“বখাটে বউ”(পর্ব-১৯)
মনটাকে ধরে বেঁধে বেলকোণ আর ছাদে যাওয়া আটকানোর অভিযান চলছে। পাঁচটার পরে অফিস থেকে ফিরে সীমান্ত ছাদে যায়। কেনো জানি না তাকে দেখার জন্য আমি তৃষ্ণার্ত হয়ে যাই তখন। ওর মতো হৃদয়হীন মানুষকে দেখবার পিপাসা আমাকে লজ্জিত করে। আমি লজ্জা ঠেলে সরিয়ে ছাদে যাই। আড়চোখে তাকে দেখি। কথা বলি না কেউ কারো সাথে। আজব একটা মানুষ সে! তার কি একটুও ইচ্ছে করে না আমার খবর নিতে? মনে কি পড়ে না তার আমাকে? অভিমানে ভেঙে চুরমার হয়ে যাই আমি। দৌড়ে রুমে চলে আসি। জানি না সব কিছুকে বেপাত্তা করা এই আমিটা কবে থেকে এত অভিমানের মালিক হলাম! আর কবে থেকেই বা আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে নির্লজ্জ উপাধি নিলাম!
বিয়ের অনেক আগে চাকরীর জন্য এ্যাপলাই করে ছিলাম। হঠাৎ জয়েনিং লেটার চলে এলো। এক সপ্তাহ পরেই জয়েনিং ডেট। পোস্টিং নীলফামারী। ভালোই হয়েছে, ঐ অহংকারী লাটসাহেবের চোখের সামনে থেকে দূরে তো চলে যেতে পারবো। এটা ভেবে মনে মনে একটু শান্তি অনুভব করার চেষ্টা করছি কিন্তু মরার শান্তি আসছেই না। হঠাৎ শুনলাম সীমান্তর ট্রান্সফার হয়ে গেছে। তাকেও চলে যেতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। কোথায় ট্রান্সফার হয়েছে তা জানি না। বাহ আমরা দু’জনই এখান থেকে চলে যাচ্ছি। ভালোই হয়েছে, আমরা দু’জনই শান্তিতে থাকবো। আমি কতটা শান্তিতে থাকবো তা না জানলেও ঐ লাট সাহেব যে শান্তির সাগরে ভাসবে সেটা আমি জানি।
আব্বু আম্মু আর মা আমাকে রাত দিন বুঝানোর চেষ্টা করেন। আমি যেনো চাকরিতে জয়েন না করে সীমান্ত আর মায়ের সাথে চলে যাই। কিন্তু আমি সেটা মানিনি। যে মানুষটার মনে আমার জন্য কিঞ্চিত স্থান নেই, আমাকে ঘিরে যার মনে ভালোমন্দ কোনো অনুভূতি নেই তার সাথে স্বর্গেও যেতে চাই না আমি। একাকী আমি নরকেও যেতে রাজী।
আমাকে আটকাতে ব্যর্থ হয়ে আব্বু আম্মু মনমরা হয়ে বসে থাকে। আমি এখান থেকে চলে যাবো, এ জন্মে আমার সংসার হলো না এই সব হাবিজাবি ভেবে তারা নির্ঘুম রাত কাটায়। আমি কারো মন খারাপকে পাত্তা দিই না। মা রোজ এসে আমার সাথে দেখা করে যান। আমাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তার চেষ্টার ত্রুটি নেই। কিন্তু তার ছেলে এ পথ মাড়ায় না। বর্ণিতার মনের পথ হয়তো সে চেনেই না। অথবা চিনতেই চায় না। সে না চিনুকগে, আই ডোন্ট কেয়ার।
মা এসে বললেন-
__”এমন করে বিচ্ছেদ করিস না। দু’জন দুইখানে থাকলে দূরত্ব শুধু বেড়েই যাবে। তুই তো বাবুকে হারিয়ে ফেলবি বর্ণ।”
মনের টান থাকলে দূরত্ব কোনো বিষয়ই না। যোজন যোজন দূরে থেকেও একে অপরকে গভীর ভাবে অনুভব করা যায়, যদি দু’জনার মনজুড়ে দু’জনার বসতি থাকে। সে তো কখনো আমার মনে বসতি স্থাপন করেনি আর তার মনেও আমাকে ঘর বাঁধতে দেয়নি। তাহলে আমি কাকে হারাবো? কবে পেয়েছি আমি তাকে? এসব কথা আমি প্রকাশ করতে চাই না। মনের গভীরে এই কথা গুলো চাপা আকুতি হয়েই অপ্রকাশ্য থেকে যাক।
বললাম-
__”তোমার বাবু কবে আমার ছিল মা? যে আমার নয় তাকে হারাবো কিভাবে?”
মা চিন্তিত মুখে বললেন-
__”তোদের দু’জনার অভিমানের মাঝখানে পড়েছি আমি। কাউকেই বুঝিয়ে উঠতে পারি না। আমার ছেলেটা তো জন্ম থেকেই একরোখা। সে চায় তুই নিজে থেকে ফিরে যা। এদিকে তুই কি চাস কে জানে!”
__”কি এমন অন্যায় করেছি আমি যে নিজে থেকে ফিরবো? আর সে এলেও আমি ফিরবো না।”
মা অসহায় চোখে আমার দিকে তাকালেন। জানি তিনি আর কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। বললাম-
__”তোমার ছেলে আমাকে ছাড়াই ভালো আছে। সে ভালো আছে ভেবে খুশি থাকো মা।”
মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-
__”ভালো নেই রে। চাপা স্বভাবের ছেলেটা মুখ ফুটে কিছু না বললেও আমি সবটা বুঝি। মায়ের মন সব কিছুই টের পায়।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
আমিই বুঝি তাকে বুঝলাম না! সে কি আমায় বুঝে? না বুঝে না, এক সেকেন্ডের জন্যও সে কখনো বুঝেনি। মেয়েদের মন সবাই বুঝতে পারে না। কিন্তু বুঝার জন্য ধৈর্য্য সমেত চেষ্টাও লাগে। ছেলেদের সেই ধৈর্য্য আর চেষ্টাটা নেই। অথচ তারা দিনরাত চিল্লায় মেয়েদের মন দেবতারাও নাকি বুঝে উঠতে পারেনি। আরে তোদের কে বলেছে যে দেবতারা বুঝেনি? তোরা নিজেদের এত পন্ডিত কেনো ভাবিস? ঠিক হয়েছে ঐ লাট সাহেবকে ছেড়ে চলে এসেছি। চাই না পুরুষের দাসী হয়ে বাঁচতে। বুঝতে হবে না আমার মন আর আমিও তার মন বুঝতে চাই না।
বললাম-
__”আমি তোমার ছেলেকে বুঝি না আর বুঝতেও চাই না।”
মা হাতাশ হয়ে নিশ্চুপ ভাবে চলে গেলেন। আমি কি করবো? পারবো না আমি ঐ লাট সাহেবের কাছে নতো হতে।
জয়েনিং লেটার আসার পর থেকে একটা করে দিন কাটছে আর আমার মনের অনুভূতি গুলো কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। আমি মনের সব ইচ্ছে গুলোকে দমিয়ে দিয়ে মনটাকে রুগ্ন করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রুগ্ন মনটা আর যাই করুক কারো জন্য কষ্ট হয়তো পাবে না। কিন্তু আমার ভেতরের মন আমার বিরুদ্ধে বিদ্রহ করে উঠে। সে দমে থাকতে চায় না, রুগ্ন হতে চায় না। সে উচ্ছাসিত হয়ে উল্লাসে ভালোবাসতে চায়।
আমি মানুষিক ভাবে প্রস্তুতি নিলাম। আর তিন দিন পর আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। চলে যাবো সীমান্তর মনের আঙিনা ছেড়ে অনেক অনেক দূরে। আর মনের আঙিনা ছাড়ারই বা কি আছে? কবে তার মনের আঙিনায় আমি গিয়ে দাড়িয়েছি। বান্দর ছেলে তো তার মনের চার পাশে চীনের প্রাচীর তুলে রেখেছে। তাই মনের আঙিনা নয় আমি তার দৃষ্টির সীমানা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এতে আমার খুশি হওয়া উচিত। মনের মাঝে ঈদ ঈদ অনুভূতি হওয়া উচিত। কিন্তু এমন কিছুই হচ্ছে না। আমি চেষ্টা করছি এমন অনুভূতি অনুভব করার জন্য কিন্তু আমি ব্যর্থ। দিনরাত আমার নির্লজ্জ মন একটা মানুষকে দেখার জন্য ব্যাকুল। হয়তো তার সাথে আমার আর কখনোই দেখা হবে না। আমি তো এটাই চেয়ে ছিলাম তাহলে আজ কেনো মন জুড়ে এমন প্রলয় চলছে?
সাঁঝ গড়িয়ে আধার নেমেছে। সেদিনের সেই নিঃস্ব রাতের মতো আমার প্রতিটা রাতই যেনো নিঃস্ব হয়ে গেছে। বাহিরে বৃষ্টি মেঘের গর্জন দমকা হাওয়া আর একলা জানালায় দাড়িয়ে এই বর্ণিতা। দমকা হাওয়ার সাথে ঝিরিঝিরি জল এসে আমার মুখটা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আমি আধারের মাঝে নৈঃশব্দ খুঁজে চলেছি। যে নৈঃশব্দ জুড়ে কেউ একজন আমার পাশে এসে দাড়াবে। মনের ভেতরে প্রাপ্তির এই প্রত্যাশা আমার মনে মেঘ জমালো। কিছু আক্ষেপ ভেতর ভেতর গর্জন করে উঠলো, চোখেও নামলো ভরা বর্ষা।
রাতের শেষ প্রহরে বৃষ্টি ছেড়ে গেলো, আমি বালিশে মাথা রেখে কিছু জলের সাক্ষী বালিশকে করে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে যুথীর ডাকে ঘুম ভাঙলো। চোখ মেলে দেখি লাট সাহেব আমার রুমে দাড়িয়ে আছে। হায়রে আমার চোখ! আজকাল যুথীকেও ঐ লাটসাহেব ভেবে বসছি। এই হতভাগী মন, এমন করে আমাকে শাস্তি দিস কেনো? পিটিয়ে তোকে সোজা বানিয়ে দেবো বলে দিলাম। খবরদার ঐ লাট সাহেবকে নিয়ে ভাববি না!
আমি এক ঝলক দেখে চোখে এক আকাশ ঘুম নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে বললাম-
__”সাত সকালে আমাকে ডাকতে কে বলেছে তোকে? কবে তোর আক্কেল জ্ঞান হবে রে ব্যক্কল? তুই আসলে আমার হাতে খুন হবি।”
সে চেচিয়ে বললো-
__”কিহ?”
বাহ্! আমার মনের প্রমোশনে যুথীর গলার আওয়াজটাও ঐ লাটসাহেবের মতো শুনছি। পাশ ফিরে দেখতে চেয়েও দেখলাম না। হয়তো দেখবো লাটসাহেবের রূপ ধরে যুথী দাড়িয়ে আছে। যাই হোক আমিও কিছুতেই ভুল করছি না। ওপাশ ফিরে চোখ বুজে থেকেই বললাম-
__”চেচামেচি না করে সুন্দর ভাবে আমার জন্য এককাপ আদা লেবুর কড়া চা বানিয়ে আন। চোখের ঘুমটা একদম ছাড়তেই চাইছে না।”
কোনো আওয়াজ পেলাম না। বুঝলাম যুথী কিচেনে চলে গেছে। আমার চোখ আবার তন্দ্রায় মেতে উঠলো। কিছুক্ষণ পর জেগে উঠলাম সীমান্তর গলার স্বরে।
__”এই যে মহারাণী আপনার চা নিন।”
নাহ! আর পারছি না। এই লাটসাহেবের ভুত আমাকে ছাড়াতেই হবে। আজ ভুত মেরে বাণিজ্যে যাবো। উঠে বসলাম। তাকিয়ে দেখি লাট সাহেব চা হাতে দাড়িয়ে। চোখ ডলে আবার তাকালাম। তাও তাকেই দেখতে পেলাম। কি ভ্রমের মধ্যে পড়েছি মাবুদ! পরীক্ষা করার জন্য বললাম-
__”শোন তুই আজ আমার চুলে প্যাক লাগিয়ে দিবি। এখনই গিয়ে রেডি কর। আমি গোসল করবো। মাথাটা কেমন যেনো এলোমেলো লাগছে।”
চায়ের কাপটা পাশের টেবিলে রেখে সে বললো-
__”এই যে বখাটে মেয়ে শোনো, আমি যুথী নই, আমি সীমান্ত। বখাটে থেকে প্রমোশন নিয়ে পাগলি হয়েছো দেখছি। তা স্বামীকে দূরে রাখার বিরহে কি মাথার সব তার ছিড়ে গেছে নাকি?”
এই লাট সাহেব এই রুমে কি করছে? আর এসব কি বলছে সে? বাড়ি এসে বর্ণিতাকে অপমান করার সাহস সে কোথায় পেলো? বদ বজ্জাত পাজি বান্দর ছেলে একটা!
আমি বেড থেকে নেমে দাড়িয়ে গেলাম। বললাম-
__”আপনি এখানে কেনো?”
সে খুব সাধারণ ভাবে জবাব দিলো-
__”চলে যাচ্ছি তাই বিদায় নিতে এসেছি। হাজার হলেও তুমি আমার বিয়ে করা বউ। দায় তো থেকেই যায়।”
ওর কথাতে একটু অবাক হলাম। কিসের দায় তার? কবে সে বউ বলে মেনেছে আমাকে? বললাম-
__”ওহ, দায় এড়াতে এসেছেন তাহলে?”
__”না, দায় সারতে এসেছি।”
__”দায় সারার অনুরোধ কে করেছে আপনাকে?”
__”নিজ দায়িত্বে সারছি।”
__”আচ্ছা সারুন।”
সে আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বললো-
__”এক ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে। এক ঘন্টা পর আমি এ এলাকা ছেড়ে চলে যাবো।”
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম-
__”কি এটা?”
সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো-
__”ডিভোর্স পেপার।”
হঠাৎ যেনো আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। আমার ভেতরে নাম না জানা ঝড় তোলপাড় শুরু করলো।
__”কিহ?”
__”কখনো কি ডিভোর্স পেপারের নাম শোনো নি?”
__”শুনেছি।”
__”সিগনেচার করে পাঠিয়ে দিও। আমি অপেক্ষা করছি।”
আমার গলা দিয়ে স্বর বের হলো না। আমি নির্বাক তার দিকে চেয়ে রইলাম। সে উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে। অথচ আমি কিচ্ছু বলতে পারছি না। বর্ণিতা কিছু বলতে পারছে না, এমন মুহূর্ত জীবনে এই প্রথম।
__”কি হলো বলছো না কেনো? সিদ্ধান্ত জানাটা আমার জন্য খুব জরুরি আর হাতেও সময় নেই।”
আমি মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালাম। সে চলে গেলো আর আমি ফ্লোরে বসে পড়লাম। সে একদিন আমাকে বলেছিল আমি নাকি জাস্ট একটা প্রাণী। আর সে কি? সে কি মন-ওয়ালা?
খাম খুলতে ভয় লাগছে। যে সম্পর্কটাকে আমি কখনো মন থেকে মানতেই পারিনি সেই সম্পর্কটাকে ভাঙতে আজ আমার হৃদপিন্ড বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমার কলিজা ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। তবে কি আমি জাস্ট প্রাণী নই?
জানি না কবে কখন কিভাবে আমার অনুভূতির বদল ঘটেছে। তবে কি আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি? না না এটা কিভাবে সম্ভব? তাকে ভালোবাসার মতো কি কারণ থাকতে পারে? কোনোই কারণ নেই। আমি তাকে ভালোবাসি না, কিছুতেই না।
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
শেষ পর্ব আগামীকাল…..
Written by- Sazia Afrin Sapna
পর্ব-১৮
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=924649171299136