ভালোবাসার তুই পর্ব-০৭

0
2390

#ভালোবাসার_তুই
#Part_07
#Writer_NOVA

আম্মু ও আমার ছোট বোন কিচেনে কাজ করছে। আমি সামনেও যায়নি।আসলে তাদের কাজ কমাতে গেলে উল্টো বাড়িয়ে ফেলবো তাই।সোফার ওপর পা তুলে মোবাইলে মুভি দেখছি।আমার ফেবারিট ভিলেনের মুভি।আমার মুভিতে নায়কের থেকে ভিলেনদের বেশি ভালো লাগে।সবাই নায়ক/নায়িকা দেখে মুভি দেখে, আর আমি ভিলেন দেখে মুভি দেখি।
আমার না ভিলেন টাইপের ছেলে অনেক পছন্দ। আপনাদের বলছি কাউকে বলেন না কিন্তু। কোলিং বেলটা দুই বার বাজলো।কিন্তু আমার উঠতে একটুও মন চাইছে না।আমার মতো এতো অলস ও কুঁড়ে দুটা খুঁজে পাওয়া যাবে না।অবশ্য এটা আমার মায়ের আদর্শ বাণী।আমি জানি মায়ের বাণী সবসময় সঠিক হয়।আরেকবার কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে আমার আম্মু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।

আম্মুঃ ঐ নোভা কানে কি শুনতে পাস না।কখন থেকে কলিং বেল বেজে যাচ্ছে। কানে কি বয়রা বাঁশ ঢুকছে।এতো আলস কেন তুই? জমিদারের বেটি।সবসময় এমন ভাব দেখায় জেনো তাকে বিয়ে করতে রাণী এলিজাবেথের পুত্র আসবে।ঘরের কোন কাজ-কর্ম তো করবেই না।বসে বসে খাবে।সামান্য একটু নড়াচড়া করতেও তোর কষ্ট লাগে।শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করবি আল্লাহ জানে। আল্লাহ আমার এই কুঁড়ে মেয়েটাকে একটু সুমতি দেও।তুই কি এখনো বসে আছিস?জলদী গিয়ে দরজা খুলে দে।মেহমান চলে এসেছে মনে হয়।তারা কি এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে?তোকে যদি এসে আমি সোফায় পাই তাহলে গরম খুন্তির বারি পিঠে পরবে বলে দিলাম।এখনো সময় আছে জলদী করে উঠে দরজা খুলে দে।

আমিঃ আল্লাহ উপর থেকে দড়ি ফালাও আমি উঠে যাই। নয়তো মাটি ফাঁক করো ঢুকে পরি।সামান্য একটা জিনিস নিয়ে তুমি আমাকে পুরো রচনা শুনিয়ে দিলে।আমি বলে সহ্য করলাম।অন্য কেউ হলে করতো না।কালে কালে কতকিছু যে দেখবো?তোমার সাত কপালের ভাগ্য আমার মতো একটা মেয়ে পাইছো।

আম্মুঃ আহারে কি এমন ভাগ্যটা আমার!! তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
ইভাঃ আম্মু তোমার কপালটারে তুমি নিজেই একটা চুমু দেও।বোইনের মতো এমন একটা মেয়ে
পেয়েছো বলে।
আমিঃ ঐ চুপ থাকিস ইভুনি। নয়তো তোর পিঠে দুরুম দারুম কিল বসিয়ে দিবো।
আম্মুঃ তুই এখনো বকরবকর করছিস।দরজা খুলিস নি।যদি আরেকটু দেরী হয় রে তোর সব লিপস্টিক আমি ডাস্টবিনে ফেলবো।
আমিঃ খবরদার বলছি আম্মু। আমার লিপস্টিকের পিছনে লাগবে না।আমার লিপস্টিক তোমার কি ক্ষতি করেছে।সামান্য দরজা খোলা নিয়ে টর্নেডো হয়ে গেলো। এখুনি খুলছি।কিন্তু তুমি আমার লিপস্টিকের কিছু করো না।

সোফায় মোবাইলটা রেখে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো নোভা।মাথাটা এখন হাই হিটে গরম হয়ে আছে। ওর মা ওকে লিপস্টিক নিয়ে কথা শুনিয়েছে।আর ওর মন কি ভালো থাকতে পারে।আনমনে বিরবির করতে করতে দরজা খুললো নোভা।কিন্তু দরজা খুলে যাকে দেখলো তাতে সে অবাক হওয়ার পাশাপাশি রেগেও গেল।

চোখ দুটো ছোট ছোট করে আমি মোঃ এনাজ আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছি। ব্যাটার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি শেষ পর্যন্ত আমাদের বাসায় চলে এসেছে। ছেঁচড়া কোথাকার?নিশ্চয়ই বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পোলাও মাংসের ঘ্রাণ পেয়েছে। তাই কোন ফন্দি আঁটে খেতে চলে এসেছে। আমি বেশ জোরে ধমকের সুরে চেচিয়ে উঠলাম।আমাকে নাকানিচুবানির কথা আমি এখনো ভুলি নি হু হু হু।

আমিঃ আআআআআপপপপপনি!!!! আপনার সাহস তো কম বড় না।আমার পিছু নিয়ে আমার বাসায় চলে এসেছেন।এতো বেহায়া, বেশরম কেন আপনি?ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমারতো আপনাকে দেখে লজ্জা করছে।আপনি কোর্ট-প্যান্ট পরে অন্যের বাসায় ডেং ডেং করে নাচতে নাচতে চলে এসেছেন।সাথে আবার কোন ফকির নিয়ে এসেছেন।নিজেদের বাসায় কি কিছু নেই নাকি?দুজন মিলে অন্যের বাসায় খেতে চলে এসেছেন।কিছু আনছেন আমাদের জন্য নাকি খালি হাতে লুঙ্গি ডান্স দিতে দিতে এসে পরছেন।

আমার কথায় এনাজের মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখতে পারলাম না।আমাকে পাশ কাটিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ভেতরে ঢুকে পরলো।আর সাথে থাকা ছেলেটা মুখটাকে বাংলা পাঁচের মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় এনাজের ভাই হবে।চেহারা অনেকটা এনাজের সাথে মিলে।আমি দরজার থেকে দৌড়ে এনাজের সামনে দুই হাত কোমড়ে গুঁজে দাঁড়ালাম।

আমিঃ আপনি ভেতরে ঢুকলেন কেন?অচেনা মানুষ আমাদের বাড়িতে এলাউ নয়।এখনি বেরিয়ে যান।নয়তো আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো।

এনাম গুটিগুটি পায়ে ওর ভাইয়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো।
এনামঃ ভাইয়া কে এই মেয়েটা?তুমি চিনো নাকি?তোমাকে কত কথা শুনিয়ে দিলো।
এনাজঃ আরে মেয়েটা পাগল। মাথায় সমস্যা আছে।যাকে না তাকেই এসব কথা বলে।মাথার কয়েকটা স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে। ওর কথা তুই কিছু মনে করিস না। পাগলের সুখ মনে মনে, কাগজ কুড়াইয়া টাকা গুণে।চুপচাপ থাক।নয়তো বা তোর মাথা খেয়ে ফেলবে।
(নিচু স্বরে)

আমিঃ এই আপনি উনাকে কি বললেন?আপনি নিশ্চয়ই আমার নামে উল্টো পাল্টা কিছু বলেছেন।আপনাকে আমি হারে হারে চিনি।ব্যাটা বজ্জাত, ধলা ইন্দুর একটা।

এনাজ এবারও আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আরাম করে পায়ের ওপর পা তুলে সোফায় বসে পরলো।এমন একটা ভাব করছে আমাকে চিনেই না।জীবনে দেখেওনি।সাথে তার ভাই ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পরলো।আমি ভেতরে ভেতরে বেশ মজা পাচ্ছি। কেউ আমাকে ভয় পেলে নিজেকে অনেক বড় বড় মনে হয়😎।মিটমিট করে হাসছি আমি।

নোভাকে এভাবে হাসতে দেখে এনাজ মনে মনে নতুন দাবার গুটি চালছে।

এনাজঃ বেশি করে হাসো।এখনো আমার আরেক রূপটাকে তো দেখো নি হবু বউ। একবার তুমি বিয়ে করতে মানা করে দেও তারপর আমার আরেক রূপ দেখবে।এখন যত পারো উড়তে থাকো।আর কয়েকটা দিন পর আমি তোমাকে আমার নিজের কাছে নিয়ে আসবো।তখন সবকিছু ছকের মাঝে থাকবে।যাস্ট ওয়েট মাই কুইন।(মনে মনে টেডি স্মাইল দিয়ে)

আমিঃ এই এভাবে হাসছেন কেন?
আম্মুঃ নোভা, কার সাথে এমন তর্ক করছিস?
আমিঃ আম্মু দেখে যাও।কোথা থেকে এরকম আবর্জনা চলে এসে।

আম্মু আঁচলে হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বের হয়ে এলো।এনাজকে দেখে ভীষণ খুশি। এনাজ আম্মুকে দেখে সুন্দর করে একটা সালাম দিলো।
এনাজঃ আসালামু আলাইকুম আন্টি।
আম্মুঃ অলাইকুম আস সালাম। আরে এনাজ বাবা কেমন আছো?
এনাজঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
আম্মুঃ আমিও ভালো আছি।এটা কি তোমার ছোট ভাই?
এনাজঃ জ্বি আন্টি।আমার ছোট ভাই মোঃ এনাম আহমেদ।
এনাজ ওর ছোট ভাই এনামের দিকে তাকিয়ে চোখ লাল করে কিছু একটা ইশারা করলো।এনাম ভয় পেয়ে জলদী করে আম্মুকে সালাম দিলো ও কুশল জিজ্ঞাসা করলো।

আম্মুঃ নোভা যা তো জলদী করে শরবত করে নিয়ে আয়।এই ছেমরি এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আমি মুখ ঝামটা মেরে কিচেনে চলে গেলাম।আসার সময় দেখলাম এনাজের মুখে শয়তানি হাসি।টুপ করে একটা চোখ মেরে দিলো।আমি রাগে বিরবির করতে করতে কিচেনে চলে এলাম।দাঁড়াও ব্যাটা আমাকে চোখ মারা। এখন যদি ঐ চোখ থেকে আমি পানি ঝরাতে না পারি তাহলে আমি নিজেকে বড় ভাবতে পারবো না।হলুদ,মরিচের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে স্পেশাল শরবত করলাম।রং টা আরো গাঢ় করার জন্য কতগুলো জর্দা রং গুলে দিলাম।একটা গ্লাস ভালো করে চিনি, লেবু ও ট্যাং দিয়ে গুলে নিলাম।মিটমিট করে হেসে সোফার সামনের টি-টেবিলে ট্রে রেখে এনাজের হাতে শরবত তুলে দিলাম।

আমিঃ এনাজ মহাশয় আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?এই রে বুঝে গেলো না তো।

মানে মানে সেখান থেকে কেটে পরলাম।রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বসে আছি।কিছু সময় পর কারো শব্দ পেয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে হালকা করে উঁকি দিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ। এনাম ওর ভাইয়ের ঝাল দেওয়া শরবত খেয়ে ফেলেছে।বেচারার অবস্থা নাজেহাল। ফর্সা মুখটা টুকটুকে লাল হয়ে গেছে।ইস্ এনাজের ছোট ভাইটা ভুলে আমার স্পেশাল শরবত খেয়ে নিয়েছে।আমি মোটেও ঐ এনাম নামক ছোট বাচ্চাটাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি ভয়ে রুমে এসে দরজা আটকে বসে রইলাম।এখন বের হলে আম্মুর ঝাড়ুর দৌড়ানি খেতে পারি।দুপুরে খাবার খেতেও বের হলাম না।আমি যখন জানলাম আমাদের বাসায় আব্বু দুই ভাইকে দাওয়াত করেছে তাতে আমার একটু সন্দেহ হলো।কিছু সময় পর আমার সন্দেহ সঠিক হলো।ইভা এসে গোপন তথ্য সূত্রে জানালো এনাজ আমাকে দেখতে এসেছে। এই খবরটা শুনে আমি ঠিক কতটা রেগে গেছি তা বলার মতো নয়।

আধা ঘন্টা পর আব্বু ডাকলো আমায়।গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বের হলাম।ঠিক তখনি কানে বেশ জোরে টান অনুভব করলাম।পাশে তাকিয়ে আম্মুকে আবিষ্কার করলাম।আমি সামনের দাঁতগুলো দেখিয়ে আম্মুকে ইমপ্রেস করার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।

আম্মুঃ শরবতে কি মিশিয়েছিলি?
আমিঃ আআআআমমমি কককিছু করি নি।
আম্মুঃ আবারো মিথ্যে কথা বলছিস।
আমিঃ আমি বেশি কিছু না হলুদ, মরিচ আর লবণ জর্দা রং মিশিয়েছি😁।
আব্বুঃ নোভা কোথায় রে তুই?
আমিঃ আম্মু, আব্বু ডাকছে। কানটা ছারো।
আম্মুঃ এখন বেঁচে গেলি। পরে ঠিক ধরবো।

আম্মু রাগ করে সামনের থেকে চলে গেলো।আমি ধীর পায়ে আব্বুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আব্বু আমাকে এনাজের সাথে পার্সোনালি কথা বলার জন্য আমার রুমে পাঠালো।আমি আগে আগে চলে এলাম আমি দরজার আড়ালে কিচেন থেকে ময়লার ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।এনাজ ঢুকতেই আমি ওর ওপর ময়লা ঢেলে দিলাম।কিন্তু এবারও বিধি বাম!! এনাজ ভেবে আমি ইভার গায়ে ময়লা ফেলে দিয়েছি। ইভা তার জন্য আমাকে সারা বাড়ি একবার চক্কর দেওয়ালো। হয়রান হয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই দেখলাম এনাজ আমার খাটে আরাম করে বসে আছে।

আমিঃ আপনি এখানে কি করছেন?
এনাজঃ আঙ্কেল কেন আমাকে তোমার এখানে আসতে বলেছে সেটা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়।
আমিঃ দেখুন মোঃ এনাজ আহমেদ। আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আপনাকে আমার একটুও পছন্দ নয়।আপনি আব্বুকে মানা করে দিবেন।
এনাজঃ কিছু দিনের মধ্যে তুমি আমাকে বিয়ে করবে।ভালো করে বলছি রাজী হয়ে যাও।নয়তো আমি আঙুল বাঁকা করতে বাধ্য হবো।

হাত মুঠ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সে। মুখের রংটাও বিবর্ণ হচ্ছে। আমি উল্টো দিকে ঘুরে এক নিশ্বাসে বললাম।

আমিঃ আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি আপনাকে সহ্য করতে পারি না।

হঠাৎ কাচ ভাঙার শব্দ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম।এনাজের চোখ মুখ রাগে লাল বর্ণ ধারণ করছে।আমার সাধের ডেসিং টেবিলের আয়নার বারোটা বেজে গেছে। রাগে এনাজের কপালের রগ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল ও সাপের মতো ফোঁসানোর আওয়াজ পাচ্ছি। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছি।এ আমি কিরকম রূপ দেখছি এনাজের!! আমার তো ভয়ে অলরেডি হাত-পা কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিয়েছে।শুধু মাত্র বিয়েতে রাজী হয়নি বলে এমন হিংস্র রূপ।বাবা গো বাবা🥶🥶!!

#চলবে

রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর
দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে