“বখাটে বউ”(পর্ব-৩)
আম্মুকে পটিয়ে পাশের বাসার ঐ আন্টির সাথে বান্ধবী পাতিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম। যেনো তাদের বাড়িতে গিয়ে ঐ ভদ্র হ্যান্ডসামকে জ্বালিয়ে আসতে পারি। আম্মুকে পটানো খুব সোজা। যদি কেউ আম্মুকে বলে- “বাহ আপনি এত কাজ করতে এক্সপার্ট!
অথবা “আপনার রান্না খুবই চমৎকার। এক কথায় জবাবহীন।”
তাহলেই কেল্লাফতে। হয় আম্মু ফুলে লুচি হয়ে যাবে, নয় গলে স্যুপ হয়ে যাবে। আমি এই সুযোগটাই নিলাম। বানিয়ে বানিয়ে ঐ হিরোর মায়ের কথা বললাম। আম্মু কিচেনে রান্না করছে। আমি প্ল্যান সাজিয়ে নিয়ে হাজির হলাম কিন্তু কি বলে যে শুরু করবো সেটাই বুঝে পাচ্ছি না। যাই হোক কেশে কুশে গলা ঠিক করে বললাম-
__”জানো আম্মু সেদিন পাশের বাসার আন্টি বললেন, তোমার আম্মু এত কাজ করতে পারেন বাবাহ! আমি তো উনার এনার্জী দেখেই অবাক হই।”
আম্মু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
__”সে আমাকে কখন কাজ করতে দেখলো?”
এই রে সেরেছে! তাই তো, তিনি আবার কখন কাজ করতে দেখলেন? এখন কি বলি? ধুর সব প্ল্যান করে সাজিয়ে তবেই পটাতে আসতে হতো। হুড়মুড় করে পটাতে এসে এখন ফেঁসে না যাই। প্লিজ আল্লাহ দেইখো আমি যেনো ধরা না পড়ে যাই। আর একটা উপায় খুঁজে দাও কুইক, যেনো আম্মুকে ম্যানেজ করতে পারি। হঠাৎ কিচেনের জানালা দিয়ে ওদের কিচেনে চোখ পড়লো। আইডিয়াও পেয়ে গেলাম। থ্যাংকস গড! বললাম-
__”তার আর তোমার কিচেন তো সামনা সামনি তাই হয়ত তিনি তোমাকে কাজ করতে দেখেছেন।”
আম্মু বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো-
__”আর কি কি বলেছে রে?”
এই তো লাইনে আসছে ইয়াহু! আমি বেশ উচ্ছাস নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে বললাম-
__”আন্টি বলেছেন, কি দারুণ রান্নার ঘ্রাণ আসে তোমাদের কিচেন থেকে আল্লাহ! তোমার আম্মু নিশ্চয়ই খুব ভালো রান্না করেন!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
এটা শুনে আম্মুর চোখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। আর তার সাথে আমার মুখটাও খুশিতে মাখামাখি হলো। মিশন তরতর করে সাকসেস হতে যাচ্ছে। আম্মু মুখটাকে লাজুক করে বললো-
__”আচ্ছা কাল ওদের বাড়ি গিয়ে তরকারী দিয়ে আসিস আর আমাদের বাড়িতে তাকে আসতে বলিস, পরিচিত হবো।”
এই রে মরেছি! অচেনা মানুষকে তরকারী দিতে যাবো কি করে? উনিই বা তরকারী নেবেন কেনো? ধুর ভাবলাম আম্মু আমাকে সাথে নিয়ে হয়তো ওদের বাড়িতে যাবে পরিচিত হতে। তারপর আমি ওবাড়িতে যখন তখন যাওয়াটা পাকা করে নেবো। তারপর আরাম আয়েশে ঐ বয়রা হিরোটাকে জ্বালাবো। কিন্তু তরকারীর বাটি হাতে সব গুবলেট হয়ে যাবে। আমি মুখটাকে ফাটা বেলুনের মতো করে বললাম-
__”আচ্ছা।”
আম্মু উচ্ছাসিত হয়ে বললো-
__”আমি কাল সকাল সকাল রান্না করবো। তুই সকালে একটু আগেই উঠবি। অতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাবি না। কিসের এত ঘুম ঘুম হ্যাঁ?”
লে ঠ্যালা! এখন সামলাই কি করে!
পটাতে গিয়ে তো নিজেই ফেঁসে গেলাম, ধ্যাত্তেরি। এখন তো দেখছি আমার ঘুমের দিকেও নজর চলে গেছে। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু মনে কথা চেপে রাখলে আখেরি লস আমারই হবে। তাই সরাসরি বললাম-
__”আমি সকালে উঠতে পারি না জানো না?”
আম্মু কড়া ভাষায় বললো-
__”কাল তোকে পারতেই হবে।”
আমিও মুখ ভেংচিয়ে কড়া গলায় বললাম-
__”পারবো না।”
আম্মু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো-
__”পারবি না বললেই হলো? না পারলে কাল সারা দিন তোর খাওয়া বন্ধ।”
__”কিহ? পাড়া পড়শীর জন্য নিজের পেটের মেয়েকে তুমি খেতে দেবে না?”
__”না দেবো না।”
গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম। পটাতে এসে তো দেখছি জন্মের ফাঁসা ফেঁসেছি। সকালে না হয় উঠে আম্মুকে হেল্প করলাম কিন্তু তরকারী দিতে গেলে ওরা না জানি কি ভাববে? আর তাকে বলবোই বা কি? ঐ ছেলের মাকে তো আমি এখনো চোখেই দেখিনি। হঠাৎ আব্বুর কথা মনে পড়লো। একমাত্র আব্বুই পারেন আমাকে উদ্ধার করতে। যাই আব্বুর সাথে পরামর্শ করে আসি। দৌড়ে আব্বুর কাছে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি সোফায় বসে আব্বু পত্রিকা পড়ে হাসতে হাসতে হেলে হেলে পড়ছেন। পাশে গিয়ে বসে দেখলাম আব্বু ব্যঙ্গরস পড়ছেন। বললাম-
__”তোমার মেয়ে বিপদে আছে আর তুমি ব্যঙ্গ নিয়ে আছো?”
আব্বু পত্রিকা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে বললেন-
__”কি হয়েছে?”
আমি করুণ মুখ করে বললাম-
__”আম্মুকে পটাতে গিয়ে পাশের বাসার আন্টির প্রশংসা করলাম। এখন আম্মু বলছে কাল ওদের বাড়িতে গিয়ে তরকারী দিয়ে আসতে।”
__”নিশ্চয়ই রান্নার গুণ গেয়েছিস?”
__”হ্যাঁ ”
আব্বু বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-
__”ক্যালো করেছো। এখন কাল সকালে উঠে আমাকে এক বস্তা বাজার করতে হবে। সে কি আর এক আইটেম রান্না করে পাঠাবে? ইয়া মাবুদ।”
__”বাজারের বস্তা ছাড়ো তো। আমি অচেনা বাড়িতে ঢুকবো তরকারীর বাটি হাতে। গিয়ে কি বলবো সেই বুদ্ধিটা দাও।”
__”থাম ভেবে নিই। তার আগে বল তো তোর মাকে পটাতে কেনো চেয়েছিস?
আমি ফিক করে হেসে বললাম-
__”যেনো ওদের বাড়িতে গিয়ে ঐ হিরোটাকে জ্বালিয়ে আসতে পারি।”
আব্বু খুশি হয়ে বললেন-
__”ভেরী গুড।”
__”এখন তাড়াতাড়ি আইডিয়া ভাবো।”
আব্বু চুপচাপ চোখ বন্ধ করে কি যেনো ভাবলেন তারপর বললেন-
__”শোন তরকারীর বাটি নিয়ে ডোরবেল বাজাবি, দরজা খুললেই ঢুকে পড়বি।”
__”এটা তো সবাই জানে।”
__”জানিসই যখন তাহলে কি জানতে এসেছিস?”
__”ঢুকে গিয়ে কি বলবো? বলবো, হুদাই আমার আম্মু আপনাদের তরকারী দিয়েছে, এখন ভালোবেসে গ্রহণ করেন, তারপর আমার মায়ের বান্ধবী হয়ে যান, আর আমি আপনার ছেলেকে ইচ্ছে মতো জ্বালাই, এটা বলবো?”
আব্বু মুচকি হেসে বললেন-
__”বলে দেখতেই পারিস।”
__”আব্বু ফাজলামি বাদ দিয়ে ভালো বুদ্ধি বের করো।”
আব্বু চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দম ধরে থেকে বললেন-
__”বলবি আমাদের পাড়ায় নতুন কেউ এলেই আমরা তাদের বাড়িতে তরকারী পাঠাই। এটা আমাদের পারিবারিক রীতি।এটা বলে গল্প শুরু করে দিবি। সহজেই গল্প ছাড়বি না।”
__”দারুণ আইডিয়া। থ্যাংকস আব্বু।”
আব্বুর থেকে বুদ্ধি নিলেও ভরসা পাচ্ছি না। পাশের বাসার আন্টি যদি বলেন-
“আমরা অন্যের বাসার তরকারী নিই না।” তাহলে কি করবো? সে তরকারী না নেয় না নিবে কিন্তু অপমানজনক কোনো কথা যদি বলে তাহলে তো আমি শেষ। খুব টেনশনে ঘামতে শুরু করেছি। ধ্যত্তেরি কিচ্ছু ভাল্লাগছে না। সন্ধ্যায় যুথী কফি নিয়ে রুমে এলো। কফি টেবিলে রেখে বললো-
__”বন্ন আফা সকাল সকাল উইঠেন কিন্তু।”
এমনিতেই আমি টেনশনে ঘেমে নেয়ে একাকার এর মধ্যে ওর এমন কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ধমকের স্বরে বললাম-
__”তুইও আম্মুর মতো শুরু করলি?”
সে ইনোসেন্ট মুখ করে বললো-
__”খালাম্মায় যা কইতে কইছে তাই তো কইলাম। আমি নির্দোষ আফা।”
রাগে শরীর জ্বলতে শুরু করলো। আম্মুটা আসলেই যা তা। চিৎকার করে বললাম-
__”খ্যাঁতা পোড়াই তোর খালাম্মার কথার। আর বালিশ পোড়াই তোর নির্দোষের। যা এখান থেকে এখন।”
সে করুণ মুখ করে বললো-
__”আমি কি করুম কন, খালাম্মার কথা না শুনলে তো সে রাগ করবো। আবার আপনেও রাগ করেন। আমি যামু কই?”
এই মেয়েকে পটাতে হবে অন্য ভাবে। কুইক একটা আইডিয়া বের করে ফেললাম। সে মেরুন কালারে নেইল পলিশ পছন্দ করে আর এটাই টার্গেট। আমি শান্ত স্বরে বললাম-
__”শোন যুথী তুই শুধু আমার কথা শুনবি তাইলে আমার মেরুন কালারের নেইল পলিশটা তোকে দেবো।”
নেইল পলিশ দেবো শুনে ওর চোখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। কিন্তু সে দুশ্চিন্তার ভান করে বললো-
__”আমি তো ঘুষ খাই না আফা, আমি খুব সৎ। তাও যখন খুশি মনে দিতাছেন তখন নিমুনে। খুশি মনে দিলে তো ঘুষ হয় না তাই না আফা?”
যুথীর কথা শুনে গা জ্বলতে শুরু করলো। হায়রে নিষ্পাপ সৎ রে! সে ঘুষ খায় না। অথচ চুপিচুপি আমার রুমে ঢুকে হাতে পায়ে নেইল পলিশ লাগিয়ে চলে যায়। আমি সব জানি, কিছু বলি না তাই। আর উনি এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো সে পাপের ভয়ে খাটের তলায় থাকে। এখন সব কথা মুখে এসেও থেমে গেলো। যুথীকে চেতিয়ে দিলে বিপদটা আমারই হবে তাই। মনে মনে সব চেপে রেখে বললাম-
__”হ্যাঁ খুশি মনে দিলে সেটা ঘুষ হয় না। তুই নিশ্চিন্তে নিতেই পারিস।”
সে খুশি খুশি চোখে তাকিয়ে বললো-
__”অহন কন আমারে কি কি করতে হইবো?”
__”প্রথমত তুই সকালে আমাকে ডাকবি না। আম্মুকে বলবি ডেকেছিস কিন্তু আমি উঠিনি। যদি তুই দরজায় ধুপধাপ বাড়ি দিয়ে আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাস তাহলে তোর খবর আছে।”
__”আইচ্ছ্যা।”
__”দ্বিতীয়ত আমি যেটা যেটা বলবো সেটা সেটা তুই শুনবি।”
__”বন্ন আফা একটা কামের লাইগা একটা জিনিস দিতাছেন, একটা জিনিসে কি সব কাম হইবো কন?”
বাপরে চালাক মেয়েরে! ঘুষ খায় না মুখে বলছে আবার সব কাজের জন্য ঘুষও চাইছে। এখন কিছু বলা ঠিক হবে না। আপাতত এই বিপদ থেকে আগে উদ্ধার হই তারপর যুথীকেও বোঝাবো যে সে কার থেকে ঘুষ চাইছে।
__”ঠিক আছে আপাতত তুই এই একটা কাজই কর। পরের কাজ পরে দেখা যাবে।”
যুথী চলে গেলো কিন্তু আমি টেনশনে হাটাহাটি করছি। আমি চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলাম, তরকারীর বাটি হাতে আমি ওদের দরজায় দাড়িয়ে আছি আর ও বাসার আন্টি বলছেন, “আমরা অন্যের বাসার খাবার নিই না।”এটা শুনে আমি ফাটা বেলুনের মত ঠুস করে ফেটে স্ট্যাচু হয়ে গেছি।
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
পরের পর্ব আগামীকাল…
Written by- Sazia Afrin Sapna
পর্ব-২
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=909586249472095