#বালির_সংসার
পর্ব-১৯
.
.
দাদুমণি চলে যাওয়ার পর কথা গুলো বুঝতে অর্থির কিছুটা সময় লাগলো।
সময় লাগলেও সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগলো না।
যাই হোক সে রুপের কাছে ফিরে যাবে না।
আদিত্য করুক বিয়ে! আমি তো না করিনি! কেনোই বা করবো? তার পবিত্র, কুমারী মেয়ে চাই। যার উপর শুধুই তার স্পর্শ থাকবে। আমার শুধু বিয়ে নয়, দুই সন্তান জন্ম দিয়েছিলাম। তার কথা মতো না আমি পবিত্র না কুমারী। আমি চারপাশে থাকলেও অবশ্যই তার কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।
আর রইলো রুপ কে মাফ করার? হুম করবো মাফ! একবারে করবো।
.
.
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নেয় অর্থি।
বের হয়ে দেখে মা বসে আছে
– অর্থি! আমার কথায় তোর হয়তো মনে হবে আমি তোর মা হয়ে এসব বলছি কেনো? তবুও বলবো। জানিস তো মেয়েদের জীবন বড্ড বেশি ভয়ংকর। রুপ তোর স্বামী। হয়তো সন্তানদের হারানো কিংবা কোন এক কারণে ভুল পথে পা দিয়েছে কিন্তু স্ত্রী হিসেবে তোর উচিৎ তাকে সুযোগ দেওয়া।
হয়তো ভুল শুধরে নিবে। বড় কথা আদিত্য রুশার বিয়ে৷ তুই এখানে থাকলে হয়তো হবে না এই বিয়ে। আমার কথা বুঝার চেষ্টা করিস।
রুপ কে ছাড়বি? কার ভরসায়? আজ বাবা -ভাই পাশে আছে কাল হয়তো থাকবে না। আর আমার এ বাড়িতে কি সারাজীবন থাকতে পারবি?
হয়তো তোর খারাপ লাগছে। তবুও বলবো তুই ফিরে যা। রুশা কে সুখী হতে দে।
আর যদি না যাস তাহলেও অনন্ত আজকের দিনের জন্য যা।
.
.
মা কথা গুলো বলে যাওয়ার পরেই রুশা আসে।
তার একটা কথাই
– আদিত্য কে খুব কষ্টে পেয়েছি কিন্তু এখনো তোকেই চায়। প্লিজ আদিত্য কে আমাকে ফিরিয়ে দে। তুই থাকলে ও কোনদিন আমার হবে না। আমি তোর কাছে আদিত্য কে ভিক্ষে চাইছি প্লিজ।
.
রুশার কান্না দেখে অর্থির দম বন্ধ হয়ে আসে। আদিত্য কেনো তাকে চাইবে? সে তো অপবিত্র!
এই ঘরে আরশের অনেক কিছুই আছে। অর্থি আরশের ছবি আর একটা খেলনা নিয়ে কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়ে। সে জানে তার কোন জায়গা নেই এই বাড়িতে।
রুশার মুখে ফুটে উঠে বিশ্বজয়ের হাসি।
.
.
অর্থি আবার ফিরে এলো রুপের বাড়িতে। কই যাবে? কি করবে? এই আশায় হয়তো রুপ মাফ চাইবে, আবার সব ঠিকঠাক হবে। কিন্তু সব চাওয়াই কি পূর্ণতা পায়?
.
.
বাসার অবস্থা নাজেহাল। জিনিসপত্র ভাঙা, খাবার টেবিল অপরিস্কার আরো কতকি? বাইরের থেকে খাবার আনিয়ে খেয়েছে হয়তো।
অর্থি চাল ধুয়ে ভাত চুলোয় দেয়। অন্যটায় ডাল সিদ্ধ। ভাতের সাথে আলু সিদ্ধ হচ্ছে। একে একে ডিম সিদ্ধ করে বেগুন পুড়িয়ে নেয়।
রান্নার ফাকে ফাকে সব গুছিয়ে ফেলে। শুকনো মরিচ ভাজার সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে আসে রুপ আর নিশি।
কিছু বলতে না দিয়েই বলে
– আপনারা বসুন খেয়ে নিন তারপর কথা বলা যাবে।
.
চুপচাপ বসে খাবার খায়। অর্থির গলা দিয়ে খাবার নামছে না।
বিষম খেলে রুপ পানি দেয় কিন্তু অর্থি নেয় না।
.
খাওয়া শেষে
– আপনারা বিয়ে করে নিন। বাহিরে মেলামেশা করলে ভালো দেখায় না।
– তাহলে তুমি? (নিশি)
– আপনাদের আশ্রিতা হয়ে না হয় এখানে থাকবো।
– না তা হয় না। আমি তোমাকে আমার সামনে কিভাবে সহ্য করবো? আমি পারবো না। আমি আমার স্বামীকে কারো সাথে ভাগ করবো না।
.
বিনিময়ে অর্থি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
– তাছাড়া তোমার সামনে জীবন পড়েই আছে। তুমি যদি এখানে থাকো তাহলে তোমার কষ্ট হবে বোন।
– আমি আপনার স্বামীর উপর অধিকার দেখাতে যাবো না। আপনারা বলেন না যে আমি আশ্রিতা তাই বলেছিলাম।
– তুমি বললে কি হবে? আমি সতীন নিয়ে সংসার করতে পারবো না।
আমাদের বিয়ের আগে তোমাদের ডিভোর্স হওয়া দরকার।
– তাহলে উকিল কে বলুন। আমার সমস্যা নেই।
.
.
অর্থি, নিশির মাঝে রুপ একটা কথাও বলেনি। অর্থি দুই ঘন্টার মধ্যে পুরো বাসাকে নতুন বউয়ের মতো সাজিয়েছে সাথে নিশি কেও। এই প্রথম মনে হয় কোন মেয়ে তার সতীন কে কনে সাজে সাজিয়ে দিলো।
রান্না,মিষ্টি, বাসর সব রেডি। রুপ কে সাদা পাঞ্জাবী তে বেশ মানিয়েছে।
ঈশ! এভাবে তাকিয়ে থাকলে অর্থির নজর লেগে যাবে রুপের।
অর্থির খুব ইচ্ছে করছিলো রুপ কে ছোয়ার কিন্তু নিশি হয়তো ভালো চোখে দেখবে না।
অর্থি নিজেই অধিকার ছেড়ে দিচ্ছে কারণ রুপ চায় না তাকে।
উকিল এলো ডিভোর্স হলো। রুপ একটা বার না করলো না। একটা কথাও বললো না।
অর্থির কান্না পাচ্ছে খুব৷ আর রুপের প্রতি অধিকার রইলো না। সবটা ভুলে নতুন শুরু করা জীবন আজ শেষ।
কাপাকাপা হাতে নাক ফুল খুলে এগিয়ে দিলো অর্থি নিশির দিকে।
নিশি- এটা তুমিই রাখো। আমি তোমার ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহার করবো না।
.
মুখে হাসি ফুটিয়ে অর্থি বলে
আমার ব্যবহার করা স্বামী ব্যবহার করবেন এটা তো শুধু নাকফুল মাত্র।
.
.
পিছন ফিরে তাকায়নি সে। আরশের জিনিস গুলো নিয়ে চলে এসেছে। মাঝ রাস্তায় বসে জীবনের হিসেব কষতে থাকে। কি পেলো কি হারালো? পাওয়ার কিছুই নেই শুধুই হারানো। ছোট্ট পিচ্চি অর্থির জীবনে আদিত্য এলো। কিশোরী বয়স থেকে আগলে রাখলো হঠাৎ সব তছনছ হয়ে গেলো এক রাতে। তারপর রুপের সাথে সংসার। অরুনীমা, আরশ এলো চলেও গেলো আবার নিশির ঝড়ো হাওয়ায় গুছানো সংসার বালির সংসারে পরিণত হলো। আজ সে সংসার আর নেই।
ডান দিকে যে রাস্তা গিয়েছে তার বাবার বাসার সামনে? সেই বাসায় হয়তো এতক্ষণে আদিত্য রুশার বিয়ে শুরু হয়ে গেছে আর বামে রুপ নিশির।
সবার গুছানো জীবনে কোন জায়গা নেই। চোখ মুছে সামনের রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে।
হয়তো আর কখনো ফিরবে না এই শহরে। হয়তো তার মৃত্যুর খবর আসবে না সুখী মানুষ গুলোর জীবনে, লাশের দাফন হবে বেওয়ারিশ হিসেবে…
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon