#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__১১
প্রচন্ড বর্ষনের মাঝে হসপিটালে নিয়ে গেলো বৃষ্টিকে। রাত তখন ১১ টা পার হয়ে গেছে। বাইরে সকলের কথা শুনা যাচ্ছে। রাত প্রায় পাগল পাড়া বৃষ্টির পাশে থাকার জন্য। অনেক জোরাজুরিতে বৃষ্টির সাথে থাকার অনুমতি দিলো রাতকে।
পাশে ডাক্তার। সাথে প্রয়োজনিয় যন্ত্রপাতি। বৃষ্টির হাত শক্ত করে ধরে আছে রাত।
সবাই এখন ব্যস্ত বাচ্চার জন্য। দাতে দাত চেপে নিচের ঠোঁট টা কামড়ে ধরে বৃষ্টি। মনে হচ্ছে আজ এই কষ্ট মৃত্যুর চাইতেও ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করেছে। বৃষ্টি সাহস দিতে চাইলেও মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা রাতের। কারণ তার নিজের শরিরও থরথর করে কাপছে। আজ মৃত্যু নিয়ে কোনো ভয় নেই বৃষ্টির। মৃত্যুর জন্ত্রনা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারছে সে। তার একটাই চাওয়া, তার সন্তান টা যেনো সুস্থ থাকে।
ডাক্তারদের মুখে হাসির আভাস। রাতের শরির এখনো কাপছে তবে এখন আগের চাইতে কিছুটা কম। নিচু হয়ে বৃষ্টির কপালে একটা চুমু দিলো রাত। বৃষ্টির শত কষ্টও যেনো এই মুহুর্তে সার্থকতায় রুপ নিলো।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার রা হসি মুখে রাতের কোলে তুলে দিলো এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। রাতের হাস্যজ্জল চেহারায় দু,গাল বেয়ে ঘেমে পড়লো নোনা জল। আজ এই গড়িয়ে পড়া জল দুঃখের নয় সুখের জল এটা।
রুদ্র চৌধুরির কোলে তর বংশের প্রথম নাতি। আজ খুশিতে আত্মহারা সে। নাতির ডান কানে আজান বাম কানে একামত দিলো সে। আজ খুশিতে আত্মহারা সবাই।
,
,
,
বাড়িতে একটা দোলনা প্রোজনিয় সব বিষেশ করে শত রকমের খেলনার জিনিস দিয়ে একটি রুম পরিপূর্ণ করে ফেললেন রুদ্র চৌধুরি।
বড় করে অনুষ্ঠান করে নাতিন নাম রাখলো, আহমেদ শ্রাবন চৌধুরি।
সারাক্ষন নাতিকে নিয়েই কাটিয়ে দেয় তারা। রাত্রি চৌধুরি কোলে নিয়ে হাটছে শ্রাবনকে। রুদ্র চৌধুরি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে উঠে,
– এই বুড়ো বয়সে দুজন মিলে যুক্তি করে আমায় আবার ধোকা দিওনা শ্রাবন দাদু। ভুলেও যেনো আমার ওনির দিকে চোখ না জায়। রাত্রি চৌধুরির কোলে হাত পা নাড়িয়ে চার দিকে পিট পিট করে তাকাচ্ছে শ্রাবন।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো এক মাস। বৃষ্টির বাবা মাও এসেছে কয়েক বার। কিন্তু বর্ষা আসেনি। আসবেই বা কোন চোখে। সে তো সেদিনের কাহিনির জন্য রাত ও বৃষ্টির কাছে একটিবার ক্ষমা চাওয়ার জন্যও আসার সাহস পাচ্ছেনা।
রাত অফিস থেকে ফিরে দেখে শ্রাবনকে নিয়ে বিছানায় বসে আছে বৃষ্টি। মুখে তার হাঁসির ঝলক। রাত ফ্রেশ হয়ে টাওয়া দিয়ে চুল নাড়তে নাড়তে বের হয়। দেখে শ্রাবনকে কোলে নিয়ে হাটছে বৃষ্টি।
বৃষ্টির কাছে গিয়ে দুই হাতে বৃষ্টির ঘার ধরে কপালে একটা চুমু একে দিলো রাত। শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিকে বলে উঠে,
– বাবু খেয়েছে?
বৃষ্টি শ্রাবনকে আদর করতে করতে বলে উঠে,
– হুম।
শ্রাবনকে বৃষ্টির কাছ থেকে নিয়ে তার সাথে দুষ্টুমিতে কথা বলতে বলতে হাটতে থাকে রাত। পেছন থেকে বৃষ্টি হাসি মুখে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে তাদের বাপ ছেলের দিকে।
,
,
,
আরশি রিদকে কয়েকবার কল করলেও ফোন ধরলো না রিদ। এবার ফোন ধরেই রেগে গেলো রিদ।
– সমস্যা কি তোর? ফোন ধরছিনা তার মানে বুঝতেই তো পারছিস আমি বিজি আছি।
– আমার জন্য কি তোমার কখনোই সময় হবে না রিদ ভাই। এতো রাতেও আমি ফোন দিলে বলছো তুমি বিজি। তুমি কি ইচ্ছা করেই আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন করো নাকি তুমি চাও আগের সব ভুলে আমি তোমার লাইফ থেকে সরে যাই?
রিদ এবার ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– কি বলবি বল।
– এ ভাবে কেনো বলছো? কেমন আছো তুমি?
– ভালো। তুই কি এতো রাতে এটা বলার জন্য ফোন দিলি?
– তুমি মনে হয় বিরক্ত বোধ করছো। আচ্ছা বাই, ভালো থেকো। বেশি রাত জেগো না শরির খারাপ করবে। ঘুমিয়ে পড়ো।
– আচ্ছা বাই,,, বলেই ফোন কেটে দিলো রিদ।
আরশি শুয়ে শুয়ে তাকিয়ে আছে মাথার উপর থাকা ছাদটার দিকে।
এই মধ্য রাতেই প্রিয় মানুষটার কথা মনে পরে সবচেয়ে বেশি। ইচ্ছে করছে সব ফেলে ছুটে যেতে তার কাছে। আরশির মনে পড়ে সেই আগের দিন গুলো। যখন রিদ এই মধ্য রাতে এসে তাকে দেখে যেত। কখনো কখনো আদর করে চুমু একে দিতো কপালে। গায়ের কাঁথাটা টেনে দিয়ে চলে যেতো আবার।
কিন্তু সেই রিদ এখন রাতে এতো কেয়ার দুরে থাক দিনের বেলায়ও দেখতে আসেনা তাকে। তুমি বুঝনা রিদ ভাই আমি যে তোমার অপেক্ষায় থাকি?
লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পরে আরশি।
গালে আলতো করে কারো স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় আরশির। দেখে চার পাশটা খোলা মেলা। আজও সেদিনের মতো ছাদে বসে আছে সে। দেখে সামনে মাস্ক পড়া সেই লোকটা বসে আছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে আরশির। কারণ আর অনেকদিন লোকটা কোনো বিরক্ত করেনি আরশিকে। আরশিও মনে মনে ভেবে নিয়েছিলো হয়তো আর আসবেনা লোকটা। কিন্তু আজ আবার এসে হাজির হলো সে।
লোকটা গম্ভির গলায় বলে উঠে,
– যে তোমায় নিয়ে ভাবতেও চায় না তার পেছনে পরে থাকতে লজ্জা করেনা তোমার?
– সেটা আমার আর তার ব্যাক্তিগত ব্যপার। এই নিয়ে আপনাকে না ভাবলেও চলবে। আর প্লিজ আমাকে আর এভাবে বিরক্ত করবেন না। আপনি কে তাও আমি আর জানতে চাই না। আগে অনেকবার জানতে ইচ্ছে হলেও তা এখন আর নেই। দয়া করে আমায় মুক্তি দিন। প্লিজ আর আসবেন না আমায় জ্বালাতে। হাত জোড় করে আপনার কাছে অনুরুধ করছি আমি প্লিজ।
লোকটা ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– ওকে তোমার ইচ্ছে আমি পুরণ করবো। এভাবে আর কখনো তোমার কাছে আসবো না। তবে তোমাকে কিছু শর্ত মানতে হবে। তোমাকে ঠিক ঠাক মতো নিজের খেয়াল রাখতে হবে। নিজেকে কখনো কষ্ট দিতে পারবে না। আর কোনো ছেলের জীবণের সাথে জড়িয়ে লাইফটা নষ্ট করবে না। ঠিক ঠাক মতো পড়া শুনা করবে। আর হ্যা, টাইম লি খাবার খাবে। যদি দেখি আমার শর্ত মতে তোমার সব ঠিক আছে তাহলে আমি আর আসবো না। আর জদি দেখি কোনো কিছুর পরিবর্তণ হয়েছে তাহলে আমি আবার আসবো।
আর কিছু মনে নেই আরশির। তার আগেই লোকটা আরশির মুখে রুমাল চেপে ধরে আবার বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে আবার চলে যায়। লোকটা চলে যাওয়ার সময় আরশি ঘুমু ঘুমু চোখে হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– রিদ ভাইয়া,,,,,,,
লোকটা কিছু না বলে চলে যায়। হাতটা বিছানায় পরে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় আরশি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রিদের নাম্বারে ফোন দেয় আরশি।
রিদ রিসিভ করে ঘুমাতুর কন্ঠে বলে উঠে,
– হুম আরশি বল।
– কাল রাতে তুমি কোথায় ছিলে?
– কেনো বাসায়।
– মিথ্যা বলছো তুমি, আমার সাথে কথা হওয়ার পর তুমি কোথায় ছিলে?
– তার কিছুক্ষন পরই তো ঘুমিয়ে গেলাম। আর এখন তুই ফোন দিলি। কেনো রে কোনো প্রব্লেম হয়েছে?
– কিন্তু আমি তো তোমার কন্ঠ শুনেছি। লোকটা কি তুমি?
– কি সব বাজে বকছিস আরশি। কোন লোক?
– আগে বলো তুমি কি রাতে আমার সাথে কথা হওয়ার পর ঘুমিয়েই ছিলে?
– হ্যা রে বাবা। কি বলছিস আমি তো কিছুই বুঝছি না।
– ওহ্,,, আচ্ছা। না কিছুনা।
– তুই কি আর কিছু বলবি?
– না।
– তাহলে ঘুমাতে দে।
,
,
আরো কয়েকমাস কেটে গেলো। বৃষ্টি ও আরশি দুনেরই ফাইনাল পরিক্ষা শেষ। তবে এখনো রেজাল্ট দেয়নি।
শ্রাবন বৃষ্টির চাইতেও বেশির ভাগ সময় থাকে আরশির কাছে। আরশির আগে থেকেই বাচ্চা খুব পছন্দের।
বিকেলে ভিডিও কলে কথা হলো বাড়িতে। বৃষ্টির মা দেখতে চাইছে নাতিকে। বৃষ্টির বাবা মাঝে মাঝে আসে আসে দেখতে। বিকেলে খুব ভালো ভাবেই কথা হলো তাদের মাঝে।
পর দিন সকালে ফোন দিয়ে শুনতে পায় মায়ের কান্নার শব্দ। এক নাগারে কেদেই চলছে তার মা। একটু অবাক হয় বৃষ্টি।
– কি হলো মা কাদছো কেনো? কিছু হয়েছে?
– বর্ষা,,,,,,, আবার কেদে উটলো তার মা।
– কি হয়েছে আপুর।
আর কিছু বলার আগেই দেখে বৃষ্টির ফোন অফ হয়ে গেছে। দুঃশ্চিন্তার ভার তার মাথায়। উল্টা পাল্টা কিছু করে বসেনি তো আপু? তখন দেখলো রাত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামছে। বৃষ্টিকে আতঙ্কিত দেখে বলে উঠে,
– কি হলো তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেনো? এ্যানি প্রব্লেম?
বৃষ্টি কিছু বলার আগেই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো রাত গিয়ে রকজা খুলতেই দেখে বাইরে পুলিশ দাড়িয়ে আছে। রাতের পাশে এসে দাড়ায় বৃষ্টি।
সামনে থেকে পুলিশ ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান বলে উঠে,
– আপনাদের বাসায় বৃষ্টি কে?
রাত অবাক চোখে বৃষ্টির দিকে তাকায়। পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– জ্বি আমিই বৃষ্টি। বলুন কি বলবেন?
– ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট।
পাশ থেকে রাত মাথা গরম করে বলে উঠে।
– ইউ আর মেড?
– রাত সাহেব, উত্তেজিত হবেন না। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– কিন্তু আমার অপরাধ?
– বর্ষা নামক এক যুবতিকে খুন।
To be continue……….
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖