“বখাটে বউ”(পর্ব-২)

0
2671

“বখাটে বউ”(পর্ব-২)

মজার ঘটনা ঘটলো। আব্বু আমার গান শুনে খুশি হয়ে তবলা কিনে এনে বললেন-
__ “বর্ণ তুই গান গাইবি আর আমি তবলা বাজাবো। দেখি ও ছেলে বাহিরে না বেরিয়ে কোথায় যায়।”
আব্বু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার সব কাজে তার সম্মতি আছে। আম্মু আমার কাজে ব্যাগড়া দিলে আব্বু আমাকে আড়াল করেন। আমি একে ওকে জ্বালাই, এটা আমার পৈশাচিক আনন্দ। আর এই সব কিছুই আব্বু জানেন। আব্বু আমার হাসি মুখ দেখার জন্য সব কিছুই করতে পারেন। কিন্তু ডুগি তবলা কিনে আনবেন এটা আমি কল্পনাও করিনি। তবে আমি তবলা দেখে খুব খুশি হয়েছি। একগাল হেসে দিয়ে বললাম-
__”হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। এবার চাঁন্দু যাবে কই? চাঁন্দুকে টেনে বাইরে এনেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ!”
আব্বু উৎসাহ আর উচ্ছাস নিয়ে বললেন-
__”শোন শুধু সকালে নয়, আমরা সন্ধ্যাতেও গান গাইবো। এক বেলা গান গাওয়াটা কম কম লাগছে।”
আব্বুর কথা শুনে অবাক হলাম। আমরা গান গাইবো মানে কি? আব্বুও আমার সাথে গান গাইবেন নাকি? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
__”আব্বু তুমিও আমার সাথে গান গাইবা?”
আব্বু ভীষণ করুণ দুখী দুখী মুখ করে বললেন-
__”হ্যাঁ গাইবো। সেই কলেজ লাইফে গান গাইতাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে গান গাইতে শুরু করলে এক এক করে সবাই উঠে যেতো। শেষমেশ দেখতাম আমি একলা বসে গান গাইছি। সঙ্গীতের মর্ম ওরা বুঝলো না।”
__”তারপর থেকে গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছো?”
__”তবুও আমি হাল ছাড়িনি। গান গেয়েই চলে ছিলাম। একদিন সব বন্ধুরা বললো, ‘এরপর যদি গান গাস তাহলে তোর সব দাঁত ভেঙে দেবো শালা। তারপর দেখি দাঁতহীন হয়ে তোর বিয়ে হয় কি করে!’ বিয়ে হবে না এমন রিস্ক নেয়া যায় না তাই গানটাই ছেড়ে দিলাম।”
আমি মন খারাপ করে বললাম-
__”এ ভাবেই তুমি চাপে পড়ে গান ছেড়ে দিয়েছো?”
__”পরে আরেকটা চান্স নিয়ে ছিলাম।”
__”কোথায়?”
__”বিয়ের পরে তোর মাকে গান শোনাতে চেষ্টা করেছি। বিছানায় শুয়ে থেকে গান গাই, ওয়াশরুমে বসে গান গাই, অফিসে রেডি হবার সময় গান গাই, ঘুমানোর আগেও গান গাই। নতুন নতুন সে কিছু না বললেও একটু পুরোনো হতেই একদিন সে আমার গান শুনে হাউ মাউ করে কাঁন্না শুরু করলো। আমি তো হতবাক। জিজ্ঞেস করলাম কেনো কাঁদছো? সে বললো, বিনাদোষে আমি নাকি রোজ তাকে শাস্তি দিই এই অখাদ্য গান শুনিয়ে। তবুও আমি সুযোগ পেলেই রুমে বসে গান গাই। একদিন তোর মা তার সব কাপড় চোপড় নিয়ে পাশের রুমে শিফট করলো। বউহীন রাত বড়ই যন্ত্রণার। তবুও আমি গান ছাড়লাম না। সপ্তাহ খানেক পর তোর মা বাপের বাড়ি চলে গেলো। সাত দিন, দশ দিন, এক মাস চলে যায় তাও সে বাপের বাড়ি থেকে ফিরে না। একটাই শর্তে সে ফিরে আসবে। বউকে বাড়ি আনতে গান ছেড়ে দিলাম।”
__”ইশ্ কি হৃদয় বিদারক ঘটনা!”
__”হ্যাঁ রে।”
মনে মনে আমি খুব খুশি হলাম। ওয়াও আব্বুর গান দিয়েই কেল্লাফতে করবো। আমি ভয়ানক খুশি হয়ে বললাম-
__”ওমাগো তাহলে তো দেখছি তুমি ঐতিহাসিক গায়ক। তোমার গান শুনিয়েই ঐ ছেলেকে জব্দ করতে হবে। সে নিশ্চয়ই ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাবে তোমার গান শুনে।”
গানের জন্য দারুণ একটা সঙ্গী পাওয়া গেলো ভেবে ভালোই লাগছে। আব্বু বেশ খুশি খুশি চোখে তাকিয়ে বললেন-
__”বুঝলি বর্ণ, এত দিনে আমার প্রিয় জিনিস টা ফিরে পেতে চলেছি। আমার যে কেমন লাগছে তা তোকে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু তোর মা আবার বাপের বাড়ি চলে যাবে না তো?”
__”এই বয়সে আম্মু বাপের বাড়ি গিয়ে কি করবে? গিয়ে তো দুই দিনের বেশি থাকতেও পারবে না। আম্মুকে নিয়ে টেনশন করো না। বরং এই ভেবে খুশি হও যে, তোমার প্রিয় জিনিসটা দারুণ ভাবে আমরা কাজে লাগাবো।”
আব্বু একগাল হেসে বেশ উচ্ছাস নিয়ে বললেন-
__”আজ তবলা দিবস হিসেবে প্রথমে জাতীয় সংগীত দিয়ে বিচিত্রা অনুষ্ঠান শুরু হবে। ও ছেলেকে আমরা দেখে নেবো।”
__”ওকে।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


পড়ন্ত বিকেলে আমরা হারমোনিয়াম আর তবলা নিয়ে বাপ মেয়ে গান গাইতে শুরু করলাম। “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…”
আনন্দের ব্যাপার হলো আমি হারমোনিয়াম বাজাতে পারি না তাই গানের সুরের সাথে হারমোনিয়ামের সুর মিলছে না। এর চেয়ে ডাবল আনন্দের খবর হলো আব্বু যে কি বাজাচ্ছে আর কি বাজছে তা একটা জটিল রহস্য। আরেকটা ব্যাপার হলো আব্বুর গলার স্বর এত জোরে বাজছে যে আমার গলার স্বর শোনাই যাচ্ছে না। আমি ভলিয়ম বাড়িয়ে আরেকটু জোরে গাইলাম। দেখি আব্বু আরো জোরে ভলিয়ম বাড়ালো। সব মিলেই কাউকে ইফটিজিং করার জন্য এটা একটা স্পেশাল থেরাপি। আমরা বেলকোণ বারান্দায় বসে গান গাইছি আর তাকিয়ে আছি ওদের দরজার দিকে। কখন পাখি বের হবে আর ইফটিজিং এর ফাঁদে আটকে যাবে। পড়ন্ত বিকেলে আমাদের সুরেলা গানসহ হারমোনিয়াম আর তবলার ছন্দ শুনে পাখি বেরিয়ে এলো। আব্বু আর আমি একে অপরের দিকে তাকালাম। আব্বু আঙ্গুল ইশারা করে আমাকে বললেন-
__”ছেলে আমার পছন্দ।”
তারপর আব্বু চোখ টিপ মেরে তাকে বললেন-
__”এই হ্যান্ডসাম তোমার নামটা তো বলো!”
সে চোখ কপালে তুলে আব্বুর দিকে চেয়ে রইলো। আব্বু মুচকি হেসে বললেন-
__”ভাষা হারিয়ে ফেলেছো হিরো?”
সে কিছু না বলে রুমে চলে গেলো। আব্বু চিল্লিয়ে বললেন-
__”হেই বয় এমন করে চলে যেও না!”

সে ভেতরে যাবার পর আব্বুর সাথে হাত মিলিয়ে আমরা দু’জন খুব হাসলাম। আব্বু বললেন-
__”জানিস বর্ণ এই বয়সে বখাটেপনা করতে আমার হেব্বি লাগছে। আর পুরুষ হয়ে পুরুষকে ইফটিজিং আমার আনন্দ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়াছে।”

পরের দিন বিকেলে ছাদে উঠতেই দেখি হিরো দাড়িয়ে আছে। নাম জিজ্ঞেস করে তো লাভ নেই তাই তাকে ছাদ ছাড়া করতে হবে। মূলত তার নাম জানার ইচ্ছেটাও আমার নেই। আমি আসলে তাকে জ্বালানোর জন্যই এসব করি। আমি তাকে ছাদে দেখে ছাদে না উঠে দৌড়ে রুমে গিয়ে হারমোনিয়ামটা আনলাম। তারপর ছাদে বসে গান ধরলাম।
“তুমি দুঃখ পাও তুমি কষ্ট পাও এই আমি চাই। তুমি বোঝোনি এই আমাকে শুধু ছিলে ছলনায়..”
এই টুকু গাইতেই দেখি আব্বু তবলা হাতে দৌড়ে আসছেন। আমি গান থামিয়ে হা করে কিছুক্ষণ আব্বুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি হিরোও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আব্বু আমার পাশে বসে বললেন-
__”বর্ণ আবার প্রথম থেকে শুরু কর। তবলা ছাড়া গান হয় নাকি?”
আমি হারমোনিয়ামে হাত রেখে সামনে তাকিয়ে দেখি যুবক আমাদের দিকে হতভম্ব হয়ে মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। সে হয়ত এই বয়সে আব্বুর আচরণে হতবাক হয়েছে। আমি গান শুরু করলাম, আর আব্বু তবলাসহ গানে যোগদান করলেন। দুই কাউয়ার দুই রকমের সুরেলা কা কা সাথে বিস্ময়কর হারমোনিয়ামের সুর আর ধুমধাম তবলার আওয়াজ শুনে ছেলের মুখ করুণ হয়ে গেলো। সে দেরি না করে দ্রুত নিচে চলে গেলো।
সে চলে যাবার পর আব্বু আর আমি খুব হাসলাম। আব্বু হাসতে হাসতে বললেন-
__”যুবক জব্দ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আরো কিছু করা যায় কি না ভাবতে হবে, কি বলিস তুই!”
আব্বু এমন ভাবে বলছেন যেনো তিনি একাই যুদ্ধ জয় করে দেশ উদ্ধার করে সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন। আমিও অবাক হচ্ছি আব্বুর উৎসাহ দেখে। আমিও উৎসাহ নিয়ে বললাম-
__”হ্যাঁ আব্বু ভেবে বের করো।”
আব্বু আরো উৎসাহ নিয়ে বললেন-
__”দাড়া আমার একটা ত্যাদড় বন্ধু আছে। তাকে ফোন করে কিছু আইডিয়া নিবো।”

আব্বুর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বুঝছি না আব্বু এত খুশি কেনো! মনে একগাদা সন্দেহ নিয়েও খুশির ভান করে বললাম-
__”ওয়াও দারুণ হবে।”
আব্বু খুব খুশি খুশি মুডে বললেন-
__”জানিস বর্ণ আমি কিন্তু খুব এনজয় করছি।”
আব্বুর উল্লাস দেখে মনে হচ্ছে আব্বু হাইস্কুলের স্টুডেন্ট হয়ে গেছেন। আমি তো ঘনঘন হতবাক হচ্ছি। ম্লান হেসে বললাম-
__”সে তো বুঝতেই পারছি আব্বু।”
__”শোন বর্ণ নতুন আইডিয়াতে তাকে জ্বালাতে হবে। জ্বলে জ্বলে যেনো সে প্রেম সাগরে ডুব দিয়ে মুক্তি পেতে চায়।”
আব্বুর কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে বললাম-
__”কিসের প্রেম সাগর?”
আব্বু একগাল হেসে বললেন-
__”আরে সে যেনো পিছলে তোর প্রেমে পড়ে সেটাই বলছি একটু এদিক সেদিক করে।”
আমি রেগে গিয়ে বললাম-
__”আমার প্রেমে ওর পড়তে হবে কেনো?”
আমার রাগী চোখ দেখে আব্বু ভড়কে গিয়ে বললেন-
__”সেটাও তো ঠিক। তোর প্রেমে তার পড়তে হবে কেনো? ঠিক আছে পড়তে হবে না।”

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-১
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=908914232872630

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে