বজ্জাত বর
পর্ব ১৬
লেখক বিলকিস
অনেক সকালে মিষ্টি বাড়ির উদ্দে্শ্যে রওনা দেয়। বাড়ি গিয়ে দেখতে পায় বাবা ড্রোয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছেন। মিষ্টির খুব কান্না পাচ্ছিলো বাবাকে দেখে। তাই লাগেজ ওখানে রেখেই বাবার কাছে দৌড়ে যায়। মিষ্টির বাবা মিষ্টিকে এতো সকাল সকাল দেখে অবাক হয়ে যায়। বলে,
বাবা: কি রে মা এতো সকালে তুই এখানে?
মিষ্টি: কেন? আমি আসতে পারি না বুঝি। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই চলে এসেছি।
বাবা: ও। কিন্তু তাই বলে এতো সকালে। তা জামাই কই?
মিষ্টি: বাবা উনি আসেনি। আমি কদিন এখানে থাকবো।
বাবা: আসেনি মানে কি বলছিস? আচ্ছা জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে চলে আসিস নিতো।
মিষ্টি: এতো জামাই জামাই করছো যে। ঠিক আছে জামাইকে নিয়েই থাকো। আমি তাহলে গেলাম।
বাবা: আরে আরে এই দেখো আমার মেয়ে রাগ করেছে। আচ্ছা ঠিক আছে তোর যে কদিন ইচ্ছা থাক।
তারপর মিষ্টি রহিমাকে বলে লাগেজ ওর ঘরে নিয়ে যেতে বলে। আর মিষ্টি সিড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।
এদিকে সারাদিনের ক্লান্তিতে পরশ ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে একটু বেলা করেই ঘুম থেকে ওঠে। ওঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে নিচে খাবার টেবিলে যায়।
তখন পরশের বাবা, মা আর দিশাকে নাস্তার টেবিলে দেখতে পায়। আশেপাশে তাকিয়ে মিষ্টিকে দেখতে পেলো না।
তাই। একটু ইতস্ত ভাব নিয়েই মাকে জিজ্ঞেস করলো,
পরশ: মা মিষ্টিকে দেখছিনা যে। কোথায় ও?
মা: মিষ্টি আজ সকালে ওদের বাড়িতে গেছে। বলেছে কয়দিন নাকি থাকবে।
পরশ: what! ( মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো) কি বলছো এসব?
মা: হ্যা । তোকে জানায়নি কারন তুই ওকে যেতে দিতিনা। আর আমিও মানা করলাম না। মেয়েটা মুখটা খুব মলিন লাগছিলো কাল রাতে যখন কথা বলছিলো।
পরশ: ও। তারপর না, খেয়ে টেবিল থেকে ওঠে যায়।
মা: কি রে নাস্তা করবি না।
পরশ: নাহ ভালো লাগছেনা। তারপর রুমে চলে আসে।
নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো পরশের। কিন্তু পর মূহুর্তে রাগটা মিষ্টির উপর গিয়ে পড়লো।
আর রাগে নিজেই বকবক। করছিলো,
পরশ: এই মেয়েটা কি আমাকে টেনশনে রাখার জন্য জম্ম নিয়েছিলো নাকি। কি এমন করেছি আমি যে বাড়িতে যেতে হবে না বলেই। আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো? আমি কি অন্যের বউকে আদর করেছি নাকি। যা করেছি নিজের বউয়ের সাথে করেছি। নাহ এই মেয়ে সোজা কথার মানুষ না। একে সোজা করতে এর মতো আমাকে বাঁকা হতে হবে । বর কে ছেড়ে যাওয়া না? এখন দেখবে তোমার বর, কি করে।
মিষ্টি ঘরে এসে খুব কান্না করছিলো। মনে হচ্ছিলো ওর চারপাশটা যেনো তছনছ হয়ে গেছে। এক সময় ভাবে সবকিছু ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো। কিন্তু পর মূহুর্তে আবার ভাবলো কেনো যাবে?
*নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*
একটা মানুষের জন্য ও এতো কিছু sacrifice করতে পারবো না। ও আর কষ্ট পাবে না। এখন থেকে হাসবো খেলবো কলেজ যাবো। সব কিছু আগের মতোই চলবে।
তারপর মিষ্টি ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে কলেজ চলে যায়।
মিষ্টির বাবা মিষ্টির হঠ্যৎ চলে আসতে একটু ভাবনায় পড়ে যায়। তাই মিষ্টির শশুর। বাড়িতে ফোন দিলে ওর শাশুড়ি ফোন ধরে,
মিষ্টির বাবা: আসসালামু ওলাইকুম ভাবি। কেমন আছেন,?
শাশুড়ি: অলাইকিম। আসসালাম ভাইজান। ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন।
মিষ্টির বাবা: জি আলহামদুলিল্লা ভালো । ইয়ে মানে আজ এতো সকালে মিষ্টি বাড়ি চলে এলো। সব ঠিক আছে তো।
শাশুড়ি: জি সব ঠিক আছে। আর যদি কিছু হয়ও তাহলে সেটা ওরাই ঠিক করে নেবে। কারনটা হলো দুরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়। আর আমি জানি এই দুরত্ব ওদের। আরো বেশি কাছে টানবে।
মিষ্টি বাবা: তাই যেনো হয় ভাবি। বাড়ির সবাই ভালো আছেতো?
শাশুড়ি: জি সবাই ভালো আছে।
মিষ্টির বাবা: আচ্ছা এখন তাহলে রাখি।
পরশ রেডি হয়ে কলেজে চলে যায়। কলেজে গিয়ে দেখে মিষ্টি ওর বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা মারছে।
পরশ: আমাকে না জানিয়ে বাড়ি চলে আসা হয়েছে। আবার এখানে এসে বন্ধুদের সাথে গল্প করা হচ্ছে। আর এদিকে আমি অনুশোচনায় মরছি। এখন তো দেখছি সবই ঠিক আছে। তাহলে আমিই। বা এতো ভাবছি কেনো। কিন্তু আমিতে ভুল করেছি। আমার তোমার উপরে জোড় করা উচিত হয়নি।
আজ আমি তোমাকে sorry বলে সব ঠিক করে নেবো।
পরশ এগুলো মনে মনে বলছিলো। তারপর অফিস রুমে চলে আসে।
সারাদিন ওদের মধ্যে কোনো কথা হয়না। এমনকি পরশ যখন ক্লাস নিতে যায়। তখন। মিষ্টি পরশের দিকে তাকায় ও না। পরশ অবশ্য মিষ্টিকে আড় চোখে বারবার দেখছিলো।
কলেজ শেষে মিষ্টি ওর বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফিরছিলো।
রাস্তায় গাড়ি না পাওয়ার ওরা হেটে হেটেই যাচ্ছিলো।
রুমি: কি রে মিষ্টি তোদের হানিমুন কেমন কাটলো।
মিষ্টি: ( হানিমুনের কথা শুনেই যেনো বুকে মধ্যে ধুক। করে উঠলো। কারন ওখানেই আমার জীবনের সবথেকে খারাপ ঘটনাটা ঘটেছে। যাই হোক আমি সব ভুলে থাকতে চাই) তোদের বিয়ে হলে তারপর বুঝবি কেমন কাটে। ফাজিল সব।
আলো: কিন্তু মিষ্টি তুই আজ স্যারের সাথে কোনো বললিনা কেনা। স্যার কিন্তু তোকে বারবার দেখছিলো।
মিষ্টি: এই তোরে যে এতো স্যার স্যার করছিস। তো স্যারের সাথে যানা। তোরা কেউ আমার বন্ধু না।
ওই বজ্জাত স্যারের কাছে পড়তে পড়তে তোরাও বজ্জাতের হাড্ডি হচ্ছিস। এই বলে মিষ্টি একা একা হাটতে লাগলো।
এদিক পরশের আর একটা ক্লাস থাকায় বেরুতে দেরি হয়
বাইরে এসে দেখে মিষ্টি, নেই। তাই সে হতাস হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পাড়ে। কিছুদূর যেতেই দেখে মিষ্টি একা একা হাটছে। তাই পরশ গাড়ি নিয়ে মিষ্টির কাছে গিয়ে দাড়ায়। তারপর গাড়ি থেকে নেমে মিষ্টির কাছে গিয়ে দাড়ায়।
কিন্তু মিষ্টি পরশকে দেখোই চলে যেতে নিলেই পরশ মিষ্টির হাত ধরে ফেলে
পরশ: গাড়িতে ওঠো, মিষ্টি।
মিষ্টি: ছাড়ুন আমাকে। আর আমি আপনার গাড়িতে কেন?
পরশ: কারন তোমার বরের কাছে গাড়ি থাকতে তুমি হেটে যাচ্ছো।
মিষ্টি’ : আমার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে যাবো তাতে আপনার কি?
পরশ: আমার অনেক কিছু। এখন চলো
তাই বলে মিষ্টির হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।
এমন সময় পাশ দিয়ে দুজন লোক যাচ্ছিলো তখনই মিষ্টি বলে ওঠে,
মিষ্টি: এই যে দেখেন এই লোকটা আমার সাথে ইফটিজিং করছে।
হঠ্যৎ মিষ্টির এই ধরনের কথায় পরশ অবাক হয়ে তাকালো।
তখনই এক লোক বললো,
লোক: এই যে ভাই রাস্তায় সুন্দরি মেয়ে দেখলে হাত ধরে টানাটানি করতে ইচ্ছা করে তাইনা। দেখে তো ভদ্র লোকই মনে হয়।
পরশ: ( রাগে মাথা জ্বলে যাচ্ছে । শেষ পর্য়ন্ত নিজের বউ আমাকে ইফটিজিং এর দায় দিলো) আপনারা ভুল করছেন। উনি আমার স্ত্রী। রাগ করেছে তাই রাগ ভাঙাচ্ছি।
লোক: ও এখন আবার বউ বলা হচ্ছে।
মিষ্টি দেখলো অবস্থা বেগোতিক। তাই লোকগুলোকে বুঝিয়ে ওখান থেকে বিদায় করলো আর নিজে একটা আটো নিয়ে চলে গেলো।
আর পরশ বোকার মতো দাড়িয়ে রইলো………
( চলবে)