#বালির_সংসার
পর্ব-০২
.
অর্থি জমজ সন্তান জন্ম দিয়েছে। এক ছেলে এক মেয়ে।
কিন্তু এখনো ওদের কে স্পর্শ করতে পারেনি। ডক্টর আদিত্য আহমদ বললেন বাচ্চাদের জন্য স্পেস খুব একটা ছিলো না। ছেলেটা মোটামুটি সুস্থ আছে কিন্তু মেয়েটা কে অবজারভেশনে রাখতে হচ্ছে।
.
ভোরের দিকে অর্থির মনে হলো কেউ একজন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। তার মাথাটা ঠিক অর্থির বুকে।
চোখ না খুলেই বুঝতে পারলো এটা আর কেউ নয় রুপ।
যখন যখন দোষ করে ফেলে ঠিক তখন চুপচাপ এসে অর্থির বুকে মাথা রেখে চুপচাপ থাকবে, একসময় ঘুমিয়ে যাবে। নিজেও উঠবে না ওকেও উঠতে দিবে না। ঘুম থেকে উঠে
দেখবে অর্থির সব রাগ গলে পানি।
আচ্ছা রুপ কি জানে? ওদের দুজন বেবি হয়েছে?
.
নার্স এসে এভাবে দেখে রুপ কে ডাক দিতে চাইলে অর্থি ঈশারা করে কিছু না বলতে।
– আপনার কস্ট হচ্ছে না?
নার্সের প্রশ্নে অর্থি শুধু মাথা নেড়ে না বলে।
.
.
ঘুম থেকে উঠে রুপ দেখে অর্থি জেগে আছে।
রুপের অপমানবোধ কাজ করছিলো।
এই মেয়েটাকে এই সময় একা ফেলে যাওয়া ঠিক হয়নি।
আগে থেকে সে জানতো যে কিছু কমপ্লিকেশন আছে তারপরেও!
নিজের দুহাত দিয়ে অর্থি কে স্পর্শ করতে বিবেকে বাধছে।
সব থেকে কঠিন সময় এই সময়।
ভরসার হাত চেয়েছিলো মেয়েটা।
একটা সময় মেয়েটা রুপের জন্য সব ছেড়েছিলো।
কিন্তু আজ?
.
.
– আমাকে একটু পানি দিবা? গলা শুকিয়ে গেছে।
– মোটেই না! স্যালাইন চলছে।
– একটু। প্লিজ। না হলে মরে যাবো।
– না! একটুও না।
– আমি মরে গেলেতো তুমি খুশি হও। কালকেই বিয়ে করতে পারবা। কিন্তু আমার সন্তান দুইটা তো এতিম হবো।
.
কথাটা রুপের বুকে গিয়ে কাটার মতো বিধেছে। আচ্ছা ও কি কিছু বুঝতে পেরেছে? না হলে এসব কেনো বলছে?
.
কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ম্যাসেজের শব্দ হলো
Nishi- tnkkkk u solo much.. Kal rate etttttto gula valobashar jnno.. Love u
.
রুপ রিপ্লে দিলো না। মোহে পড়ে হয়তো সে ভুল করেছে কিন্তু এক ভুল বারবার করলে সেটা পাপ হয়। ম্যাসেজ মিউট করে রেখে দিলো সে।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো কয়েকটা দিন।
ছেলেকে কোলে পেয়েছে। কাল মেয়েকে দিবে। দিলেই ওরা বাসায় চলে যেতে পারবে।
এই কয়েকদিন রুপ অফিস,সাইট কোথাও যায়নি। শুধুই অর্থির কাছে ছিলো।
পুরো দুনিয়া যখন এখানে তাহলে ফোন দিয়ে কি হবে আর অর্থির খেয়াল রাখতেই সময় পার। ফোন চার্জে দেওয়ার সময় সে পায়নি।
.
দুই দিন পর ফোন অন করে দেখে নিশিতার অনেক ম্যাসেজ।
শেষ ম্যাসেজ টা এমন ছিলো
Nishi- tui jdi ekhn na asish! miliye nish ami suicide korbo…..
.
সাথে হাত কাটার একটা ছবি।এমন দেখে রুপ আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।
আসছি বলেই বেজমেন্ট থেকে গাড়ি নিয়ে দ্রুত ছুটলো বনানীর ফ্ল্যাটে।
নিশি কিছু করে বসবে না তো? খুব জেদি মেয়ে। আট বছর ধরে চেনে ওকে। যা চাই না পেলে নিজের ক্ষতি করবে।
ওর কিছু হলে ও কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না।
অনেক ক্ষণ বেল বাজানোর পর দরজা খুলছে না নিশি।
ভয়ে হাতপা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
ঠিক আছে তো ও?
ঠিক সে সময় দরজা খুলে দিলো নিশি।
কোন কথা না বলেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিশিকে।
ঠিক এমন ভাবে ধরেছিলো কলেজ থেকে টুরে গিয়ে যখন নিশি রাতের বেলা কক্সবাজারে লুকিয়ে ওকে ভয় দেখিয়েছিলো সেদিন।
.
– একটা চড় মেরে তোর সব দাত ফেলে দেবো ( রুপ)
– এই বাহানায় তো স্পর্শ পাবো। (নিশি)
– মাথা ঠিক আছে তোর? কি সব ম্যাসেজ দিয়েছিস?
– আমি মরলে কার কি?
– আমার সবই।।
– তাহলে কই ছিলি এই কয়দিন? অর্থির কাছে তো? কি আছে ওর মাঝে যা আমার মাঝে নেই?
.
রুপ নিজের মাঝে নিশি কে মিলিয়ে নেয়।
বুঝতে পারে মেয়েটার জ্বর।
কিছু হয়তো খায় নি।
বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে
– আমি খাবার নিয়ে আসছি! তুই উঠবি না।
– তুই চলে যাবি….
– আমি যাবো না পাগলী।
– চলে গেলে সত্যি মরে যাবো কিন্তু
.
রুপ কিছু না বলে নিশির কপালে চুমু দেয়।
– ঠোঁটে দিলে কি ফুরিয়ে যেতো?
.
অভ্যেস হয়েগেছে রুপের। কোথাও বের হওয়ার আগে অর্থি কে সবসময় কপালে চুমু দিয়ে বের হয়। ঠোঁটে দিলে বলতো
ভালোবাসার বিশুদ্ধ, পবিত্র বহিঃপ্রকাশ কিন্তু কপালে চুমু দেওয়া তেই।
.
সেদিন বৈশাখের প্রথম কালবৈশাখী ছিলো যা অনেক কিছু কেড়ে নিয়ে গেলো।
.
.
রাত প্রায় ১০ টা। রাতের খাবার খেয়ে কেবল শুতে যাচ্ছিলেন অর্থির মা বাবা। ঠিক সে সময় অর্থির মায়ের ফোনে কল এলো। স্ক্রীণে নাম্বার দেখে আতকে উঠিলেন তিনি। এত দিন পর? কেনো অর্থি কল দিয়েছে? মেয়েটা ঠিক আছে তো? কাপা কাপা হাতে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ কাদছে আর বলছে..
.
– মা! মা গো? তুমি কেনো আমাকে অভিশাপ দিছিলা? মা আমি তোমার সন্তান বেঁচে রইলাম কিন্তু তোমার কথা মতো আমি সন্তান হারা মা।
মা! তুমি অভিশাপ টা ফিরিয়ে নেও না গো মা।
আমার দুধের সন্তান টা বেঁচে যাক।
মা! মা তুমি শুনছো?
.
.
(চলবে)
.
Sabiya moon