“বখাটে বউ”(পর্ব-১৬)
হারমোনিয়ামটা বেডরুমে এনে রাখলাম। যেনো ওটা দেখে লাট সাহেবের গায়ে আগুন জ্বলে। যা ভেবে ছিলাম তাই হলো। অফিস থেকে ফিরে বেডরুমে হারমোনিয়াম দেখে বাবুর মাথায় আগুন ধরলো। সে ধমকের স্বরে বললো-
__”আমার রুমে এটা কেনো?”
আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__”এটা এখন আমারো রুম তাই আমার জিনিস এখানে থাকবেই।”
__”এটা এ রুমে থাকবে না।”
আমি রেগে গিয়ে বললাম-
__”থাকবে থাকবে থাকবে।”
সেও জোর গলায় বললো-
__”থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না।”
আমি বিছানা থেকে নেমে ওর সামনে দাড়িয়ে কোমরে আঁচল গুজে বললাম-
__”বেশি কথা বললে দেখবেন ঘরে হারমোনিয়াম আছে কিন্তু আপনিই নেই। বর্ণর সাথে একদম ফাঙ্গা নিতে আসবেন না বলে দিলাম। এর ফলাফল ভালো হবে না।”
হঠাৎ সে শান্ত স্বরে বললো-
__”একটা প্রশ্নের জবাব দেবে?”
ওর গলার স্বর আমাকে বিস্মিত করলো। এ ছেলের তো হাব ভাব একদম বিশ্বাস করার মতো নয়। নতো স্বরে কথা বলা মানেই তো আমাকে ফাঁসানো। আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম-
__”কি প্রশ্ন?”
__”তুমি আমাকে জ্বালিয়ে কি সুখ পাও? এখানে আসার পরের সপ্তাহ থেকেই পেছনে পড়েছো। শেষমেশ আমাকে বিয়ে করেই ছাড়লে। আচ্ছা বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন তো একটু ভালো হতেই পারো।”
__”আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাইনি। ইনফ্যাক্ট এসব অনুভূতি নেই আমার। আর আমি কবে খারাপ ছিলাম যে আমাকে ভালো হতে হবে?”
__”ওয়াও! কবে তুমি খারাপ ছিলে! কবে ভালো ছিলে সেই তারিখটা বলো?
__”আমি জন্মগত ভাবেই ভালো তাই নির্দিষ্ট তারিখ নেই। মানে হলো জন্ম থেকে এই মুহূর্ত পর্যন্ত আমি প্রতিদিনই ভালো।”
__”শুনে আমি তো ধন্য হয়ে গেলাম। এত ভালো মেয়েটা আমার গলায় ফাঁসির মতো ঝুলছে। এই সুখের গল্প আমি কাকে শুনাই মাবুদ!”
__”শুনুন, আমি কারো গলায় ঝুলিনি বরং আমার মতো মুক্তার গলায় আপনার মতো একটা আস্ত বান্দর ঝুলে আছে। আপনার শরীরের ওজনে কবে যেনো আমি দম আটকে মরে যাই।”
__”কিহ আমি বান্দর?”
__”হ্যাঁ আপনি বান্দর হনুমান শিম্পাঞ্জিসহ বানর প্রজাতির সব প্রাণী আপনি।”
__”আমি বানর প্রজাতির হলে আপনি বিড়াল প্রজাতির বুনো বিড়াল।”
__”আমি বুনো বিড়াল নই, আমি মুক্তা।”
আমার কথা শুনে সে হা হা করে হাসলো। ওর হাসিতে আমার গা জ্বলতে শুরু করলো। ঢংগা একটা! হঠাৎ সে হাসি থামিয়ে আমার মুখের কাছে ওর মুখে এনে চোখে চোখ রেখে বললো-
__”সব মেয়ের যে অনুভূতিটা আছে সেটা তোমার নেই কেনো?”
ওর কথা শুনে আমার কেমন যেনো লাগলো। সত্যিই কি আমার সেই অনুভূতিটা নেই? নিজেকে স্বাভাবিক করে মুখ ভেংচিয়ে বললাম-
__”আল্লাহ দেয়নি তাই নেই। আর পুরুষের কৃতদাস হয়ে বেঁচে থাকতে চাইনি আমি।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
সে আবার হাহা করে হেসে বললো-
__”আজকাল ছেলেরাই বউয়ের কৃতদাস। রোজগার করে এনে সব বউয়ের পায়ে ঢালে তারপর আবার ঝাড়িও খায়। তাই খামাখা নিজেকে কৃতদাস ভেবো না।”
আমি ভাব নিয়ে বললাম-
__”নিজেকে কৃতদাস ভাবছি না তো।”
__”ভেরী গুড।”
__”কারণ আমি এই বিয়েটাই মানি না। মাইন্ড ইট।”
__”তাহলে বিয়েটা না করলেই পারতে। অযথা আমার জীবনটা নষ্ট করলে কেনো?”
__”আপনি যে কারণে বিয়েটা করেছেন ঠিক সেকারণেই আমিও করেছি তাই বিয়ে নিয়ে আমাকে দোষ দেবেন না। জীবন আমারো নষ্ট হয়েছে।”
__”আমার কারণ আর তোমার কারণ যে এক সেটা কে বলেছে তোমাকে?”
__”কেউ না। কারণ আমি জানি আপনি আমাকে একদম পছন্দ করেন না। আর সে অপেক্ষাও নেই আমার।”
__”বিয়েতে ইচ্ছে না থাকলে অনেক মেয়েই বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায়। তুমিও তো যেতে পারতে!”
আমি দুখী দুখী মুখ করে বললাম-
__”আমিও পালিয়ে যেতেই চেয়ে ছিলাম কিন্তু সব আত্মীয় স্বজন তো বিয়ে উপলক্ষ্যে আমাদের বাড়িতে এসে ছিল। তাহলে আমি পালিয়ে কোথায় যাবো? তারপরেও চেষ্টা করে ছিলাম কিন্তু যুথী সব গুবলেট করে দিয়েছে।”
সে ব্যঙ্গ করার ভঙ্গিমায় বললো-
__”আহারে পালিয়ে যাবারও যায়গা নেই?”
__”একদম রসিকতা করবেন না। মেয়েরা বাহিরে নিরাপদ নয় তাই পালাতে পারিনি। কিন্তু আপনি কেনো পালাননি? পথে ঘাটে রেপ হবার ভয়ে?”
আমার কথা শুনে সে লজ্জা পেলো মনে হয়। লাজুক স্বরে বললো-
__”কি সব বলো?”
__”আপনার ভাব দেখে তো সেটাই মনে হচ্ছে। আপনি এক সুন্দরী পুরুষ আর বাহিরে বের হলেই একদল গুন্ডী বখাটে মেয়ে আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে, তারপর…. যাই হোক বাকী টুকু আর বললাম না।”
আমার কথা শুনে ওর চোখ মুখ নার্ভাস হয়ে গেলো। ভ্যাবাচাকা খেয়ে সে তোতলিয়ে বললো-
__”এএএখন তো তুমি ররলসিকতা করছো। কি সব পপপপাগলের মতো বববলছো”
ওর তোতলানো দেখে খুব হাসি পেলো। কিন্তু হাসলাম না। এখন হাসা যাবে না। তাহলে সব গুবলেট হয়ে যাবে। বেশ সিরিয়াস ভাবে বললাম-
__”রসিকতা আপনি শুরু করে ছিলেন। একটা মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাবার জন্য অনুপ্ররেণা দেন কোন্ আক্কেলে? আপনার আক্কেল জ্ঞান নেই? সব আক্কেল কি ধুয়ে শরবত খেয়েছেন?”
আমার কথা শুনে ওর সব তোতলানো উড়ে গেলো। সে স্বাভাবিক ভাবে বললো-
__”যেহেতু এই বিয়েতে তোমার একদম ইচ্ছে ছিল না তাই বলেছি। এতে হয়তো তোমার জীবনটা বাঁচতো, সাথে আমার নিরিহ জীবনটাও বাঁচতো।”
__”আপনি নিরিহ? ওর আল্লাহ রে আমি এই সব কি শুনছি!”
__”সত্যিই তো আমি নিরিহ।”
__”নিজেকে নিরিহ উপাধি দিয়ে নিরিহদের অপমান করবেন না। দেখা গেলো দেশের সব নিরিহরা হুড়মুড় করে এখানে হাজির হয়ে বললো, ‘আন্দোলন ঈদের পর নয় এখনই হবে।’
বিয়ে করার ইচ্ছে তো আপনারও ছিল না। তাহলে দোষ শুধু আমাকেই কেনো দিচ্ছেন? আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকেও একটু দোষ দিন!”
__”তোমাকে কে বলেছে যে আমার ইচ্ছে ছিল না?”
ওর এমন কথাতে আমি একটু হতবাক হলাম। বললাম-
__”মানে?”
__”কিছু না।”
কথাটা বলেই সে দ্রুত বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না তার কথার মানে। ধ্যাত্তেরি এসব বুঝে আমার কি কাজ? ইচ্ছাতে করুক আর অনিচ্ছাতে করুক, বিয়ে যখন সে করেছে তখন তার মাশুল তাকে দিতেই হবে কড়ায় গন্ডায়।
রাতে বাড়ি ফিরে সে ডিনার করে নিশ্চুপ বসে রইলো সোফায়। বুঝে উঠতে পারলাম না যে আসলেই তার কি হয়েছে। এমনিতেও আমাদের মধ্যে তো তেমন কথা হয় না। যা কথা হয় ঝগড়া ঝগড়া কথা। তাই কি হয়েছে এমন প্রশ্ন করতে আমার ঘোর আপত্তি। আমিও পাত্তা না দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর সে আমার পাশে এসে শুয়ে বললো-
__”আমি জোর করে সংসার করতে চাই না।”
আমি তার কথাতে হতবাক হয়ে গেলাম। হঠাৎ করে এমন কি ঘটলো যে সে এমন কথা বলছে? বিস্ময়ের স্বরে জিজ্ঞেস করলাম-
__”মানে?”
সে খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিলো-
__”মানে খুব সহজ। তুমি চাইলে চলে যেতে পারো।”
ওর কথাতে আমি চমকে উঠলাম। আমার চমকে উঠার তো কথা নয় তাহলে কেনো চমকে উঠলাম আমি? বললাম-
__”হঠাৎ এমন কথা কেনো বলছেন?”
খুব সহজ সরল ভাবে সে বললো-
__”সমাজের সামনে বর বউ সেজে থাকার এই নাটকটা আর কত দিন চলবে? আমার আর ভালো লাগছে না। আর আমিও চাই না তুমি বাধ্য হয়ে এই সম্পর্কটার ভেতরে আটকে থাকো। চাইলে চলে যাও আর নিজের মতো করে বাঁচো।”
ওর কথা শুনে মনটা খুশিতে ভরে না উঠে বিষাদে ছেয়ে গেলো কেনো সেটাই বুঝলাম না। আমি তো সত্যিই এই সম্পর্কটা ভেঙে বেরিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু তার এসব বলার কি কারণ? এটা আমাকে জানতেই হবে। বললাম-
__”আমি নিজের মতো করে বাঁচবো আর আপনি?”
__”আমিও নতুন করে শুরু করবো।”
__”নতুন করে শুরু করবেন মানে?”
__”মানে সংসারি কোনো মেয়ে দেখে বিয়ে করবো।”
ওর মুখে বিয়ের কথা শুনে আমার হার্টবীট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলো। মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার হৃদপিন্ড সব কিছু ভেদ করে বাহিরে বেরিয়ে আসবে। কত বড় সাহস ছেলের, আবার বিয়ে করতে চায়! খুব রাগ হলো। এক রকম চেচিয়েই বললাম-
__”কিহ?”
__”যা বলেছি তাই। এখন ঘুম পেয়েছে গুড নাইট।”
আমাকে ইগ্নোর করা হচ্ছে? বের করছি ইগ্নোর করা। চিৎকার করে বললাম-
__”গুষ্ঠি কিলাই আপনার গুড নাইট এর। বউ ঘরে থাকতে আবার বিয়ে করার কথা বলেন আপনার তো সাহস কম না! এত সখ আপনার বিয়ে করার? নির্লজ্জ ছেলে একটা! আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া উচিত!”
__”বিয়েই তো শুধু করতে চেয়েছি, এতে নির্লজ্জতার কি আছে? আর তুমি তো এই বিয়েটাকেই মানো না। তাহলে আমি যদি দশটা বিয়ে করি তাতে তোমার কি?”
তাই তো! সত্যিই তো আমি এই বিয়েটাকে মানি না। তাহলে সে বিয়ে করলে আমার কি? কিন্তু আমি আপসেট হয়ে যাচ্ছি কেনো?
__”ঠিক আছে আমি চলে গেলে যদি আপনি নতুন করে শুরু করতে পারেন তবে আমি চলেই যাবো।”
__”গুড গার্ল।”
__”এখন ঘুমান।”
__”তুমিও ঘুমাও।”
রাগে খিটখিট করে বললাম-
__”আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। নিজের চর্কায় তেল দিন।”
__”সেটাও ঠিক। তোমাকে নিয়ে আমি কেনো ভাবতে যাবো?”
__”হ্যাঁ সেটাই তো! আমি আপনার কে যে আমাকে নিয়ে আপনি ভাবতে যাবেন?”
__”হ্যাঁ সত্যিই তুমি আমার কেউ না।”
“তুমি আমার কেউ না” এই বাক্য টুকু যেনো বিষ মাখানো তীরের মতো আমার কলিজাতে এসে বিঁধলো। আমি এই কথার তীরে আহত হলাম। তার মুখ থেকে সত্যি কথা শুনেও এমন আহত হবার কারণ আমি জানি না।
তার বিষ মাখানো তীরের বিষে নীল হয়ে আমার গোটা রাত নির্ঘুম হয়ে গেলো। আমি ঠায় বসে রইলাম।
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
পরের পর্ব আগামীকাল…..
Written by- Sazia Afrin Sapna
পর্ব-১৫
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/922369681527085/