Sunday, October 5, 2025







ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-৩৬

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৬

এলার্ম-ঘড়িটা টুটটুট শব্দ করেই চলছে অনবরত। বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকালো আদ্রিয়ান। বুকে থাকা রোদকে জড়িয়ে ধরে কাত হয়ে এলার্মটা অফ করে রোদের শরীরটা ভালোমতো নিজের সাথে পেচিয়ে আরামে ঘুমালো কিন্তু শান্তি পেলো কোথায় বেচারা। ঠিক দশ মিনিট পর আবারও সেই টুটটুট শব্দ। পরপর দুই বার অফ করার পরও কাজ হলো না। প্রতি দশ মিনিট পর পরই এলার্ম সেট করা। না পেরে চোখ কঁচলে তাকালো আদ্রিয়ান। মুখ খুলে রোদকে ডাকতে নিলেই একগোছা চুল মুখে ডুকে পড়লো। হাত দিয়ে চুলগুলো যত্ন করে সরিয়ে নিলো। রোদের কপালে, গলায় লেপ্টে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে গুছিয়ে নিলো। আজ রোদের মেডিক্যাল খোলা। সকালের ক্লাস। আদ্রিয়ান রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প হাসলো। সেই হাসিটা ছিলো মায়াময়। ভালোবাসায় টাইটুম্বুর। নিজের শক্ত হাতের আদর দিলো রোদের গালে। হাত বুলাতে বুলাতেই ওর উপর ঝুঁকে ডাকলো,

— সোনা উঠো।

রোদের ঘুম একটু ছুটলো কিন্তু তাকালো না। কতক্ষণই বা হলো বেচারী ঘুমোলো? আদ্রিয়ান আবারও ডাকতে লাগলো। রোদ মোচড়ে মোচড়ে আদ্রিয়ানের বুকে ডুকে পিঠ জড়িয়ে বুকে মুখ দিয়ে ঘুমাচ্ছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান। এই বউ কে কিভাবে উঠাবে এখন? ক্লাস তো মিস দেয়া যাবে না। চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আদ্রিয়ান ডাকার ভঙ্গিতে বললো,

— রোদ?প্লিজ উঠো। লেট হচ্ছে তো পাখি।

— উমম।

— কোন উমম না। উঠো।

কথাটা বলেই বুক থেকে সরাতে চাইলো আদ্রিয়ান কিন্তু পারলো কই? বউ তার তাকে ছাড়তে নারাজ। আদ্রিয়ান এবার না পেরে জোর খাঁটিয়ে বুক থেকে সরালো কারণ ঘড়ির কাটা তো থেমে নেই। রোদ আবারও আদ্রিয়ানের কাছে আসতে নিলেই না পেরে আদ্রিয়ান মৃদু ধমক দিলো,

— চুপচাপ উঠো। কোন কথা না। বিকেলে ঘুমাবা।

ঘুম জড়ানো কন্ঠে রোদ বললো,

— আজকে যাব না।

— যাবো না মানে? এই উঠো এখনই। রোদ? মেজাজ খারাপ করবা না। উঠো। এমন করলে একদম হোস্টেলে দিয়ে আসব।

কথাটা এবার একটু জোরেই বললো আদ্রিয়ান। যার জন্য নিজেকে কষ্ট করে আটকে রেখেছিলো রোদের সানিধ্য পেতে আজ কাছে আসাতে যদি সেই কারণ ঘটেই যায় তাহলে কি হয়? ধমক খেয়ে রোদের কান্না চলে এলো। এমনি সময় হয়তো এই ধমকে এতটা খারাপ লাগতো না কিন্তু এখন অতি আদরে আহ্লাদী রোদ কি আর এই ধমক খেতে পারে? উহু মোটেও না। “আদ্রিয়ান আজ ওকে হোস্টেলে রাখার কথা বলেছে। রোদ তাই করবে। আর আসবে না। হোস্টেলেই থাকবে। প্রয়োজনে বাচ্চাদের ও নিয়ে থাকবে। ইতিহাস গড়বে বাচ্চা সহ হোস্টেলে থেকে তবুও আদ্রিয়ানের কাছে আসবে না। কু*ত্তা আদ্রিয়ান। শয়তান আদ্রিয়ান। বান্দর আদ্রিয়ান। একা একা থাকবি তুই তখন। লেজ নাড়িয়ে আবার রোদের কাছে আসলে রোদ তখন একদম মজা বুঝিয়ে দিবে। সকাল সকাল রোদকে ধমকানোর স্বাদ একদম মিটিয়ে দিবে। ব্যাটা খা*টা*স। হুলো বিড়াল”। বালিশে মুখ গুজে ঘুমের মধ্যেই ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে মনে মনে কথাগুলো বিনা মূল্যে আদ্রিয়ানকে উৎসর্গ করলো রোদ। আদ্রিয়ানের খারাপ লাগছে এখন। কি দরকার ছিলো বউটাকে ধমকানোর? এখন খারাপটা কার লাগছে? আদ্রিয়ানের ই তো লাগছে। হাত বাড়িয়ে রোদের মাথায় হাত দিয়ে যেই না আদরে কিছু বলবে ওমনি তেঁজে জ্বলে উঠলো রোদ। ধাক্কা দিয়ে হাত সরিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে পরলো। আদ্রিয়ানের এখন নিজেরই চুল ছিড়তে মন চাইলো। ওয়াসরুম থেকে কান্নার শব্দ আসছে। ওর বুকে যেন কেউ চেপে ধরেছে এমন অনুভূতি হচ্ছে। ওয়াসরুমের দরজায় নক করে ডাকতে লাগলো,

— রোদ? সোনাপাখি। খুলো না। আমি সরি তো। জান?

কান্নার আওয়াজ আর এলো না। আদ্রিয়ানের বুকটা ধুক ধুক করছে এখনও। আলমারি থেকে রোদের ড্রেস, হিজাব বের করে ব্যাগটাও গুছিয়ে টেবিলে রাখলো। রোদ ফুলা ফুলা চোখ নিয়ে বের হতেই আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে ধরতে গেলেই রোদ পাশ কাটিয়ে ড্রেস হাতে তুলে ওয়াসরুমে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান পেছন থেকে হাত ধরে নিজেকে সামলে রোদের রাগ ভাঙাতে বললো,

— আমিই তো। এখানেই চেঞ্জ…

আর কিছু বলতে পারলো না আদ্রিয়ান। মুখের হাসিটুকুও মিলিয়ে গেলো। রোদ ঝামটা মে’রে হাত সরিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে পরলো। আদ্রিয়ান দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। বউ তো সাংঘাতিক রেগে আছে। কি করবে এখন? কিচেনে ডুকে ফ্রীজ থেকে ডিম নিয়ে পোঁচ করলো। বুয়া রুটি বানিয়ে রেখে গিয়েছিলো সেটা বের করে সেঁকে নিলো। কফিটা বানাতে বানাতেই রোদ রেডি হয়ে মিশানের রুমে ডুকলো। স্কুল বন্ধ আজ ওর কিন্তু পড়া বাকি এতো। তাই এখন উঠিয়ে পড়াতে বসিয়ে নিজে যাবে। রাতে সব শেষ হওয়ার আগেই রোদ ঘুম পাড়িয়েছিলো ওকে। বেশ খানিকটা সময় ডাকার পর মিশান উঠলো। রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— আরেকটু ঘুমাই?

রোদের মায়া হলো। কত সুন্দর আবদার করছে। মিশানের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— আচ্ছা ঘুমাও আরেকটু। আমি মেডিক্যাল যাচ্ছি তাহলে। পড়া সবটুকু শেষ করবে ঠিক আছে? বোনকে দেখো। আর ঠিক মতো খেয়ে নিও।

মিশান রোদের কাঁধে মাথা রাখলো। চোখ বন্ধ করেই বললো,

— মনে হচ্ছে কতদিনের জন্য যাচ্ছো যেভাবে বলছো।

রোদ প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। মিশান উঠে ওয়াসরুমে ডুকতে ডুকতে বললো,

— তোমার কাছেই খাব। আসছি।

রোদ বিছানাটা চট করে গুছিয়ে নিলো।নিজের রুমে ডুকে দেখলো মিশি তখনও ঘুম। মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে হাতে ব্যাগ নিয়ে টেবিলে গিয়ে মিশানের খাবার গুছালো। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে ওর। যদিও আদ্রিয়ান তেমন কিছুই বলে নি তবুও কেন জানি রোদের মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান ওকে অবহেলা করেছে আজ। দূরে সরাতে চেয়েছে। সেটাই ওর মন বিষিয়ে তুলেছে। আদ্রিয়ান ফ্রেশ হয়ে কিচেনে ডুকে দেখলো রোদ কফি টেবিলে নিয়েছে। এগিয়ে কিছু বলার আগেই রোদ জোরে ডাকলো,

— মিশান?

— মা আসছি।

মিশান রুম থেকেই উত্তর দিলো। আদ্রিয়ান আবারও কিছু বলতে নিলেই মিশান এসে পরলো। রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকাচ্ছেই না। মিশানের প্লেটে খাবার দিয়ে আদ্রিয়ানের প্লেটেও দিলো। পিনপতন নীরবতায় শুধু মিশানের টুকটাক কথা শুনা যাচ্ছে। রোদ হু হা করছে শুধু। কোনমতে খেয়ে মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— বোন উঠলে দেখো।

— আচ্ছা।

আদ্রিয়ানের আগেই রোদ বের হলো। পেছনে একপ্রকার চাবি হাতে দৌড়ে এলো আদ্রিয়ান। বউয়ের রাগের থেকে বড় জ্বালা আর কিছুই নেই। এই মুহূর্তে আদ্রিয়ানের তাই মনে হচ্ছে। গাড়িতেও রোদ বইতে মুখ গুজে রাখলো। আদ্রিয়ান বহু চেষ্টা করেও কথা বলতে পারলো না। গাড়ি থামতেই রোদ ব্যাগ হাতে বেরিয়ে সোজা হেটে চলে গেল। একটা বার পেছনে তাকালো না। আদ্রিয়ানের বুক মোচড়াচ্ছে যেন৷ চাপা কষ্ট যেন গলায় দলা পাকাচ্ছে। হয়তো পুরুষ বলে তা নাহলে এতক্ষণে হয়তো কেঁদে ফেলতো বেচারা। এভাবে তো রোদ যায় না কোনদিনও। সবসময় আদ্রিয়ান গাড়িতে একটা চুমু দেয়, রোদ একটা দেয় এরপর কতশত আদর করে রোদ যায়। আজ কেন নয় তাহলে? রোদ একটা বার ফিরেও কেন তাকালো না? ঢোক গিললো আদ্রিয়ান। গাড়িটা ঘুরালো বাসার দিকে।সবে মাত্র সকাল সাতটা। অফিসে যাবে দশটায়।

__________________

জাইফা আজ সকাল থেকে বমি করে যাচ্ছে। রাদ এ নিয়ে চিন্তায় মরি মরি অবস্থা। অফিসে না গিয়ে বউ ধরে বসে আছে। ওর মা এসে জুস দিলো জাইফাকে। জাইফা দুই চুমুক খেয়েই আর খাবেনা। রাদ চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই জাইফা মিনমিন করে বললো,

— সত্যি মজা লাগছে না এটা।

রাদ মুখে নিয়ে এক চুমুক খেয়ে বললো,

— ঠিকই তো আছে।

জাইফার মুখে ধরে অল্প অল্প করে সবটুকু খাওয়ালো। মুখটা হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বললো,

— বেশি খারাপ লাগছে? মিহার কাছে যাবে?

জাইফা রাদের বুকে হেলান দিয়ে বললো,

— রোজ রোজ ডক্টরের কাছে কে যায়?

— আমি যাই। সমস্যা হলে তো যেতেই হবে। হঠাৎ এত বমি কেন হচ্ছে?

জাইফা হাজার না করলেও রাদ ড.মিহাকে কল করলো। বমির কথা জানাতেই ড.মিহা পাত্তা না দিয়ে বললো,

— ও প্রেগন্যান্ট ও বমি করছে তোর কি সমস্যা?

রাদ মিহার এমন উত্তরে হকচকিয়ে গিয়ে বললো,

— নিয়ে আসি চেক করবি একটু।

— গাধা তুই ভালো হবি না? ফলটল খাওয়া। অতিরিক্ত বমিতে সর্বোচ্চ দূর্বল হবে। নেক্সট উইক এ নিয়ে আসিস।

রাদ ফোন রাখলো। তখনই দিশা হাতে ক্ষুদে চালের ভাত আর ভর্তা নিয়ে হাজির হলো। কাল জাইফা খেতে চেয়েছিলো। আজ সকাল সকাল উঠে নিজে বানিয়েছে ও। নিজ হাতে ভর্তা ডলে বানিয়েছে। রুমের দরজায় নক হতেই রাদ তাকিয়ে দেখলো দিশা। চিন্তিত কন্ঠে বললো,

— হাতে কি?

দিশা পাশের টেবিলে রেখে চলে যেতে নিলেই রাদ বলে উঠলো,

— দিশা?

দিশা দাঁড়িয়ে গেলো। রাদ হুট করে বললো,

— রাতুলের সাথে কতদিনের সম্পর্ক?

দিশা প্রচন্ড রকমের চমকালো। রাদ আবারও জিজ্ঞেস করলো,

— কতদূর এগিয়েছিস?

দিশা ঘুরে তাকিয়ে রাদকে একবার দেখে বললো,

— রাতুল ভাই বিয়ে করবে না আমাকে।

কথাটা বলেই চলে গেল। রাদ ঠাই দাঁড়িয়ে। মেয়েটার কপালে কি সুখ লিখা নেই? একটু সুখের বুঝি খুব অভাব?
জাইফা ওয়াসরুম থেকে এসে ভাকার ঘ্রাণ পেয়ে বললো,

— দিশা এসেছিলো?

— হুম।

— আমার জন্য এনেছে ভর্তা ভাকা। দিন খাই।

জাইফা প্রফুল্ল কন্ঠে বললো। রাদ খাবার এগিয়ে এনে নিজেই জাইফার মুখে তুলে দিতে দিতে বললো,

— খেতে চেয়েছিলে?

— হুম। সবটুকু খাব। অনেক মজা।

রাদ হাসলো কারণ অনেকগুলো এখানে। এতগুলো কি না এতটুকু পেটে আটকে কিন্তু রাদকে অবাক করে দিয়ে জাইফা সবটুকু খেয়ে পানি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললো। রাদ হেসে জাইফার হালকা উঁচু হওয়া পেটে চুমু খেয়ে বললো,

— তুমি আসার বলে খুশিতে তোমার মা পাগল হয়ে সবটুকু ভাগা খেয়ে নিয়েছে। তোমার আব্বুর জন্য একটুও রাখে নি।

জাইফা প্রতিবাদী সুরে বললো,

— মিথ্যা কথা বাবা।

রাদ ঠোঁট টিপে হেসে বললো,

— তাহলে এতগুলো কে খেলো?

জাইফা গাল ফুলিয়ে পেটে হাত বুলিয়ে বললো,

— এই পুচকু খেয়েছে।

____________________

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মিটিং শেষ করে আদ্রিয়ান মিশিকে কোলে তুলে নিলো। একটু দুরত্বেই বাবার কেবিন৷ সেদিকে আপাতত যেতে চাইলো না আদ্রিয়ান। ফোন হাতে মিশানকে কল দিতেই জানলো এখন ও কোচিং শেষ হয় নি ওর। আবার রোদের নাম্বারে ডায়েল করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। দুপুর থেকেই কল রিসিভ করছে না রোদ। আদ্রিয়ান ভেবেছিলো হয়তো ক্লাসে কিন্তু এখন তো ক্লাস আওয়ার না। এতক্ষণে তো রোদ বাসায় থাকার কথা। মিশিকে নিজের চেয়ারে বসিয়ে হালকা খাওয়াতে নিলেই মিশি মুখে একটু নিয়ে বললো,

— বাবাই মাম্মা যাব।

আদ্রিয়ান ওর মুখে লাগা খাবার টুকু ফেলে বললো,

— এই তো মা। একটু পরই যাব।

সন্ধ্যা হতেই আদ্রিয়ান বাসায় ফিরলো। বাইরে থেকে লক করা। বুকটা ধক করে উঠলো যেন। লক করা হলে রোদ, মিশান কোথায়? হঠাৎ রোহানদের ফ্ল্যাট থেকে মিশান বেরিয়ে এলো। আদ্রিয়ান সস্তি পেলো একটু। ভাবলো হয়তো রোদও ওখানে। লক খুলে ভেতরে ডুকতেই মিশানকে বললো,

— তোমার মা’কে আসতে বলো।

— কোথা থেকে?

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

— তোমার সাথে ছিলো না?

— না তো। মা তো আসেই নি।

আদ্রিয়ানের দুনিয়া ঘুরে উঠলো। আসে নি মানে? কোথায় তাহলে রোদ? নিজের বাসায় যায় নি এটা সিওর কারণ নিচে রাদের সাথে ফোনে কথা হয়েছে৷ কাঁপা হাতে করতেই অপরপাশ থেকে শোনা গেলো তিক্ত কথা, “আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন”। আদ্রিয়ান মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— বাবা বোনকে দেখো। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।

মিশান আদ্রিয়ানের হাত ধরে করুন কন্ঠে বললো,

— মা কোথায় বাবা?

ঢোক গিললো আদ্রিয়ান। ও তো নিজেও জানে না। রাত হয়ে আসছে এদিকে। মিশি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

— বাবাই মিশিও যাবে মাম্মার কাছে।

আদ্রিয়ান মিশানের হাত ধরে বললো,

— বোনকে দেখো। আমি আসছি।

কথাটা ব’লেই বের হলো আদ্রিয়ান। যদিও এখনও মেডিকেলে যাওয়ার মানেহয় না তাও ছুট লাগালো। লিফট ওয়েটিং এ থাকায় সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামলো। গাড়িতে উঠেই স্প্রিডে চালানো শুরু করলো।
.
মেডিকেলে রোদ নেই। কথাটা শুনার পর পরই আদ্রিয়ানের মাথা ঘুরছে। হাঁপাচ্ছে রীতিমতো। ইয়াজ দৌড়ে এসে ওকে ধরে বললো,

— ভাই রোদ নেই। দুপুরের পরেই চলে গিয়েছে।

আদ্রিয়ান ইয়াজের হাতটা ধরে বললো,

— ওকে খুঁজে দাও ইয়াজ। আমার বুকে ব্যাথা করছে।

ইয়াজ তারাতাড়ি আদ্রিয়ানকে ধরে নিজের কেবিনে বসালো। পানি খায়িয়ে ঠান্ডা করে প্রশার মাপতেই দেখলো হাই হয়ে গিয়েছে। আদ্রিয়ানকে সান্ত্বনা দিতে বললো,

— ভাই শান্ত হন। কোথায় যাবে ও। বেশি দূর একা চিনে না ও। আমি দেখছি কোন বান্ধবীর বাসায় গেলো নাকি?

রোদের মেডিক্যালে তেমন বান্ধবী নেই। গুটি কয়েক যারা আছে তারাও বেশির ভাগ হোস্টেলে থাকে। ইয়াজ একথা বলতেই আদ্রিয়ান হুরতার করে দাঁড়িয়ে গেল। বললো,

— চলো সেখানেই। ওখানেই আছে। আমার মন বলছে।

ইয়াজ বুঝলো না কারণ। আগে ফোন দিয়ে জানলো কিন্তু ফলাফল শূন্য। শেষ একজনের সাথে ইদানীং ভাব জমেছিলো রোদের। ইয়াজ আবার মেয়েটাকে তেমন একটা পছন্দ করে না। চিপকু টাইপের। ইয়াজের সাথে লাইন করার চেষ্টা করেছিলো পাত্তা পায় নি। আদ্রিয়ান ছুট লাগালো ইয়াজকে নিয়ে। গাড়ি থামাতেই তারাহুরোয় নামতে গিয়ে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে চোখের উপর দিকে সজোরে আঘাত পেলো। একটুর জন্য চোখে লাগে নি। ইয়াজ ধরতে গেলেই আদ্রিয়ান পাত্তা না দিয়ে বললো,

— চলো তারাতাড়ি।

একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে আদ্রিয়ান অনবরত নক করতে লাগলো। হাসবিয়া মেয়েটা দরজা খুলে ইয়াজকে দেখেই চমকে গেল। নিজেকে পরিপাটি করতে লাগলো। ইয়াজ বিরক্ত হলো বটে। হাসবা কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই আদ্রিয়ান জোরে জোরে ডাকতে লাগলো,

— রোদ! রোদ!

তখনই ভেতর থেকে রোদ সহ আরো দুইজন মেয়ে বেরিয়ে এলো। আদ্রিয়ান যেন পাগল হয়ে গেল। এতক্ষণের হাহাকার করা বুকে যেন প্রশান্তি বয়ে গেলো। হাসবাকে টপকে গিয়ে ঝাপটে ধরলো রোদকে। মাথাটা বুকে নিয়ে আদর করতে করতে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু হাঁপানোর কারণে পারছে না। রোদ বুক থেকে উঠার চেষ্টা করছে। ও দেখেছে আদ্রিয়ানের কপালের দিকে র*ক্ত। রোদকে নড়াচড়া করতে দেখে আদ্রিয়ান ধমকে বললো,

— থাপড়ে গাল লাল করে দিব একদম। বেয়াদপ কোথাকার।

রোদ শান্ত হয়ে বুকে রইলো। আদ্রিয়ান আবারও ব্যাস্ত কন্ঠে বলতে লাগলো,

— সোনা আমার। সরি আমি। আবারও বকেছি? সরি অনেকগুলো। আমি খুঁজছিলাম তোমাকে।

রোদ হাত বাড়িয়ে আদ্রিয়ানের গালটা ছুঁয়ে দিলো। পরিচিত ঘ্রাণটা একটু টেনে নিলো। ইয়াজের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বললো,

— ওনার কপালটা ব্যান্ডেজ করে দে না।

ইয়াজ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এই জামাই-বউ দুটোই তারছিড়া।

#চলবে……

[ অনেকের অভিযোগ রোজ কেন দেই না?
আসলে স্টুডেন্ট আমি। রাস্তায় এতো এতো জ্যাম পার করে বাসায় আসি। নিজের পড়া সহ আরো কত কাজ। তার ফাঁকে ফাঁকে লিখি। রোজ সম্ভব হয়ে উঠে না। তাও পারলে দেই। ]

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ