#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Part:10
অভয় চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। আহান সব বাকি সবাই মাথা নিচু করে রেখেছে।
অনুর শাড়ি অনেকটা খুলে ফ্লোরে পরে আছে। অভির হাতের হক স্টিক ভেঙ্গে অর্ধেক হয়ে আছে।
—” অভয় দৌড়ে অনুর পাশে বসে শাড়ি দিয়ে ওর শরীর ঢেকে নিজের সাথে ঝড়িয়ে নিয়ে। ভাই কে উদ্দেশ্য করে বলল তুমি কি মানুষ। কবে থেকে তুমি এতটা অমানুষ হয়ে গেছ। বলে আহান দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,,,
—” তুই তো অনুকে ভালোবাসিস তাহলে আজকে তোর ভালোবাসা কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে। অনেক তো বড় বড় কথা বলেছিস। দেশে এসে অনুকে বিয়ে করবি। তাহলে এখন কিছু না বলে। কাপুরুষ এর মতো তাকিয়ে আছিস কেন।
অভয় এর কথা শুনে সবাই আহান দিকে ফিরে তাকায়।
আহান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,,,
—“হ্যা আমি অনুকে ভালোবাসতাম সেটা ওর বিয়ের আগে। কিন্তু অনু এখন বিবাহিত। তাই ওই সব চিন্তা বাদ দে। আর ভাইয়াকে আর অনুকে নিজেদের টা নিজেদের বুঝতে দে। তুই এখন এখান থেকে চলে আয়। আহান এর কথা শুনে অভয় এর চোখ গুলো আরো লাল হয়ে যায়। দেখে মনে হচ্ছিলো এখনি আগুন বাহির হয়ে আসবে।”
অভয় চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,
—” তুই তোর তিন বছরের সম্পর্ক ভুলে যেতে পারিস। কিন্তু আমি আমার ৮ বছরের বন্ধুত্ব কিছুতেই ভুলে যাব না। বলে অনুকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে ঝড়িয়ে ধরে।
অভি অভয় কে কিছু বলতে চাইলে তার আগে অভয় অভিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—“মিস্টার অভি চৌধুরী আমি আপনার সাথে এখন কোন কথা বলতে চাই না। আপনার সাথে আমি সকালে কথা বলব বলে অনুকে কোলে তুলে বাহির হয়ে নিজের রুমে চলে যায়।”
[অনু কোন কথা বলতে পারছে না কিন্তু ওখানে থাকা সব গুলো কথা শুনতে পয়েছে। আহান কে অনু নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসত। আর সেই আহান কিনা অনুকে অস্বীকার করেছে। এটা অনু কোন ভাবে মেনে নিতে পারে নি। নিজ থেকে চোখ দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলার শক্তি পাচ্ছে না।]
অভয় অনুর মাথার নিচে হাত রেখে যখন বিছানায় শুয়ে দেয়। অভয় হাতে কিছুটা ভেজা ভেজা লাগে। হাত সামনে এনে দেখে হাত রক্তে ভিজে আছে। অভয় মাথা উপরের দিকে তুলে দেখে মাথার একপাশ থেকে রক্ত পড়ছে।
অভয় ময়না কে ডেকে। অভয় এর ডাক শুনে ময়না দৌড়ে আসে। অভয় ময়নার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—” তুমি অনুর শাড়িটা ঠিক করে দেও আমি গাড়ি বাহির করছি ওকে এখনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। বলে ওখান থেকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখে ময়না ওখানে বসে আছে। অনুর মাথার বাধা কাপড়টার মধ্যে হাত দিয়ে। অভয়কে দেখে ময়না বলল,,,
—” দেখেন ভাইয়া এখান থেকে এখনো রক্ত পরে যাচ্ছে বন্ধ হচ্ছে না। ”
অভয় কাভার্ট থেকে একটা ফাইল বাহির করে বলল,,,
—” সব ঠিক হয়ে যাবে। বলে অনুকে কোলে তোলে ফাইলটা ময়নার হাতে দিয়ে বলল আমার সাথে গাড়ি পযর্ন্ত আস। বলে অনুকে নিয়ে রুম থেকে বাহির হয়ে যায়।
ডাইনিং রুমে সবাই দাড়িয়ে আছে কেউ কোন কথা বলছে না। অভয় ওদের দেখে না দেখার মতো করে বাসা থেকে বাহির হয়ে যায়। গাড়ির মধ্যে অনুকে বসিয়ে ময়নার হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে উঠতে যাবে। তখন আহান অভয় কে আটকে বলল,,,
—“চল আমি ও তোদের সাথে যাব।”
অভয় আহান দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল,,,
—“আমি চাই না আমাদের বন্ধুতের মাঝে আপনি আসুন। তাই এখান থেকে চলে যান।”
অভয় এর কথা শুনে আহান একটু রেগে বলল,,
—তুই ভুলে যাস না অনুর সাথে আমার কি সম্পর্ক ওর উপর আমার ও অধিকার আছে।আমি অনুকে ভালোবাসি। কথাটা বলার সাথে সাথে আহান এর গালে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,,,
—” তুই আমার বড় তুকে মারার ইচ্ছে আমার নেই। তাই আর একটাও কথা বলবি না। আর বাকি ভালোবাসার কথা সেটা তো শেষ হয়ে গেছে। তুই নিজে বলেছিস। এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি। বলে গাড়িতে উঠে যায়। গাড়িতে ওঠে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বলল। অনুর জন্য অভয় একা যথেষ্ট আর কাউকে দরকার হবে না। বলে ড্রাইভার কে গাড়ি স্টাট দিতে বলে। অনুর মাথাটা নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে। পকেট থেকে ফোন বাহির করে কাউকে ফোন দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে দেয়।
অনু অভয় এর দিকে তাকিয়ে আছে। আর চোখ থেকে অনবরত পানি পরে যাচ্ছে। অভয় অনুর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে বলল,,,
—” আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি বুঝতে পারি নি ভাইয়া তোর সাথে এত খারাপ ব্যবহার করবে। বলে নিজের সাথে ঝড়িয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।
কিছুক্ষন পর,,,
ড্রাইভার এর কথায় চোখ খুলে দেখে হসপিটালে পৌঁছে গেছে। অভয় গাড়ি থেকে নেমে অনুকে কোলে তুলে নিয়ে যায়।
হসপিটালে ভিতরে ঢুকে দেখে ডাক্তার সব বাকি সবাই ওখানে চলে এসেছে। অভয় কে দেখে ওরা দৌড়ে এসে অনুকে নিয়ে স্টেজে যাওয়ার সময় অনু অভয় এর হাত ধরে আছে। আই সিও তে নিয়ে যাওয়া পযর্ন্ত অনু অভির হাত ধরে রেখেছে। কোন ভাবে ছাড়ানো যাচ্ছে না। অভয় অনুর গালে এক হাত দিয়ে বলল তুই চিন্তা করিস না। আমি এখনি আসছি তোর কাছে। এখন যে তোকে একাই যেতে হবে। বলে কপাল এর সাথে কপাল মিলিয়ে অনুর ঠোঁট এর কাছে এসে বলল। আমার অনু খুব সাহসী আর একটু সাহস দেখা। আমি এখনি আসছি পেপার গুলো জমা দিয়ে।
অনু অভয় এর দিকে একবার তাকিয়ে হাতটা ছেড়ে দেয়। ডাক্তার আর অভয় কিছু ফ্রেন্ড অনুকে আই সি উ তে নিয়ে যায়। অভয় দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে আকাশ অভয় কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—“অনুর এই অবস্থা কি করে হলো। আর ওকে তুই কোথা থেকে নিয়ে এসেছিস। আহান বা কোথায় আছে। আহান কেন এল না অনুর সাথে।”
অভয় আকাশ এর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—” ১ বছরে অনেক কিছু হয়ে গেছে যে গুলো আমি নিজেও জানি না তোকে কি করে বলব বল। তোর সাথে আমি একটু পরে কথা বল এখন বল কাগজ গুলো আজকে জমা দিতে পারব কিনা।
আকাশ আমার সাথে চল দেখি ডিরেক্টর আছে কিনা বলে বলে দুইজন ওখান থেকে চলে যায়।
______________________
আহান ওখানে বসে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। আমি কি করতাম ভাইয়ার সামনে আমি কখনও কিছু বলতে পারি নি। আজকে ভাইয়ার সামনে কি ভাবে প্রতিবাদ করব। ভেবে নিজেই চোখের পানি ফেলছে। আমি যে অনুকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু অনু কি আর আমার কথা এখন বিশ্বাস করবে। নাকি অভয় এর মতো অনু আমাকে ভুল বুঝব। ভেবে উঠে হসপিটালে দিকে চলে যায়।
অভি নিজের রুমের মধ্যে ভাঙচুর করে ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে আছে।সাহারা বেগম এসে ছেলের কাধে হাত রেখে বলল,,,
—“কি দরকার ছিল অনুকে এখন এই ভাবে মারার যা করার সেটা অভয় আহান চলে যাওয়ার পর করতি। তাহলে আর এত ঝামেলা হতো না। তুই জানিস তোর ভাই কে। অন্যায় সহ্য করতে পারে না।”
অভি মার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—“অনু অভয় কোথায় আছে এখন।”
অভয় অনুকে নিয়ে হসপিটাল গেছে। মাথার মধ্যে কাপড় বাধা ছিল। আহান ও ওদের সাথে বাহির হয়ে গেছে।
অভি মার কথা শুনে। বাসা থেকে বাহির হয়ে যায়। গাড়িতে ড্রাইভ করতে করতে একের পর এক অভয় কে ফোন দিয়ে চলেছে। কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না।বারবার রিং হয়ে কল কেটে যাচ্ছে। রাগে আহান কে ফোন দেয়। আহান ফোন রিসিভ করে জানায়। অভয় আহান কে সাথে নিয়ে যায় নি। একা চলে গেছে। আহান ও ফোন করছে কিন্তু অভয় রিসিভ করছে না। আহান এর কথা শুনে অভি ফোনে গাড়ির মধ্যে ডিল দিয়ে ফেলে দেয়।
চলবে,,,,