বালির সংসার পর্ব-১৭

0
1680

#বালির_সংসার
পর্ব-১৭
.
প্রতিবার মেয়ের জন্মদিনে বাবা দুই হাত ভর্তি করে চকলেট দেয়৷
এবারো তাই। বাবা কয়েক রকমের চকলেট নিয়ে এসেছে।
কিন্তু অর্থির ছোট্ট ছোট্ট হাতে বেশি চকলেট আটে না।
বাবা এবারো হেসে দেয়। আর বলে
– মা! আমি তো তোমাকে চকলেট বেশি করেই দিতে চাই। কিন্তু তোমার হাতেই তো আটে না।
.
অর্থি চারপাশ ঘুরে যেনো কি দেখে।
তারপর বাবা কে বলে নিজের সাথে যেতে।
আদিত্য ড্রয়িং রুমে বসে নিউজপেপার পড়ছিলো।
অর্থি গিয়ে আদিত্যর হাতের নিচে নিজের দুই হাত দিয়ে বাবার দিকে বাড়িয়ে দেয়
– এখন তো বেশি দিতে পারবে? আদিত্যদার হাত বড় আছে। তো তুমি এখন চকলেট দাও।
অর্থির বাবা তাই দিলো৷ আদিত্য পুরোই অবাক, সাথে লজ্জাও পেলো।
অর্থির বাবা দাড়ালো না। সে চলে যাওয়ার পর
অর্থি নিজের ওড়না আঁচলের মতো করে আদিত্যর সামনে ধরলো
– এখন আমাকে আমার চকলেট ফিরত দাও।
– কেনো? এগুলো তো আমার হাতে, সো চকলেট আমার।
– মানে কি?
– মানে কিছুই না৷ দিবো না। এগুলো আমার।
– লাগবে না৷
বলেই অর্থি নিজের রুমের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়৷
আদিত্য চকলেট হাতে নিয়েই হাত সামনে বাড়িয়ে অর্থি কে পিছন দিক থেকে ধরে। ঠিক যেনো আবদ্ধ করে নিলো। আদিত্য হাত দুটো আলাদা করেনি। হাত ভর্তি চকলেট।
বুকের সাথে মিশে আছে অর্থির পিঠে ছড়ানো কোমর অব্ধি লম্বা চুল।
– নে পিচ্চি, চকলেট।
– নিবো না।
– নিবি না?
– শুনো না?
আদিত্য উত্তর না দিয়েই ওকে উঁচু করে।
অর্থি বলে
– আদিত্যদা আমাকে নামাও! হয় আমি পড়বো না হয় চকলেট।
– চুপ।
দোলনায় বসিয়ে দিয়ে ওর কোলে চকলেট রাখে। টুল টেনে নিয়ে বসে চকলেট মুখে পুড়ে দেয়৷
– পিচ্চি তোর বয়স কতো হলো?
– ১৭
– কি গিফট চাই?
– যা চাইবো দিবে?
– কি?
– কি!
– কি চাই বল?
– বুঝো না?
.
আদিত্য অর্থির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারে কি চাইছে।
– এখন না পরে।
– পরে কবে?
– পরে মানে পরে।
– সরি।
– আবার কি হলো?
– তোমাকে সব সময় বিরক্ত করি।আর করবো না। ভালো থাকো।
– মানে কি?
– মানে কিছুই না! তুমি তো চাও আমি তোমার থেকে দূরে থাকি। তাই থাকবো। ভালোবাসো বলতেও হবে, কাছেও আসতে হবে। আসলে তোমার জন্য রুশা আপুই ভালো হবে। মানাবে ভালো। স্টাইলিশ, স্মার্ট মেয়ে, আমার মতো না।
যেমন টা তোমার পছন্দ। ভালো থাকো, রুশা আপুকেই নিয়ে।
.
.
কথা গুলো বলেই অর্থি উঠে যেতে নেয়। কোলের সব চকলেট পড়ে যায়।
এক পা এগুতেই আদিত্য অর্থি কে হাত ধরে টেনে এনে বসিয়ে গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
অর্থি এমন কাজে অভ্যস্ত না৷ কেউ ভুলেও মারেনি৷ মাথা ঝিমঝিম করছে।.
.
.
আদিত্য বেশ রেগে গেছে। কখনো সে রুশা কে নিয়ে এসব ভাবে নি। কেনো ওর কথা উঠবে এখানে? কিছু না বলতে বলতে বেশি কথা বলে ফেলে৷
যখন হুশ হলো আদিত্য অর্থি কে মেরেছে।
আদিত্যর নিজের প্রতি রাগ আরো বেশি হতে থাকলো। আজ বাচ্চামেয়েটার জন্ম দিন, সব থেকে বড় কথা ও কিভাবে পারলো এই পিচ্চি মেয়েকে মারতে। নিজের প্রতি রাগ আরো বেশি হলো।
দেয়ালে কয়েকটা ঘুষি দিলো। আবার দিতেই সামনে দাড়ালো।
আদিত্য কে কখনো এত রাগ করতে দেখেনি। কিভাবে শান্ত করবে জানে না।
অর্থির কান্নার মুখ দেখে আদিত্য অর্থিকে বসিয়ে দিয়ে এক হাত দিয়ে অর্থির মাথা এগিয়ে নিয়ে এসে অন্য হাতে দুই হাত ধরে।
– ভালোবাসি এটা বলতে হবেই? প্রপোজ করতেই হবে? তোকে নিয়ে আমার অনেক ইচ্ছে। প্রপোজ করবো, সরাসরি বিয়ের জন্য।
ভালোবাসি বলবো যেদিন তোকে পূর্ণ করবো।
পূর্ণ সেদিন করবো যখন তুই নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা রাখবি।
.
আদিত্যর রাগ কিছুটা কমে এসেছে। অর্থি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে
– তো করো না আমায় পূর্ণ, বলো না ভালোবাসি।
– পূর্ণ করা মানে বুঝেছিস?
– না!
– তুই এখনো বাচ্চা আগে বড় হয়ে নে।
.
.
আদিত্যর ঘুম ভেঙে যায়। ইদানীং সে স্বপ্নে শুধু অতীত হাতড়ে বেড়ায়।
ফেব্রুয়ারি মাসের হালকা শীতে ঘেমে গেছে অর্থি। শরীরের উপর থেকে ওড়না সরাতেই ক্ষত গুলো চোখে পড়ে।
রেগে ফেটে যাচ্ছে সে। এসব হয়েছে রুশার জন্য। মনে হচ্ছে ওকে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে এসে ঠিক এভাবে মারতে।
না ও ওসব ভিডিও, ম্যাসেজ আদিত্য কে দিতো না এসব হতো।
অর্থির ভিডিও দেখে আদিত্যর মাথায় রাগ জেকে বসে।
কিন্তু ভুল তো ভাঙবেই৷ ভেঙেছিলোও।
কোন একটা অজানা নাম্বার থেকে সেন্ড করা রুপের বাসার সিসি টিভি ফুটেজ সব ভুল ভেঙে দেয় তার। ঈশ! রাগ হয় তখন নিজের প্রতি। কেনো সে অর্থি কে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু ততদিনে রুপ অর্থির বিয়ে হয়ে গেছে।
দেশে ফিরে এসে জানতে পারে অর্থির বেবি হবে।
আদিত্য তারপর কত রাত ঠিক মতো ঘুমায়নি।
অর্থি দের বাসায় এসে থাকতে চায়নি কারণ চারপাশে শুধুই স্মৃতি। কিন্তু আংকেলের কথা ফেলতে পারেনি।
ভাগ্যের সমীকরণে সে পরাজিত। আজ বাদে কাল সেই রুশার সাথেই তার বিয়ে। না সে রুশা কে চায় না কিন্তু ওই যে বাংলাদেশের সব বাবার হার্ট খুব দুর্বল। একটু হলেই এট্যাক হয়।
.
.
অন্ধকার রুমে বসে রুশা কেদেই চলেছে। আজকে আদিত্য খুব খারাপ ব্যবহার করেছে।
রুশার কান্না শুনে ওর ভাই দৌড়ে আসে।
– কি হয়েছে আপু?
– আদিত্য!
– কি?
– ও এখনো অর্থিকে ভালোবাসে
– কাল তো তোদের রেজিস্ট্রি, তারপর আদিত্য ভাইয়া শুধুই তোর।
– তুই যা এখান থেকে, আমি বাঁচি মরি তাতে তোর কি রে ভাই?
– তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা বলেই কিন্তু অর্থি আপুর ওসব ফেক ভিডিও, ফটো বানিয়ে আদিত্য, কাকা, কাকী সবাই কে দিয়েছিলাম। আর তুই এখন এসব বলছিস?
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে