#বালির_সংসার
পর্ব-০৩
.
.
অর্থি যেদিন বাড়ি ছেড়েছিলো সেদিন মা তাকে অভিশাপ করে বলেছিলো
– মেয়ে হয়ে তুই যে কষ্ট গুলো দিয়ে গেলি এর জন্য তুই সারাজীবন সুখী হতে পারবি না। আজ থেকে তুই মরে গেলি। আমার থেকে আমার মেয়েকে কেড়ে নিলি, আল্লাহ তায়ালার কাছে আচল ফেলে চাইলাম তোর বুকে থেকেও আল্লাহ যেনো তোর সন্তান কে কেড়ে নেয়।
তখন তুই বুঝবি। কষ্ট কাকে বলে।
.
ফোন কানে নিয়েই কথাগুলো মনে পড়ে গেলো অর্থির মায়ের। বুকের ভিতর টা হুহু করে উঠলো।
.
.
– মা! জানো মা! আমার দুইদিনের মেয়েটা আর বাঁঁচবে না মা! জন্মের পর থেকে মা ওকে তো বুকেই নিতে পারিনি।
মা! আমি তোমার পায়ে ধরি, অভিশাপ টা ফিরিয়ে নাও।
মা!
.
কল কেটে গেলো। অর্থির মা চুপচাপ আছে। ওর বাবা জিজ্ঞেস করছিলো কি হয়েছে।।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সবটা জেনে ঝড় মাথায় নিয়েই বেড়িয়ে পড়লো।
মেয়ে তার খুব আদরের। সেদিন বাধ্য হয়েছিলো বাড়ি ছাড়তে।
কিছু বলতে পারেনি। চুপচাপ ওর বাসার সামনে মসজিদে নামাজ আদায় করে একটু দেখার আশায়।
.
.
বাবা মা কে দেখে অর্থি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মা স্বান্তনার বাণী দিলেও কি কান্না থামে?
বাবা যেনো মরিয়া হয়ে উঠেছে। যদি কিছু করেই হোক নাতনী কে বাঁচাতে।
যদি আল্লাহ একটু রহমত করে।
মেয়ের উপর অভিমান তাই বলে মন থেকে বলেনি কথা গুলো।
আল্লাহ তুমি মাফ করো গো। আল্লাহ গো। রহমত করো।
মেয়ের মুখের দিকে তাকাও।
.
রুপ ফিরে এসে দেখে নিশি বিছানায় শুয়ে আছে। হাতে রুপের ফোন।
স্ক্রীনে ভেসে আসে অর্থির হাসি মুখ।
অর্থির মুখ টা দেখে বিবেক যে বাধছে। মেয়েটা যে ক্লিনিকে।
কিন্তু নিশি কে ছেড়ে যাওয়াটা যে সম্ভব না।
মেয়েটার খুব জ্বর।
– খাবার খেয়ে নে।
– ওকে ছেড়ে দে।
– মানে?
– বুঝিস না তুই? এই মেয়েকে ছেড়ে দে। চল অন্য কোথাও যাবো।
ছোট্ট সংসার বানাবো। চল না।।
– কি বলছিস এসব। খেয়ে মেডিসিন নিবি আয়।
– আগে বল তুই ওকে ছাড়বি! না হলে খাবো না।
– একটা থাপ্পড় মারবো। আয় এদিকে খেয়েনে।
– আমি তোর এই শাসন খুব মিস করি। তোকে খুব ভালোবাসি সেই প্রথম থেকে।
.
নিশি এসে চুপচাপ বিড়ালছানার মতো রুপের বুকে মাথা রাখে। জ্বর টা মনে হয় ক্রমশ বাড়ছে।
.
.
দূর থেকে আজানের শব্দ আসছে। ঝড় থেমে গেছে।
কিছুক্ষণ আগে ডক্টর আদিত্য আহমেদ বললেন মেয়েটা কে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাঁচানো গেলো না।
অর্থি চুপচাপ বসে আছে।
আজকে তার চোখ আর রুপ কে খুজছে না।
আজ তার হাত স্পর্শ করতে চাচ্ছে তার অরুনীমা কে।
হ্যাঁ! অরুণীমা।
রুপ আর অর্থির মেয়ে অরুনীমা।
কিন্তু এখন আর নাম রেখে কি লাভ?
সবাই তো বলছে লাশ।
সব ফরমালিটিস পুরো করলো অর্থির বাবা।
পশ্চিমাকাশে সূর্য উঠছে। সেদিকে এম্বুলেন্স এর সায়রন বাজিয়ে নিয়ে চলেছে ছোট্ট অরুনীমা কে। অর্থির মা রুপ কে খুজলেও আজ অর্থি খুজছে না।
মা! মেয়ে! কেউ কারো স্পর্শ পেলো না। আগেই সব শেষ।
মেয়ের লাশ কোলে নিতেই গগনবিদারী চিৎকারে ভেসে উঠলো পুরো চারপাশ।
ক্লিনার খালাগুলো যেনো কাদছে।
প্রকৃতি অর্থির সাথে মিলিয়ে কাদছে।
আহারে মা! আহারে মাতৃত্ব।
.
.
চলবে
.
– Sabiya moon