বালির সংসার পর্ব-০৭

0
1716

#বালির_সংসার
পর্ব-০৭
.
এই যে দেখুন! ভুলেও আমাকে আপনার বউ ভাববেন না। আব্বু যতই আপনাকে বাবা আর আমাকে মা বলুক না কেনো তবুও কিন্তু আমি আপনার বউ নই।
কথাটা মাথায় রাখবেন।
.
রাজশাহী থেকে ঢাকা এসে বেশ খানিকটা খারাপ লাগছিলো আদিত্যর। সবে সে এই বাসায় এসেছে। জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার সময় পিছন থেকে মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে।
পিছনে তাকিয়ে বেশ রীতিমতো চমকে যায়।
চৌদ্দ পনেরো বছর বয়সী মেয়ে। কোমড় অব্ধি চুল। দেখতে অপরুপ। চোখের নিচে, নাকের বা পাশে তিল। ঠোঁট গুলো হালকা বেগুনি।
হালকা মিষ্টি রঙের থ্রিপিস পড়া।
দেখতে একবারে পরীর মতো।
মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো মিষ্টিপরী।
.
– কি বললেন?
– কিছুই না। তাছাড়া আমার বউ হওয়ার বয়স আপনার হয়নি। পিচ্চি মেয়ে।
আদিত্য নিজেকে সামলে নিয়েছে। এই গুণ অনেক টা রক্তে মিশে আছে।
– হুহ! তাহলে সমস্যা নেই। শুনলাম আপনি না কি এই বাসায় থাকবেন? লজিং মাষ্টার?
.
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকায়
– এই পিচ্চি! তুমি লজিং মাষ্টার বুঝো?
– না! গল্পে পড়েছি।
– আচ্ছা।
– বললেন না তো?
– কি?
– লজিং মাষ্টার?
– ধরে নাও তাই৷
.
আদিত্যর বেশ খানিক টা সময় লেগেছিল এই মেয়েকে বুঝতে। সত্যি কি কিছু বুঝে না? না কি না বুঝার ভান করে?
কিছুদিন যেতেই বুঝে না এই মেয়েটা সত্য এমন।
একদিন রাতে….
.
আদিত্য বসে পড়ছিলো। হঠাৎ মনে হলো কেউ যেনো কাদছে।
আন্টি বাসায় নেই। আয়ান কে নিয়ে গ্রামে গেছে৷
আংকেল ফিরেনি। খালা বাজারে গেছে ফিরেনি।
তবে কে কাদঁছে?
রুম থেকে বেরিয়ে বুঝতে পারে কান্নার শব্দ টা অর্থির রুম থেকে আসছে।
দৌড়ে রুমের কাছে গিয়ে ভিতরে ঢুকতেই অর্থি আদিত্য কে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমের চলে যায়।
ওক ওক করে বমি করতে করতে পেটে হাত দিয়ে বসে পড়ে।
আদিত্য ধরে রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দেয়। সেদিন প্রথম কোন মেয়েকে এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।
অনুভূতি? বলার ছিলো না।
.
কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে বিষয় টা।
কিচেনে গিয়ে গরম পানি এনে দেয়।
– ছ্যাক নেও কমে যাবে।
– আমি পারবো না। আমার বমি আসছে।
– আমি মনে হয় বাঁচবো না। আম্মুকে ডেকে দিন। আমার সময় শেষ।
.
আদিত্য প্রায় হেসে ফেলে। হাসি থামিয়ে বলে
– আগেও এমন ব্যথা হতো? না আজকেই প্রথম৷
– আজকেই প্রথম৷ আম্মু বলতো রাস্তার কিছু খাবি না। কিন্তু আমি আজকে তেতুলের আচার খেয়েছি। মনে হয় তাতে কাচের গুড়ো ছিলো। আমার পেটের নাড়িভুঁড়ি কেটে রক্ত বের হচ্ছে। আমি আর বাঁচবো না।
.
– তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
– ও আল্লাহ! তুমি দড়ি ফালাও আমি উঠি! আমি মরি আর সে বলে কোন ক্লাসে পড়ি। নাইনে পড়ি৷ নাইন বুঝেন? আল্লাহ গো! তুমি কই? আমারে নেও। এত কষ্ট দিয়া নিবা ক্যান? আমি কি দোষ করছি।
.

বলেই কান্না শুরু করে দিলো। আদিত্য হাসছিলো। বললো
– চুপচাপ শুয়ে থাকবে৷ এইটা নাও। এখানে ধরে থাকবে। আমি আসছি। বাইরে থেকে লক করে দিয়ে যাবো৷ আমি আংকেল ছাড়া কেউ এসে মরে গেলেও খুলবা না।
.
কিছুক্ষণ পর আদিত্য আসে। অর্থির হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে চলে যায়। ততক্ষণে পেট ব্যথা কিছুটা কমেছে।
অর্থি প্যাকেট খুলে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। বই তে পড়েছিলো বটে কিন্তু আজকের দিন সে কিশোরী থেকে ধীরেধীরে যৌবনে পা রাখতে চলেছে।
.
কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে আদিত্য বসে আছে।
– চুল গুলো ঠিক করে বাধো তো। বিনুনি করো।
অর্থি তাই করলো। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে৷
আল্লাহ তুমি দড়ি ফালাও আমি উঠি।
আদিত্য অর্থির হাত ধরে বসে ওকে সব টা বুঝিয়েছিলো। অর্থি মাথা নিচু করে বসেছিলো কিন্তু ভয় পাচ্ছিলো না।
সেদিনের পর থেকে পালটে যায় সম্পর্ক। শুরু হয় বিশ্বাসের পথ চলা। তারপর বাকী ৫টা বছর। অর্থি কে কখনো ব্যথায় কাদতে হয়নি। আদিত্য ছিলো তো!
.
.
স্যার… স্যার…
– হুম!
বসে বসেই স্মৃতিতে অস্তিত্বশীল হয়ে উঠেছিলো আদিত্য।
– স্যার! ম্যামের প্রচন্ড পেইন হচ্ছে। খুব কান্না করছে৷
.
আদিত্য জানতো এটাই হবে। জেনেটিক ভাবেই মায়ের থেকে রোগ পেয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদিত্য দ্রুত পায়ে ছুটে চললো কেবিনের দিকে।
.
সারাদিন কাজ করে ফার্মহাউসে ফিরে খুব ক্লান্ত লাগছে রুপের।
গা এলিয়ে দিতেই কারো স্পর্শ অনুভব করছে।
হুম অর্থির স্পর্শ। যখন যখন বাইরে থাকে, মনে হয় অর্থি আশেপাশে আছে৷ কিন্তু চোখ খুললেই দেখে কেউ নেই।
হাতটা ধীরেধীরে রুপের শার্টের বোতাম খুলতে থাকলেই রুপ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
হ্যাঁ নিশি। এবারের ধাক্কা টা বেশ জোড়েই লেগেছে। নিচে বসে পড়েছে।
– তোর সমস্যা কি নিশি?
– তোর কি সমস্যা? তুই কেনো আমার সাথে এমন করছিস? তুই কি জানিস না? বুঝিস না? সব টা ভুলে গেলি?
– না ভুলিনি। সব মনে আছে কিন্তু এখন অর্থি আমার দায়িত্ব, আমার কর্তব্য, আমার ভালোবাসা,আমার স্ত্রী।
– স্ত্রী? হাসালি রুপ। ভুলে গেছিস? তুই কখনো অর্থি কে ভালোবাসিস নি। তোদের বিয়ে কোন প্রেমের নয়৷ যা হয়েছিলো সব পরিস্থিতির সৃষ্টি। তুই শুধুই ওর আশ্রয়দাতা, সেদিন তুই ওকে আশ্রয় না দিলে হয়তো আজ ওর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেতো না। ও শুধুই তোর আশ্রিতা। আর আশ্রিতা কখনো স্ত্রী হতে পারে না৷ আমি মানি না। তুই শুধু আমার৷ ভুলে যা তিনটে বছর। প্লিজ৷ না হলে আমি যে মরে যাবো। রুপ প্লিজ……..
.
.
চলবে… ?
.
Sabiya Moon

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে