Monday, October 6, 2025







ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-২৭

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৭

সকাল সকাল রোদ ব্রেকফাস্ট বানাতে ব্যাস্ত।কাজ করছে সাথে বিরবির করে কিছু বলছে। মিশান ঢুলতে ঢুলতে রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে টংটাং আওয়াজ পেয়ে পা ঘুরিয়ে উঁকি দিয়ে গলা উঁচিয়ে ডাকলো,

— রোদ মা?

রোদের ধ্যান ভাঙলো। সকাল থেকে মাথায় কিসব ঘুরঘুর করছে ওর। সব বাদ দিয়ে ফুটন্ত পানিতে চা পাতা দিয়ে উত্তর দিলো,

— এই যে কিচেনে আমি।

— টুথপেষ্ট নেই তো ওয়াসরুমে।

রোদের কোন উত্তর এলো না। পা চালিয়ে রোদ নিজেই এলো। কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো,

— থাকবে কিভাবে টুথপেষ্ট? তোমার বাবার কি আর সেই তাল আছে?

বলে আবার নিজেই ওদের বেডরুমের ওয়াসরুম থেকে টুথপেষ্ট এনে মিশানের হাতে দিলো। মিশান একটু অবাকও হলো। কি হলো রোদ মা’য়ের? সকাল সকাল এমন রেগে আছে কেন? মিশানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রোদ আবার এসে নরম কন্ঠে বললো,

— কি হয়েছে?

মিশান ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বললো,

— মিশি উঠে নি?

–না বাবা ও এখনও উঠে নি। তুমি তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো। বাইরে যেই বৃষ্টি গরম গরম পরটা বানাচ্ছি।

মিশান একটু হেসে রুমে ডুকলো। রোদ আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। আদ্রিয়ানের উপর রাগ এখনও কমে নি ওর। শ্যালার যত্তসব ভংচং ছুটাবে রোদ।
.
আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠেই দেখলো মিশি ঠান্ডা পেয়ে ওর বুকের উপর উঠে গুটিয়ে ঘুমাচ্ছে। যদিও কাঁথা দিয়ে শরীর ঢাকা তবুও বাবার উষ্ণতা পাওয়ার তোড়জোড় করে বুকে মুখ ঘঁষে দিচ্ছে বারবার। আদ্রিয়ান দুই হাতে জড়িয়ে নিলো মেয়েকে। ঘুমন্ত মেয়েকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তুললো। আদ্রিয়ানের কলিজা ঠান্ডা হয় এই ছোট্ট মিশিটাকে দেখলে। সব সন্তান সমান হলেও বাবাদের মেয়েদের প্রতি ভালোবাসাটায় একটু বোনাস থাকেই। আদ্রিয়ানের ফোন বাজতেই আওয়াজে মিশি জেগে উঠলো। আদ্রিয়ান মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কল রিসিভ করে কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিলো। মিশি ততক্ষণে পুরো জেগে উঠলো। আদ্রিয়ান ওকে নিয়েই ফ্রেশ হয়ে একেবারে বের হলো। রোদ যখন উঠেছে তখন ও টের পেয়েছে কিছুটা কিন্তু ভয়ে ভয়ে উঠে নি। সকাল সকাল যদি আবার ক্ষেপে যায়?

টেবিলে যেতেই দেখলো রোদ কিচেনে পরটা বেলছে আর মিশান ভাজছে। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। আবার কি ভাবতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। মিশি কোলের মধ্যেই দাঁপড়া দাঁপড়ি শুরু করে ডাকলে লাগলো,

— ভাই? ভাই।

মিশান পেছনে তাকাতেই দেখলো আদ্রিয়ানের কোলে মিশি। যেয়ে কোলে তুলে নিয়ে ওর সাথে টেবিলে বসে দুষ্টামি করতে ব্যাস্ত হয়ে গেল। আদ্রিয়ান ভেজা বিড়ালের মতো পা টিপে টিপে ডুকলো৷ রোদের পরটা বানানো শেষ এখন শুধু শেষটা ভাজছে। আদ্রিয়ানের উপস্থিতি টের পেয়েও একদম চুপ ও। আদ্রিয়ান দেখলো চা ফুটছে পুরো দমে। দুধ,চিনি মিশিয়ে ছোট ফ্লাক্সটাতে ঢেলে নিলো। পাশেই ডিম পোঁচ রাখা। আদ্রিয়ান চুপচাপ একটা একটা করে টেবিলে নিচ্ছে। রোদ গ্যাসটা অফ করে হাতে গরম গরম পরটা নিয়ে টেবিলে রেখে মিশিকে নিজের কাছে নিয়ে বসলো। খেতে খেতে মিশান, মিশি কথার ঝুঁলি খুলে বসলো। আদ্রিয়ান ও টুকটাক কথা বলেছে কিন্তু রোদ ছিলো চুপ।
আদ্রিয়ান গলা ঝেঁরে বললো,

— রোদ আজ নতুন বুয়া আসবে রান্নার জন্য। দুপুরেই আসবে।

রোদ হা না কিছুই বললো না। খাওয়া শেষ হতেই রোদ সব গুছিয়ে আবার বেড রুম দুটো গুছাতে গেলো। এরমধ্যে বাচ্চাদের সাথে ঠিকই কথা বলছে কিন্তু এরিয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান অসহায় যাযাবরের মতো বউয়ের পিছু পিছু ঘুরে কথা বলার চেষ্টাও করেছে কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় না উল্টো রোদ চটে যায় তাই আদ্রিয়ান না পেরে বাচ্চাদের কাছে গেলো।

________________

দুপুরে রান্না করে দিয়ে গিয়েছে বুয়া। রোদ পইপই করে বলেছে ওরা কেমন ঝাল,ঝোল, লবণ, তেল খায়। মহিলাও তালে তাল মিলিয়ে বলেছে,

— আমি রান্দি মেলা মাইনসের রান্দন। আমারে শিখাইতে হইবো না।

রোদও মাথা দুলিয়ে চলে যায়। ছুটা বুয়া এসে বাকি কাজ করে যায়। দুপুরে খেতে বসতেই মিশান গোসল করে ভেজা চুল নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আগেই বললো,

— আগে আমাকে দাও। ক্ষুধা লেগেছে বেশি।

রোদ ওরটা বেড়ে দিয়ে টাওয়াল এনে মাথা মুছে দিতে দিতে বললো,

— এমনিতেই আবহাওয়ার ঠিক ঠিকানা নেই। এমন ভেজা চুলে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো।

মিশানের ঠোঁটে তখন আনন্দের হাসি। আদ্রিয়ান ও মিশিকে নিয়ে খেতে বসলো। রোদ সবাইকে বেড়ে দিয়ে মিশির ভাত মাখতে নিলেই মিশান কেঁশে উঠলো। নাকে মুখে ভাত উঠে গেল। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি উঠে ছেলেকে পানি খাওয়ালো। রোদ ও ব্যাস্ত হয়ে উঠে মিশানের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

— আস্তে খাবে তো।

আদ্রিয়ান দেখলো মিশানের চোখ,নাক, কান লাল হয়ে আছে। বারবার মিশান কান ধরে বলছে,

— জ্বলছে।

আদ্রিয়ানের বুকটা কেঁপে উঠল। ছেলেকে নিজের সাথে জড়িয়ে পিঠে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ও। রোদ কিছু একটা মনে করে একটু তরকারির ঝোল মুখে দিলো সাথে সাথেই যেন জিহ্বাটা জ্বলে উঠলো। তারাতাড়ি কিচেন থেকে চিনি এনে মিশানের মুখে ঢুকিয়ে দিলো। মিশানের চোখ দিয়ে তখনও পানি পরছে। রোদ খুঁজে মধু এনে মিশানের ঠোঁটে লাগিয়ে দিলো। ঠান্ডা পানি খাওয়ানোর পর শান্তি পেল মিশান। আদ্রিয়ান অস্থির কন্ঠে বললো,

— বাবা আমার, ঠিক আছো এখন?

— হুম।

রোদ মেজাজ খারাপ করে বললো,

— একশত বার বলেছি লাগবে না বুয়া আমিই রান্না করব তাও শুনে না এই লোক৷ এখন আপনিই খাবেন এসব মসলা ওয়ালা গরুর ভুনা। একজন মসলা দেয় নি আরেকজন মনে হয় একদিনে সব ঢেলে দিয়েছে। আমার জামাইকে পথে বসানোর ধান্দা যত্তসব।

রাগে গজগজ করতে করতে রোদ ঠাস ঠুস আওয়াজ করে সব তরকারি আবার পাতিলে ঢাললো। আলু কেটে তরকারিতে দিয়ে বেশি করে পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিলো। আলু অতিরিক্ত লবন,ঝাল আর হলুদ শুষে নেয়। ক্লাস এইটে গারস্থ বিজ্ঞানে পড়েছিলো রোদ। ডালের অবস্থা ও তেমন একটা সুবিধার না তাই ডাল চুলায় বসিয়ে শুকাতে দিলো। ঘন হলে খেতে ভালোলাগবে। রোদ এসব করছে সাথে সমানতালে আদ্রিয়ানকে ঝেরে যাচ্ছে।
মিশি মায়ের রাগ দেখে বাবার কোলে উঠে বসলো। মিশান আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— বাবা রোদ মা এমন আছে কেন?

আদ্রিয়ান অপ্রস্তুত হলো। একটু হেসে বললো,

— বুয়ার উপর রেগে গিয়েছে।

মিশান জোর দিয়ে বললো,

— না না রোদ মা তো সকাল থেকেই রেগে আছে।

আদ্রিয়ান এবার ফেঁসে গেলো। কি বলবে ছেলেকে যে তার রোদ মা’কে আদর দেয় নি বলে এমন রণচণ্ডী হয়ে ঘুরছে?

রোদ সব ঠিক করে এনে খাবার বেড়ে নিজে আজ মিশানকে খায়িয়ে দিলো। আদ্রিয়ান মিশিকে খায়িয়ে শেষে ওরা দুজন খেতে বসে। আদ্রিয়ান নিজের পাত থেকে এক টুকরো মাংস রোদের পাতে দিলো৷ মনে মনে ভাবছে রোদ বোধহয় আদ্রিয়ানের মুখেই ঠুসে দিবে এইসব কিন্তু না তা হলো না। রোদ নিজের মতো খেয়ে সব গুছিয়ে রাখলো। মিশি, মিশান দুই ভাই-বোন মিলে সোফায় শুয়ে টিভি দেখছে। বাসা থেকে কল আসতেই রোদ তা রিসিভ করতে রুমে ডুকে পেছনে পছনে আদ্রিয়ান ও ডুকলো। ডুকেই রুম লক করে দিলো। রোদ কথা শেষ করে পেছনে ঘুরার আগেই আদ্রিয়ানের বাহুডোরে আবদ্ধ হলো। আদ্রিয়ান ভাবলো হয়তো ছুটতে চাবে রোদ কিন্তু না রোদ নিজের পুরো ভর ছেড়ে দিলো আদ্রিয়ানের বুকে। আদ্রিয়ান একটু মুচকি হেসে জড়িয়ে নিলো রোদকে। এই মেয়ের রাগ হলো এই আগুন তো এই পানি। আদ্রিয়ান বেশ কিছু সময় ওকে জড়িয়ে রাখলো নিজের কাছে। পেছন থেকেই উঁচু করে বারান্দায় হেটে গেলো৷ বড় স্পেস নিয়ে কাঠের একটা কাউচ টাইপের রাখা। আদ্রিয়ান রোদকে নিজের কোলে নিয়ে বসে পরলো। রোদ ঘুরে বসে আদ্রিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে গালে গাল মিলিয়ে রাখলো। আদ্রিয়ান বেশ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আদুরে গলায় ডাকলো,

— সোনাপাখি?

— হু।

— রাগ?

— অল্প।

— আমার দিকে তাকাও।

রোদ তাকালো কিন্তু ঐ তীক্ষ্ণ চাহনির কাছে বেশিক্ষণ টিকতে পারলো না। নজর নামিয়ে নিতেই আদ্রিয়ান ওর মুখটা দুই হাতে তুলে বেশ সময় নিয়ে চুমু খেল রোদের কপালে৷ আদর লাগিয়ে শান্ত স্বরে বললো,

— আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা শুধু মাত্র আমার মুখে সীমাবদ্ধ না রোদ। আমার প্রত্যেকটা আচরণে, প্রত্যেকটা পদে পদে তোমার প্রতি ভালোবাসা দৃশ্যমান করতে চাই। তোমার এই যে বয়সটা চলে এটা সম্পূর্ণ আবেগে ভরা৷ আমার প্রতি আকর্ষণ ফিল করো তুমি এটাই স্বাভাবিক। তোমার অধিকার এটা। আমি যে আকর্ষণ ফিল করি না এটা কিন্তু নয়। আমার নিজেকে সামলে রাখতে প্রচুর বেগ পেতে হয় রোদ। তোমাকে বুঝাতে পারব না। না তুমি মানুষিক ভাবে আর না ই শারীরিক ভাবে প্রস্তুত রোদ। সময় আসুক আমিই….

রোদ যতটুকুও গলেছিলো প্রথমে আদ্রিয়ান জড়িয়ে ধরায় ততটুকুও এবার গায়ের হয়ে গেল। রোদের ভালোবাসায় আঙুল তুলে এই আদ্রিয়ান? রোদ ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। অশ্রু সিক্ত চোখে বললো,

— আমার ভালোবাসা আবেগ? আকর্ষণ? আমি প্রস্তুুত নই?

আরো কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলো না রোদ। গলায় আটকে গেলো। আদ্রিয়ান কি বলবে? কি বুঝাতে যেয়ে কি বুঝালো ও? মাথা ঘুরে যাচ্ছে ওর। রোদ পা ঘুরাতে নিলেই আদ্রিয়ান ওকে টেনে নিলো। চুপ করে বুকে নিয়ে মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো। রোদ কিছুই বলে নি। না কেঁদেছে না রাগ করেছে। আদ্রিয়ানের এবার ভীষণ ভাবে খারাপ লাগছে। ও জানে ওর রোদ ওকে কতটা ভালোবাসে। এভাবে মোটেও বুঝাতে চায় নি আদ্রিয়ান তাও কি থেকে কি হয়ে গেল। মেয়েটার এই আবদারটা পূরণ করতে বেশ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে আদ্রিয়ান। একবার ভাবে নেই একটু কাছে টেনে আমারই তো পরক্ষণেই ভাবে যদি কিছু একটা হয়ে যায়? রোদের পড়াশোনায় ফোকাস যদি কমে যায়? ভবিষ্যতে যদি এ নিয়ে আফসোস হয়? যদি রোদের চোখে তখন আদ্রিয়ানের জন্য হীনতা দেখে? তখন কি পারবে আদ্রিয়ান সেই দৃষ্টি সহ্য করতে? উহু মোটেও না।

_______________

বৃষ্টির বেগ কমেছে বিকেলের আগেই। এখন একদম ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশ। আবহাওয়া তবুও কিছুটা ঠান্ডা ঠান্ডা। রোদ শাড়ীর কুঁচি ঠিক করছে। পাঞ্জাবিটা আদ্রিয়ান পড়ে নিজে এগিয়ে এসে রোদের কুঁচি ধরে ঠিক করে দিয়ে আঁচলে পিন করে দিলো। মিশান এসে উঁকি দিয়ে বললো,

— বাবা রেডি?

— তোমার রোদ মা’র একটু বাকি।

মিশান রুমে ডুকে বেডে পা উঠিয়ে বসে মিশির সাথে গেমস খেলতে ব্যাস্ত হলো। রোদ ততক্ষণে হিজাব বেঁধে জুতা পড়ে নিলো। লক করে চারজন গাড়িতে উঠে রওনা দিলো।

এখন ওরা যাচ্ছে ধানমন্ডিরই একটা রুফটপ রেস্টুরেন্টে। রোদ হাজার না করলেও ভাইদের আর মিশানের জোরেই আসা। রোদের বার্থডে উপলক্ষেই মূলত সাথে রাদের বিয়ের কিছুটা আলোচনা হবে এই যা। আরিয়ানরা,দিশারা আর ইয়াজ ও আসছে।
বেশ ভালো একটা সন্ধ্যা কাটলো সবার। রাদের হলুদের অনুষ্ঠানে কি কি হবে তা নিয়েও আলোচনা চললো। রোদ অনেক একসাইডেট এ নিয়ে। রাতে ডিনারের পর বাসায় ফিরে ওরা। মিশি গাড়িতেই ঘুম। আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলেই রুমে উঠলো।মিশানও ঘুমে কাতর তখন। আদ্রিয়ান মিশানকে বললো,

— মিশান চেঞ্জ করে রুমে আসো তো বাবা।

মিশানও চেঞ্জ করে রুমে ডুকলো। রোদ গজগজ করতে করতে বললো,

— আমাকে চেঞ্জ করতে দিচ্ছেন না কেন হ্যাঁ?

আদ্রিয়ান একটু হেসে মিশানকে বললো,

— মিশির সাথে ঘুমাও। আমি একটু তোমার রোদ মা নিয়ে বাইরে যাচ্ছি।

মিশান ঘাড় দুলিয়ে মিশির পাশে শুয়ে পরলো। রোদ তখনও ঠাই বসে। আদ্রিয়ান না পেরে ওর কানে কানে ফিসফিস করে বললো,

— ভালোয় ভালোয় উঠো মিশান এখানে।

রোদ চোখ কটমট করে তাকিয়ে উঠে বাইরে সোফায় বসে রইলো। ও যাবে না কিছুতেই। আদ্রিয়ান এবার ওকে ধরে টেনে দাঁড় করাতেই রোদ রেগে বললো,

— আমাকে নিয়ে যেতে হবে ক্যান? ঐ শালীরে নিয়ে যান। দেখেননি আপনার পিছনে কেমন কু*ত্তার মতো ঘেউঘেউ করে করে লেজ নাড়িয়ে ঘুরছিলো।

আদ্রিয়ানের মাথা ভনভন করছে। এই এক দোষ এই মেয়ের।রেগে গেলে এর ভাষার কোন কুলকিনারা থাকে না। ভাষা খেই হারিয়ে একবার আমেরিকা যায় তো একবার উগাণ্ডায় যায়।
আজ রেস্টুরেন্টে কয়েকজন ইয়াং ছেলে-মেয়েদের গ্রপও ছিলো। ঐ খানের একটা মেয়ে এসে সেঁধে পড়ে কথা বলতে আসে আদ্রিয়ানের সাথে।আদ্রিয়ান যথাসম্ভব এরিয়ে কথা বলে চলেও যায়। মেয়ে ও সেই। সে থেমে নেই। আদ্রিয়ান ওয়াসরুমে যেতেই সেই মেয়ে ওকে ওখানে যেয়ে বলে, সে নাকি আদ্রিয়ানের উপর ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়েছে। আদ্রিয়ান কিছুটা রেগে যায়। জেন্স ওয়াসরুমে ডুকে এই মেয়ে এমন অসভ্যতা শুরু করেছে। আজকাল ছেলেমেয়েরা ফ্রিডমের নামে কিছুটা উশৃংখল হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান সব মিটমাট করে বের হতেই দেখে রাগে চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে তার নবযৌবনা ঊনিশ বছর বয়সী বউ। এই মেয়ে’কে শাড়ীতে যে এতটা সুন্দর লাগে একদম আদ্রিয়ানের বুকে লাগে। হেসে এগিয়ে আসতেই রোদ রাগের চোটে আদ্রিয়ানের হাতে কামড় লাগিয়ে দেয়। আদ্রিয়ানের ঐ ওয়াসরুমের ঘটনা তার একমাত্র ছেলে দেখে চুপ করে মা’কে জানিয়ে দিয়েছে। সেই থেকেই রোদ এমন রণচণ্ডী হয়ে ঘুরছে।

অবশেষে কত কষ্টে রোদকে নিয়ে বের হয়ে একটা রিক্সার ডেকে দুজন উঠলো। ভেজা ভেজা পিচ ঢালা রাস্তা, ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে কিছুটা। ভেজা মাটির কিছুটা স্যাঁত স্যাঁতে ঘ্রাণ ভেসে আসছে। এসব যেন নিমিষেই রোদের মনটা ভালো করে দিলো। আদ্রিয়ানের বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে অনুভব করলো সময়টা। রোদের মনে হচ্ছে ওরা প্রেম করছে। এমনতো প্রেমিক-প্রেমিকারাই থাকে। রোদ মুখ উঁচিয়ে চুমু খেলো আদ্রিয়ানের দাঁড়ি ভর্তি চোয়ালে। আদ্রিয়ান নিজের বাহুডোরে আটকে নিলো রোদকে। প্রেম প্রেম হাওয়া বইছে যেন চারদিকে। রঙিন চশমা পড়ে যেমন সবকিছু রঙিন মনে হয় ঠিক তেমনই আদ্রিয়ান আর রোদের। সব কিছুতেই যেন তারা ভিন্ন রং এর বিচরণ দেখছে। আদ্রিয়ান রোদের হাতে চুমু খেয়ে বললো,

— কি চাই জন্মদিনে?

অকপটে জবাব এলো,

— আপনাকে।

_______________

মানুষের জীবনে সব ধরনের পরিস্থিতিই আসবে। ভালোটা যেমন আসে ঠিক তেমন খারাপটাও আসে।সোফায় হেলান দিয়ে বসে বাইরে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে রোদ। সময়গুলো কিভাবে যেন চলে গেল। চলে যাওয়া সেই সময়গুলো মোটেও মনে রাখতে চাইলো না রোদ কিন্তু আফসোস মস্তিষ্ক তা ভুলতে দিচ্ছে না। কারো জীবনে তান্ডব ঘটিয়ে গিয়েছে বিগত দিনে। কারো বুনা স্বপ্নগুলো নিমিষেই শেষ হয়ে গিয়েছে।
ধীর পায়ে এগিয়ে এলো আদ্রিয়ান। রোদের পাশে লেগে বসলো। রোদ তখনও ভাবান্তর হয় না। আদ্রিয়ান গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো রোদকে৷ চোখের নীচে কালি পড়েছে মেয়েটার। গত দিনগুলো যে কিভাবে কাটিয়েছে তা কেবল ওরাই জানে। আদ্রিয়ান একটু অবাকও হয়। কত বলেছে রোদকে যাতে নিজের বসায় থাকে কিন্তু শুনে নি রোদ। রোদ যে এতোটা শক্তহাতে সমলাবে তা কেউ ভাবে নি। আদ্রিয়ান রোদকে একহাতে জড়িয়ে ধরতেই রোদ ঝাঁপিয়ে পরলো আদ্রিয়ানের বুকে। এতদিনের আটকে রাখা কান্না জুড়ে দিলো। ভরসার স্থান পেয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা৷ আদ্রিয়ান ওকে কাঁদতে দিলো। কাঁদুক একটু হয়তো এতে কিছুটা হালকা হবে।

বেশ সময় নিয়ে থামলো রোদ। আদ্রিয়ান ওর মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— ঐ বাসায় যেতে হবে তো সোনা। শপিং গুলো গুছিয়ে নাও। চলো।

রোদ আদ্রিয়ানের বুকে রইলো কিছুক্ষণ এরপর নিজেই উঠে গেল। আদ্রিয়ান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো। পরিস্থিতি তো এরচেয়েও খারাপ হতে পারতো।

#চলবে…..

[ একটু সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করুন ]

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ