#বালির_সংসার
পর্ব-১৮
.
.
সকাল হতেই রুশা চলে যায় অর্থিদের বাসায়। কাল রাতে রায়ান বলেছে তো সব ঠিক হয়ে যাবে। হুম্ম তার ভাই সব ঠিক করে দিবে। আদিত্য কে সে আর ওই বাসায় থাকতে দিবে না।
আংকেল বললেও না। আর রেজিস্ট্রি হওয়া অবধি ও নিজেও থাকবে সেখানে।
আদিত্য সহ একবারে বেরিয়ে আসবে৷
.
অর্থির মাথার কাছে ওর বাবা বসে আছে।
মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। এখনো পুরোপুরি ভাবে হুশ ফিরেনি। কেউ কিছুই জানে না। শুধু আয়ান ছাড়া। আয়ান মুখ খুললো৷ সবটা জানার পর চক্ষু সবার চড়ক গাছ।
আয়ান শুরু থেকেই সব টা জানে।
তিন বছর আগে তখন যদি সে থাকতো এত কিছু হতো না।
বান্দরবান ছিলো। এটার সুযোগ নিয়েই অর্থি কে কেউ ফাসিয়েছে।
ফিরে এসে সব জেনে খুব কষ্ট করে রুপের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড পায় সে। আর সেই রেকর্ড পাঠিয়ে দেয় আদিত্য, বাবা মায়ের কাছে৷
আদিত্য এত দিন জানতো অর্থি ট্রাপে পড়েছিলো। কিন্তু ফুটেজ কে দিয়েছিলো সেটা অজানা ছিলো । তাহলে সে আয়ান?.
.
আয়ান বোনের পাশে গিয়ে হাত ধরে আবার বলতে থাকে।
– টাকায় সব কিছু হয়৷ নিশি ছয় মাস যাবত এসেছে৷ যখন আপুর আটমাস চলছে। ওই বাসার সব ক্যামেরার ফুটেজ রেকর্ড আমার কাছে প্রথম থেকেই আছে। আপু বেশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিলো। রুপ বেশ ভালো। কিন্তু! নিশির প্রতি আসক্তি খুব।
.
তারপর আয়ান বেবি হওয়ার পর দিন থেকে কাল রাত অবধি সব কিছু বলে।
সবার চক্ষু চড়কগাছ। আদিত্য রাগে ফুসছে। সে জানতো রুপ মেরেছে৷ কিন্তু এতসব জানতো না।
রাগে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই অর্থির জ্ঞান ফিরে।
হাতে ঈশারা করে।
আদিত্য কাছে যেতেই হাত বাড়িয়ে বাবা, আয়ান, আদিত্যর হাত নিয়ে বলে
– রুপ কে কিছু বলো না তোমরা। আমিই অলক্ষী, আমি আমার সন্তানদের মেরেছি।
বলেই ঢুকরে কান্না করে।
আয়ান দ্রুত যায় খাবার নিয়ে আসতে। মা অর্থি কে ওয়াশ রুমে নিয়ে গোসল করাতে চাইলো। আদিত্য না করলেও অর্থি শাওয়ার এর নিচে দাঁড়িয়ে যায়।
.
একবার অর্থি সুস্থ হোক তারপর দেখে নিবো রুপ কে আর তখন কে ওর সাথে এমন করছে তাকে টেনে ছিড়ে ফেলবো।
.
.
কথাগুলো শুনে রুশার হাত পা কাপছে।
আদিত্য দা জেনে গেছে ভিডিও ওসব ফেক ছিলো।
কাপতে কাপতে রায়ান কে কল দেয়।
.
রুশা-হ্যালো ভাইয়া
রায়ান- মণি বলো
রুশা- আদিত্য দা সব জেনে গেছে।
রায়ান- মানে কি? কি হইছে? শান্ত হও! ক্লিয়ার করে বলো
রুশা- ভিডিও, ছবি যে ফেক ছিলো সেইটা সবাই জেনে গেছে।
রায়ান- কিভাবে?
রুশা- এত জানি না! তবে সব জানার পিছনে আয়ান আছে।
রায়ান- তোমাকে ওরা কিছু বলেছে? তোমার কিছু করেনি তো? ওরা কি জানে আমরা এসব করেছি।
রুশা- না! আমরা করেছিলাম এসব তা জানে না।
রায়ান- যাক বাবা বাঁচালে। শুনো রিলাক্স করো। কিছুই হবে না।
রুশা- কিন্তু মনে হয় না অর্থি এ বাসায় থাকলে আদিত্য আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে৷ (রুপের সব কথা বলে)
রায়ান- চিন্তা করো না। কাল দাদু আসছে সব ঠিক হয়ে যাবে৷
.
.
রাতের দিকে অর্থি অনেকটা সুস্থ। বারান্দায় বসে ছিলো। বাবা মা এসে অনেক কথা বলে গেলো। বাহিরে আদিত্য রুশার বিয়ের প্রিপারেশন নেওয়া হচ্ছে।
হায়রে নিয়তি! হায়রে ভাগ্য! নদীর একূল ভাঙে আর ও কূল গড়ে৷ এমন টাই হচ্ছে।
অর্থির সংসার ভেঙে যাচ্ছে আর আদিত্যর সংসার গড়ছে৷
বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা করছে৷
আয়ান এসে অর্থির মাথা চুপচাপ ওর বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে।
হাতে ফোন দিয়ে বলে
– নাও তো মোনা
– কি?
– ফোনে দেখো!
.
ফোনের গ্যালারি তে শুধুই শিনচ্যান কার্টুন।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও দেখা শুরু করে। দেখতে দেখতে এক সময় অর্থি হাসতে থাকে। আয়ানের বুকের মাঝে থেকে হাজার টনের বোঝা নেমে যায়।
.
.
সকাল হতেই রুশার দাদী মানে অর্থির চাচাতো দাদী আসে। অর্থির সব কথা শুনে বেশ চেচামেচি করে।
অর্থির মা বাবা উনাকে খুব সম্মান করে আর এর সুযোগ সে বারবার নেয়।
রেগেমেগে অর্থির রুমে যায়৷
গিয়েই ঘুম থেকে টেনে তুলে মেয়েকে।
বলতে থাকে
– কি রে মুখপুড়ী? মুখ পুড়িয়ে এখন এখন এখানে এসেছিস আমার রুশার সংসার ভাংতে? নিজের সন্তানদের তো খাইছিস। এখন এই শুভ একটা দিনে…..
.
.
অনেক কথা অর্থি কে বলে, যার সারমর্ম এই যে অর্থি একটা অলক্ষী মেয়ে। নিজের সন্তান কে নিজে মেরেছে। স্বামী কে আটকে রাখতে পারেনি। সে শুভ দিনে এখানে থাকলে রুশা আদিত্যর খারাপ হবে। তাকে এখনি বাসা থেকে অন্তত আজকের দিনের জন্য হলেও দূরে যেতে। আর রুপ কে মাফ করে নিজের সংসার করতে। পুরুষ মানুষের একটু আধটু এমন শখ থাকবেই৷ মেনে নিতে হয়।
.
অর্থির নিজের মায়ের দিকে খুব আশা নিয়ে তাকায় কিন্তু মনে হয় তার মায়েও এই কথায় সম্মতি আছে।
দাদী চলে যাওয়ার পর মা বলে
– বিয়ে তো কোন ছেলে খেলা নয়। রুপ কে আবার সুযোগ দে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon