#ভালোবাসার_তুই
#Part_06
#Writer_NOVA
বাসার ভেতর গুণগুণ করে গান গাচ্ছিলাম আর রুম গুচ্ছাছিলাম।আজ নাকি বাসায় কে আসবে?কে আসবে কে জানে?আম্মু, আব্বুকে জিজ্ঞেস করছিলাম কে আসবে?তাদের এক উত্তর আসলেই দেখতে পারবে।আমি খুঁজে পাচ্ছি না আসবেটা কে??আম্মু সুন্দর করে রেডি হতে বলছে।মনে একটু খোটকা লাগছে।বাসার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আমায় কেউ দেখতে আসবে।কিন্তু সিউর হতে পারছি না বলে চেচামেচিও করতে পারছি না।আন্দাজে চেচামেচি করে কি মায়ের হাতে ঝাড়ুর দৌড়ানি খাবো নাকি।হালকা মেরুন রঙের একটা থ্রি পিস পরে বের হয়ে এলাম।ডেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি আর বিরবির করছি।
আমিঃ সবাইকে মাথার মাঝখানে সিঁথি করলে দেখা যায় চিকনি ক্যাটরিনা।আর আমাকে লাগে কামের বেডি জরিনা।নাহ চুল ছারবো না।মাথায় হিজাব পরবো। যদি আজ আমায় কেউ দেখতে আসে তাহলে তার খবর আছে। আমার ছোট বোনটা কোথায়?এই বাসার বার্তাবাহক তো আমার ছোট বোন। ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো আমার উত্তর পেয়ে যাই। কিন্তু ইভাতো আম্মুর সাথে কিচেনে কাজ করছে। ধূর,ভালো লাগে না।ইভাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করি দেখি ঘটনা কি?পানি কোন দিকে গড়িয়েছে?
বেশ কিছু সময় হাতের নখ কামড়িয়ে সারা রুম পায়চারি করছি।মাথায় কিছু ঢুকছে না।মাথার মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।কাজের সময় মাথাটা হ্যাং হয়ে যায়। গলা ফাটিয়ে ইভাকে বেশ কয়েক বার ডাক দিলাম।
আমিঃ ইভা, ইভা একটু এদিকে আয় তো।
ইভাঃ কেন কি হয়েছে? আমি তোমার কোন লিপস্টিক ধরিনি।তুমি তোমার লিপস্টিক যেখানে রাখছো সেখানেই আছে।
আমিঃ এই মেয়েটা,দুই লাইন বেশি না বুঝলে হয় না।ওকে কি আমি লিপস্টিকের কথা জিজ্ঞেস করেছি।মাঝে মাঝে মনে হয় তুলে আছাড় মারি।
(বিরবির করে)
ইভাঃ বোইনে কেন ডাকো?
আমিঃ তুই এদিকে এসে শুনে যা।কিচেনের থেকে শুধু শুধু গলা ফাটাইস না।
৫ মিনিট পর ইভা এসে হাজির।এসেই আমাকে একটা মুখ ঝামটা দিলো।যার মানে আমি বুঝলাম না।
ইভাঃ কি হয়েছে বল?
আমিঃ এদিকে এসে চুপ করে বস।তোর সাথে আমার কথা আছে।
ইভাঃ যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।আমার কাজ আছে।
আমিঃ ওরে আমার কামিনীরে।কাজ করে উল্টায় ফেলে দিচ্ছো সব।
ইভাঃ তোমার ঝগড়া করতে মন চাইলে পাশের বাসার ঝগড়ুটে মহিলার সাথে যোগ দেও।আমায় ডিস্টার্ব করো না।
আমিঃ তোর সাথে ফালতু পেচাল পারার সময় নেই আমার।সরাসরি সোজা পয়েন্টে চলে আসি।আজ বাড়িতে কে আসবে রে?
ইভাঃ যে আসার সে আসবে।তোমার কি?আমি তোমাকে বলবো না। (ভাব দেখিয়ে)
আমিঃ একদম ভাব নিবি না।ভাব নিলে আমার ফোন ধরা বন্ধ করে দিবো।
ইভাঃ পারোই তো এই ভয় দেখাতে।যাও যাও ভাগো এখান থেকে।তোমার ফোন না ধরলে আমার কিছু আসবে,যাবে না।
আমিঃ মনে রাখিস কথাটা।
ইভাঃ ধূর কি যে বলো না।আমি কি কিছু বলছি।তুমি আমায় ফোন ধরতে দিও। আমি তোমায় বলছি কে আসবে।
আমিঃ ব্লাকমেল আমি ভালোই করতে পারি।তাই আমার সাথে কোন ঝামেলা করো না।জলদী করে বলে দেও তো ছোট বাবু।
ইভাঃ আব্বুর অফিসে একসাথে কাজ করে সে আসবে।
আমিঃ ওহ্ আচ্ছা। আমি ভাবলাম কি না কি।তাহলে নিশ্চয়ই আঙ্কেলরা আসবে।তুই এখন যেতে পারিস।
ইভা কিচেনের দিকে চলে গেল।আমি নিশ্চিন্ত হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুক চালাতে লাগলাম।
🍂🍂🍂
এনাজ ওয়াস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ওর ভাইয়ের বেরুবার নামও নেই। এনাজ পুরো রেডি হয়ে ভাইয়ের অপেক্ষা করছে। আজ এনাজ মেয়ে দেখতে যাবে।কিন্তু মনে হচ্ছে এনাজ নয় এনাম যাবে নিজের জন্য পাত্রী দেখতে।এনাজ বাইরে থেকে চেচিয়ে ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললো।
এনাজঃ এনাম, আমার মনে হচ্ছে আজ তুই মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস।একটু কম সেজে যাস।নয়তো মেয়ে আমাকে পছন্দ না করে তোকে করে ফেলবে।তখন তো আবার আরেক বিপদ।
এনামঃ তোমার বউ তোমারি থাকবে।আমি নজর দিবো না।বড় ভাবী মায়ের সমান।তোওবা,তোওবা ভাইয়া কি বলো এসব।
ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে একদমে সব কথা বললো এনাম।মুখে তার বিশ্ব জয় করা হাসি।অবশেষে সে তার বড় ভাইকে বিয়ের জন্য মেয়ে দেঝতে রাজী করাতে পেরেছে।তবে এনাম তো জানে না এনাজের পছন্দের মেয়েকেই আজ তারা দেখতে যাচ্ছে।
এনাজ যে কোম্পানিতে চাকরী করে নোভার বাবাও সেই কোম্পানিতে একসাথে কাজ করে।নোভার বাবার এনাজকে ভীষণ পছন্দ করে। মনে মনে তার বড় মেয়ের জন্য এমন একটা ছেলেই খুজতো।এনাজ যেদিন থেকে জেনেছে নোভার বাবা ওর কোম্পানিতে কাজ করে সেদিন থেকে নিজের ব্যাপারে আরো সচেতন হয়ে গেছে। জিসানকে দিয়ে কিছু দিন আগে নোভার বাবার কাছে এনাজ বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো।এতে জেনো উনি হাতে চাঁদ পেলেন।উনিও কিছু দিন ধরে এনাজকে কথাটা বলবে করে ভাবছিলো।এনাজের প্রস্তাব তাই সে মানা করেনি।
এনাজঃ তুই এখানে থাক। আমি বাইক বের করছি।
এনামঃ আচ্ছা যাও।তবে তাড়াতাড়ি।
এনাজ বের হয়ে গেলো।টেবিল থেকে ঘড়ি নিয়ে পরতে লাগলো।হঠাৎ চোখ গেলো টেবিলে থাকা নীল মলাটের এক মোটা ডায়রীর দিকে।চোখ, মুখে বিস্ময় নিয়ে এনাম ডায়েরীটা হাতে নিলো।
এনাজঃ এটা কি ভাইয়ার ডায়েরী?এখানে কি করছে?আমি তো আগে কখনও দেখিনি।ভাইয়ার পার্সোনাল ডায়েরি হবে।আমি কি খুলে দেখবো ভেতরে কি আছে?অন্যর অনুমতি ছারা পার্সোনাল কিছু ধরা ঠিক নয়।তারপরেও তো মনটা আনচান করছে।কি আছে এই ডায়েরিতে।আমি তো জানি প্রায় রাতে ভাইয়া ডায়েরি লিখে। সেটা কি এই ডায়েরিটা।কি আছে এর মাঝে?আসলে নিষিদ্ধ জিনিসের ওপর আমাদের কৌতুহলটা বেশি থাকে। যেটা মোটেও ঠিক নয়।
মানুষ কৌতুহল প্রেমি।যেটা আমাদের ধরতে মানা করা হবে সেটার দিকে কৌতুহল বেশি থাকবে।সেটা যদি হয় কারো পার্সোনাল বিষয়। তাহলে তো আরো বেশি জেঁকে বসবো।কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারে এমন মানুষ খুব কম আছে। হাজারো দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে এনাম ডায়েরিটার দিকে তাকিয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত মনের সাথে যুদ্ধ করে ডায়েরিটা খুললো।১ম পেইজে বড় বড় অক্ষরের লেখাগুলো দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল এনাম।১ম পেইজে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লেখা ছিলো (“”NOVANAJ””)নিচে বাংলায় লেখা (“”নোভানাজ””)।যেটার অর্থ বুঝতে এনামের কিছু সময় লাগলো।
এনামঃ ভাইয়ার নাম ANAJ তাহলে প্রথম নামটা কি?
কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে পুরো নামটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো এনাম।কারণ সাথের নামটাও সে পেয়ে গেছে। একজনের নামের শেষ অক্ষর দিয়ে তার ভাইয়ের নাম শুরু হয়েছে।তাই তার ভাই মাঝের A দিয়ে দুটো নামের সাথে কানেকশন জুড়ে রেখেছে।
এনামঃ বাহ্ বাহ্।ভাইয়ার বুদ্ধির তারিফ করতে হয় তো।নিজের নামের সাথে তার নামটাও কিভাবে বুদ্ধি করে জুরে রেঝেছে।একজনের নামের শেষ তো আরেকজনের শুরু। কিন্তু এই নোভাটা কে?ভাইয়া তাহলে এই মেয়েটাকে ভালোবাসে। ভালো না বাসলে তো নিজের নামের সাথে জুরে দিতো না।ওরে বাপরে!ভাইয়া কাউকে ভালবাসে আর আমি জানি না।ভাইয়া দেখছি তলে তলে টেম্পু না চালিয়ে বাস চালানো শুরু করে দিয়েছে। এই জন্য বিয়ে করতে রাজী হচ্ছিল না।
পরের পেইজ উল্টিয়ে দেখিতো কিছু আছে কিনা।
পরের পেইজ উল্টানোর আগেই কেউ ছোঁ মেরে হাতের থেকে ডায়েরিটা নিয়ে গেল।এনাম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে এনাজ চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এনাম এর বিনিময়ে শুধু একটা ৩২ পাটি দাঁত বের করে বেক্কল মার্কা হাসি উপহার দিলো।
#চলবে