“বখাটে বউ”(পর্ব-৪)
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আম্মু রান্নায় খুব ব্যস্ত। আর যুথী দৌড়ের উপর আছে। হঠাৎ মনে হলো আজ পাশের বাসায় তরকারী যাবে। তরকারী বহন করবে সম্মানীয় বর্ণিতা। ঐ বাসায় গিয়ে ঐ হ্যান্ডসাম ফাজিল ছেলেকে জ্বালাতে পারবো ভেবে ঈদ ঈদ লাগছে কিন্তু যখনই মনে পড়ছে যে ও বাসার আন্টির সামনে তরকারীর বাটি হাতে কি করে দাড়াবো, তখনই ফাটা বেলুনের মতো সব উচ্ছাস চুপসে যাচ্ছে। কিচেন থেকে নানান রকমের তরকারীর গন্ধ আসছে। এত বয়ে নিয়ে যাবো কি করে সেটাই একটা বড়সড়ো ফ্যাক্ট। এর চেয়ে ভালো হতো তাদের এই বাসায় দাওয়াত করলে। কি করতে যে কি করলাম ধুর!
কিচেনে উকি দিতেই আম্মু বললো-
__”এসব তুই আর যুথি গিয়ে দিয়ে আসবি। আর উনাকে বলবি তিনি যেনো আমাদের বাসায় আসেন।”
__”আসতে হবে কেনো?”
আম্মু বেশ ভাব নিয়ে বললো-
__”আমি কত রকমের সেলাই জানি, সেগুলোও তো দেখাতে হবে।”
আম্মুর উচ্ছাস দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। মেয়েরা এমন কেনো এটাই বুঝি না। সেলাইয়ের ঘন্টা দেখানোর কি আছে? মনে হচ্ছে উনি সেলাই করে নোবেল পেয়েছেন। এখন কিছু বলা যাবে না। বেফাঁস কথায় ফেঁসে যেতেই পারি। তাই মনের আক্ষেপ চেপে রেখে বললাম-
__”আচ্ছা সে না হয় বলবো। কিন্তু এত আইটেম না করলেও পারতে। একটা বাটি হাতে অচেনা বাড়িতে কোনো রকমে ঢুকাই যায় কিন্তু এত গুলো বাটি হাতে যাই কি করে? কি ভাববে তারা তা একবার ভেবে দেখেছো?”
আম্মু বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
__”অচেনা কেনো হবে? তুই তো বললি যে তার সাথে তোর কথা হয়েছে।”
এই রে ধরা পড়ে যাচ্ছি নাকি? নো নো ধরা পড়া যাবে না, সাবধান বর্ণ সাবধান। আমি স্বাভাবিক ভাবে বললাম-
__”কথা হয়েছে বলেই কি তেনারা কুটুম হয়ে গেছেন নাকি?”
আম্মু মায়া মায়া মুখ করে বললো-
__”কুটুম না হোক প্রতিবেশী তো হয়েছে। প্রতিবেশী কুটুমের চেয়ে বেশি আপন।”
আম্মুর হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে। প্রতিবেশীরা তার বাপের কুলের কুটুমের চেয়েও একটু বেশিই আপন। যত্তো সব ঢং!
__”হইছে থামো। সব দিয়ে আসছি।”
একটা বড় ট্রে এর উপর কয়েকটা বাটি বসিয়ে ট্রে হাতে নিলাম। যুথির হাতেও একটা বড় ট্রে এর উপর কয়েকটা বাটি বসিয়ে দিলাম। তারপর দু’জন নাচতে নাচতে গেলাম পাশের বাসায়। আমার বুকের ভেতরে তো ধুকপুকুনি শুরু হয়ে গেছে। আম্মুকে যে কেনো পটাতে গেলাম! এই দুঃখে নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। অনেক সাহস জুগিয়ে চোখ বন্ধ করে ডোরবেল চাপলাম। দুই বার ডোরবেল চাপার পর দরজা খুলে গেলো। চোখ খুলে দেখি হিরো দাড়িয়ে। ওমাগো কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। হঠাৎ তার মায়ের কথা মনে হতেই সব আনন্দ কর্পূরের মতো উড়ে গেলো। থেমে গেলো আমার ঈদ ঈদ আনন্দ। আকাশে বাতাসে আনন্দ নয় ধুকপুকুনি শুরু হলো। আর কেমন কেমন যেনো লাগতে শুরু করলো। জানি না আসলে এই কেমন কেমনটা আসলেই কেমন। আমার চোখমুখেও আর জোর নেই। সে চোখ কপালে তুলে বললো-
__”বাহ্ বেলকোণ আর ছাদে জ্বালিয়ে হয়নি এখন বাড়িতেও চলে এসেছেন? আসুন আসুন রানীসাহেবা আসুন। তারপর আমাকে জ্বালিয়ে কয়লা বানিয়ে আপনি ধন্য হন।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
তার কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেলো। রাগ করে ধমকের স্বরে বললাম-
__”দেখেন আমি জ্বালাতে নয় তরকারী দিতে এসেছি। আপনার মাকে ডাকুন তো।”
সে বিস্ময়ের স্বরে বললো-
__”তরকারী কেনো?”
আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__”ইচ্ছা তাই।”
__”ইচ্ছে মানে?”
__”ইচ্ছে মানে হলো মনের খুশখুশ। বুঝেছেন?”
__”খুশখুশ শব্দটা তো এর আগে কখনো শুনিনি। এর মানে কি?”
__”খুশখুশ মানে হলো বাসনা। আমার বাসনা হয়েছে তাই তরকারী এনেছি। আপনার প্রবলেম আছে এতে?”
__”আছে তো। এসব নিয়ে জ্বালাতে এসেছেন নিশ্চয়ই?”
__”এখন তো কথার খই ফুটছে দেখছি। দরজা ঘিরে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন, একটা মেয়ে বাড়িতে এলে যে তাকে বসতে দিতে হয় সেই ভদ্রতাটুকু আপনার নেই?”
কথাটা বলে তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি ডোন্ট কেয়ার ভঙ্গিমায় দরজার সমনে থেকে তাকে ঠ্যালা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। সে হা করে চেয়ে রইল। আমি আন্টি আন্টি বলে জোরে জোরে ডাকলাম। আমার ভাব দেখে আমারই মনে হচ্ছে যে আন্টি আমার বহু পুরোনো চেনা। আর এই হ্যান্ডসাম বান্দরটা এবাড়িতে নতুন এসেছে। আমার ডাক শুনে একজন সুন্দরী ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন। উনি হা করে আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। সাথে ঐ ফাজিল হিরোটাও চেয়ে রইলো। আন্টি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন-
__”তুমি কে?”
আমি লাজুক হাসি দিয়ে বললাম-
__”আমি বর্ণিতা আন্টি। ঐ যে পাশের বাসাটা দেখছেন ওটা আমাদের।”
উনি বিস্ময় নিয়েই বললেন-
__”ও আচ্ছা।”
__”আন্টি বাটি গুলো রাখুন।”
এবার উনি আমার হাতের ট্রে এর দিকে তাকালেন। তারপর বিস্ময়ের স্বরে বললেন-
__”কিসের বাটি এগুলো?”
__”আম্মু আপনাদের জন্য তরকারী পাঠিয়েছে।”
__”কেনো?”
আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম-
__”আসলে এটা আমাদের বংশীয় রীতি। পাড়ায় কেউ নতুন এলে আমরা তাদের খাবার পাঠিয়ে প্রতিবেশী হিসেবে বরণ করে নিই।”
মনে হলো আমার কথা শুনে তিনি কয়েকগুণ বেশি অবাক হলেন। ঐ ফাজিলটার দিকে তাকিয়ে দেখি সে হা করে তাকিয়ে আছে। আন্টি আস্তে করে বললেন-
__”ও আচ্ছা।”
আমি ড্রয়িং রুমের এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম-
__”আন্টি আপনি তো দারুণ ভাবে বাড়িটাকে সাজিয়ে রেখেছেন দেখছি।”
__”হুম।”
এরপর আর কি কি বলবো তা কিছুতেই মনে পড়ছে না। হঠাৎ মনে হলো আম্মু তো তাকে যেতে বলেছে। বললাম-
__”আম্মু কিন্তু আপনাকে আমাদের বাসায় যেতে বলেছে।”
__”কেনো?”
এখন তো আর বলতে পারছি না যে আমার আম্মু কি কি সেলাই পারে সেগুলো দেখানোর জন্য যেতে বলেছে। আমি হাই ডোজে পাম দেবার চেষ্টা করলাম। বেশ ইনোসেন্ট মুখ করে বললাম-
__”প্রতিবেশী হিসেবে বরণ করে নিয়েছি আপনাদের। এখন যদি আপনি আমাদের বাসায় না যান তাহলে তো ভাববো আপনি আমাদের প্রতিবেশী মনেই করেন না।”
আমার কথা শুনে উনি আরো অবাক হলেন মনে হলো। ইয়া আল্লাহ অবাক হবার মতো এমন কি বলছি যে উনি সেকেন্ডে সেকেন্ডে অবাক হচ্ছেন?
__”আচ্ছা যাবো।”
__”আপনি সত্যিই যাবেন কিন্তু, নইলে আম্মু খুব কষ্ট পাবে।”
__”আচ্ছা যাবো।”
__”আপনি খুব ভালো।”
আমার কথায় উনি হালকা হাসলেন। আর বেশি কথা বলে ফেঁসে গিয়ে গুবলেট করার কোনো দরকার নেই। তাই সরে আসাই বেটার। বললাম-
__”আন্টি তাহলে এখন আমি যাই?”
উনি হাসিমুখে বললেন-
__”আচ্ছা আবার এসো কিন্তু।”
__”অবশ্যই আসবো আন্টি।”
আমাকে তো আসতেই হবে ডিয়ার আন্টি। তা না হলে আপনার ছেলেকে জব্দ করবো কি করে? তাকিয়ে দেখলাম ফাজিলটা ড্রয়িং রুমে নেই। ধুর! যাবার সময় একটু দেখতেও পেলাম না। খামাখা একগাদা তরকারী দিয়ে গেলাম।
বাড়ি ফেরার পর আম্মু এমন ভাবে ছুটে এলো যে, মনে হচ্ছে আমি অনেক বছর পর বিদেশ থেকে এসেছি। সামনে দাড়িয়ে বললো-
__”কি রে উনি কিছু বললেন?”
__”আসতে বলেছি আসবেন। তুমি এতো নেচো না তো। তোমার এত দরদ হলে নিজেই যাও আর যা যা দেখাতে চাও দেখিয়ে এসো।”
কথাটা বলেই রুমে চলে এলাম। গতকাল থেকে আমি টেনশনে ক্লান্ত। বাবা মেয়ে দূর থেকে বিরক্ত করছিলাম সেটাই তো ভালো ছিল। খামাখা কি সব করলাম। আর আম্মুরও যেনো সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি। না জানি আন্টি মনে মনে কি কি ভাবলেন। যাই হোক ঝামেলা শেষ বেঁচে গেছি। রুমে এসে বসতে না বসতেই আম্মু রুমে ঢুকে বললো-
__”পাশের বাসার ভাবীটা মিশুক প্রকৃতির তো?”
__”একদিনেই কি এটা বোঝা যায় বলো?”
__”এক দিন হবে কেনো? তুই তো তার সাথে এর আগেও কথা বলেছিস!”
__”আমি আবার কবে কথা বললাম তার সাথে?”
__”তুই তো কাল বললি যে সে তোকে আমার কাজ আর রান্নার কথা বলেছেন।”
এই রে ধরা পড়ে গেলাম নাকি? তীরে এসে তরী ডুবলে তো প্রবলেম। বললাম-
__”ওহ তাই তো। আসলে ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে তো তাই সব ভুলে গেছি আর আরেকটা কথা হলো ঐ আন্টি তোমাকে যেতে বলেছেন।”
__”এই কথাটা তুই এতক্ষণ বলিসনি কেনো?”
__”মাথা ব্যাথায় সব ভুলে গেছি। এখন যাও তো আমি একটু ঘুমাবো।”
মাথা ব্যথার বাহানায় এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম। আম্মুটা যে কেনো এত পুলিশের মতো জেরা করে! মিথ্যা বলতে বলতে তো আমি আধমরা হয়ে গেলাম খোদা।
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
পরের পর্ব আগামী কাল…..
Written by- Sazia Afrin Sapna
পর্ব-৩
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=910317419398978