Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"বউ চুরি পর্ব :১৩

বউ চুরি পর্ব :১৩

বউ চুরি

পর্ব ঃ ১৩

লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা

দুহাটু ভাজ করে হাটুর উপর থুতনি রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে মুসকান। ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ওঠে বোসলো।
কি হলো কাঁদছো কেনো কঠোর গলায় জিগ্যাস করলো ইমন।
মুসকান এবার ডুকরে কেঁদে ওঠলো।

কি হলো ঘুম বাদ দিয়ে কেঁদে চলেছো কেনো?  কি হয়েছে বলো?
মুসকান নাক টেনে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো –
তুমি এখনো আমাকে ক্ষমা করোনি ইমন ভাইয়া। এখনো আমায় ক্ষমা করোনি বলেই আবারো কেঁদে ওঠলো।
ইমন মুচকি হেসে কঠোর গলায় বললো- ক্ষমা তো সেদিন করবো যেদিন ইমন ভাইয়া থেকে ভাইয়াটা কেটে যাবে।
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। ইমনের দিকে তাকালো ইমন হাসি মুখটা চেপে শক্ত চাহনিতে তাকিয়ে রইলো।
মুসকান অমন চাহনি দেখে আবারো মুখ ফিরিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করলো।

ইমন বেশ বুঝতে পারলো মুসকান কি চাইছে।
তুমি এই একটু চাওয়া এইভাবে চেয়ে তো নিজের ই বিপদ ডেকে আনলে। একটু কাছে পেতে চেয়ে নিজের সর্বনাশ নিজেই করে ফেললে।মনে মনে ভাবলো ইমন।

ইমনের ভালবাসা পাওয়ার জন্য তোমার চোখের পানি ফেলার প্রয়োজন কেনো পড়বে মুসকান??
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। চুপ হয়ে গেলো সে তার মনের চাওয়া যে ধরে ফেলেছে ইমন।
নিজের জিনিস পাওয়ার জন্য এইভাবে কাঁদতে হয় না। আর আমার নিয়মে এইভাবে কাঁদলে কি হয় জানো??
মুসকান একটু ঘুরে অবাক চোখে তাকালো ইমনের দিকে। মনে মনে ভাবলো এখন কি কাঁদার জন্য ও আমাকে বকবে?
আমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য আমার বউ কাঁদবে আর আমি তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো?  বলেই বাঁকা হাসলো ইমন।
মুসকান ভয়ে ঢোক গিললো।
ইমন ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো মুসকানের দিকে পিছন থেকে জরিয়ে নিলো নিজের সাথে। মুসকানের কাঁধে থুতনি রেখে ধীর গলায় বললো- শাস্তির পালা তো অনেক ভারী হয়ে গেছে মুসকান। আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার  সিদ্ধান্ত নেওয়ার শাস্তি টা তো তোমাকে দেওয়া হয়নি।
ইমনের গরম নিশ্বাস মুসকানের গলা,কান জুরে শীতল শীহরন বয়িয়ে দিলো।সেই সাথে মনে জমলো ভয়। শাস্তি কিসের শাস্তি কি করবে আমার সাথে মনে মনে ভাবতে লাগলো মুসকান।
ইমন আরো গভীর ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো মুসকানকে। নিজের সাথে জরিয়ে নিয়ে গলার দাগটায় আলতো করে চুমু খেলো।
হালকা কেঁপে ওঠলো মুসকান, পুরো শরীর শিউরে ওঠলো তার।
ইমন মুসকানের চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রান নিচ্ছে। মুসকান ইমনের শক্ত বাঁধন ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।
শান্ত গলায় বললো- আমি শুধু একটু তোমার বুকে ঘুমুতে চেয়েছিলাম।
ঘোর লাগা গলায় ইমন বললো – হুম তো???
আমার কাছে তুমি এক বিন্দু ভালবাসা চেয়েছো। আর আমি তোমাকে আমার পুরো হৃদয়টাই দিয়ে দিতে চাইছি।
তুমি চেয়েছো এক বিন্দু ভালবাসা আর আমি দেবো মহা সমুদ্রের ভালবাসা।।
বলেই ঘারে নাক ডুবিয়ে দিলো। মুসকানের পুরো শরীরে শিহরন বয়ে যাচ্ছে সেই সাথে বেড়ে যাচ্ছে হৃদস্পন্দন। ঘনঘন নিশ্বাস নিতে শুরু করেছে সে। ইমন আরো গভীর ভাবে তাকে জরিয়ে নিচ্ছে নিজের সাথে।
ছাড়ো…. কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠলো মুসকান।
ইমন ঘোরে চলে গেছে মুসকানের কথা তার কান অবদি গিয়েও যায় নি। বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো মুসকান কে নিজের গায়ের শার্ট টা খুলে বিছানার পাশে রাখলো।
মুসকান ভয় পেয়ে গেলো। মনে পড়ে গেলো সেই রাতের কথা।
ইমন মুসকানের দুহাত নিজের বাঁধনে রেখে ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিলো। মুসকানের ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়াতেই মুসকান হুহু করে কেঁদে ওঠলো।
ইমন মুসকানের দিকে অবাক চোখে তাকালো। বেশ বুঝতে পারলো ভয়ে মেয়েটার অবস্থা শেষ। কিন্তু এই ভয়টা তো কাটাতে হবে। ধ্যাত বাচ্চা বউ থাকলে এই হলো এক জ্বালা। এখন বউ কে আগে বুঝাও ম্যানেজ করো তারপর আদর করো বউ। ( মনে মনে )  ভেবেই সরে গেলো মুসকানের থেকে। পাশে শুয়ে পড়লো একটা বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে।
মুসকান নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নিলো। কিন্তু তার যেনো কেনো খুব কান্না পাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলেছে বার বার নাক টানছে।
কিছুক্ষন পর ইমন মুসকান কে কাছে টেনে নিলো। নিজের বুকের সাথে একদম মিশিয়ে নিয়ে বললো- ঘুমাবে??
মুসকান আস্তে করে বললো- হুম।
ওকে ঘুমাও আমি আছি বুকেই থাকবে ঘুমিয়ে পড়ো। মুসকনের কান্না চলে গেছে যা চাইছিলো পেয়েছে এখন সেটা । বুকে নিয়ে ঘুমানো মানেই তার মনে হয় ইমনের সব রাগ চলে গেছে। আর ইমন তাকে ভালোও বাসছে। আর সেদিন রাতে তার সাথে যা হয়েছিলো সেটা ইমনের রাগ ছিলো তাই অমন করেছে। সত্যি সেদিন ইমনের রাগ ছিলো কিন্তু স্বামীর অধিকার ও যে ছিলো সেটা এখনো সে বুঝতে পারেনি। আর না বুঝার চেষ্টা করেছে। ছোট থেকে তেমন কারো সাথে মেশা হয়নি তার কয়েকটা বন্ধু বান্ধব ছাড়া। আর ইমনের বাড়িতে কোন বড় বোন নেই যে মুসকান কে সবটা বুঝিয়ে বলবে। ইরাবতী, দীপান্বিতা তো মায়ের মতো তারাও কখনো তাকে তেমন কিছু বলেনি। আর এটা ইমন খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।

মুসকান কে বুকে নিয়েই ইমনও ঘুমের দেশে পারি জমিয়েছে। খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। অফিস যেতে হবে তাই ওঠে ফ্রেশ হবে ভেবে মুসকান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।মুসকান ও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে ইমনকে। একটু ছাড়াতেই আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরলো মুসকান। ইমন মুচকি হাসলো জেগে থাকলে কি লজ্জাটাই না পেতে। (মনে মনে)

মুসকানের কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো। আস্তে করে ডাকলো মুসকান…. ওঠো আমার অফিস আছে তো ওঠতে হবে আমায়।
নাহ ওঠার নাম নেই। বাধ্য হয়ে মুসকান কে ছাড়িয়ে পাজকোল করে নিয়ে বাথরুম চলে গেলো।
মুসকানের তবুও ঘুম ভাঙলো না। সে কোলেই ঘুমাচ্ছে। বাথরুমের মোড়ায় বসিয়ে একহাতে পানি নিয়ে হালকা ছিটিয়ে দিলো মুসকানের চোখে। সাথে সাথে সে কেঁপে ওঠলো ঘুম ছেড়ে গেছে তার। চোখ মেলে তাকাতেই লোমশ বুক দেখতে পেলো আরেকটু বড় করে তাকিয়ে ইমনের হাসি মাখা মুখ ভেসে এলো তার চোখে। ওঠে দাঁড়ালো আর চমকে ওঠলো নিজের দিকে তাকিয়ে এতো লজ্জা পেলো যা বলার মতো না। পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো। ইমন বেশ বুঝতে পারলো মুসকান লজ্জা পেয়েছে কারন তার গায়ে ওড়না নেই।
কি আমার সাথে গোসল করবে নাকি চলে যাবে??
সাথে সাথে মুসকান বেরিয়ে গেলো বাথরুম থেকে।
ইমন বাঁকা হাসলো।

মুসকান রুম থেকে বেরিয়ে তার রুমে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নিচে নেমে আসলো।
ইরাবতী আর দীপান্বিতা খাবাড় তৈরী করছে কিচেনে গিয়ে ইরাবতীর পাশে দাঁড়ালো মুসকান।
দীপান্বিতা বললো- ওঠে পড়েছিস?  ইমন ওঠেছে?
হ্যাঁ আম্মু ওঠেছে।
ইরাবতী বললো- যাও এই খাবাড় গুলো ডায়নিং টেবিলে নিয়ে রাখো আর আজকে সব কিছু তুমিই গুছিয়ে দাও ইমনকে। মুসকান বাধ্য মেয়ের মতো সব নিয়ে রাখলো সেই সাথে খাবাড় ও গুছিয়ে রাখলো।
মোজাম্মেল চৌধুরী ইমন,দিপক আর দিপু এসে খেতে বসলো। দীপান্বিতা আর ইরাবতী সবাই কে খাবাড় দিচ্ছে আর মুসকান ইমনকে। দীপান্বিতা বলে বলে দিচ্ছে মুসকান কে। কারন মুসকান এর আগে কখনো কাজ করেনি। তাই আজি তার প্রথম কাজ শেখা। ইমন মনে মনে বেশ খুশি হলো বউ খাবাড় সাজিয়ে দিচ্ছে বলে। সেদিনের সেই পিচ্চি টা আজ আমার বউ হয়ে খাবাড় গুছিয়ে দিচ্ছে ভেবেই তার বেশ খুশি লাগছে। নিজেকে বড় সুখী মনে হচ্ছে তার।

সবাই বেশ খুশি হলো মুসকানের বিহেইভে। মোজাম্মেল চৌধুরী ভাবলো – খারাপ সময়ের পরেই ভালো সময় আসে। যাক ইমন মুসকান যদি নিজেরা ঠিক থাকে ওদের মধ্যে সব ঠিক থাকলে ওরা খুশি থাকলে আর কি লাগে। খারাপ সময় গুলো ভুলে গিয়ে সবাই আবারো ভালোভাবে জীবন কাটাই ভেবেই ইরাবতীর দিকে তাকালো ইরাবতী ও চোখ উপর নিচ করে আশ্বাস দিলেন। দীপান্বিতা মোতালেব চৌধুরীর জন্য খাবাড় নিয়ে উপরে চলে গেলো।
ইমনও ব্রেকফাস্ট করে উপরে চলে গেলো।  ইরাবতী মুসকান কে বললো- মুসকান যাও ইমনের কাছে এখনিতো বেরিয়ে যাবে ছেলেটা। কি লাগে সেগুলো দেখে দাও ঘড়ি, ফোন, ওয়ালেট সব গুছিয়ে দিবে আজ থেকে । তোমার বড় বাবাকে তো এখন পর্যন্ত ও আমি এসব হাতে হাতে এগিয়ে দেই। দিপক বললো – কিরে পিচ্চু যা গিয়ে বরের সেবা কর। দিপু মিটি মিটি হাসতে লাগলো।
মুসকান খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো। মাথা নিচু করেই উপরে চলে গেলো।
ইমন সব গুছিয়ে বেরিয়ে যাবে এমন সময় মুসকান মাথা নিচু করেই রুমে ঢুকলো। ইমন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো- কিছু বলবে??
মুসকান ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো- সব তো নিয়েছো আমি তাহলে কি এগিয়ে দিবো বলেই মুখটা ভার করে ফেললো।
ইমন অবাক হয়ে বললো- মানে কি?
মামনি যে বললো তোমার ঘড়ি,ওয়ালেট,ফোন এগিয়ে দিতে। কিন্তু তুমিতো সব গুছিয়ে নিয়েছো।
এবার ইমন বুঝতে পারলো তার মা ঠিক কি বলেছে। প্রচুর হাসি পেলো তার হাসি চেপেই বললো- তুমিতো লেট করে ফেলেছো। ঠিকভাবে কাজ তো শিখোইনি লেট তো হবেই। এক কাজ করো আজকে একটা করো কাল থেকে সবগুলোই করবে।
মুসকান জিগ্যাসু চোখে তাকালো ইমনের দিকে।
আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো তোমার হাতে এক গ্লাস পানি পান করেই রোজ অফিস বের হবো।
মুসকানের মনটা ভালো হয়ে গেলো। ছুটে নিচে গিয়ে এক গ্লাস পনি নিয়ে উপরে চলে এলো।  ইমনের দিকে কাঁপা কাঁপা হাতেই পানি দিলো। বেশী এক্সাইটেড থাকলে মুসকানের হাত কাপে, শুধু এক্সাইটেড না ভয়েও তার হাত কাপে। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটার কারন ইমন খুব করে বুঝতে পেরেছে।
মুসকানের হাতে এক গ্লাস পানি খেয়ে ইমন বেরিয়ে যেতে নিলো। কিন্তু কেন জানি আবার ও ফিরে তাকালো মুসকানের দিকে। খুব কাছে এসে বললো- খাওয়া তো হয়নি এখনি নিচে গিয়ে খেয়ে নিবে কেমন।
মুসকান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ইমন দুহাতে মুসকানের গাল ধরে কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে চলে গেলো।
মুসকানের হার্টবিট দ্রূত গতিতে বেড়ে গেলো। কেমন যেনো একটা ভালো লাগা কাজ করলো তার মধ্যে।
সবদিনের থেকে আজকের অনুভূতি টা সত্যি আলাদা। আজকে সত্যি মনে হচ্ছে এটা আমার শশুর বাড়ি। এটা আমার স্বামীর ঘর। একটু আগে যে বেরিয়ে গেলো সে আমার স্বামী। ভেবেই বেশ লজ্জা পেয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো।

বেশকিছু ক্ষন পর রুম থেকে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতেই আ………….বলে চিৎকার করে ওঠলো। দিপক দৌড়ে উপরে চলে এলো । একি তোর পা কাটলো কিভাবে???  মুসকানের কাছে গিয়ে ওকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো। পা দিয়ে প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। দীপান্বিতা ইরাবতী ও এলো দীপান্বিতা ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে দিপক কে দিলো। দিপক ব্যান্ডেজ করে দিলো। ইরাবতী কাচগুলো পরিষ্কার করে মুসকানের জন্য খাবাড় নিয়ে এলো। আলেয়া আজ আসেনি তাই সব কাজ তাদের ই করতে হচ্ছে।
দীপান্বিতা মুসকানের কান্না থামাতে ব্যাস্ত। একটু দেখে চলবিতো একের পর এক অঘটন ঘটিয়েই চলেছিস। কিভাবে এটা হলো হ্যা ধমকে ওঠলো দীপান্বিতা।
মুসকান কাচুমাচু হয়ে বোসলো।
কেনো যে হলো সেটাই তো বলতে পারবো না আম্মু। তোমার মেয়ের জামাইয়ের ভালবাসা পেয়ে নিজে নিজেই লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকতেই গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে গেছে। হাতে গ্লাস ছিলো এটাও খেয়াল ছিলোনা, গ্লাসটা পড়ে গেছে এটাও বুঝিনি। এমন ঘোর লাগা ভালবাসা কেউ দেয় ?। মনে মনে ভাবতে লাগলো মুসকান।
দীপান্বিতা খাবাড় মেখে মুসকানের সামনে ধরে আছে এদিকে মুসকানে ইমনের কথাই ভেবে যাচ্ছে। একজন যে তার সামনে খাবাড় ধরে আছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই।
কি হলো খাবি নাকি মাথায় ঢেলে দিবো সব।
চমকে ওঠলো মুসকান। দীপান্বিতার হাতে খাবাড় দেখে হা করলো দীপান্বিতা মুখে খাবাড় ঢুকিয়ে দিলো।
দিপু কে কলেজে পৌছে দিয়ে ইমন অফিস চলে গেছে। অফিস ঢুকতেই মুসকানের পা কাটার খবড় তার কানে পৌঁছে গেলো।

এই মেয়েটা একদন্ড শান্তি ও দিবেনা আমাকে। কি এমন কাজ করেছে এক গ্লাস পানি খাওয়িয়ে তার পা কেটে গেছে। এতোদিন পর অফিস এসেছি শান্তি তে কাজ করবো তা না আরেকজন পা কেটে বসে রইলো। যাতে সব এটেনশন তার দিকে থাকে ধ্যাত।কাজে মনোযোগ ই আসবে না।
সারাদিন বড় অস্থিরতার মাঝে অফিস করেছে ইমন। আটটায় সবাই বের হয় কিন্তু ইমন সাতটায় ই বেরিয়ে গেছে। মোজাম্মেল চৌধুরী বুঝতে পেরেছে কেনো বেরিয়ে গেলো । তাই সে সবটা সামলে নিয়েছে।

সবাই টিভি দেখছে সাথে মুসকান ও বসে আছে। দীপান্বিতা আর দিপক বসে তার বিয়ের আলোচনা করছে। বাড়িতে আরেক বউ আনার জন্য সবাই খুব উৎসুক হয়ে আছে। মুসকান তো খুবই খুশি একটা ভাবী পাবে বলে।
আম্মু আম্মু ভাইয়ার বিয়েতে কিন্তু আমি ডান্স করবো। আর আমাকে অনেক অনেক নিউ ড্রেস কিনে দিতে হবে ভাইয়া।
আম্মু আমাকেও দিতে হবে। ( দিপু )

আচ্ছা বাবা সব হবে আগে তো মেয়ে দেখি। দীপান্বিতা কথাটা বলেই ওঠে গেলো। আর ওরা তিনজন টিভিতে মনোযোগ দিলো।
এদিকে ইমন বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে গেছে। মুসকানকে ওর রুমে খুজে পায়নি তাই সবার রুম ই খুজলো তবুও পেলো না।
ছোট কাকি মুসকান কোথায়?? দীপান্বিতা কিচেনে যাচ্ছিলো এমন সময় পিছন থেকে বললো ইমন।

দীপান্বিতা পিছনে তাকিয়ে বললো-

ওওও তুমি এসে গেছো। মুসকান তো দিপকের রুমে আছে তিন ভাইবোন মিলে টিভি দেখছে।
ইমন দিপকের রুমে গিয়ে দেখলো তিনজনের টিভিতে গভীর মনোযোগ।
ইমন গিয়ে বললো কি করছিস তোরা?  আর দিপু তোর পড়াশোনা নাই?
দিপক তুই ও ওদের সাথে যোগ দিয়েছিস দিপুকে তো পড়তে বসাতে পারতিস নাকি?
মুসকান আর দিপুর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। দুজনেই ঢোক গিললো।
তুমি কখন এলে?  এই অনেক দিন পর একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম ওদরে সাথে। দিপু যা  পড়তে বোস তুই গিয়ে এখন।
দিপু ধীরে ধীরে পা এগিয়ে চলে গেলো।মুসকানের পা কাটার জন্য আর যেতে পারলো না। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো তাকে যেনো বকা খেতে না হয়।
বোসো ভাইয়া কিছুক্ষন সময় কাটাই। ইমন দিপকের পাশে গিয়ে বোসলো। দুজনে বেশ কথাবার্তা বলছে আর মুসকান টিভির দিকে চোখ আর তাদের দুজনের দিকে কান পেতে বসে আছে। চুপচাপ শুনে যাচ্ছে তাদের গল্প। সব ই বিজনেসের আর পলিটিকস এর আলোচনা সেই সাথে দিপকের বিয়ে নিয়েও বেশ কথা বার্তা হলো। ইমন কথার ফাঁকে ফাঁকে মুসকানকে আড় চোখে দেখছিলো। দিপক কিছুটা টের পেয়ে কাকে যেনো ফোন করবে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ওদের একটু কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।
মুসকান টিভিতেই চোখ স্থির রেখেছে ইমন যে তার পাশে আছে সেদিকে খেয়ালই দিচ্ছে না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিক ই তার হার্টবিট ১০০গতিতে দৌড়াচ্ছে।
হঠাৎ টিভি অফ হয়ে গেলো। মুসকান পাশে তাকাতেই দেখলো ইমনের হাতে রিমোট। হ্যা সেই অফ করে দিয়েছে।
এতো মনোযোগ টিভিতে আমি যে পাশে আছি সেটার খেয়াল ই নেই। বলেই মুসকানের একদম কাছে এসে বোসলো। ডানহাত নিচে নিয়ে মুসকানের পায়ে হাত দিতেই মুসকান কেঁপে ওঠলো।
কি করছো…. ( ধীর গলায়)
ইমন পা টা উপরে ওঠিয়ে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখলো। বেশ অনেক কেটেছে তাইনা??
মুসকান মাথা উপর নিচ করলো।
কেনো কাটলো, কিভাবে কাটলো, একটু সচেতন থাকতে পারোনা?  ধমকে ওঠলো ইমন।
মুসকান কেঁপে ওঠলো ভয়ে ভয়ে বললো- গ্লাস পড়ে ভেঙে গেছিলো।
হ্যাঁ ভাঙবেই একটা কাজ ঠিক ভাবে করতে পারোনা। এক গ্লাস পানি খাওয়িয়ে নিজের পা কেটে ফেলেছো। সবসময় নিজের ক্ষতি নিজেই করার জন্য ওঠে পড়ে লাগো তাইনা। ধমকে ধমকে কথা গুলো বলে যাচ্ছে ইমন। মুসকান কান্না করে দিয়েছে। ইমনের ও খুব কষ্ট হচ্ছে মুসকানের একটু ব্যাথাও সে সহ্য করতে পারেনা। সারাদিন যে সে কিভাবে অফিস করেছে শুধু সেই জানে। তাই ভালবাসাটা রাগের মধ্যেই প্রকাশ করছে সে। মুসকান কি এই গভীর ভালবাসা বুঝতে পারবে???
ইমন মুসকানের পা টা আরেকটু উচু করে ব্যান্ডেজের জায়গায় একটা চুমু খেলো। ইমনের এমন কান্ডে মুসকান স্তব্ধ। কান্না থেমে গেছে তার পুরো শরীর শিউরে ওঠেছে। হাত পা বরফের মতো ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। ভালবাসার তীব্র অনুভূতি গুলো বোধ হয় খুব করে স্পর্শ করতে শুরু করেছে মুসকান কে। ইমন শান্ত স্বরে বললো- এখনো কি ব্যাথা আছে??
মুসকান মাথা নাড়িয়ে না করলো।
ইমন মুসকানের গালে এক আঙুল দিয়ে পানি মুছে দিলো। তারপর ওঠে মুসকান কে কোলে তুলে নিলো।

কি করছো ভাইয়া দেখবে তো?
দেখুক ভাই +দেবর নো প্রবলেম বলেই বাঁকা হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন। ভালোই কাটছে মুসকান ইমনের সম্পর্ক মুসকান ও ধীরে ধীরে ইমনের ভালবাসা গুলো অনুভব করতে শুরু করেছে।  পায়ের জন্য সে স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে না পারলেও ইমন ঠিকি রোজ রাতে পরম আদর স্নেহে তাকে বুকে টেনে নেয়। সারারাত ইমনের বুকেই ঘুমায় সে। দিনে হাজার ব্যাস্ততায় কাটালেও রাত টা ইমন ঠিকি মুসকান এর জন্য জমা রাখে। এতো প্রেম এতো ভালবাসার মায়া মুসকানের মনে ঠিকি কড়া নাড়ে।
একজন পুরুষের  অসীম ভালবাসাকে ওপক্ষা করার ক্ষমতা একজন নারীর নেই। মুসকান ও পারেনি ইমনের অসীম ভালবাসাকে ওপেক্ষা করতে।

ইদানীং যেনো অনুভূতিরা তাকে বড্ড জ্বালায়।
ইমন ও বেশ করে বুঝতে পারে তবুও সে চুপ করেই থাকে কি জানি তার মনে কি চলছে।
দিন দিন যেনো ইমনের প্রতি মুসকানের টানটা বেড়েই চলেছে ইদানীং তার দিনে সময় কাটেনা। ইচ্ছা হয় দিনেও ইমনের সাথে কাটাতে কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়।
সেদিন মুসকান ইরাবতীর রুমে যাচ্ছিলো দরজার সামনে দাড়াতেই শুনতে পেলো ইরাবতী আর দীপান্বিতার কথোপকথন।
দেখ ইমন আর মুসকানের একটা সন্তান হলে আর কোন চিন্তা থাকবে না। তাছাড়া কদিন পর মুসকানের রেজাল্ট বের হবে ভার্সিটি ভর্তি করাতে হবে। ইমন তো ওকে পড়াশোনা করাবেই কিন্তু আবারো যদি কোন অঘটন ঘটে যায়? এর থেকে একটা বাচ্চা নিক তাকে আমরা মানুষ করবো আর মুসকান পড়াশোনা করবে। সংসার বুঝে নিবে ধীরে ধীরে৷ স্বামী সন্তানের টান অনুভব করবে। আর নিজের সন্তানের টান যে কোন মায়েরই আছে হোক সে পাগল বা অবুঝ।

কিন্তু ভাবী ইমন তো এতো তারাতারী এসব ভাববে না। আর মুসকানের সাথে যে ইমনের ওরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি সেটা কিন্তু ওদের দেখেই বুঝা যায়।
তুই কি করছিস তুই বুঝা তোর মেয়েকে। এখন ই তো সময় আমি কিছু জানিনা তুই ওকে বুঝাবি।
আচ্ছা আমি কথা বলবো মুসকানের সাথে।
তাদের কথা গুলো শুনে মুসকান কিছু হলেও বুঝেছে। আর এটাও বুঝেছে এ বাড়ির সবাই এখনো তাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে ওঠতে পারেনি। এটাই তো স্বাভাবিক আমাকে তাদের বিশ্বাস অর্জন করতেই হবে মনে মনে ভাবলো মুসকান।

রাত নয়টা বেজে গেছে ইমন আজ এখনো বাড়ি ফিরেনি। এদিকে দীপান্বিতা আজ মুসকানকে অনেক কিছু বুঝিয়েছে মায়ের সামনে বেশ লজ্জাও পেয়েছে আজ সে। দীপান্বিতা মুসকান কে জোর করেই মেরুন কালারের সিল্কের শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে। শাড়ী পড়ে মুসকান হাটা তো দূর নড়তেও পারছে না তাই চুপ করেই বসে আছে।
এদিকে ইমন ফেরার পর ইরাবতী তাকে খাওয়িয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো। মুসকান কে দেখতে না পেরে তার খুব অসস্থি লাগছে।  তারাহুরো করে রুমের দিকে এগোচ্ছে তার ক্লান্তি যে দূর হয় নি। তার এখন মুসকানের মুখ দেখা চাই নয়তো তার ক্লান্তি দূর হবেনা।
কিন্তু সে তো জানে না আজ তার জন্য কতো বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

চলবে…………………………..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ