ভালোবাসার তুই পর্ব-০৮

0
2445

#ভালোবাসার_তুই
#Part_08
#Writer_NOVA

৮ দিন পর……..

রেস্টুরেন্টের ভেতর মুখ গোমড়া করে ভয়ে ভয়ে বসে আছি।আমি একা নই সাথে ধলা ইন্দুরও আছে।দেখতে আাসার দিন যা ভয় দেখিয়েছিলো।তাতে এখন আমার এনাজের দিকে তাকাতেই ভয় করে।আমার এই ভয় পাওয়া মুখটা দেখে যে উনি বেশ মজা পাচ্ছে তা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। আমি কিছুতেই আসতে চাইনি।আব্বু জোর করে আমাদের কথা বলতে পাঠিয়েছে। মুখোমুখি বসে আছি দুজনে।কখন থেকে এক ধ্যানে আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমার অনেক অস্বস্তি লাগছে।আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে তার ধ্যান ভাঙানোর চেষ্টা করছি।

আমিঃ এরকম করে হা করে কি দেখছে?নিজের কাছে বিরক্তি লাগছে।কোন মেয়ে কি জীবনে দেখে নি নাকি।আমি বুঝতে পারছি না আব্বু-আম্মু কি দেখে যে দুই সপ্তাহ পর এটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে আল্লাহ জানে। হু হু আমায় তো চিনো না চান্দু।আমি বিয়ের আগে পালাবো😎।কিন্তু তাতে তো আমার বাবার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে।সবাই আব্বুকে অপমান করবে।আমি তা হতে দিতে পারি না।আমার আব্বুকে কেউ আমার জন্য আঙুল তুলে কটু কথা শুনাবে। তাহলে আমি কিরকম মেয়ে হলাম।আব্বুর বড় মেয়ে আমি।আমাকে নিয়ে আব্বু অনেক আশা করে।আর আমি কিনা তার মাথা নিচু করার কথা ভাবছি।আমার খুশি না হোক আব্বু-আম্মুর খুশির জন্য হলেও এই বিয়েটা করতে হবে।নোভা তোর মনে রাখতে হবে সবসময় বাবা-মা যা করে সব আমাদের ভালোর জন্য করে।(মনে মনে)

নোভা মনে মনে বহু কথা ভেবে মন খারাপ করে ফেললো।অপরদিকে এনাজ এক দৃষ্টিতে নোভার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ২ বছর আগে ঠিক এই মায়াবী চোখের পাগল হয়েছিল। নোভার চেহারার মধ্যে ওর চোখ দুটো অনেক মায়াবী। এনাজ দুই বছর আগে নোভাকে দেখেছিলো।সেদিন আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা থাকলেও চোখ দুটো খোলা ছিলো।সেই চোখের মায়ায় পরে ভালোবেসে ফেলেছিলো।কিছু দিনের মধ্যে পুরো চেহারা দেখে ও তার সমস্ত তথ্য জোগাড় করে ফেলেছিলো।তারপর থেকে প্রায় সময় লুকিয়ে লুকিয়ে সেই চোখ দেখেছে সে।ভাবতেও অবাক লাগে এনাজের কাছে, আজ সে মেয়ে তার হবু বউ।

এনাজঃ আমি তো ওর হবু চোখের দিকে তাকিয়ে সারাজীবন কাটাতে পারবো।এই মায়াবী চোখ দুটো আমায় এতো কাছে টানে কেন?যা দেখে আমি বারবার প্রেমে পরে যাই।যেদিন তোমায় দেখেছিলাম সেদিন মনে মনে শপথ করেছিলাম তোমাকে আমি বিয়ে করে নিজের করে নিবো।সারাদিন তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিবো।(মনে মনে)

আমিঃ ও হ্যালো মিস্টার। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিবেন নাকি?

এনাজঃ হুম এভাবেই সারাদিন কাটাতে চাই। তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে। (আনমনে)

কথাটা বলে আমার দিকে উনি অবাক হয়ে মুখটাকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি তার থেকে দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে বললাম।

আমিঃ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

এনাজঃ আমি মনে মনে যে কথাটা বললাম ও সেটা প্রকাশ্যে কিভাবে বললো?(আনমনে)

আমিঃ আমি আবার প্রকাশ্যে কি বললাম?এই মিয়া আপনার মাথা কি গেছে?

এনাজঃ আমি আবার কি করলাম?

আমিঃ আপনি কি করেন নি তা বলেন।ওয়েটার সেই কখন কফি দিয়ে গেছে। কফি ঠান্ডা হয়ে শরবত হয়ে গেছে। আর আপনার কোন হুশ নেই। হা করে আমাকে গিলছেন।(ধমকের সুরে)

এনাজঃ তুমি খাচ্ছো না কেন?আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছো যে।নিজে না খেয়ে আমাকে ঝাড়ি মারছো।

আমিঃ চেহারার দিকে এরকম হা করে এত থাকলে আমি খাবো কি করে?আমার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে আমি খেতে পারি না।

🍂🍂🍂

এনাজ চোখ নামিয়ে কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। উনার এরকম শান্ত ভঙ্গিতে কফি খাওয়াটা আমার কাছে কোন ঝড় আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেদিনের পর থেকে আমার এনাজকে ভালোই ভয় করে।আমি উনাকে ঝারি দিয়েছি বলে কি উনি আমার সাথে আবার রাগ দেখাবে নাকি।আল্লাহ আমাকে বাচিও।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো।

এনাজঃ নোভা, তোমার কিরকম ছেলে পছন্দ?

আমিঃ হঠাৎ এমন প্রশ্ন? (চোখ দুটো ছোট করে)

এনাজঃ তুমি কি সোজা কথায় উত্তর দিতে পারো না।এতো কথা বলো কেন?

আমিঃ বলছি,এতো ধমক দেন কেন? ১ম আমার ভিলেন টাইপের ছেলে অনেক পছন্দ।তবে সাইকো টাইপের ছেলে নয়। আর ২য় ছেলে হলো বিবাহিত, যার আগের বউ একটা ছোট কিউট বাচ্চা রেখে মারা গেছে। অনেক ইচ্ছা আমার স্বামীর ২য় বউ হওয়ার।আগের বউ অবশ্যই মৃত হতে হবে।আর আমার স্বামীর যাতে আগের ঘরের কোন ছোট ফুটফুটে বাচ্চা থাকে।ছেলে হোক কিংবা মেয়ে। আমার তাতে কিছু আসে যায় না।তবে বাচ্চার বয়স কয়েক মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত হতে হবে।৩ বছরের বেশি বয়স হলে চলবে না।কারণ তিন বছরের বেশি হলে বাচ্চা বুঝে যাবে আমি তার আপন মা নই।কারণ তিন বছরের পর থেকে বাচ্চাদের জ্ঞান হওয়া শুরু করে।ওরা বুঝতে পারে কে আপন কে পর।আর আমি ঐ বাচ্চাটাকে এমন ভাবে লালন-পালন করবো যাতে কেউ বলতে ও বুঝতে না পারে আমি তার সৎ মা।আমি সৎ মা নামক বস্তুটা কখনও তাকে বুঝতে দিতে চাই না।সবাই জেনো বুঝে নেই সব মেয়ে এক নয়।কিছু মেয়ে আছে যারা সতিনের সন্তানকে নিজের সন্তানের চোখে দেখে।কিন্তু আফসোস!!! সবাই তো আমার মতো বুঝে না। আমার এই দুই রকম ছেলে চাই। হয় ভিলেন টাইপের নয় বিবাহিত। যার ২য় বউ হয়ে তার ছোট বাচ্চাকে নিজের সন্তানের মতো আদর-স্নেহে মানুষের মতো মানুষ করবো।পুরো রেডিমেড ফ্যামিলী আর কি😁।

বিঃ দ্রঃ আমারও এই দুরকম ছেলে ভীষণ পছন্দ। উপরের প্যারায় যা বলছি সব আমার মনের কথা।উপরোক্ত মন-মানসিকতা পুরোটাই আমার।জানি না কে কি ভাববেন?তাতে আমার কিছু আসে-যায় না🙃।

এনাজঃ অদ্ভুত পছন্দ তো।আই লাইক ইট।আফসোস তোমার দুই টাইপের পছন্দের মধ্যে আমি একটাতেও নেই। তাই মনে হয় আমাকে বিয়ে করতে চাইছো না।

আমিঃ হুম তবে এখন আর আপনাকে বলে কি হবে?১৫ দিন পর তো আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাবে।আপনিতো চাইলেও আমার পছন্দের ছেলে খুঁজে দিবেন না।আমাকে জোর করে বিয়ে করে নিবেন। (কান্নার অভিনয় করে)

এনাজঃ এই মেয়ে তোমাকে কি বলেছি আমি তোমার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।এত বেশি বোঝো কেন?কম বুঝলে হয় না।(ধমক দিয়ে)

আমিঃ আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না।আমি ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে। আর আপনি ইদানীং আমাকে অনেক ভয় দেখান।আমি কিন্তু কান্না করে দিবো এখন।আপনি একটুও ভালো না। অনেক পঁচা। এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ😭।

এনাজঃ আরে করছো টা কি?কেউ শুনলে কি বলবে?চুপ করো প্লিজ। তুমি কি শুরু করলে?

আমিঃ আপনি আমায় বকলেন।ই-ই ই-ই 😭।

আমি কথাটা বলে হাত-পা ছুঁড়ে মেঝেতে বসে কান্না শুরু করলাম।আসলে অভিনয় করছি।যাতে সে বিরক্ত হয়ে আমাকে বাসায় চলে যেতে বলে।কিন্তু তিনি তা না করে আমাকে আলতো করে গালে হাত রেখে বললো।

এনাজঃ তুমি প্লিজ কান্না করো না।মানুষ খারাপ বলবে।উঠে পরো।তুমি যদি এখন না উঠো তাহলে আমি কোলে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিবো।আর যদি তুমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো উঠে বসো তাহলে তোমাকে আমি অনেকগুলো লিপস্টিক দিবো।

🍂🍂🍂

লিপস্টিকের কথা শুনে আমি চোখ মুখ মুছে ভালো মেয়ের মতো চেয়ারে বসে পরলাম।মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটিয়ে তরিঘরি করে তাকে বললাম।

আমিঃ কই আমার লিপস্টিক দিন?

এনাজঃ কিসের লিপস্টিক? তুমি বাচ্চাদের মতো করে কান্না করছিলে।আর আমি তোমার কান্না থামানোর জন্য বললাম।বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য তো কত কিছু বলি আমরা কত কিছু দিতে চাই ।তাই বলে সবসময় কি সবকিছু আমরা দেই।

এনাজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বলে আরাম করে চেয়ারে বসলো। আমি রাগে লুচির মতো ফুলছি।আমাকে ঢপ দিলো খাটাশটা।আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।কিছু সময় পর এনাজের কোন শব্দ না পেয়ে পেছনে তাকিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলাম।এনাজ এক হাঁটু গেড়ে বিশাল এক বক্স লিপস্টিক নিয়ে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এনাজঃ অনেক দিন ধরে তোমাকে কথাটা বলবো বলবো ভাবছি।জানি না তুমি কথাটা কিভাবে নিবে।তবুও আমি আজ বলবো।কারণ এটা আমার মনের কথা।দুই বছর নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছি।কিন্তু আজ আর লুকিয়ে রাখতে চাই না।#ভালোবাসার_তুই টাকে নিজের করে নিতে চাই।মনের সব কথা জানিয়ে দিবো তোমাকে।ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে নোভা।অনেক পছন্দ করি তোমাকে।তোমার ঐ টানা টানা চোখের মায়ায় আমি বহু আগে পরেছিলাম।যেই মায়া আমাকে মোহ দ্বারা ঘিরে রেখেছে।সবাই তো গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে। কিন্তু আমি তোমার প্রিয় লিপিস্টিক দিয়ে প্রপোজ করলাম।আই লাভ ইউ।আই এম রিয়েলি লাভ ইউ। উইল ইউ মেরি মি??প্লিজ এনসার মি।

আমি হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা মোঃ এনাজ আহমেদ কি মেয়াদ উত্তীর্ণ গাজা সেবন করেছে নাকি।আমাদের দেখা হলো কিছু দিন আগে।আর উনি বলছেন দুই বছর আগে আমাকে দেখেছে।তাছারা যেই লিপিস্টিক নিয়ে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছিলো আজ সেই লিপিস্টিক দিয়ে আমাকে প্রপোজ করছে।পনের দিন পর আমাদের বিয়ে। আমাকে জোর করে বিয়ের জন্য রাজী করে এখন জিজ্ঞেস করছে উইল ইউ মেরি মি? এতো ঢং যে কোন ছেলে করতে পারে তা আমার জানা ছিলো না।

এনাজঃ কি ভাবছো?আমি জানি তুমি ভাবছো তোমাকে জোর করে বিয়ে করতে রাজী করে আমি এখন আবার কেন জিজ্ঞেস করছি কেন উইল ইউ মেরি মি? এম আই রাইট???

আমিঃ 😲😲

এনাজঃ আই এম সরি।তখন হঠাৎ করে খুব রাগ উঠে গিয়েছিলো।আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো।আমি তো তোমার জন্য যোগ্য। কিন্তু তারপরেও তুমি আমাকে মুখের উপর মানা করে দেওয়ায় আমার মাথা খুব গরম হয়ে গিয়েছিলো। তাই এমন করেছি।আই এম সরি ডিয়ার।তাই এখন ভালো করে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি আমাকে তোমার স্বামী হওয়ার সুযোগ দিবে।তুমি যদি লিপস্টিক বক্সটা নেও তাহলে আমি ধরে নিবো তুমি রাজী।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

আমি কোন কথা না বলে আস্তে করে উঠে চলে গেলাম।ইচ্ছে করছে লিপস্টিকের বক্সটা নিয়ে দৌড় দিতে।কিন্তু বক্স নিলে তো ভেবে নিবে আমি তাকে মেনে নিয়েছি।কিন্তু লিপস্টিকের বক্সটাকে ফেলে চলে যেতে বুকটা ফাডি যাচ্ছে। তাকে কিছু দূর গিয়ে আবার দৌড়ে চলে এলাম।এনাজ নিচের দিকে মন খারাপ করে এখনো হাঁটু গেড়ে বসে আছে। আমি চিলের মতো ছোঁ মেরে লিপস্টিকের বক্সটা নিয়ে সেকেন্ডের মাঝে দৌড় দিলাম।

এনাজঃ কি হলো এটা??(অবাক হয়ে)

আমি লিপস্টিকের বক্স নিয়ে দৌড় দিতে গিয়ে একটা চেয়ারের সাথে বেজে ঠাস করে নিচে পরে গেলাম।
এনাজ এগিয়ে এসে একটা টেডি স্মাইল দিলো, আমার মুখের সামনে ঝুকে এক হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।তার মুখ ও আমার মুখের মাঝে বেশ কয়েক ইঞ্চির দূরত্ব।

চলবে।
রিচেইক দেইনি।রিচেইক দিতে অনেক আলসেমি লাগে😐।তাই ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন😌😌।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে