু কোথায় আছে। তোকে বা এমন দেখাচ্ছে কেন।
অভয় কিছুক্ষন চুপ থেকে বলতে শুরু করে তোমার মাইর এর মধ্যে একটা বাড়ি অনুর মাথার মধ্যে লেগেছে। যার ফলে মাথা থেকে প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে। আর শরীর এর আঘাত গুলো তো আছে। সব মিলিয়ে অনু বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে। ডাক্তার বলেছে যদি জ্ঞান ফিরে না আসে। তাহলে অনু কোমায় চলে যাবে। ওর মধ্যে বেঁচে থাকার শক্তি বাড়াতে হবে যার জন্য ওর বাবা মাকে দরকার খুব। তুমি ওর বাবা মাকে এনে দেও। আমি তোমার কাছে অনুরোধ করছি।
আহান এর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। চোখের পানি মুছে সামনে এগিয়ে এসে বলল। ভাইয়া প্লিজ আঙ্কেল আন্টি কে বাহির করে দেও। বাকিদের মতো করে অনুকে মারা যেতে দিও না। বলে অভির পায়ের কাছে বসে পড়ে। এতো গুলো জীবন নষ্ট করে তুমি কি পাবে বল। একজন কে তো বেঁচে থাকতে দেও।
অভি সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,,,
—“অনু কোন হসপিটালে আছে সেটা বল। আমি ওর বাবা মাকে ওখানে নিয়ে যাচ্ছি।”
অভয় চোখের পানি মুঁছে বলল,,,
—“অনু হলিক্রস হসপিটালে আছে। যেখানে আমার জয়েন হওয়ার কথা ওখানে নিয়ে গেছি। আমি ওখানে যাচ্ছি তুমি অনুর বাবা মাকে নিয়ে আস। বলে বাসা থেকে বাহির হয়ে যায়। ”
]অভি ওর লোকদের ফোন করে বলে যেন অনুর বাবা মাকে হসপিটালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বলে। ফোন রেখে গাড়ি নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা সাথে আহান ও চলে যায়।]
সাহারা বেগম সোফার মধ্যে বসে রাগে গজ গজ করছে। নিজে নিজে বলে যাচ্ছে। এই মেয়ে মারা গেলে সব থেকে বেশি ভালো হবে। এই মেয়ে বেঁচে থাকলে আমার তিন ছেলের মধ্যে কেউ সুখে থাকবে না। উনার কথা শুনে ময়না বলল,,,
খালা আম্মা ছোড মুহে একখান কথা কই। আফনারা যে ভাবিগ লগে এমন ব্যবহার করেন এমন আফনার মাইয়াগ লগে হলে কিতা করবেন তহন। আল্লাহ কিন্তু সব দেখতাছে। আর আল্লাহ কিন্তু কইছে তুমি তোমার কর্ম ফল জীবিত অবস্থায় পাইবা।
ময়না কথা শুনে আহেলী রেগে ময়না কে ধমক দিয়ে বলল কাজের মেয়ে কাজের ময়ের মতো থাক। এত বড় বড় কথা বলতে হবে না। যা এখান থেকে বাহির হয়ে যা।
ময়না কোন কিছু না বলে উঠে চলে যাওয়ার সময় বলছে। কারো ভালো হইব না। এই নিশ্বাপাপ মাইয়া গো লগে এমন করছেন। আফনাগ বিচার আল্লাহ করব একদিন বলতে বলতে রান্না ঘরে চলে যায়।
____________________
প্রায় ৬ ঘন্টা পর অনুর জ্ঞান ফিরে আসে কিন্তু শুধু চোখ গুলো খুলেছে। আর কোন রেন্সপন্স নাই দেখে নার্স ডাক্তার কে ডেকে নিয়ে আসে। ডাক্তার এসে অনুর কিছু চেকাপ করতে নিয়ে যায়। সব গুলো পরীক্ষা করে বাহির হয়ে আসে।
ডাক্তার কে দেখে অভি অভয় আহান অনুর বাবা মা সবাই ডাক্তার কাছে চলে আসে অনুর অবস্থা জানার জন্য।
ডাক্তার সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল দেখুন উনি নিজে থেকে বেঁচে থাকার কোন চেষ্টা করে নি। আর মেডিসিন উনার শরীর খুব দূর্বল তাই ঠিক মতো কাজ করছে না। যার জন্য উনি কোমায় চলে যায়। শুধু চোখ খুলো খুলছে। কিন্তু উনার শরীর কোন রেন্সপন্স করছে না। বলে ওখান থেকে চলে যায়।
ডাক্তার এর কথা শুনে অনুর মা কান্নায় ভেঙে পরে। আর নিজ থেকে বলতে শুরু করে এই ছেলেটা আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। অভিশাপ হয়ে এসেছে আমার মেয়ের জীবনে। কোন দিন ও তোর ভালো হবে না। বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অনেক দিন বন্ধি থেকে না খাওয়া আর মেয়ের চিন্তা তে উনার শরীর খুব দূর্বল হয়ে যায়। আকাশ আর একজন নার্স উনাকে বেডে নিয়ে ঘুমের ইনজেকশন আর সেলাইন দিয়ে দেয়।
অনুর বাবা মাথায় হাত দিয়ে হসপিটালের চেয়ারে বসে আছে। উনাকে দেখে খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে। সবাই অনেক বার বলেছে একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য কিন্তু উনি অনুর দরজার সামনের চেয়ার থেকে কোন ভাবে উঠতে রাজি হচ্ছে না। হয়ত মেয়েকে আবার হারিয়ে ফেলার ভয়ে এখানে বসে আছে। অভয় ধীর পায়ে যেয়ে উনার কাছে বসে বলল,,,
—” আঙ্কেল কি হয়েছিল অনুর সাথে আমাকে সবটা বলুন আমি সব কিছু জানতে চাই। অনু এই অবস্থা কি ভাবে হলো।
অনুর বাবা কিছুক্ষন অভয় দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,,
— আজ থেকে ১বছর আগের ঘটনা। আমার এক কলিগ এর মেয়ের জন্মদিন ছিল ওইদিন। আমি তোমার আন্টি আর অনু একসাথে যাই ওই অনুষ্ঠানে। আমি আমার কলিগদের সাথে কথা বলতে চলে যাই। অনু আর ওর মা আমেনা বেগম চেয়ারে বসে ছিল।
আমেনা বেগম হঠাৎ বলল,,,
—” দেখ আমার স্কুল এর একজন মেম এসেছে। তার সাথে একটু কথা বলে আসছি। তুমি এখানে বসে থাক কোথাও যেও না।
অনু: মা তোমার কি মনে হয় আমি এখনো বাচ্চা। যে এখানে ওখানে চলে যাব।তুমি যাও আমি এখানে আছি। অনুর কথা শুনে আমেনা বেগম ঠোঁটের কোনায় হাসি লুকিয়ে বলল। বাবা মার কাছে ছেলে মেয়ে সব সময় বাচ্চা থাকে বলে অন্য পাশে চলে যায়।
অনু ওখানে একা বসে থাকে। হঠাৎ একজন লোক এসে অনুর পাশে বসে বলল,,,
—” হায় আমি অভি চৌধুরী আপনার নামটা কি জানতে পারি।”
চলব,,,,,