বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__১
ফ্লোড়ে ছিপছিপে রক্তের দাগ। ব্যাথায় কোমড়ে হাত দিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। রক্তের দাগ গুলো স্পষ্ট দেখা যাওয়ায় ওড়নাটা খুলে কোমড়ে বেধে নিয়েছে সে। একটা ছাউনির নিচে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো, আর তখনি এমনটা শুরু হয়েছে বৃষ্টির। প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছে। দুরে বসে থাকা কয়েকজন ছেলে বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে তার দিকে। একে অপরকে কি বলছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছেনা বৃষ্টি। প্রচুর ভয়ও করছে তার। ওড়নাটা কোমরে বেধে রাখায় চুলগুলো সামনে এনে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে সে। এবার ছেলেগুলোও এসে তার পাশে দাড়ালো। একজনের হাতে সিগারেট আর বাকি দু,জনের মুখে বাকা হাসি।
– আপু মনে হয় বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন তাইনা? আমাদের গাড়ি আছে চলুন আমরাই দিয়ে আসবো আপনাকে।
কথাটা বলেই মুখে থাকা সিগারেট টা ছুরে ফেলে ছেলেটি। খিক খিক করে হেসে উঠলো পাশের ছেলে দুটি।
কোনো উত্তর না দিয়ে ভয়ার্ত চেহারায় ওখান থেকে হাটা ধরলো বৃষ্টি। পেছন থেকে ছেলেটা হাতটা চেপে ধরলেই এক ঝাটকায় হাতটা ছারিয়ে দ্রুত পায়ে হাটা ধরে সে। বৃষ্টি পেছনে তাকাতেই দেখে ছেলেগুলোও তার পিছু নিয়েছে। এবার ভয় যেনো পুরুপুরি ভাবে গ্রাস করে নিয়েছে তাকে। আশেপাশেও কাওকে চোখে পরছেনা যে হেল্প চাইবে। ধিরে ধিরে দৌড়াতে শুরু করে সে।
দৌড়াতে দৌড়াতে হটাৎ রাস্তার বাম পাশ থেকে একটা গাড়ি এসে ব্রেক চাপে তার সামনে। তবুও তাল সামলাতে না পেরে গাড়িটার সাথে হালকা ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পরে যায় বৃষ্টি।
ডান হাতটা কিছুটা ছিলে গিয়েছে তার। মাথায়ও হালকা লেগেছে। হাত থেকেও রক্ত বের হয়ে আসছে কিছুটা।
গাড়ি থেকে নেমে আসে একটা ছেলে। ফর্সা গায়ের রং, জামার হাতা গুলো কুনুই পর্যন্ত পোল্ড করা। গালে হলকা খোচা খোচা কালো রংয়ের দাড়ি। ফর্সা মুখে কালো রঙের দাড়িগুলোও যেনো ভালোভাবেই ম্যাচিং করে নিয়েছে। বৃষ্টিকে কিছু বলতে চেয়েও তেড়ে আসা ছেলেগুলো দেখে কিছু বললোনা সে।
বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো ছেলেটা। আরেক হাত পকেটে গুজা। মোটামুটি এটিটিউট বিধ্যমান। ছেলেটার হাত ধরে উঠে দাড়িয়ে ভয়ার্ত চেহারায় ছেলেটার পেছনে গিয়ে দাড়ালো বৃষ্টি।
তেড়ে আসা ছেলেগুলো বৃষ্টির কাছে আসতেই রাতকে দেখে থমকে গেলো তারা।
– র. রাত ভাই আপনি?
পকেট থেকে হাতটা বের করে রাত সজোরে একটা চর বসিয়ে দেয় ছেলেটার গালে। রাত ছেলেটার কলার চেপে ধরে, বৃষ্টিকে বলে উঠে,
– সামনে আসো।
বাধ্য মেয়ের মতো সামনে এসে দাড়ালো বৃষ্টি। রাত ছেলেটাকে বলে উঠে,
– মা ডাক তাকে।
– ভাইয়া ও তো আমার বয়সে ছোট হয়ে আ…..
তার আগেই আরেকটা চর পরে ছেলেটার গালে।
– মা ডাক। (হুঙ্কার দিয়ে)
ছেলেটা গালে হাত দিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে।
– মা।
– আবার ডাক,,,
– মা।
– আবার ডাক,,,
– মা।
রাত ছেলেটার কলার ধরা অবস্থায় আরেক হাতে চুল ঠিক করে দিতে দিতে বলে উঠে,
– মেয়েরা হলো মায়ের জাত। মা কে যেমন সম্মান দিস, তেমনই সম্মান করতে শিখ পুরু মেয়ে জাতিকে। আর মেয়েদের দুর্বলতার সুজুগ নেওয়াটা কোনো সু-পুরুষের কাজ হতে পারেনা।
– সরি ভাইয়া।
– এই রাস্তা ধরে সোজা এক দৌর দিয়ে চলে যাবি, পেছন ফিরবিনা একধম।
ছারা পেয়েই দৌড়ে চলে যায় ছেলেটি। রাত ঘুরে দাড়ায় বৃষ্টির দিকে।
– এভাবে রাস্তায় একা চলাচল না করলে কি হয়না? তাও আবার এমন অবস্থায়? যদি কিছু হয়ে যেতো আজ?
ভয়ে চুপ করে আছে বৃষ্টি। কিছু নোটস আনতে গিয়েছিলো বান্ধবির বাসায়। ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধা হয়ে গেলো। আর ফিরতি পথেই এমনটা হতে হলো তার সাথে। মাথায় চোট পাওয়ায় ধিরে ধিরে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তার।
চোখ খুলে তাকাতেই নিজেকে একটা হসপিটালে আবিস্কার করলো বৃষ্টি। বুঝতে পারছেনা এখানে এলো কি করে? হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে, ছিলে যাওয়া জায়গায় বেন্ডেজ করা। পাশে তাকাতেই সেই রাত নামের ছেলেটাকে দেখতে পায় সে। ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে।
বৃষ্টিকে বাড়ি পৌছ দিচ্ছে রাত। পিট পিট করে লুকুচুরি দৃষ্টিতে রাতের দিকে বার বার তাকাচ্ছে বৃষ্টি। স্নিদ্ধ চুল, মায়াবি চোখ, গালে খোচা খোচা কালো দাড়ি। সাদা জামার হাতা গুলো কুনুই পর্যন্ত পোল্ড করা। ফর্সা হাতে কালো রঙের একটা ব্রন্ডের এ্যাপেল ওয়াচ। সব মিলিয়ে যেনো পুরুই একটা ক্রাশ বয়। এতোক্ষন ভালো করে খেয়াল না করলেও এবার বৃষ্টির দৃষ্টি আটকে আছে রাতের দিকে। বিষয়টা লক্ষ করে রাত বলে উঠে,
– কোন দিকে?
রাতের কথায় ধ্যান ভাঙলো বৃষ্টির। মাথা নিচু করে উত্তর দিলো,
– একটু সামনে গিয়ে বামে।
বাসার সামনে গিয়ে রাত একবার বৃষ্টির দিকে তাকাচ্ছে আবার বাড়ির দিকে তাকাচ্ছে। বৃষ্টি গাড়ি থেকে নেমে রাতকে একটা থ্যাংস দিয়ে হাটা ধরলো বাড়ির দিকে। পেছন থেকে রাত ডেকে উঠে,
– এই যে শুনুন।
পেছন ফিরে তাকায় বৃষ্টি,
– এটা কি আপনাদের বাসা?
– হ্যা, কেনো?
– তুমি কি বর্ষার ছোট বোন বৃষ্টি?
– হ্যা, কিন্তু আপনি আপুকে চিনেন কিভাবে?
একটা হাসি দিয়ে গাড়ি নিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো রাত। বৃষ্টি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের চলে যাওয়ার দিকে। হিসেব মিলাতে পারছেনা সে। হটাৎ তুমি করে বললো, আবার আপুর কথা জিঙ্গেস করলো। আর লোকটা আমাকে আর আপুকেই বা চিনে কি করে? আর চিনেতো পরিচয় না দিয়ে হুট করে কেনো চলে গেলো? আজব!
কিছুটা দুরে গিয়েই বর্ষাকে ফোন দিলো রাত। দু,বার বাজতেই রিসিভ করলো বর্ষা। ফোন কানে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো সে। হাতে কফির মগ। কফিতে চমুক দিয়ে বলে উঠে,
– হ্যালো,,,,
– কেমন আছো?
– ভালো।
– সারাদিন তো একবার ফোনও দিলেনা।
– একটু ব্যাস্ত ছিলাম তাই। তো কি করছো, খেয়েছো ঠিক মতো?
– হুম,,,
– দেশে ফিরছো কবে?
একটা হাসি দেয় রাত,
– একটু নিচে আসতে পারবে?
– কেনো?
– আগে আসোনা, সারপ্রাইজ আছে।
– পারবোনা, কি সারপ্রাইজ আগে বলো। তাছারা আমি এই অসময় নিচে যেতে পারবোনা।
– আমি এখন তোমার বাসার সামনে।
কথাটা শুনতেই বিষম খেলো বর্ষা। নিচে তাকাতেই দেখে একটা কালো গাড়ি দাড়িয়ে আছে। আর তার পাশে দাড়িয়ে আছে রাত। হাত পা যেনো মুহুর্তেই অবস হয়ে আসছে বর্ষার।
নিরবতা ভেঙে রাত বলে উঠে,
– কি হলো? মনে হচ্ছে আমাকে দেখেই তুমি আতঙ্কিত হয়ে আছো?
আর কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা বর্ষা। ফোনটা কেটে এক দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো সে।
ভিতরে গিয়েই তিহানকে ফোন দিলো বৃষ্টি।
– হ্যালো তিহান।
– হুম।
– সর্বনাস হয়ে গেছে।
– কেনো কি হয়েছে?
– রাত ফিরে এসেছে দেশে।
– রিলেক্স, মাই ডিয়ার।
ওদিকে রাত বর্ষার নাম্বারে ফোন দিয়ে দেখে নাম্বার বিজি। রাতের ধারনা হয়তো বর্ষাকে না বলে এভাবে চলে আসায় রাগ করেছে সে। ছয় বছরের সম্পর্ক তাদের। পারিবারিক ভাবে সব ঠিকঠাকও হয়ে আছে তাদের। রাত পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরলেই তাদের বিয়ের ব্যাপারে আগাবে পরিবারের লোকজন। কিন্তু এর ফাকে বর্ষা অন্য একজনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে। তার মনে হচ্ছে তিহানই রাতের থেকে ব্যাটার। বিদেশে স্যাটেল সে। তার দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্নটা তিহানই পুরণ করতে পারবে। রাতকেও তিহানের ব্যাপারে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবেনা। হয়তো সব উলোট পালট করে ফেলবে রাত। আর ওদিকে বিয়ের জন্য আগাবে পরিবার। এখন যা করার সব ঠান্ডা মথায়ই করতে হবে।
রাতকে এক মেসেজ পাঠায় বর্ষা।
“এখন আসতে পারবোনা রাত। কাল দেখা করবো তোমার সাথে। আর হ্যা, তুমি আসার আগে আমায় একটিবার জানালেও পারতে।””
বর্ষার এমন আচরণে অবাক হলো রাত। যেই বর্ষা আগে মধ্য রাতে তাকে ফোন করে নিয়ে আসতো তাকে বাসার সামনে। আর আজ সেই বর্ষাই তাকে এ্যাবোএট করছে? নাকি এটা তার অভিমান? সাত পাঁচ ভেবে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো রাত।
ওদিকে কিছুক্ষন ওখানে দাড়িয়ে থেকে ঘরের দিকে হাটা ধরলো বৃষ্টি। তার এতোক্ষনে মনে হলো, আপুর সাথে রাত নামের একটা ছেলের সম্পর্ক আছে। কিন্তু তাকে কখনো দেখেনি বৃষ্টি। তাহলে এই সেই রাত। ছি ছি শালিকা হয়ে হবু দুলাভাইর উপরই ক্রাশ খাওয়া। কি লজ্জা।
ঘরে প্রবেশ করতেই কোমর থেকে ওড়নাটা খুলে নিলো বৃষ্টি। পাজামাতে রক্তের দাগ গুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দাগ গুলো। দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো সে। তখনই পেছন থেকে ডাক দিলো তার মা।
To be continue……..