#ভালোবাসার_রং_বদল
#Abanti_Islam
#Last_part
অভয় অনুর সামনে বসে বলল,,,
—“শেষ বারের জন্য ভাইয়ার সাথে একবার দেখা করবি না। কথা বলতে বলতে চোখের পানি মুছছে।”
অনু ছল ছল চোখে বলল,,,
—“আমাকে একবার নিয়ে যাবি। আমি একবার উনার সাথে দেখা করতে চাই। বলে অভয় দিকে তাকায়। অভয় অনুর অবস্থা বুঝে বলল,,,
—“ঠিক আছে চল আমার সাথে বলে অনুকে সাথে নিয়ে যায়। অনুর চোখ গুলো ছল ছল করছে। চোখের পানি গুলো মুছে অভয় এর সাথে কেবিনে চলে যায়।”
অভয় অভির পাশে বসে অভির হাতের উপর হাত রেখে বলল,,,
—“ভাইয়া দেখ কে এসেছে। একবার তাকাও আমার দিকে। ভাইয়া আমি তোমার সাথে খুব অন্যায় করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দেও ভাইয়া চোখ থেকে পানি পরছে।”
অভি একবার চোখ খুলে অভয় দিকে তাকায়। কিছু একটা বলার চেষ্টা করে কিন্তু শেষ কথাটা বলার হয়তো সুযোগ ছিল না। তাই চোখ বেয়ে দুইফোটা পানি ফেলে নিশ্বাস বন্ধ করে ফেলে। অভয় চিৎকারে সবাই আই সিও তে চলে আসে।
__________________________
অভিকে শেষ বারের জন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়। কিছুক্ষন পর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। সাহারা বেগম ব্রেন স্টক করে উনার অবস্থা খুব খারাপ তাই উনাকে আই সিও তে সিফট করা হয়।বাকিরা সবাই অভির লাস এর পাশে বসে আছে। অনুর বাবা মা এসেছে। উনারা একপাশে দাড়িয়ে আছে। অভিদের বাকি আত্মীয় সজন অনুকে নিয়ে যায়। গোসল করে সাদা কাপড় পরে আসতে বলে। অনু কোন কিছুতেই বাধা দিচ্ছে না। গোসল করে সাদা একটা কাপড় পরে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
অভয় একা সব কাজ করে যাচ্ছে। বিকেলে অভিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কোহেলি কোন ভাবে অভিকে যেতে দিতে রাজি না। সবাই কোহেলিকে বুঝিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারো কথা ওর কান পযর্ন্ত যাচ্ছে না। একপ্রকার জোর করে অভিকে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ জানামাজ নিয়ে কবর দিয়ে সবাই নিজেদের মত করে চলে যায়। অভয় ভাই এর কবর এর পাশে বসে আছে। আকাশ তুহিন অভয় বাকি বন্ধুরা একপ্রকার জোর করে অভয় কে কবর এর কাছে থেকে নিয়ে আসা হয়।
____________________________
বাসার এসে সোফায় চুপ করে বসে আছে। আহেলী কোহেলি অভয় পাশে বসে কান্না করে যাচ্ছে। মাইশা নিজের চোখের পানি মুছে সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
হঠাৎ অভয় ফোন বেজে ওঠে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে তাই সবাইকে চুপ করতে বলে। ফোন রিসিভ করে। হসপিটাল থেকে জানায় অভয় এর মার অবস্থা বেশি ভালো না এখনি হসপিটালে যেতে হবে। অভয় কাউকে কিছু না বলে হসপিটালে চলে যায়।
________________________
হসপিটালে এসে ডাক্তারদের সাথে কথা বলে জানতে পারে সাহারা বেগম এর অপারেশন করতে হবে। অপারেশন এ উনি হয়ত বেঁচে যাবে কিন্তু সুস্থ হবে না। সাভাবিক জীবনে আর ফিরে আসতে পারবে না। অভয় নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
মা বেঁচে থাকুক এই টুকু অনেক ভাইয়া পরে মাকে হারাতে পারব না। আপনারা যা ভালো হয় করুন শুধু মাকে ভালো করে দিন। বলে চোখ থেকে পানি পড়ছে।
ডাক্তার অভয় কাধে হাত রেখে বলল,,,
—“তুমি এইভাবে ভেঙে পড়লে বাকিদের কে সামলাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহ উপর ভরষা রাখো বলে সবাই ওটিতে চলে যায়।”
অভয় চেয়ারে হাত ভাজ করে বসে আছে। চোখ থেকে পানি পরে যাচ্ছে। এত তাড়াতাড়ি এত কিছু হয়ে যাবে ভাবতে পারে নি। একটা পর একটা বিপদ কি ভাবে সব কিছু সামাল দিবে সেটা ভেবে যাচ্ছে।
প্রায় চার ঘন্টা পর,
অপারেশন শেষ করে ডাক্তার টিম বাহির হয়ে আসে। অভয় ওনাদের দেখে সামনে এগিয়ে যায়। মা ঠিক আছে তো।
ডাক্তার অভয় কাধে হাত রেখে বলল,,,
—“এই যাত্রায় তোমার মা বেঁচে গেছে কিন্তু উনার এক সাইট প্যারালাইস্ট হয়ে গেছে। হয়ত ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে। একটু পরে উনাকে কেবিনে দেওয়া হবে তখন দেখা করতে পারবে। ডাক্তার কথা শুনে অভয় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,
ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে মা ভালো আছে এটা আমাদের জন্য অনেক কিছু। বলে চোখের পানি ফেলছে। পেছন থেকে অনু অভয় কাধে হাত রেখে বলল,,,
—“তুই এতো চিন্তা করিস না সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এখন আন্টির সাথে দেখা করে বাসায় যাওয়া দরকার তোর। অভয় অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—“তুই এই সাদা শাড়ি চেন্জ কেন করিস নি। আর তুই বাসায় চলে যা অনেকক্ষন হয়েছে এসেছিস।অনু অভয় কে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,
—“আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আমি এখন কিছুদিন তোদের বাড়িতে থাকব বাবা মা কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আন্টিকে দেখে একসাথে বাসায় যাব। অভয় কিছু না বলে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। ”
অনু কিরে এই ভাবে কি দেখছিস। কি হয়েছে বলবি কিছু।
অভয় কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,,,
—“তুই কত বদলে গেছিস তোকে চেনাই যাচ্ছে না। তুই আমাদের বাড়িতে থাকলে সবার জন্য খুব ভালো হবে।”
অনু অভয় কথা শুনে বলল,,,
—“সময় মানুষকে অনেক বদলে দেয়। এখন চল আন্টিকে দেখে আসি। বলে দুইজনে সাহারা বেগম এর কেবিনে চলে যায়। ওখানে কিছুক্ষন বসে থেকে বাহির হয়ে আসে। বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।”
অনু অভয় বাসায় এসে সব কিছু একা সামলে নিয়েছে। কিছুদিন পর সাহারা বেগম কেও বাসায় নিয়ে আসা হয়। উনি সারাদিন হুইল চেয়ারে বসে থাকে। অভির ছবির সামনে বসে থাকে বেশি সময় আর নিজের মতো করে চোখের পানি ফেলে যায়।
সময় সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। ঠিক তেমনি সবাই সবকিছু ভুলে নতুন করে এগিয়ে যায়। আহেলী কোহেলি কলেজ যেতে শুরু করে অভয় হসপিটালে যায় রোজ বাসায় সাহারা বেগম একাই থাকে অনু মাঝে মাঝে এসে ওনাকে দেখে যায়।
দুই বছর পর,,,,
অনু বউ সেজে বাসর ঘরে বসে আছে। এই দুই বছরে অনেক কিছু চেন্জ হয়ে গেছে। অনু বাসর ঘরে বসে ভেবে যাচ্ছে।
সাহারা বেগম আহেলি কোহেলী অনুদের বাসায় এসে। অনুকে নিজের ছেলের বউ করে নেওয়ার দাবী করে। আমেনা বেগম কোন ভাবে উনাদের কথায় রাজি না।
কিন্তু অনুর বাবা উনাদের প্রস্তাব শুনে বলল,,,
—“আমাদের রাজি হওয়ার থেকেও বেশি দরকারি হলো অনুর মতামত জানার অনু রাজি থাকলে আমাদের কোন সমস্যা নেই।”
অনু বাবার পাশে বসে সবকিছু শুনছে। কি বলবে সেটাই ভেবে যাচ্ছে।
সাহারা বেগম রায়হান সরকার এর কথাতে সম্মতি দিয়ে অনুর কাছ থেকে জানতে চায় অনুর কি মতামত। অনু মাথা নিচু করে বলল,,,
—“বাবা যা ভালো বুঝে সেটাই করবে। আর আমি সেটাতেই রাজি বলে ওখান থেকে উঠে চলে যায়। অনুর কথা শুনে সবাই বুঝতে পারে অনু কি চায় তাই দেরী না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওনারা অনু কে বউ করে নিয়ে যেতে চায়।”
আহেলীর বিয়ে হয়ে গেছে ছেলে আহেলী নিজে পছন্দ করেছে। শশুর বাড়ি যেয়ে আহেলী নিজের ভুল বুঝতে পারে। তাই বিয়ের কিছুদিন পর অনুর কাছে যেয়ে ক্ষমা চেয়ে আসে।
হঠাৎ দরজা আওয়াজ শুনে অনু নিজেকে একটু গুটিয়ে বসে। অভয় ভেতরে এসে বলল,,,
—“কিরে তুই এই বিয়েতে রাজি ছিলি না। আমাকে তোর পছন্দ হয় নি।”
অনু অভয় কথা শুনে মাথা নিচু করে আছে কোন কথা বলছে না। লজ্জায় নিজের হাত গুলো মুঠোর মধ্যে নিয়ে রেখেছে।
অভয় কিছু টা এগিয়ে এসে অনুর ঘুমটা সরিয়ে অনুর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,,,
ভালোবাসিস আমাকে। পারবি তো সব কিছু ভুলে আমার সাথে সারাজীবন থাকতে। তোর জীবন এর সব কালো ভালোবাসার রং এ বদলে দেওয়ার অধিকার দিবি তো। অনু কোন কথা না বলে অভয় কে জড়িয়ে ধরে। অভয় অনুকে শক্ত করে বুকের মধ্যে ঝড়িয়ে ধরে।
সমাপ্ত।