প্রেমে পড়া বারণ পার্ট – ১৬

0
3155

#প্রেমে_পড়া_বারণ
# পার্ট – ১৬
# Writer – Taslima Munni

আফরিন আলতো করে গালে ছুঁয়ে বললো
– কিছু মানুষ জীবনে দ্বিতীয় বার না ফিরে আসাই উত্তম।
সেটা আমার জন্যও, তোমার জন্যেও।
চলো ওদিকে যাই।অনেক সময় ধরে এখানে।
অবাক হয়ে দেখছি এই মেয়েটাকে!
এমন ও মানুষ হয়!
বাস্তববাদী!
– হুম চলেন।

রেহান দেখেছে আমি আফরিনের সাথে কথা বলে হেঁটে আসছি।

এই দিনটা সত্যিই অন্যরকম কাটলো। ফেরার সময় আমরা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম। কেননা দেশে যাবার আগে সবার সাথে হয়তো দেখা করার সুযোগ পাবো না।
আসার সময় রেহান আমার হাতটা ধরে বেরিয়ে এলো।
এই ধরাটা অন্য রকম। এটা আমি অনুভব করতে পারছি। ।
হয়তো আফরিন এখানে থাকায় ইচ্ছে করেই এভাবে হাত ধরে রেখেছে!
কিন্তু এটা ওকে আমি বলতে পারবো না। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত একটা জীবন আছে। আমি রেহানের স্ত্রী, অর্ধাঙ্গিনী। জানার অধিকার আছে আমার। কিন্তু এটাও আমার বোঝা উচিত সম্পর্কের মাঝে একটা স্পেস দেয়া দরকার। আফরিনের প্রতি তার অনুভূতিগুলো তো মিথ্যা ছিলো না।
আমার জন্য ওর অনুভূতি ও মিথ্যা নয়। যখন আমি ছিলাম না,আফরিন ছিলো। এটাই সত্যি।
এই সত্যি টা মেনে নিতে এতো দ্বিধা করবো কেন?
সত্য কঠিন। আর সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে বাস্তবতা। বাস্তবতা হচ্ছে রেহান আমার পথের সাথী।

রেহান আমার হাতটা ধরে বেরিয়ে আসছে। আচ্ছা, আফরিন কি তাকিয়ে দেখছে?
যে হাত ধরে অনেক টা পথ হেঁটেছিলো, সেই হাত অন্য একটা হাত ধরে আছে!!

হয়তো আফরিন চেয়ে চেয়ে দেখছে, হয়তো দেখছে না!
আমি একবার পিছনে ফিরে তাকালেই উত্তর টা পেয়ে যেতাম।
কিন্তু কেন জানি তাকাতে ইচ্ছে করছে না ।।
কি লাভ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে?
কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানাই থাকুক। জানলে হয়তো মনের অসুখ করতে পারে!!

কি অদ্ভুত মানুষের জীবন। একদিকে তাকিয়ে দুঃখ দেখি, বিপরীত দিকে পুষি ঘৃণা! অথচ
মুদ্রার ওপিঠেও কিছু গল্প থাকে, কিছু দুঃখ থাকে। সেই দুঃখ আমার দেখতে পাইনা বলে আমাদের ছুঁয়ে যায় না।
কত ধরনের মানুষ আছে! কত রকম দুঃখ আছে। ভালোবাসার কত রং আছে!
অথচ আমরা কেবল প্রেমের মধ্যেই ভালোবাসা খুঁজি। ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে প্রতিটি সম্পর্কের ভাজে ভাজে।
আফরিনকে দেখে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে এখন আমার।
মনে হচ্ছে আমাদের চিন্তার জগৎ এখনো অনেক ছোট রয়ে গেছে!

আমার ভাবনায় ছেদ দিয়ে রেহান বললো
– Thanks!
-?? হঠাৎ! কিসের জন্য??
– আজকে তুই অনেক বড় মনের পরিচয় দিলি।।
– আমি!! কিভাবে?
– আফরিনের সাথে এভাবে নরমাললি বিহেইভ করবি আর এমন ভাবে ওকে গ্রহণ করেছিস! এখানে অনেকেই জানে ওর সাথে আমার একটা রিলেশন ছিলো। এসব জানার পরেও তোর ব্যবহারে আমি নিজেই অবাক হয়েছি।। তারাও খানিকটা হয়েছে।
– তাই বুঝি?
– হুম। তোর যায়গায় আমি হলে এটা বোধহয় পারতাম না।
আমি কিছু না বলে মৃদু হাসলাম।
– তো কি এতো গল্প করেছিস?
– তেমন কিছু না। ওর ফ্যামিলির কথা বলেছে ওর বোন কিভাবে মারা গেছে এসব-ই।
– হা।মেহেরিন।খুব লাজুক আর ভীতু টাইপের ছিলো মেয়েটা।
-হুম। শুনেছি আফরিনের কাছে।
– আর কি বললো?
– এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে ওর।সামনেই বিয়ে করবে।
– বাহবা। একেবারে এতো গল্প!
– কেন? গল্প করা যায় না বুঝি?
– ঠিক তা না।
– তো কি?
– আফরিন সহজে কারো সাথে এতোটা ঘনিষ্ঠ হয় না। আর তোর সাথে অল্প সময়েই দেখছি কতকিছু শেয়ার করলো!.
– হুমম।
মেয়েটা ভারী মিশুক মনে হয়েছে।। হাসিখুশি।
– হা।এমনিতে বেশ হাসিখুশি।। মজার কথা কি জানিস। সেদিন যখন দেখা হয়েছিলো, তখন বলেছিলো ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে। এনগেজমেন্ট হবার কথা। এসব আমার সাথে এতো বছর পরে দেখা হবার পরে এমন ভাবে বললো! আমিই আসলে বিব্রতবোধ করছিলাম প্রথমে।

রেহানও সাবলীলভাবে বলে যাচ্ছে কথাগুলো। কারণ ওর মনে কোনো দ্বিধা নেই।
আরও কথা যেগুলো হয়েছিলো সেগুলো বললাম না।কারণ কথা দিয়েছি আফরিনকে।।
রেহানকে যতটা স্পেস দিয়েছি,আজ নিজেরও একটু স্পেস দরকার। কিছু একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি রাখার জন্য।।
যেটা কাউকে বলা যায় না। রেহানকেও না।।
এটা কেবলই নিজের। একান্ত নিজের।
আজ নিজের অনেক হালকা লাগছে। আবার কোথাও একটু চিনচিন ব্যথা করছে।
কেন করছে বুঝতে পারছি না।
বোঝার চেষ্টাও করছিনা।

কানাডায় শেষ কিছু দিন আমরা অনেক শপিং করলাম সবার জন্য।
বাড়ি ফেরার জন্য মন কেমন করছে।
সময় যেন কাটছে না।
পোস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গেছে। সবকিছু পেয়ে গেছি।
সময় চলে এলো। দেশে ফেরার।
আগামী পরশু আমরা ফিরে যাচ্ছি।

তোকে একটা কথা বলি?
– হা,বলো।
– তুই আবার মাইন্ড করবি নাতো?
আমি একটু সিরিয়াস হয়ে ওর কথায় মনোযোগ দিলাম। কি এমন কথা বলতে রেহান ইতস্তত করছে!!
– মাইন্ড করবো! কি এমন কথা যেটা শুনে আমি মাইন্ড করবো?!!
– মাইন্ড না করলেও কষ্ট পাবি। তাই বলতে চাইনি।কিন্তু তোর কাছে গোপন করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
– কি হয়েছে বল?
– আমি চেয়েছিলাম আফরিন তোর মুখোমুখি হোক।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– চেয়েছিলে?? কিন্তু কেন?
– কারণ তোর মনে কোনো দ্বিধা, কোনো সংশয় যেন না থাকে।
তোর আমার সম্পর্ক টা আরও স্ট্রং হবার জন্য আফরিনের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিলো।
– হুম। বুঝলাম।
এই চাওয়া টা কি আমাকে এখানে পাঠানোর আগে থেকে ছিলো?
– না। এখানে এসে আফরিনের সাথে দেখা হবার পরে মনে হয়েছে।
হিয়া, তুই আমার কাছে কি সেটা তোকে বুঝাতে পারবো না।
– আসলেই আফরিনের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিলো।
নাহলে তোমার সাথে ঝগড়া করতাম কি নিয়ে? ঝগড়া করার কোনো সুযোগ তো রাখোনা।!

আমি মুখ টিপে হাসছি। আমিও বিশ্বাস করি আফরিন উপস্থিতির প্রয়োজন ছিলো।
– তা-ই? তোর ঝগড়া করতে মন চায়?
– জি। এখন থেকে ঠিক করেছি প্রতি দুই মাসে একবার ঝগড়া করবো।নাহলে একঘেয়ে লাগবে।
– তুই ঝগড়া করবি?
– হা করবোই তো। বউয়েরা তো জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করবেই।
– এটা কি ল’ ?
– ল’ বলতে পারো মেরিড লাইফের!
– ঝগড়া করে দেখিস।আমিও ঝগড়া করে বাসা থেকে চলে যাবো।
– কোথায় যাবে?
– যাবার যায়গার অভাব নেই।
– কই যাবেন শুনি?
– শ্বশুর বাড়ি।।
– ওরে… উনার শ্বশুর বাড়ি চলে যাবেন!!
আমিও আমার শ্বশুর বাড়িতেই থাকবো।ঢুকতে দিবোনা আপনাকে।
– ঠিক আছে, ঠিক আছে। দেখা যাবে।

– অই,শুন।
– হুম, বলো।
– আরে, শুন না!!
– বলো না। শুনছিতো।
আমি রেহানের কোলে মাথা রেখে ফোন ঘাটছিলাম। রেহান হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
হঠাৎ কি বলার জন্য এমন ডাকছে!
– সবার জন্য এতো কিছু নিয়েছিস।
আমার জন্য এই দেশ থেকে কি নিয়ে যাবি?
– তোমার জন্য কিছু নেই নাই?!!
এত্তো গুলো শপিং যে করলাম তোমার জন্য!!
উঠে বসে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলাম।
– এগুলো কি চেয়েছি আমি?
– তো! কি চেয়েছেন? বলেন শুনি।
– বলা যাবে না।
– বলা যাবে না!!?
– না।
– আজব!! কেন বলা যাবে না?
– বললে তো আপনি বুঝবেন না!
– বুঝিয়ে বললেই তো বুঝবো, নাকি?.
– আসেন বুঝিয়ে দেই।
রেহান টান দিয়ে বুকে নিয়ে বললো
– অই যে স্বপ্নে দেখলাম একটা মিষ্টি, ছোট্ট পরীর সাথে হেঁটে যাচ্ছিলেন,সেই পরীটা আমার চাই।
রেহান কি বলেছে বুঝতে পেরে আমার শরীরে অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে গেলো। লজ্জাও পেলাম।
ওর বুকে মুখ লুকিয়ে নিলাম।
– মুখ লুকিয়ে লাভ নেই।পরী আমার চাই।

আসলেই একটা পরী চাই।আমার মনের অদ্ভুত শূন্যতা দূর করতে একটা পরী চাই।রেহান ঠিক বলেছে।।
ওকে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরেছি।

আজ আমাদের ফ্লাইট।
প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরছি।
এখানেই হয়তো আফরিনের অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনে যাচ্ছি।
আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ল্যান্ড করবে আমাদের বিমানটি।
আকাশের মেঘ।হালকা হালকা রানওয়ে দেখা যাচ্ছে।
বিমানটা একটা ঝাকি দিলো।
রানওয়েতে দেখলাম বিমানগুলো বাঁকা হয়ে আছে।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম বিমানগুলো বাঁকা হয়ে নেই।আমাদের বিমানটাই বাঁকা হয়ে আছে!!
ল্যান্ডিং এর চেষ্টা করছে কিন্তু ল্যান্ড করতে পারছে না।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে