Sunday, October 5, 2025







ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-২৬

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৬

[ যারা একটু রোম্যান্টিক পর্ব পড়তে চান না তারা স্কিপ করতে পারেন। পরে কিন্তু আমাকে বকতে পারবেন না।]

বৃষ্টিতে মুখরিত আজ চারপাশ। এত উঁচু ফ্লোর থেকে প্রকৃতিটা একটু বেশিই আকর্ষণ করে। সামনে বড় বড় গাছ গুলো ঝরো বাসাতে হেলেদুলে যাচ্ছে। ফ্লাটের হল রুমের কাঁচের বড় দেয়ালটায় চুয়ে চুয়ে পানি পরছে। দৃশ্যটা বেশ রোম্যান্টিক লাগলো রোদের কাছে। হাতে কাপে চা নিয়ে সোফায় পা তুলে গরম ধোঁয়া উঁড়া চায়ে চুমুক দিলো রোদ। মেডিক্যালে লম্বা ভ্যাকেশন শুরু হয়েছে ঈদের জন্য। রোদ এখন বাসায়ই আছে। একা একা এমন বৃষ্টির দিনে এমনি সময় হলে হয়তো ভয় পেত রোদ কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেই ভয় এখন আর নেই। রোদের মনে তীব্র বাসনা জন্মালো। এখন যদি একটু আদ্রিয়ানের সাথে বৃষ্টি বিলাস করা যেত। বৃষ্টিতে দুইজনের কিছু মুহূর্ত তৈরী হতো। কিছু ভালোবাসা বিনিময় হতো। আফসোস তা হচ্ছে না কারণ আদ্রিয়ান তো নেই বাসায়। এই লোক গিয়েছে অফিসে। রোদ এত সুন্দর বৃষ্টি বিলাস করছে দেখে দেখে সাথে এক কাপ চা। রোদ যেন আদ্রিয়ানকে একটু বেশিই মিস করছে। জীবনের প্রথম প্রেম এই আদ্রিয়ান। তার মধ্যে রোদের বর সে।ভালোবাসা পবিত্র সাথে অনুভূতি গুলো খুবই সূঁচালো। প্রতি ক্ষণে ক্ষণে রোদকে জ্বালায় এই ভালোবাসা। আদ্রিয়ানও রোদকে ভালোবাসা দেয়। আদর করে। একটু না বরং বেশিই আদর করে। খেয়াল রাখে। সবই ঠিক। একদম ঠিক কিন্তু তবুও রোদের আরো আদর চাই। কেন আদ্রিয়ান আরো আদর দেয় না? আরেকটু ভালোবাসে না? প্রেম লাগায় না? রোদ মনে মনে অভিযোগগুলো করলো। ইদানীং একা একা থাকলেই ওর আদ্রিয়ানের কথা মনে পড়ে। সারাক্ষণ তাকে নিয়েই ভাবে এই ছোট্ট খাট্ট মনটা। জ্বালিয়ে মারছে রোদকে এই ভালোবাসা। সারাদিন আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান করে এই মন।
হঠাৎ বেল বাজতেই রোদের অভিযোগের সমাপ্তি ঘটলো। আস্তে করে কোল থেকে ঘুমন্ত মিশির মাথাটা কুশনে রেখে উঠলো। রোদের কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গিয়েছে মেয়েটা। দরজা খুলতেই দেখলো সেই ছেলে। রোহান দাঁত বের করে হেসে বললো,

— কি করেন?

রোদ অহেতুক কথা বলতে চাইছে না। এমনিতেই আদ্রিয়ান এসব পছন্দ করে না। ঠোঁটে অল্প সল্প হাসি ফুটিয়ে রোদ বললো,

— জ্বি ভাইয়া, মানে এমনিতেই বসে ছিলাম।

রোহান ঝলমলিয়ে হেসে উঠলো। রোদ চোখ নামিয়ে নিলো। এভাবে অপরিচিত ছেলের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখতে নেই। রোহান কন্ঠে দুষ্টামি ঢেলে বললো,

— কি ডিসটার্ব করলাম?

রোহানের কথাটার অর্থ ঠিক বুঝে আসলো না রোদের। পরক্ষণেই কিছু একটা বুঝে রোদ কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বললো,

— উনি বাসায় নেই। আর কিছু না লাগলে আসতে পারেন এখন।

রোহান বুঝলো ওর দুষ্টামি হয়তো রোদের ভালোলাগে নি। তাই অপরাধী মতো মুখ করে বললো,

–আ’ম সরি। আমার মুখ আসলে একটু বেশিই চলে।

— ইটস ওকে। আপনার কি চিনি লাগবে?

— না না চিনি আছে কিন্তু আম্মু নেই। বানাতে তো পারি না।

— চা খান?

— আরে সেটা আবার বলতে?

রোদ হাসলো একটু। দাঁড়াতে বলে কচেন থেকে চা ঢেলে এনে দিলো রোহানকে। রোহান ধন্যবাদ জানালো। রোদ দরজা লাগিয়ে ভেতরে ডুকে পড়লো। এই ছেলেটাকে কেমন কেমন যেন লাগে রোদের। সবসময় ছটফট করে। একটু বেহায়াও বটে৷ মুখে বাঁধে না কিছু।
.
আদ্রিয়ান বাসায় এলো একটু পরই। আজ এত তারাতাড়ি আসবে ভাবে নি রোদ। আদ্রিয়ান বাসায় ডুকার পর থেকেই রোদের সাথে কথা বলছে না। রোদ এগিয়ে আদ্রিয়ানের সব গুছাতে গুছাতে কিছু জিজ্ঞেস করলেও আদ্রিয়ান তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না ওকে। রোদ ভাবলো হয়তো ক্লান্ত। আদ্রিয়ানের বেডে ছড়ানো ফাইল গুলো একসাথে করে আলমারির ড্রয়ারে রেখে আদ্রিয়ানের জন্য টাউজার, টাওয়াল বের করতে করতে জিজ্ঞেস করলো,

— আজ এতো তাড়াতাড়ি আসলেন যে?

প্রশ্নটা করে রোদ সব ওয়াসরুমে রাখতে গেল। তখনই বাজখাঁই গলায় উত্তর এলো আদ্রিয়ান থেকে,

— তারাতাড়ি এসে বিপাকে ফেলে দিলাম মনে হচ্ছে।

রোদের ভ্রু জোরা কুচকে গেলো। কি হলো হঠাৎ করে? রোদ কিছু বলতে নিবে তার আগেই আদ্রিয়ান রোদের হাত থেকে নিজের কাপড় টান দিয়ে নিয়ে ধাপ করে রোদের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো। রোদ একটু ভয় পেয়ে ছিটকে সরে গেল। বুকে ধকধক করছে এখনও। এটা কেমন ব্যবহার? রোদ ভাবতে লাগলো, ও কি এমন কিছু করেছে যে আদ্রিয়ান রেগে আছে। এমন আচরণের কারণ কি? রোদের কান্না করতে মন চাইলো। যাকে ভেবে ভেবে নিজেকে ভুলতে বসেছে রোদ তার থেকে এমন ব্যবহার নিশ্চিত কাম্য নয়। পা ঘুরিয়ে আলমারি থেকে একটা টিশার্ট বের করে বেডে রেখে হাতে একটা পাতলা কাঁথা নিয়ে বের হলো রুম থেকে। সোফায় ঘুমন্ত মিশিকে বুক পর্যন্ত ঢেকে দিলো রোদ। পাশে আরেকটা কুশন দিয়ে ঘের দিলো। বড় কাঁচের থাইটা খুলে দিলো রোদ। সাথে সাথেই ঝরো হাওয়ায় ঝাপটা এলো সারাদেহে। সামনেই বেশ জায়গা জুড়ে ব্যালকনির মতো। আসলে এটাকে এটাচ রুফ বললেও ভুল হবে না।
রোদ ঢুকে আবার লাগিয়ে দিলো থাই নাহলে আবার ঘর ভিজে যাবে। দাঁড়িয়ে মুখ তুলে আকাশ পানে তাকায় রোদ। গাল বেয়ে বেশি না বিষন্নতার বেরঙ দুটো ফোঁটা গড়িয়ে পরলো যা এই বৃষ্টির কণার জন্য দেখা বা বুঝাও গেলো না। এই সময়ের বৃষ্টির পানি বেশ ঠান্ডা। রোদের শরীর ধরে যাচ্ছে। পুরোটা ভিজে গিয়েছে ও। নিজের দিকে তাকাতেই রোদ ভেতরে চলে যেতে নিলো। টিশার্টটা একটু বেশিই পাতলা।
রোদ ঘুরতেই দেখলো বুকে দুই হাত গুজে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। পুরো ভিজে গিয়েছে। পরণে তার শুধু নাভীর নিচে টাউজার। ভিজে একাকার হয়ে আছে আদ্রিয়ানের দেহ। বুকের লোমগুলোও লেপ্টে আছে সারা বুক জুড়ে। রোদের মন চাইলো সেই বুকে নিজেও লেপ্টে যেতে। আদ্রিয়ানের ভেজা চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। রোদের মন চাইলো চুলগুলো সরিয়ে গভীর ঠোঁটের ছোঁয়া দিতে আদ্রিয়ানের কপালে।
নিজের এসব আদুরে ভাবনাগুলো বাদ দিলো রোদ আদ্রিয়ানের দৃঢ় চাহনি দেখে। কিছুটা ইতস্তত করে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান পথ আটকে দাঁড়িয়ে গেলো।
ভেজা শরীরের রোদের লাস্যময়ী রুপে ঘায়েল হয়ে গেল আদ্রিয়ান। পাতলা কাপড় ভিজে রোদের শরীরে সেটে আছে একদম। দৃশ্যমান হয়ে আছে রোদের আবেদনময়ী রুপ। কোমড় ছড়ানো চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। রোদের মুখ চুয়ে চুয়ে বর্ষণের কণা গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে গড়িয়ে পরছে। আদ্রিয়ানের মনটা হিংসাত্মক হয়ে গেল। এই প্রত্যেকটা পানির কণা কতটা গভীর ভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে তার রোদকে।সে তো এভাবে ছোঁয় না। তার আগে কেন ছুঁয়ে যাচ্ছে?
নিয়ন্ত্রণহারা হলো শক্তপোক্ত আদ্রিয়ান। বৃষ্টির বেগ বাড়লো সাথে বাড়লো ঝড়ের বেগ। রোদ মাথা নিচু করে তখনও ঠাই দাঁড়িয়ে। আদ্রিয়ান জোরে শ্বাস টানলো। হাত বাড়িয়ে দিলো রোদের দিকে। রোদ চমকালো। ভীষণ ভাবে চমকে তাকালো। রোদের চমকানো বেশিক্ষণ টিকতে পারলো না তার আগেই ভালোবাসায় সিক্ত করলো আদ্রিয়ান। বেশ সময় নিয়ে আদর করলো রোদকে। রোদও ভুলে গেল একটু আগের করা আদ্রিয়ানের আচরণ। নিজেও আদ্রিয়ানকে ভালোবাসা দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। ঝড়ের তান্ডব কমলো না বৈ বাড়লো আরেকটু। আদ্রিয়ান তখন রোদের কোমড় জড়িয়ে গলায় চুমুতে ভরিয়ে তুলছে। রোদ ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে আছে। ভিজা উন্মুক্ত আদ্রিয়ানের সাথে সেটে যেতে চাইছে বারবার। কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে ওর কিছুটা। এতক্ষণ ঠান্ডা পানিতে থেকে ওর অবস্থা বেগতিক। আদ্রিয়ান কিছুটা অনুভব করলো রোদ বারবার চেষ্টা করছে আদ্রিয়ানের বুকে ডুকার। মেয়েটা সমান তালে কেঁপেও যাচ্ছে। মুখ তুলার আগে সজোরে এক কামড় দিলো রোদের গলায়। রোদ জোরে ” আহ” করে সরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর ভেজা ঠোঁটে শব্দ করে চুমু খেলো। কোলে তুলে নিয়ে রুমে ডুকে রোদকে ওয়াসরুমে দিয়ে নিজে রুমেই চেঞ্জ করে নিলো। রোদ বের হতেই আদ্রিয়ান খেয়াল করলো দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছে রোদের। আদ্রিয়ান রোদকে ধরে চুল মুছিয়ে দিয়ে বেডে বসিয়ে সোফা থেকে মিশিকে কোলে তুলে বেডে শুয়িয়ে দিলো। নিজেও পাতলা কম্বলটা টেনে রোদকে বুকে জড়িয়ে দুইজনকেই ঢেকে নিলো। রোদ আদ্রিয়ানের খোলা বুকের সাথে লেগে রইলো। আদ্রিয়ানও নিজের সাথে শক্ত করে ধরে আছে। মুখ নামিয়ে রোদের কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— কথা তো শুনোই না আমার। একটু যদি রাগ দেখাই তাহলে আমার রাগ ভাঙাবা কি উল্টো নিজে রাগ করে থাকো।

রোদ মুখ ঘষলো আদ্রিয়ানের গলায়। আদ্রিয়ান হেসে আরেকটু জড়িয়ে নিলো ওকে।

________________

কিচেনে পাকড়া ভাজতে ব্যাস্ত রোদ। অন্য চুলায় চা বসিয়েছে। আওয়াজ আসছে রুম থেকে। দুই বাপ-মেয়ে মনে হচ্ছে পুরো ফ্লাট মাথায় তুলে ফেলবে। রোদ আবার দুটো ব্রেড ও ভেজে নিলো মিশির জন্য। সব হাতে নিয়ে রুমে ডুকতেই দেখলো পুরো রুমের দশা বেহাল হয়ে আছে। রোদের মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। চিল্লিয়ে বললো,

— কি করেছেন এসব? আমি পারব না গুছাতে। সব গুছিয়ে বাইরে আসবেন।

রোদের চিল্লানিতে দুইজন একদম চুপ করে গেলো। রোদ চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে আদ্রিয়ান বললো,

— চা তো দিয়ে যাও।

— গুছিয়ে আসুন।

আদ্রিয়ান অসহায় মুখ করে মেয়েকে দেখলো। মায়ের ধমক খেয়ে সেও চুপ করে আছে চোরের মতো। আদ্রিয়ান ঝটপট সব গুছিয়ে মিশিকে কোলে নিয়ে বাইর হলো। রোদ চা ঢেলে দিয়ে এগিয়ে দিলো আদ্রিয়ানের দিকে। বিকেলটা বেশ কাটলে তিনজনের।
.
ফোন বাজতেই আদ্রিয়ান রিসিভ করে সালাম দিলো। বাবা কল করেছে ওর। অপর পাশ থেকে কি বললো শুনা গেল না কিন্তু আদ্রিয়ান বললো,

— আসব তবে ঠিক দুই দিনের জন্য।

………

— সে আমাকে চিনে নি এখনও আব্বু। আমি যদি একেবারে সরে যাই তখন দেখব কি করেন উনি।

………

— আচ্ছা রাখি।

আদ্রিয়ান ফোনটা রেখে রোদের দিকে তাকাতেই দেখলো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদ। আদ্রিয়ান হালকা হাসলো। রোদের নাক টেনে দিয়ে বললো,

— শুধু ঈদের জন্য যাব ঐ বাড়ী। দুই দিন থেকে আবার এসে পরব।

রোদ খুশি হলেও মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল। থাক তাও শান্তি। রোদ তো ভাবছিলো একা একাই না আবার এই আদ্রিয়ান ওকে ঈদ পালন করায়।

______________

প্রতিদিন দেড়ীতে ঘুমালেও আজ আদ্রিয়ান জোর করে রাতে খাবার পরপরই ঘুমাতে তাড়া দিলো। রোদ তো ভেবেছিলো ভ্যাকেশন তাই একটা মুভি দেখবে কিন্তু এই আদ্রিয়ান জ্বালায় তা আর হলো কই?
রাত তখন কয়টা জানা নেই রোদের। ওর মনে মনে ও ভাসছে কোথাও। মনে মনে ভয়ও পাচ্ছে। এই বুঝি পরে যাবে। টেনেটুনে চোখ খুলার চেষ্টা চালালো রোদ। কিছুটা সহজ হলো চোখ খুলতে যখন আলো পরলো চোখে। ফট করে চোখ খুলতেই দেখলো ও আদ্রিয়ানের কোলে৷ চোখ কুচকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আদ্রিয়ান নামিয়ে দিলো রোদকে৷ কানে ফিসফিস করে বললো,

— হ্যাপি বার্থডে ভালোবাসা।

রোদ চমকালো। সামনে তাকাতেই সেই চমক বাড়লো। রাদ,রুদ্র, দিশা, তিশা,ইশান,জারবা, আরিয়ান, সাবা,ইয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। রোদ দৌড়ে ভাইদের জড়িয়ে ধরলো। রাদ, রুদ্র ওকে উইস করলো। সবাই উইশ করা শেষ হতেই পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,

— রোদ মা।

এবার যেন ভয়ানক ভাবে চমকালো রোদ। মিশান। ও কোথা থেকে এলো। পেছনে ঘুরতেই দেখলো মিশান দাঁড়িয়ে আছে। রোদ হাত বাড়িয়ে যেতে নিলেই মিশান দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো রোদকে। রোদের চোখে পানি চলে এলো। কন্ঠে বিষ্ময় ঢেলে জিজ্ঞেস করলো,

— বাচ্চা! কখন এসেছো তুমি?

মিশান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে রোদকে। রোদ ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো। মিশান ছাড়তেই রোদ দেখলো মিশানের চোখে পানি। রোদ তা মুছে দিলো। মিশান মিষ্টি কন্ঠে বললো,

— হ্যাপি বার্থডে রোদ মা।

— বেস্ট গিফট এটা।রোদ মা মিসড ইউ।

রাদ অবাক হয় যতবার ছোট্ট বোনটাকে দেখে। কে বলবে তার পিচ্চিটা সবে ঊনিশে পা রাখলো। এই তো দুই দিন আগেও রাদের কাছে বায়না করতো। রাদের বাচ্চার মতো ছিলো। কোলে কোলে থাকতো অথচ আজ দুই দুটো বাচ্চাকে সামলায়। আবেগী হয়ে উঠলো রাদ। মুহূর্তেই সেই আবেগ গিলেও ফেললো। সবার সাথে কেক কাটলো রোদ। থাকতে বললেও কেউ থাকে নি। সামনে ঈদ তারমধ্যে রাদের বিয়ে ঈদের আগে। এই ছেলে পাগল হয়ে ঈদের আগেই বিয়ে করবে জাইফাকে। তাই আদ্রিয়ান আর জোর করে নি।
.
মিশানের রুম রোদ আগে থেকেই গুছিয়ে রেখেছিলো। রোদ ডুকে আবার বালিশ ঠিক করে বিছানা ঝেরে বেডে বসলো। মিশান তখন ওয়াসরুম থেকে বের হলো। রোদ টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বললো,

— ছুটি কবে পেলেন আপনি? রোদ মা’কে একবার ও বললেন না।

মিশান মিষ্টি করে হাসলো। রোদ একটু রাগ করলেই আপনি সম্মোধন করে ওকে। মিশান পাশ ঘেঁষে বসে বললো,

— তেমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যই তো। আচ্ছা সরি। এই দেখো। তাকাও। রোদ মা?

এই ডাক কি রোদ উপেক্ষা করতে পারে? হেসে মিশানের চুল নেড়ে দিয়ে বললো,

— বাবার মতো হয়েছে। ঘুমাও এখন।

মিশানকে বেডে শুয়িয়ে রোদ কাঁথা টেনে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো বেশকিছুক্ষণ। অনেকক্ষণ পর রোদ বললো,

— ফোন ঘাটবা না এখন। ঘুম।

— আচ্ছা।

রোদ লাইট অফ করে দরজা ভিরিয়ে চলে গেল। মিশানের চোখে পানি তখন। এই আদর যে বাবা ওকে দেয় নি তা না কিন্তু মায়ের মতো আদর কোথায় পাবে মিশান? মায়ের আদর তো মায়ের ই হয়। মায়ের আদর আদর কথা কি অন্য কোথাও শুনা যায়? এই যে শেষ কবে মায়ের হাত মাথায় পেয়েছে তা মনে নেই মিশানের৷ ভাবতে ভাবতে বালিশ ভিজে উঠলো৷

____________

রোদ রুমে ডুকলো। আদ্রিয়ান যে এতক্ষণ কিছু দেখে নি তা না। দরজায় ই দাঁড়ানো ছিলো ও। কে বলবে এই মেয়ে নিজে এখনও বাবা,ভাইদের আর আদ্রিয়ানের বুকে থাকে৷ আদরে আদরে বড় হয়েছে। যাকে মুখে তুলে খাওয়াতে হতো সেই রোদ আজ কত বড় গিয়েছে। মিশিকে সামলে মিশানকেও কতটা আপন করে নিয়েছে। আদ্রিয়ান লাইট অফ করে রোদকে কাছে টেনে নিলো। রোদ পুরো দমে আদর খেতে তৈরি হয়ে এসেছে যেন। আদ্রিয়ান শুধু ওর কপালে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই রোদ মুখ এগিয়ে নিলো আদ্রিয়ানের গলায়। আদ্রিয়ান কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো। রোদ তখনও আদ্রিয়ানকে আদর করতে ব্যাস্ত। আদ্রিয়ান নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলো কিন্তু তা যেন এই মুহূর্তে বড্ড দায় হয়ে যাচ্ছে। বাইরে উত্তাল হওয়া বইছে সাথে রোদ যেন বেশ কড়া ভাবে আদ্রিয়ানের পৌষড়চিত্তের নিয়ন্ত্রণ হারা করতে উঠে পরে লাগলো। আদ্রিয়ান কিছুটা আগালো। রোদ যেন সাহস পেয়ে বসলো। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে লাগলো রোদের আদর। আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে উঠলো। নিজেকে ধরে রাখা দায় হয়ে উঠলো আজ। ভেতরে ওর ঝড় উঠে যাচ্ছে। দুই হাতে ঝাপটে ধরলো রোদকে। থামাতে চাইলো উত্তাল ঢেউ কিন্তু রোদ যেন লেগে পরে এসেছে। আদর তার আজ চাই ই চাই। আদ্রিয়ান ভেঙে ভেঙে বললো,

— রোদ..সোনা..আমার। তুমি..প্রস্তুত নয়.. এখনও।

–উহু। আ’ম অল রাইট।

আদ্রিয়ান অবাক হলো রোদের এহেন আচরণে। কি করবে ও এই মেয়েকে নিয়ে?সামনে পুরো ক্যারিয়ার পরে আছে রোদের। এখন এসব করে ওকে দিক ভ্রষ্ট করতে চায় না আদ্রিয়ান। রোদ না হয় আবেগী হয়ে যাচ্ছে তাই বলে আদ্রিয়ান অবুঝপানা করলে চলে না। অতিরিক্ত ভালোবাসায় রোদ দিক বিদিক ভুলে আদ্রিয়ানকে উস্কে দিচ্ছে।বহু কষ্ট আদ্রিয়ান ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বুকে নিয়ে বললো,

— ঘুমাও।

— ঘুমাবো না। ঘুমাতেও দিব না।

— রোদ..

— আদর চাই আমার বেশি বেশি।

— ঘুমাও না সোনা।

রোদের এত আগানো, এতো চেষ্টার পরও আদ্রিয়ানের এমন প্রত্যাখ্যান সহ্য হলো না রোদের। যেখানে মেয়ে হয়ে নিজের সব লজ্জা ভুলে এতদূর এগুলো ও সেখানে আদ্রিয়ানের এমন আচরণ কাম্য নয়। শেষ বার চেষ্টা করেও ফলাফল শূন্য। এবার রোদ রেগে গেল। ঝটাক মে’রে উঠে বেড থেকে নেমে যেতেই আদ্রিয়ান উঠে বসে বললো,

— কি হয়েছে রোদ?ঘুমাবে এখন। বুকে আসো।

বলে ধরতে গেলেই রোদ যেন ক্ষিপ্ত বাঘিনি হয়ে গেল। কিছুটা গর্জে উঠে বললো,

— ধরবি না আমাকে। ব্যাটা শয়তান। এত খোঁচালাম তোর কিছু হইলো না ক্যান হ্যাঁ? আবার ছুঁইতে আসলে তোর হাত মুচড়ে দিব একদম।

খাটি বাংলায় কথাগুলো বলেই হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে ডুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো রোদ।রাগে ওর শরীর জ্বলছে রীতিমতো। সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে রোদের কাছে। একা পেলেই আদর দেয় এখানে রোদ আজ আদর চাইতেই শ্যালার আদরে টান পড়েছে। রোদ কাঁথা মুড়ি দিয়ে মাথা ঢেকে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলো।

এদিকে আদ্রিয়ান হা হয়ে বসে আছে। ওর বিয়ে করা বউ কিনা ওকে তুই তুকারি করে গেলো তাও কারণ হলো আদ্রিয়ান আদর কেন দেয় নি। ঢোক গিললো আদ্রিয়ান। উঠে বাইরে গেলো। না রোদ নেই। এক রুমে তো মিশান। অন্য রুমে দরজা লক। ভয়ে ভয়ে নক করলো আদ্রিয়ান যেই রেগে আছে বউ আবার না মাথা ফাটিয়ে দেয়? কিন্তু দরজা খুললো না রোদ। না পেরে আদ্রিয়ান ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে লক খুললো। অন্ধকারেও বুঝলো রোদ বেডে শুয়ে আছে। আদ্রিয়ান চোরের মতো করে আস্তে করে বেডে শুয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। রোদ ছাড়াতে চাইলেও ছাড়ে না আদ্রিয়ান। বেশ কিছু সময় ধস্তাধস্তির পর শান্ত হলো রোদ। এবারে ফুঁপানোর আওয়াজ এলো কানে। নিজেকে বড্ড আসহায় লাগলো আদ্রিয়ানের। তার কলিজার টুকরা বউ কিনা ফুঁপাচ্ছে আদ্রিয়ানের আদর না পেয়ে?
শেষমেষ কত বুঝিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রুমে আনলো আদ্রিয়ান ওকে। বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে ভাবলো,” কি সাংঘাতিক বউ ওর। আদর না দেয়াতে কি ক্ষেপাটাই না ক্ষেপলো”।

#চলবে….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ