#বালির_সংসার
পর্ব-১৩
.
সব কথা শোনার পর রুপের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে।
দম টা বন্ধ হয়ে আসছে।
মনে হচ্ছে কে যেনো ধারালো ছুড়ি দিয়ে অনবরত তার গলায় চালিয়ে দিচ্ছে।
নিজেকে কিছুটা শান্ত করে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো…
.
– দেশের বাহিরে নিয়ে যেতে পারি! সিংগাপুর! অথবা লন্ডন?
পুরো ঘর জুড়ে নিরবতা। অর্থির বাবা মা, আয়ান, আদিত্য, রুপ আর তিন জন লোক।
নীরবতা ভেংগে বয়স্ক একজন বলে উঠলো
– মিঃ রুপ! নিজেকে সামলান। আপনার সামনে বাংলাদেশের বেস্ট কার্ডিওলজিস্ট আদিত্য আহমেদ রয়েছে। পরীক্ষাটি বার বার করা হয়েছে।
কিন্তু রিপোর্ট এক৷
.
রুপ কি বলবে বুঝতে পারছে না। অর্থির বাবা চুপ হয়ে আছে, মা কাদঁছে। আয়ান কি করবে বুঝছে না আর আদিত্য? তার হাতে কিছুই নেই।
তিন জন লোক ডক্টর। আদিত্যের হয়তো রিপোর্ট বুঝতে ভুল হবে সবার তো হবে না।
.
বয়স্ক ডক্টর বেরিয়ে যাওয়ার সময় আদিত্যর কাধে হাত রেখে বললো
– আদিত্য! বাচ্চাকে মায়ের কাছে দিয়ে দাও। ক্ষত গভীর হওয়ার আগেই মলম দিতে হয়। মায়ের ভালোবাসায় মিরাক্কেল হলেও তো হতে পারে।
.
.
অর্থি বাচ্চার কান্নার স্বরে জেগে উঠে।
তাকিয়ে দেখে রুপ ছেলে কে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে বুকে দিতে বলে।
রুপ তাই দেয়
– আসসালামু আলাইকুম! মাশাল্লাহ! আল্লাহ তোমাকে দুনিয়ার সব সুখ পায়ে এনে দিক। যাতে তুমি এগিয়ে যেতে পারো ইসলামের পথে।
আল্লাহ তোমাকে আমার মাথার চুলের সমান হায়াত দিক। তোমার এই ছোট্ট ছোট্ট হাত পা দিয়ে পাড়িয়ে তুমি যেনো আমার কবরে মাটি দিতে পার।
.
.
অর্থির এসব কথা শুনে রুপ নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। কিভাবে বলবে সে যে তাদের হয়তো সন্তান বাঁঁচবে না।
কি করে বলবে যে তাদের ছেলের শরীরের ভিতরের অংশ গুলো যে ঠিক ভাবে তৈরি হয়নি। যে কোন সময় মারা যাবে তাদের ছেলে।
.
খুব কষ্টে কান্না চেপে রুম থেকে বেরিয়ে এলো রুপ।
আজকে আসার সময় রুপের সাথে নিশি এসেছিলো। গেস্ট রুমে আছে। রুপ দৌড়ে গিয়ে নিশি কে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাদতে থাকে।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ২ মাস।
আদিত্য অর্থির রুমে যায় না। বাচ্চা যখন দেখার হয় নার্স কে দিয়ে আনিয়ে নেয়।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আলাদা মায়া জন্মে গেছে।
কোলে নিতেই অনুভূতি হয় ভিন্ন। অর্থির অংশ যে সে। যদি আদিত্য একটু মাথা ঠান্ডা রাখতো তাহলে হয়তো আজ আদিত্য অর্থি বেবি প্ল্যান করতো। এসব ভাবতেই আদিত্যর খারাপ লাগে।
.
রুপ- আদিত্য ভাইয়া! প্লিজ একটু রানী সাহেবার কাছে আসবেন? আসলে অর্থির মা,বাবা,আয়ান কেউ নেই। আমার একটু কাজ পড়ে গেছে জরুরি আপনি যদি…..
.
অনিচ্ছাসত্ত্বেও আদিত্য কে যেতে হয়।
অর্থি বাবুকে তেল দিয়ে দিচ্ছিলো। আদিত্য কে দেখে চমকে উঠে।
আদিত্য আরো বেশি কষ্ট পায় কারণ এই মেয়েটা তার কাছেই নিজেকে সব থেকে নিরাপদ মনে করতো। আর আজ……
.
আদিত্য – নাম কি রেখেছিস বাবুর?
অর্থি- আরশ
আদিত্য- আরশ?
অর্থ – আদিত্য -আ, রুপের – র আর শাওন – শ।
আদিত্য – শাওন? কে?
অর্থি- আয়ানের আরেক নাম শাওন। বিয়ে করছো কবে?
আদিত্য – করবো না। কোন সমস্যা তোর?
অর্থি- রুশা আপু ভালো মেয়ে। পবিত্র মেয়ে। সংসার করার মতো মেয়ে। রাত বিরাতে তাকে অন্যের বুকে পাওয়া যায় না।
বিয়ে করে নাও সুখী হবে।
.
আদিত্য কিছু বলার আগে আয়ান চলে আসে। তিনজনে মিলে ভালোই আড্ডা দিতে থাকে। আদিত্য, অর্থি আরশের আনসেন্সরড কিছু ছবি তুলে আয়ান।
ইদানীং রুপ নিশির সাথে ভালো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে। বাচ্চাদের জন্য এমন একটা মেডিসিন রুপ আর রুপের মেডিসিন টিম বানাতে চাচ্ছে যা থাকলে প্রিমেচিউর বেবি অথবা টুইন বেবি জন্ম নিলে এদের যে কমপ্লিকেশন হয় এগুলো যাতে না হয়৷
নিশিও মাঝে মধ্যে বাসায় আসে। বেশ ভালো আড্ডা জমে।
রুপ এদিকে ধীরে ধীরে নিশির নেশায় আসক্ত হচ্ছে।
নিশির ছোট ছোট আবদার গুলো পাগলামি গুলো নিয়ে রুপের বেশ ভালোই কাটছিলো। আর অর্থির ওর বাচ্চা কে নিয়ে।
সামনের মাসে আদিত্য, রুশার বিয়ে।
রুশা খুব খুশি। কিন্তু আদিত্য?
সে নিজের রাগ, জেদের জন্য যে কাজ করেছিলো তার জন্য এখনো কষ্ট পায়। হয়তো মুহূর্ত ছিলো অমূল্য কিন্তু অনুতাপ যে অসহ্য।
.
.
একদিন সন্ধ্যে বেলায় অর্থির রুমে ঠিক তেমন আড্ডা জমে উঠেছিলো। আদিত্য কে রুশা জোর করেই নিয়ে আসে।
অর্থি আরশ কে ফিডিং করার জন্য উঠে যেতে চাইলে রুপ বাধা দেয়।
তাই আদিত্য, রুপ বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরাতেই অর্থি চিৎকার করে উঠে।
আদিত্যর বুঝতে বাকী রইলো না।
দৌড়ে গিয়ে বাচ্চা কে কোলে নেয়।
আরশের খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। নিশি
রুপ, আদিত্য দৌড়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়।
পিছনের গাড়িতে আসে অর্থি, আয়ান, রুশা আর বাকী সবাই।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর অর্থির বাবা আদিত্য কে জিজ্ঞেস করতেই আদিত্য বলে
– আংকেল he is no more… He expired..
.
.
চলবে…..
.
.
Sabiya moon