ভালোবাসার তুই পর্ব-০৯

0
2328

#ভালোবাসার_তুই
#Part_09
#Writer_NOVA

ডান কানে মোবাইল ধরে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক উঁকি মারছে এনাম।যদিও সে জানে তার বড় ভাই এনাজ এখন কিচেনে রাতের রান্না করছে।তবুও গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে ওর ভীষণ ভয় করছে।এনাম ও নিতুয়া অনেক দিনের সম্পর্ক।নিতুয়ার বাড়িতে বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে। কিন্তু এনাম তো আর তার ভাইয়ের আগে বিয়ে করতে পারে না।তাই এনাজের বিয়ের জন্য উঠে-পরে লাগছে।

নিতুঃ কি ব্যাপার চুপ হয়ে গেলে যে?তোমার ভাইয়ের বিয়ের কি খবর?কবে তোমার ভাই বিয়ে করবে আর কবে আমাদের বিয়ে হবে।

এনামঃ ভাইয়ার বিয়ের ১০-১২ দিন বাকি আছে। কিন্তু ভাইয়ার বিয়ের পর আমরা বিয়ে করতে পারবো না।আমাকে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে।নয়তো বিয়ের পর তোমাকে খাওয়াবো কি?

নিতুঃ খুব ভালো ডিসিশন নিয়েছো।তুমি অস্ট্রেলিয়া যাবে এক দিক দিয়ে আমার বিয়ে হয়ে যাবে আরেক দিক দিয়ে। তখন কপাল চাপড়িয়ো।তুমি যখন তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে ফিরবে তখন দেখবে আমি বাচ্চা নিয়ে স্কুলে যাচ্ছি নয়তো শ্বশুর বাড়ি গিয়ে পাতিল মাজছি।

এনামঃ তাহলে আমি এখন কি করবো?তুমিই বলো কি করতে পারি?তোমার কথা মতো ভাইয়াকে বিয়ের জন্য রাজী করালাম।যাতে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়।কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমার মতো ক্যারিয়ারহীন ছেলেকে মেয়ে দিবে কে?তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নিতুঃ তোমার বুদ্ধি-সুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে এনাম।আমাকে তোমার বাগদত্তা বানিয়ে তারপর তুমি অস্ট্রেলিয়া যাও।তাহলে তোমাকে হারানোর ভয় আমার থাকবে না।তোমার ক্যারিয়ার গঠনের পর তুমি দেশে এসলে বিয়ে করে নিবো।

এনামঃ দেখা যাক কি হয়?তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না।আমি সব ম্যানেজ করে নিবো।তুমি শুধু আমাকে একটু সময় দাও।

নিতুঃ নাও আমার কোন সমস্যা নেই। তবে এতটা সময়ও নিয়ো না যাতে করে আমাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলো।

দুজন আরো নানা বিষয় নিয়ে কথা বললো।কথা শেষ করে মোবাইলের আলোটা অফ করতেই এনামের কানে জোরে টান পরলো।এনাম ঘুরে এনাজকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো।

এনামঃ ভাইয়া ছাড়ো আমার লাগছে।
এনাজঃ এই জন্য তুই আমার বিয়ের জন্য এতো পাগল হয়ে গিয়েছিলি।আমার মনে একটা খোটকা লেগেছিলো।তখন অবশ্য আমি সেটাকে পাত্তা দেই নি।এখন দেখছি আমার মনের খোটকা টাই সঠিক হলো।
এনামঃ তুমি সব শুনে ফেলেছো😐।
এনাজঃ অফ কোর্স।তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এনামঃ তাহলে এর সলিউশন তুমি খুঁজে দিবে।
এনাজঃ ওকে। তুই নিশ্চিন্তে থাক।আমি সব ব্যবস্থা করছি।তুই যাতে খুশি আমিও তাতে খুশি।

এনাম অবাক হয়ে এনাজের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সহজে তার ভাই মেনে যাবে সেটা সে কখনি ভাবেনি।শক্ত করে ভাইকে জরিয়ে ধরলো এনাম।

এনাজঃ নিশ্চয়ই তুই ভাবছিস আমি এতো সহজে মেনে নিলাম কেন?
এনামঃ হুম।

এনাজঃ তোর ভাবীকেও আমি ২ বছর ধরে ভালোবাসি।তোর অবস্থায় আমিও এতোদিন ছিলাম।অবশ্য তোর নিতুর মতো নোভা যদিও আমায় ভালোবাসে না।কিন্তু আমিতো বেসেছি।আমি ঠিক যে পরিস্থিতিতে ছিলাম সেই পরিস্থিতিতে আমার ভাইকে পরতে দিতে চাই না।

এনামঃ তার মানে ভাইয়া।তুমি ভাবীকেই এতোদিন ভালোবাসতে?তোমার ডায়েরীতে যেই মেয়েটার নাম সেটা ভাবীর।(অবাক হয়ে)

এনাজঃ তুই বুঝি আজকে জানলি?(ভ্রু নাচিয়ে)

এনামঃ আমি ভাবীর নাম জানতাম না।তার মায়ের মুখে কয়েকবার শুনেছিলাম।কিন্তু তখন বিষয়টা অতটা গুরুত্ব দেইনি।এখন মনে এলো।তুমি তো হেব্বি জিনিয়াস।

এনাজঃ কেন?

এনামঃ নিজের নামের সাথে কি সুন্দর করে ভাবীর নাম জুড়ে রেখেছো।নামটা মিলিয়েছো বেশ।এমন ভাবনাগুলো কোথায় পাও।”নোভানাজ” নামটা যাস্ট ওয়াও।তোমার মাথায় খেললো কিভাবে নামটা?আমিতো পড়তে চেয়েছিলাম ডায়রীটা।কিন্তু তুমি ছোঁ মেরে আমার থেকে ডায়েরিটা নিয়ে লোকআপে রেখে দিলে।একটু পড়তে পারি নি।

এনাজঃ বড়দের ব্যাপারে নাক না গোলানোই ভালো।তোকে তো চোখের সামনে নোভাকে দেখালামই।

এনামঃ কিন্তু ভাইয়া, ভাবী কিরকম জানি পাগলী টাইপের।সবসময় ছটফট, ছটফট করে।

এনাজঃ আমার লিপস্টিক পাগলী।এরকম পাগলী টাইপের মেয়েরা না অন্যর মন চুরি করতে পারে খুব সহজে।আর তাদের মনটা থাকে অনেক সহজ-সরল।কোন প্যাচ নেই।

এনামঃ তুমি কি এর মধ্যে ভাবীর সাথে কথা বলেছো?

এনাজঃ দুই দিন কোম্পানির কাজে অনেক ব্যস্ত ছিলাম।নোভার কোন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি।দেখি আজ একটা কল করবো।

এনামঃ অনেক খুদা লেগেছে। চলো খেতে যাই।

এনাজঃ হুম চল।খাবার খাওয়ার পর তোর ভাবীর সাথে কথা বলবো।

🍂🍂🍂

এনাজ সেদিন নোভার সামনে এসে শয়তানি হাসি দিয়েছিলো।যা দেখে নোভা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
মনে করেছিলো এই বুঝি এনাজ ওর ওপর রাগ ঝারবে।কিন্তু নোভাকে অবাক করে দিয়ে এনাজ ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো।নোভার কাঁধে নিজের একটা হাত রেখে শক্ত করে জরিয়ে নিলো।তারপর ধরে ধরে বাইকের সামনে নিয়ে এলো।সাবধানে বাইক চালিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলো।

নোভা সেদিন বাসায় এসে ব্যাঙের মতো দুটো লাফ দিয়ে লুঙ্গি ডান্স গান ছেড়ে উড়াধুরা ডান্স করছে।এতো গুলো লিপস্টিক পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো।কি থেকে কি করবে তা ভাবতেই পারে নি।নোভার মা দেখে খুব খুশি হয়েছে। কারণ সে ধরে নিয়েছে তার মেয়ে এনাজকে অনেক পছন্দ করেছে। পছন্দ না করলে তো আর বাসায় এসে এরকম করে খুশিতে নাচতো না।লিপস্টিক পাগলী তো পুরো বক্সের লিপস্টিক সারা বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে সেখান থেকে একটা একটা করে নিজের ঠোঁটে পরখ করে দেখছে।ঘুমের সময়ও সারা বিছানায় লিপস্টিক বিছিয়ে রেখেছিলো।ইভাকে একটা লিপস্টিকও ধরতে দেয়নি।লিপস্টিক বক্সটা ঘুমের ঘোরে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছিলো।যাতে কেউ নিতে না পারে।

🍂🍂🍂

বিছানায় পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে বড়ইয়ের মিষ্টি আচার খাচ্ছি আমি।আজ রাতে ভাত খাবো না।সবসময় রাতে খাবার খেতে বিরক্ত লাগে।আম্মু এসে এক গাদা বকা দিয়ে চলে গেল।কিন্তু আমার কোন রিয়েকশন নেই। আমি খুব মনোযোগ সহকারে আচারের দিকে তাকিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাচ্ছি। শেষ পর্যত আম্মু বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বিদায় নিলো। আম্মু বের হওয়ার কিছু সময় পর ইভা এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।

ইভাঃ বোইনে, আম্মু গ্লাস খালি করে দিতে বলছে।
আমিঃ তা আমাকে বলতাছিস কেন?তুই গ্লাস খালি করে নিয়ে যা।
ইভাঃ তুমি খেয়ে খালি করে দেও।
আমিঃ ওয়াক ছিঃ আমি খাবো না।দুধে গন্ধ লাগে আমার।
ইভাঃ কথা না বলে এক নিশ্বাসে দুধটুকু শেষ করে দেও।নয়তো আমি আম্মুকে বলে দিবো তুমি দুধ খাওনি।
আমিঃ তুই গ্লাস খালি চাচ্ছিস তো।দে আমার কাছে।আমি গ্লাসের দুধটুকু বেসিনে ফেলে দিয়ে তোকে খালি গ্লাস দিচ্ছি।
ইভাঃ ভালো হবে না কিন্তু। আমি আম্মুর কাছে বিচার দিবো।
আমিঃ যা দে।তোকে মানা করছে কে?
ইভাঃ আম্মু দেখো বোইনে দুধ খেতে চাইতাছে না।বসে বসে আচার গিলতাছে।আমি দুধ খেতে বলছি কিন্তু বোইনে আমারে বলে সে নাকি বেসিনে দুধ ফেলে দিবে।তুমি কিছু বলো।
আমিঃ কুটনি বুড়ি।আম্মুকে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলা হচ্ছে। তোর মতো বোন থাকলে আর শত্রুর দরকার নেই। হু হু দিন আমারো আসবে।

আম্মু পাশের রুম থেকে চেচিয়ে বললো
আম্মুঃ নোভা ভালোই ভালোই গ্লাসের দুধ শেষ কর।নয়তো আমি এসে জোর করে খাইয়ে দিবো।আমার যেনো ২য় বার বলতে না হয়।এই বুড়ি বয়সে আমার হাতে মার খাস না।দুদিন পর পরের বাড়ি যাবে।আর সে বলে কিনা এটা খাবো না ঐ টা খাবো না।আল্লাহ জানে তোর মতো মেয়েকে নিয়ে এনাজ সংসার করবে কিভাবে?ওর জীবনটা বোধহয় শেষ করে দিবি।

আমিঃ তুমি কি আমার মা নাকি শ্বাশুড়ি। এরকম শ্বাশুড়ি দের মতো কথা-বার্তা বলা শুরু করলে কেন?

আমি রেগে কটমট করে তাকাতেই ইভা একটা মেকি হাসি দিয়ে ভ্রু নাচালো।যার মানে হলো, কি বোইনে কেমন দিলাম।আমার কথা না বলার মজা তো বুঝে গেছো তাই না।

আমিঃ তোকে আমি দেখে নিবো।কুটনি বুড়ি একটা।
ইভাঃ ভালো করে বলছিলাম ভালো লাগে নাই।এখন আম্মুর বকা খেয়ে ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নিবে।তুমি কি বকা না খেয়ে কোন কাজ করতে পারো না।
আমিঃ চুপ কর।

কিছু সময় পর ইভা এসে আমার সাথে ভাব ধরতে লাগলো।এতক্ষণ সে আমার হাতের আচার খেয়াল করেনি।আমার পাশে বসে ভাব জমানোর জন্য মিষ্টি কন্ঠে বললো।

ইভাঃ বোইনে তুমি না কত ভালো।আমার ১০ টা না ৫টা না একটা মাত্র বড় বোন।তোমাকে আমি কত ভালোবাসি।
আমিঃ এত কলা করে লাভ নেই। আমি তোকে আচার দিবো না।
ইভাঃ লাগবো না তোমার ঐ নষ্ট আচার।
আমিঃ আচ্ছা ভালো।যা ভাগ।
ইভাঃ প্লিজ একটু দেও।
আমিঃ দিতে পারি তবে এক শর্তে। তুই গ্লাসের দুধ খেয়ে শেষ করবি।আম্মুকে বলবি না আমি যে খাইনি।তাহলে তুই আচার পাবি।
ইভাঃ আমি একটু আগে এক গ্লাস শেষ করে এলাম।
আমিঃ কি বলছি শুনিস নি।রাজী থাকলে খা না থাকলে আমার সামনের থেকে ভাগ।

আমি আরো কিছু বলার আগে মোবাইলটা বেজে উঠলো।আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করলাম না।পরপর কয়েকবার বাজলো কিন্তু আমি রিসিভ না করে মোবাইল অফ করে রাখলাম।মাঝে মাঝে এরকম আননোন নাম্বার থেকে অপরিচিত ব্যক্তি কল করে খুব ডিস্টার্ব করে।তাই আমি আননোন নাম্বার থেকে কল আসলে ধরি না।আল্লাহ তায়ালাই জানে এসব ফালতু লোক আমার মোবাইল নাম্বার পায় কোথায়।

কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম।তবে আমার একটু ঘুম আসছে না।কারণ চোখের মধ্যে বারবার এনাজের মুখটা ভেসে উঠছে।এনাজ যখন কাঁপা কাঁপা হাতে আমার গালের দিকে ওর হাতটা বাড়িয়ে দিচ্ছিলো।তখন ওর মুখটা অনেক ইনোসেন্ট দেখা যাচ্ছিলো।এখনো চোখে ভাসছে দৃশ্যটা।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে