প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৬৩+৬৪+৬৫

0
2358

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কথায় কথায় আমাকে ছোট বলবেন না,আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর,আপনার বুঝতে ভুল হয় এই আর কি,এর জন্য আপনাকে আমি হোমিওপ্যাথিক ঔষুধ খাওয়াবো,কাজ করবে সিউর
.
কোনো ঔষুধ লাগবে না,যেটা সত্যি সেটাই বুঝি,বরং তুমি খাও,তোমার তো শয়তানি বাঁদরামির শেষ নেই,তাতে ওসব যদি একটু কমে আর কি
.
আহানা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দুজনেই দেখতে পেলো মায়ের জ্ঞান ফিরেছে,দুজনেই একসাথে উনার কাছে এসে দাঁড়ালো
উনি চোখ খুলতেই ওদের একসাথে দেখতে পেয়ে অনেক খুশি হলেন,কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারলেন না
.
দুপুর হতে না হতেই শান্ত তার মাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়েছে,বাসায় ফিরে মাকে নিজের রুমে রেখে সে মায়ের হাত ধরে পাশে বসে থাকলো,মাকে ছাড়া কোথাও যাবে না সে
.
আহানা শান্তর রুমে এসে রুমটা পরিষ্কার করলো তারপর গেলো গোসল করতে,শান্ত মায়ের ঘুম আসা পর্যন্ত মায়ের হাত ধরে ছিলো তারপর নিতুকে ডেকে দিয়ে সে আসলো ফ্রেশ হতে
আহানা গোসল করতে গেলে ১ঘন্টার কাছাকাছি সময় নষ্ট করে
দেরি হওয়ার কারণ হলো সে সাবান গায়ে একটু ঘষে টাইলসের দিকে গভীর মনযোগ দিয়ে দেখে,তারপর সাবান আবার আরেকটু ঘষে ফ্লোরের দিকে চেয়ে দেখে
কি কারণে এত দেখে দেখে সময় নষ্ট করে তা সে নিজেও জানে না
তবে গোসলের সময়টায় এরকম উদ্ভট কাজ করতে তার বেশ লাগে
এদিকে শান্ত তোয়ালে হাতে নিয়ে ৫মিনিট হয়েছে কোমড়ে হাত দিয়ে বাথরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,আর আহানার কোনো খোঁজই নেই,ঝর্নার পানির আওয়াজ আসতেছে তা না হলে শান্ত ধরেই নিতো যে আহানা মরে গেছে
তো এতক্ষণ সময় লাগাচ্ছে দেখে শান্ত এক ধমক দিয়ে বললো”তুমি নিজ থেকে বের হবা নাকি আমি টেনে হিঁচড়ে তোমাকে বের করবো?”
.
আহানা হকচকিয়ে সাবানটা হাত থেকে ফেলেই দিলো তারপর দরজার কাছে এসে বললো”২টার সময় ঢুকছি,এরকম করেন কেন?”
.
শান্ত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখন বাজে পনে ৩টা
শান্তর চোখ কপালে উঠে গেছে,তারপর আরেক ধমক দিয়ে সে বললো”এত ঘন্টা ধরে কি করো তুমি?তুমি কি এমন করেই গোসল করো?আমার তো ৩মিনিটে গোসল হয়ে যায়”
.
আপনি হয়ত সাবান দেন না গায়ে
.
দিই,তোমার মতন কচ্ছপের স্পীডে দিই না,আমি সময় নষ্ট করি না
অবশ্য আজাইরা মানুষেরা এরকম করেই সময় নষ্ট করে,তোমাকে দেখে মানতে বাধ্য হলাম
.
আহানা ঠুসঠাস করে বাথরুম থেকে বের হলো কোমড়ে হাত দিয়ে
পরনে আগের থ্রি পিসটা অথচ সারা গায়ে সাবানের বাবলসে ভর্তি
.
শান্ত আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো”কি ব্যাপার এখনও গায়ে পানি ঢালো নাই?”
.
আপনার এত কিসের সমস্যা আমার গোসল নিয়ে?নিজের চরকায় তেল দিন না,যত্তসব!
ঠিক করে গোসল ও করতে দেয় না আমাকে
এটা আমার শশুর বাড়ি ওকে?আমাকে কোনো কিছুতে মানা করার কোনো অধিকার নেই আপনার
.
ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন!!! এই বাসাটা আমি আমার টাকায় তৈরি করেছি
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”তো??রীতিমতন এটা আমার শশুড় বাড়ি হয়,শশুড় আপনার বাবা হয় ওকে?সে সূত্রে এটা তার বাড়ি,আপনি তো গাছের একটা পাতা স্বরুপ
.
এরকম ফালতু লজিক দেওয়ার জন্য তোমাকে বাথটাবে চুবিয়ে আধ ঘন্টা বাদে বের করবো
.
সে যাই হোক,সত্যি কথা এমন তেতোই হয়,এখন আরও মিনিট দশেক ওয়েট করবেন নাকি আমি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতাম আপনি গিয়ে গোসল করে আসবেন
.
শান্ত তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে যেতে যেতে বললো”আমার অনেক কাজ আছে,আরও ১০মিনিট অপেক্ষা করার সময় নাই”
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”যেন আজই ৫তলা বিল্ডিং নিজের হাতে তৈরি করবেন”
.
শান্ত ৫মিনিটেই গোসল সেরে বের হলো,আহানা ফ্লোরে বসে আছে গালে হাত দিয়ে
.
শান্ত তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বললো”তোমার বসার জায়গার অভাব পড়েছে?”
.
জি না,আপনার বিছানায় এরকম সাবান আলা শরীর নিয়ে বসলে আপনি পরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলবেন”আমার এত সুন্দর ইম্পোর্টেড বেড কভার নষ্ট করে দিলো রে”
.
তোমার সাথে ভালো মানুষ কথা বলে না
.
আহানা বাথরুমে যেতে যেতে বললো”তাহলে তো আপনি খারাপ মানুষ ওরপে হোল স্কয়ার
.
কি বললে?আমি করলাম?
.
আহানা দরজা লাগিয়ে ফেলে বললো”আপনি তো সোজা আমাকে বিয়েই করে নিয়েছেন তাও দুবার করে”
.
এই মেয়েটার সাথে জীবনে লজিক দিয়ে পারি না,মনে হয় যেন লজিক নিয়ে ডিগ্রী করে রেখেছে
.
শান্ত এবার সোজা গিয়ে শুয়ে পড়লো,রাতে ভালোমতন ঘুম হয়নি তার এবার শান্তিতে একটু ঘুমাবে সে
.
আহানা গোসল করে বেরিয়ে দেখলো তার মিষ্টি বর বুকে বালিশ রেখে সোজা হয়ে খাটের মাঝখানে গিয়ে ঘুমাচ্ছেন
আহানা কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবলো”ছোটবেলায় শান্ত আহনার এমন অবস্থায় বলািশের উপর বসতে চেয়েছিলো,মন তো চাচ্ছে আমি এখন বসে আমার প্রতিশোধটা নিয়ে নিই,কিন্তু নাহ,মাফ করলাম যাও
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো মাকে দেখতে,সোফার রুম দিয়ে মায়ের রুমে য়াওয়ার সময় দেখলো ওর মা আর খালা আসতেছে,মাকে দেখতে এসেছে মনে হয়
আহানা তাই তাদের নিয়ে শান্তি রহমানের রুমে ঢুকলো
নিতু তার মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে
কিন্তু মা জেগে আছেন,আহানার মা তার পাশে এসে বসলেন হাতটা ধরে
আহানা তাই গেলো নাস্তা বানাতে সবার জন্য এসময়ে ভাত তো খাবে না মা আর খালা,ভাত খেয়ে এসেছে নিশ্চয়
তার চেয়ে বরং আমি চা আর কিছু হালকা নাস্তা বানিয়ে নিই
.
আহানা মন দিল লাগিয়ে নাস্তা বানাচ্ছে,রিপা আজ আসেনি ওর নাকি কি কাজ পড়ে গেছে
বুয়া রান্না সেরে চলে গেছে,তাই মায়ের রুমে সবাই,আহানা একা রান্নাঘরে আর শান্ত তার রুমে ঘুমায়
হঠাৎ আহানা নিজের কোমড়ের কাছে কারোর গরম নিশ্বাস টের পেয়ে চামচ নিয়ে পিছন ফিরে দুম করে এক বাড়ি বসিয়ে দিলো
.
আউচচচচচ!
.
ওপস,সরি!আপনি এখানে কি করেন? তাও হাঁটু গেড়ে বসে লুকিয়ে,আমার কোমড়ের কাছে এসে আপনার নিশ্বাস পড়তেছিলো,এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি,আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম
.
আরে বোন সাধে করি নাই,সিলিন্ডার চেক করছিলাম,দোকান থেকে কল এসেছিলো ওরা বললো চেক করার লোক আজ এসে ফিরে গিয়েছিলো দারোয়ান নাকি গেটে ছিল না,তাই আমাকে চেক করতে বললো
.
ওহ আমি তো ভাবলাম কি না কি
.
ওসবই ভাবো,একবার চড় আর এখন চামচ দিয়ে বাড়ি,আর কি কি করবা তুমি?স্বামীকে কেউ এমব ভাবে প্রতিনিয়ত মারে সেটা তোমাকে না দেখলে জানতাম না
.
যাই হোক,আমাকে বোন বললেন কেন?
.
তুমি যে সারাদিন শান্ত ভাইয়া ভাইয়া বলো আমি তোমাকে চামচ দিয়ে বাইড়াইছি?
.
আপনি আমাকে মারবেন?
.
না না সেটা কেন করতে যাব,আমি তো খালি তোমার হাতে মাইর খেতে খেতে ২/৩বাচ্চার বাপ হয়ে যাবো একদিন
.
বকরবকর না করে যান তো
.
বিসকিট দাও
.
লাঞ্চ করবেন না?
.
দুপুর ৩টায় লাঞ্চ করি না আমি,বিসকিট দাও আর চা বানাও,মাথা ধরেছে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি
.
আহানা বিসকিট একটা শান্তর হাতে দিয়ে চায়ের দিকে মন দিলো
শান্ত চুলার পাশের তাকের উপর বসলো পা দুলিয়ে
বিসকিটে এক কামড় দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে আহানার দিকে তাকাচ্ছে সে
আহানা পিছন ফিরে তাকাতেই শান্ত আরেকদিকে মুখ করে নিলো
.
কি ব্যাপার?প্রেম প্রেম পাচ্ছে?
.
যার সাথে ছোট থেকে একসাথে থাকলাম তার প্রতিটা দিনই প্রেম প্রেম পেয়েছিলো
.
আহা!! কবি কবি ভাব রে,এতদিন মেরেও মুখ দিয়ে ভালোবাসি কথাটা বের করতে পারিনি আর আজ উনি হাবুডুবু খাচ্ছেন
.
কে বললো?কবিতাটি তোমার জন্য ছিল না
.
আহানা চামচটা ঘুরাতে ঘুরাতে শান্তর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বললো”তা কার জন্য ছিল?”
.
আমার অত্যন্ত কিউট প্রেমিকার জন্য
.
নিন চা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন
.
আহানা চায়ের কাপটা শান্তর হাতে দিয়ে মায়ের রুমের দিকে গেলো,নিতু উঠে বসে চোখ ডলতেছে
আহানা সবাইকে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে নিতুকে বললো মুখ ধুয়ে আসতে,তার জন্য গরম দুধ রেখেছে,সে যেন সেটা খেয়ে নেয়
.♣
মা আর খালা মিলে শান্তি রহমানের সাথে গল্প করছেন উনার মন ভালো করার জন্য
আহানা বোর হয়ে শান্তর রুমে ফেরত আসলো,শান্ত তার বউকে চলে যেতে দেখেও সেও পিছু পিছু এসে পড়েছে
আহানা বিছানায় বসে টিভিটা অন করে পা তুলে গোল হয়ে বসলো
.
শান্ত চুপচাপ এসে পাশে বসে ফোন হাতে নিয়ে কিছুক্ষন দেখলেও মন বসছে না দেখে রেখে দিলো সে
এদিকে আহানা মনযোগ দিয়ে একটা হিন্দি সিরিয়াল দেখছে
.
দেখতেছো না আমি কতক্ষণ ধরে তোমার দিকে চেয়ে আছি?
.
দেখলাম তো ফোন টিপতেছেন,এররই মাঝে ফোন রেখে দিছেন?
.
ভালো লাগছে না,চলো ঝগড়া করি
.
মুড নেই
.
কেন?তুমি যখন বলো তখন আমি ঝগড়া করি না?তাহলে আমি বলাই ঝগড়া করতেসো না কেন?
.
কেমন মানুষ আপনি?ঝগড়ার জন্য ঝগড়া করতেছেন?
আমি ভাবতাম আমিই হয়ত পাগল যে চেয়ে চেয়ে ঝগড়া করি
এখন দেখি আপনাকে সেই রোগ ধরেছে
.
মাস্ক পরে থাকবা,কিসব উল্টা পাল্টা রোগ তোমার থেকে আমাকে ধরছে
.
আহানা রেগে শান্তর চুল টেনে দিলো,রিমোট দিয়ে একটা বাড়ি বসিয়ে দিলো ধুমদাম
.
আমাকে মারা ছাড়া আর কিছু পারো না?
.
আহানা মুচকি হেসে এগিয়ে এসে শান্তর কপালে চুমু দিয়ে বললো”পারি তো অনেক কিছু,”
.
আহানা চুমুটা দিয়ে সরে যেতে নিতেই শান্ত ওর পিঠে হাত রেখে ধরে ফেললো ওকে
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”মজা করছি,ধরলেন কেন আমাকে?এসময়ে?
এখন?বাসায় মেহমানে ভর্তি,মায়ের অসুখ!”
.
হইছে হইছে,রোমান্স করার জন্য ধরি নাই,এমনিতেই ধরলাম,যাও ছেড়ে দিয়েছি,কি মেয়েরে বাবা!
.
আহানা চলে গেলো রুম থেকে,শান্ত হেসে দিয়ে ফোনটা আবার হাতে নিতেই ওর চোখ কপালে,কণার কল
.
এই মেয়েটা আমার নাম্বার পেলো কই?সহসা নাম্বার চেঞ্জ করতে হবে দেখছি তা নাহলে মাথা চিবিয়ে খাবে আমার
.
তারপর শান্ত কি ভেবে আহানার ফোনটা হাতে নিয়ে সিম চেঞ্জ করে তার সিম আহানার ফোনে ঢুকালো আর আহানার সিম তার ফোনে ঢুকালো
হেহে এবার যা করবে সব আহানাই করবে
.
শান্ত বিছানা থেকে নেমে ল্যাপটপ নিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেছে
আহানা কিছু সময় বাদে আবারও রুমে ফেরত আসলো,এসেই দেখলো ওর ফোন জ্বলতেছে,কার যেন কল এসেছে,সাইলেন্ট করে রাখায় সাউন্ড হচ্ছিলো না
.
আহানা কল রিসিভ করে হ্যালো বলতে যেতেই ওপাশ থেকে কণা বললো”জান জান প্লিস টক উউথ মি”
.
কে রে?কে তুই?কোথাকার জান?আমি মেয়ে!!!
মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে জান বলতে লজ্জা করে না?বেশরম!
.
আহানা লাইন কেটে দিয়ে বারান্দার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো শান্ত হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
.
কি ব্যাপার?এরকম হাসতেছেন কেন?
.
কিছু না তো,এমনি
.
আহানা আবার চলে যেতে নিতেই কলটা আবার আসলো
এবার সে বিছানায় বসে রিসিভ করলো,কণা বললো”হু আর ইউ??এটা শান্তর নাম্বার নাহ?
.
শান্ত??আপনি কে বলুন তো
.
আমি ওর জিএফ,ওকে দাও,তুমি কে?
.
আমি ওর ওয়াইফ!
.
কণা হালকা কেশে দম নিয়ে বললো”তুমি তো বউ হয়েও বউ না,শান্ত তোমাকে মেনে নেয়নি জানা আছে আমার,ওকে দাও,ওর সাথে কিছু কথা আছে আমার”
.
আহানা শান্তর দিকে তাকালো তারপর বললো”সে তো আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমায়
.
বিশ্বাস করি না
.
করো না?
.
না?
.
সত্যি করো না?
.
না!
.
তাহলে মুড়ি খাও
.
আহানা লাইনটা কেটে দিয়ে ফোন নিয়ে হনহনিয়ে শান্তর সামনে এসে রেগে রেগে বললো”আপনার পাগলা প্রেমিকা আপনাকে জ্বালানোর জায়গায় আমাকে জ্বালাচ্ছে কেন?”
.
কারণ আমার সিম আমি তোমার ফোনে দিয়েছি আর তোমার সিম আমি ইউজ করছি
আশা করি তুমি ওকে সামলাতে পারবে
.
আমি কেন সামলাবো?
আপনি আপনার রুপ দিয়ে কণাকে পাগল বানিয়েছিলেন এখন ওরে আমি কেন সামলাবো,আপনি সামলান
.
কেমন বউ তুমি?তোমার জেলাস ফিল হচ্ছে না?
.
তখন হতো যখন আপনি আর ওর মাঝে টাংকি চলতো বিয়ের পরেও,এ ছাড়া জেলাস ফিলের কিছু দেখছি না
সিম বদলে নিজের সিম নিজে নেন আর যতবার সে কল করবে ঝাড়ি দিয়ে কেটে দিবেন
.
আমার অনেক কাজ,তুমি সামলাও না প্লিস!আর ওকে ব্লক দিলে আরেক নাম্বার থেকে কল করে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আপনার যা খুশি করেন,আমি পারবো না এত ভেজাল মাথায় নিতে,ওকে বাই”

মা আর খালা শান্তি রহমানের সাথে গল্প করা শেষ করে একেবারে বিকেলে বাসায় ফিরলেন,শান্ত কাজ করতে করতে শেষ,আজ অফিসে যেতে পারেনি বলে সব কাজ এখন বাসায় বসে করছে সে
.
আহানা ফ্রি টাইমে নিজের জামাকাপড় গুছাতে গিয়ে একটা ছবি দেখে থমকে গেলো,তারপর দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডার টার কাছে এসে সে তারিখ চেক করলো,চোখ দিয়ে হঠাৎ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে
আহানা ছবিটা বুকে ধরে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে,দৌড়াতে দৌড়াতে দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলো গেলো সে
.
শান্ত এ বিষয়ে জানে না,তার কাজ শেষ হয়েছে সন্ধ্যা ৭টা ৩৫এ
কাজ শেষ করে সে টিভিটা অন করে বললো”আহানা এক কাপ কফি হবে?”
.
আহানার কোনো খবর নেই দেখে সে রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর পেরিয়ে রান্নাঘরে চেয়ে দেখলো পুরো রান্নাঘর ফাঁকা,নিতু তার রুমে পড়ছে,মা ঘুমাচ্ছেন,তাহলে মেয়েটা গেলো কই?
.
শান্ত ফোন হাতে নিয়ে বাসার বাইরে বের হয়ে বাগানগুলো চেক করে না পেয়ে আহানাকে কল করলো,আহানার ফোন বেজে যাচ্ছে কিন্তু সে ধরছে না কারন সে ফোন বাসাই রেখে গেছে
আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে তাদের বাসার কাছে আসলো,এতটা পথ সে ছুটে এসেছে,রিকসা নিবে নাকি শান্তদের বাসার কারে করে আসবে এতসব মাথায় ছিল না তখন
তার শুধু মাথায় আছে তাকে এখন এই মূহুর্তে নিজের বাড়ি ফিরতে হবে
বাড়িতে না ঢুকে সে বাড়ির পেছন দিকটায় আসলো
.
একটা কবর সেখানে,আশেপাশে টাইলস করা,দুটো সাদা আর লাল গোলাপের গাছ মাঝখানে, তাতে ফুল ধরে আছে অনেক
আহানা একটু এগিয়ে এসে নিচে বসে পড়লো হাঁটু গেড়ে
কবরটি তার বাবার
আর কাল তার জন্মদিন,প্রতিবার খুব ধুমদাম করে জন্মদিনটা পালন করতো আহানারা
উনি যাওয়ার পর থেকে না আহানার জন্মদিন পালন হয় না উনার
কিন্তু আহানা টাকা জমিয়ে প্রতিবার গরীব কিছু লোকদের খাওয়ায় বাবার জন্য
এবারও খাওয়াবে সে,বাবার কবরটায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সে চোখের পানি মুছতে লাগলো নিঃশব্দে
.
হঠাৎ পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে আহানা চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালো,চোখ ভর্তি পানি তার
শান্ত বুঝতে পারলো আহানা কেন কাঁদছে তারপর সে স্বাভাবিক গলায় বললো”কাঁদলে উনি কষ্ট পাবেন,বরং হাসি মুখে থাকো,কাল তো আঙ্কেলের জন্মদিন,কত কাজ আমাদের,এভাবে কাঁদলে চলবে?উঠো!”
.
আহানা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো”আপনি যান,আমাকে একা থাকতে দিন,এতসবের মাঝে আমি দিনটা ভুলেই গিয়েছিলাম,কাপড় গুছাতে গিয়ে ছবিটা না পেলে হয়ত মনেই আসতো না”
.
এখন এসেছে তো?এটা নিয়েই পড়ে থাকবা নাকি কি করে দিনটা পালন করনা সেটাই ভাববা,আমি কিন্তু পথশিশু দের খাওয়াবো
.
আহানা হালকা হেসে বললো”আমি তাদের মা বাবাদের খাওয়াবো”
.
হুম,চলো এখন,রাত করে এখানে বসে থাকতে হবে না,তোমার এমন হাল দেখে আমারও খারাপ লাগে,তোমাকে তো ধানিলঙ্কা ফ্লেভারে মানায় শুধু
.
আহানা উঠে গিয়ে চুপচাপ হাঁটা ধরলো,মন খারাপ তার,বাবাকে এসময়টায় খুব মিস করে সে
অবশ্য যখন যখন সে পরিশ্রম করে টাকা কামাতো তখন তখন বাবার কথা মাথায় আসতো,তার বয়সের মেয়েরা বাবার টাকায় আরাম আয়েশ করত আর সে কাজ করে করে সংসার চালাতো
শান্ত ওর জীবনে আসার পর থেকে তো বাবাকে প্রায়ই ভুলেই গিয়েছে সে
আর এখন আবার সেই বাবাকে মনে পড়লো,মন চাচ্ছে বাবাকে সামনে পেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখতো সে
প্রিয় মানুষ ছেড়ে চলে গেলে তাকে ফিরে পাওয়ার কষ্টটা অনেক, তখন তাকে চেয়েও না পেয়ে আরও খারাপ লাগে
.
শান্ত কার চালাতে চালাতে আর আহানার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো না,কারণ আহানার মন খারাপ,যেটা হওয়া স্বাভাবিক
এখন ওকে মন খারাপ থেকে বেরিয়ে আসতে বলাও সাজে না
কারণ শান্ত নিজেও তার বাবাকে হারিয়েছে,কষ্টটা সে খুব ভালো মতন ফিল করতে পারে
.
বাসায় ফিরে আহানা ছবিটা ধরে রেখে খাটের এক কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে,বলে দিয়েছে সে ডিনার করবে না
বুয়া এসেছে সে সবাইকে ডিনার সার্ভ করে দেবে
.
শান্ত আহানা ডিনার করবে না শুনে তার ও খাওয়ার প্রতি ইচ্ছা উঠে গেছে তাও মায়ের সামনে খেতে হবে বলে কিছুটা খেলো তারপর আহানার জন্য কিছু খাবার নিয়ে সে রুমে ফেরত আসলো,আহানাকে ডাক দিয়ে বললো খাবারটা খেয়ে নিতে কিন্তু আহানা সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে
শান্ত এবার এক ধমক দিতেই আহানা উঠে বসে পড়েছে
চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে তার
শান্তর মনে হলো সে ধমক দিয়ে ভুল করেছে তাও খাওয়ানোর খাতিরে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে সে বললো”খাবার খেতে বলছি খাবা,এত না না করো কেন?না খেলে এক চড় বসিয়ে দেবো”
.
আপনি কেন বুঝছেন না আমার খিধে নেই,আমার কষ্ট লাগছে
.
তো?খাওয়া কি দোষ করছে??
.
খাব না আমি,প্লিস যান
.
তোমাকে খেতেই হবে
.
আহানা বাধ্য হয়ে দু টুকরো রুটি মুখে দিয়ে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো
শান্ত আর জোরাজুরি করতে পারলো না,ওর যেভাবে ইচ্ছা থাকুক,জাস্ট নিজের খেয়ালটা রাখুক সে

পরেরদিন ভোর হতে না হতেই আহানা উঠে পড়লো,তার আজ অনেক কাজ,খাবার প্রস্তুত করার জন্য বাবুর্চির সাথে কন্ট্যাক্ট করতে হবে
তা ছাড়া জামাকাপড় কিনে দেবে সে,শান্ত আহানার আঁচল বুকে ধরে ঘুমাচ্ছে,আহানা সব টেনসন গুছিয়ে নিয়ে আঁচল নিয়ে সমস্যা পড়লো এবার
তারপর হালকা টান দিয়ে বললো”আমার আঁচলের সাথে আপনার এত কি সম্পর্ক??ছাড়ুন,সরুন!”
.
হুমমম আহানা, ঘুমাতে দাও
.
ঘুমান না,কে মানা করেছে?আমার আজ কত কাজ,সরুন তো!উফ!
.
আহানা আঁচল টান দিয়ে শান্তর খালি পিঠে এক বাড়ি দিয়ে চলে গেলো,তারপর ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছাতে গুছাতে সে বিছানার দিকে এক নজর তাকালো,কিন্তু অবাক হলো এই দেখে যে শান্ত সেখানে নেই
.
গেলো কই?
.
আহানা এবার ওয়াসরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত মাথা মুছতে মুছতে বের হচ্ছে আর কাঁপতে কাঁপতে আলমারির কাছে গিয়ে জ্যাকেট বের করছে
.
কি ব্যাপার?ভোর ৪টা বাজে,এখন উঠলেন কেন?গোসলই বা করলেন কেন?
.
ওমা কি বলে!!তোমাকে আমি এ সময়ে একা বের হতে দেবো?মা তো তাহলে আমাকে কুচি কুচি করে কেটে নদীর জলে ভাসিয়ে দেবে
.
মা এমন কিছুই করবে না,আমার জন্য আপনাকে এত কষ্ট করতে হবে না,যান শুয়ে পড়েন,আমি একা একা যেতে পারবো
.
তা হচ্ছে না,আর ছোটবেলার বন্ধু হিসেবে এই টুকু সেফটি দিতেই পারি, তাছাড়া ভুলে যেও না তোমার সেফটির জন্যই কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করেছি
.
আহা আহা,এতদিনে না রতনের হামলার শিকার হলাম না সাইমনের,তাহলে এত কিসের ভয় আপনার?
.
যাই হোক, আমি যাব মানে যাবোই,চুপচাপ নিজের কাজ করো আমার যাওয়া নিয়ে এত না ভেবে
.
ঠিক আছে ফাইন!
.
আহানা চুল গুলো আঁছড়িয়ে নিতে নিতে শান্ত একটা টি-শার্ট পরলো এ্যাশ কালারের তারপর তার উপর দিয়ে একটা সবুজ রঙের জ্যাকেট পরে নিলো
,হাতে ঘড়ি পরে এবার সে জুতার ফিতা লাগাচ্ছে
আহানা চুলে খোঁপা করে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”এমন সেজেগুজে যাচ্ছেন কেন?কণার মতো একটা মেয়েকে পাগল করে শান্তি হয়নি আপনার?এখন আবার আরও শতে শতে পাগল করতে চান?”
.
আমার বউ পাগল হলেই চলবে,যাই হোক,পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি কোথা থেকে,কি পুড়ছে??
.
আহানা রেগে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,শান্ত আহানার ব্যাগটা হাতে নিয়ে ওর পিছু পিছু গেলো,দুজনেই সবার আগে আসলো বাবুর্চির কাছে,তাকে সব মেনু বুঝিয়ে দিয়ো রাঁধতে বলে দিলো আর পথশিশুদের খোঁজায় মন দিলো দুজনে
.
আহানা বললো এভাবে কাজ হবে না,আপনি ওদিকে খোঁজেন আর আমি এদিকে,তাহলে বেশি বেশি পাবো
.
ঠিক আছে
.
সবাইকে সকালের খাবার খাওয়ানো হবে সাথে দুপুরের জন্য ও দিয়ে দেওয়া হবে,সাথে থাকবে জামা কাপড়
.
আজকে শিশুদের মা বাবার খরচ আহানা দেবে বলেছে,আর পথশিশুদের খাওয়ার খরচ শান্ত দেবে ঠিক করেছে
.
আহানা অনেকজনকে পেলো
সে সবার সাথে মজার মজার কথা বলছে,হঠাৎ একজনকে দেখে তার মুখের হাসি হাওয়া হয়ে গেলো
হলুদ রঙের ফ্রিন্টের একটা লুঙ্গি পরা আর জাম কালারের ফতুয়া পরা একজন দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে,আহানা থেকে প্রায়ই ১৩হাত দূরে
লোকটাকে দেখে আহানা ভয়ে গা কেঁপে উঠলো,লোকটা আর কেউ নয়,এ হলো রতন,দাঁত কেলিয়ে সে হাসতেছে এবার
.
আহানা পিছোতে পিছোতে অনেকটা পথ চলে আসলো তারপর এদিক ওদিকে শান্তকে খুঁজতেছে সে এখন
মিনিট দুয়েক পর শান্তর দেখা পেলো সে,শান্ত সেখানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেছিলো
আহানা ভয়ে ভয়ে শান্তর সামনে দাঁড়িয়ে বললো”শান্ত আমি রতনকে দেখেছি”
.
শান্ত ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বললো”কে?রতন?সেটা কি করে হয়,ও তো জেলে”
.
না আমি ওরেই দেখলাম মাত্র
.
শান্ত আহানার কথা শুনে সেই জায়গায় আসলো কিন্তু রতনকে দেখলো না সে
আহানা বললো সে সত্যি এখানে দেখেছে
.
আচ্ছা আমি কল করে জেনে নেবো রতন জেল থেকে বেরিয়েছে কিনা,তুমি এত টেনসন নিও না,আমি আছি না?
আমি থাকতে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না,যে ওয়াদা আমি তোমাকে বিয়ে করার সময় করেছিলাম সেটা আমি পালন করবো
.
আহানা ঠিক আছে বলে কাজে মন দিয়েছে,সে ভুলেই গেছে সকালে সে রতনকে দেখেছিলো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
পুরোটা দিন দুজনেই ব্যস্ত ছিলো গরীব মানুষদের খাবার আয়োজনের এরেঞ্জমেন্টে
তো সন্ধ্যায় সব কাজ শেষ করে দুজনেই টায়ার্ড হয়ে কারে চুপ করে বসে আছে এখন
আহানা মাথায় হাত দিয়ে বললো”এক কাপ চা হলে ভালো হতো,আমার আর শক্তি নাই, প্রচুর কাজ হয়েছে এবার!
প্রতিজনকে নিজের হাতে খাবার দেওয়া কি ছোটখাটো কাজ?”
.
হুম সেটাই,চলো রেস্টুরেন্টে গিয়ে চা আর হালকা নাস্তা করে আসি
.
ওকে চলুন,তার আগে বলেন মায়ের অবস্থা কেমন ফোন করেছিলেন রিপাকে?
.
হুম,মা ঠিক আছে,কোনো চিন্তা নাই

রেস্টুরেন্টের কাছে আসতেই শান্ত কারটা থামালো,আহানা আগে ভাগে নেমে দৌড় দিয়েছে রেস্টুরেন্টর দিকে
.
শান্ত মুচকি হেসে সিট বেল্ট খুললো সবেমাত্র,তারপর কার থেকে নামতে যেতেই বিকট একটা শব্দ হলো সাথে সাথে
মূহুর্তেই সব ওলটপালট!
.
আহানা মাত্র রেস্টুরেন্টের দরজায় হাত দিয়েছিলো দরজা খোলার জন্য
এত জোরে হওয়া শব্দ তার কানে আসতেই তার বুক কেঁপে উঠেছে সাথেসাথে,কারণ শব্দ যেদিক থেকে এসেছে সেখানেই শান্ত কার পার্ক করতেছিলো
কাঁপতে কাঁপতে আহানা পিছন ফিরে তাকালো
আশেপাশের মানুষে ভর্তি হয়ে গেছে জায়গাটায়
শান্তর কার ড্যামেজ ৫৬%,পিছনে একটা বাস দাঁড়িয়ে আছে,যাত্রীবাহী একটি বাস,ড্রাইভার পালিয়ে গেছে ততক্ষণে
আহানা কোনোদিক না তাকিয়ে দৌড় দিলো কারের কাছে
শান্ত কারের ভেতর অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে,তার হাত আর মাথার বাম সাইড থেকে রক্ত বের হচ্ছে
আহানার পুরো দুনিয়াটা যেন থেমে গেলো
তার বাবার সাথে যা ঘটেছে তা আজ আবারও??
আহানা মানুষকে সরিয়ে শান্তর কাছে এসে ওর হাত ধরে ওকে উঠানোর চেষ্টা করছে এখন
.
শান্ত?কথা বলছেন না কেন??আমার দিকে তাকান,কি হয়েছে আপনার?
.
ম্যাডাম আপনি প্লিস সাইড হন,উনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে জলদি
.
একজন পথচারীর কথা শুনে আহানা তার দিকে তাকিয়ে বললো”হ্যাঁ,আমার শান্তর কিছু হবে না,ওকে আমি বাঁচাবো”
.
আহানা কথাগুলো বলতে বলতেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে
এতবড় ট্রমা সে নিতে পারেনি,হাত পা হঠাৎ এত জোরেশোরে কাঁপতে লাগলো!!! না পারলো সে কিছু বলতে না পারলো চিৎকার করতে
মূহুর্তেই মানুষের জীবন কিভাবে বদলে যেতে পারে
আহানা যখন চোখ খুলেছে তখন দেখলো সে একটা সাদা চাদর বিছানো বেডে শুয়ে আছে,তারপর তার সব মনে পড়তেই সে বিছানা থেকে নেমেই দৌড় দিলো শান্তর কাছে
দুজন নার্স এসে ওকে আটকে ফেলে বললো”থামুন,আপনি যেতে পারবেন না ভেতরে”
.
আমি আমার শান্তর কাছে যেতে চাই,আমাকে বাধা দেওয়ার আপনারা কারা???,ছাড়ুন আমার হাত
.
আহানা চিৎকার করছে বারবার
নার্সরা না পেরে ওকে অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশান দিয়ে দিয়েছে কারব আহানা ভেতরে ডাক্তারদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলো রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে
.
আহানা আবারও জ্ঞান হারিয়ে বেডে শুয়ে আছে
.
শান্তর পকেট থেকে ওর মানিব্যাগ নিয়ে সেখানে থাকা ওর অফিসের কার্ড থেকে অফিসে ফোন করলো নার্স তারপর ওদের খবর জানিয়ে বললো যাতে শান্তর পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়
.
২০মিনিটের মধ্যেই রিপা আর নিতু এসে গেছে সাথে এসেছে আহানার মা আর খালা
শান্তি রহমান ঘুমাচ্ছেন,তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি কিছুই,বুয়াকে বলা হয়েছে উনার খেয়াল রাখতে
.
আহানার মা আহানার কাছে এসে বললেন”ওর কি হয়েছে?”
.
নার্স জানালো আহানা শান্তর এমন হাল দেখে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো তারপর সেন্স আসার পর সে আরও চিৎকার চেঁচামেচি করায় ওকে অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশান দেওয়া হয়েছে আপাততর জন্য
.
আর শান্ত হাতে চোট পেয়েছে এবং মাথায় ও,থেমে থেমে রক্ত বমি করছে সে,চোখে সব ঝাপসা দেখছে সে
ডাক্তার নার্স ছাড়া আর কাউকেই দেখছে না চোখের সামনে
শুধু মুখ ফুটে একবার বললো”আহানা কোথায়”
.
তারপর আর কিছুই তার মনে নেই,ডাক্তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন”আহানা কে?তাকে যেন রুমে আসতে বলা হয় আর শান্তর মাথায় চোট পেয়েছে তাকে যেন কোনো টেনসন জাতীয় কথাবার্তা না শুনানো হয়”
.
আহানার এখনও জ্ঞান ফেরেনি,শান্তর ও ফেরেনি,দুজনে দুটি রুমে শুয়ে আছে অচেতন হয়ে
মাঝখানে একটি দেয়াল
আজকের এই ঘটনার পেছনে কার হাত থাকতে পারে?
মজনু নাকি রতন??
.
মজনুর নয়,কারণ সে বলেছিলো প্রতিশোধ নেবে কিন্তু সে নেয়নি, জাস্ট হুমকি দিয়েছিলো,তিনি শুধু একবার শান্তর উপর হামলা করেছিলেন যেটা কয়েকদিনের আগের ঘটনা
আজকের বাস দিয়ে চাপা দেওয়ার আইডিয়াটা রতনের ছিল
বাস ড্রাইভার ও সেই ছিলো,চাপা দিয়ে সে বাস রেখে পালিয়েছে
.
চেয়েছিল আহানাকে আর শান্তকে একসাথে মারতে কিন্তু এই যাত্রায় আহানা বেঁচে গেছে

পুরো রাত শেষ হয়ে গেলো
রিপা শান্তি রহমানের কাছে চলে গেছে যাতে উনি কোনো সন্দেহ না করেন,উনাকে শান্তর এক্সিডেন্টের কথা জানানো যাবে না কোনো মতেই
.
আহানা ভোর হতেই চোখ খুলে আবারও ছুটলো শান্তর রুমের দিকে
যতক্ষণ না সে শান্তকে সুস্থ দেখছে,শান্তকে জড়িয়ে ধরছে ততক্ষণ তার শান্তি নেই
.
শান্তর রুমে ঢুকার সময় কেউ ওকে বাধা দেইনি
করিডোরে থাকা চেয়ারের সারিতে মা,খালা আর নিতু বসে ঝিমাচ্ছেন,পুরো রাত তারা ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি,এই মাসটা কিরকম বিচ্ছিরি ভাবে শেষ হবে তারা ভাবতেই পারেনি
একবার শান্তি রহমানের হার্ট এটাক আবার এখন এত কিছু
.
আহানা শান্তর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে,ওর বাম হাতে ব্যান্ডেজ করে রাখা,মাথায় ও ব্যান্ডেজ
আহানা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শান্তর বুকে মাথা রাখলো
.
শান্ত এসব কি হয়ে গেলো,আপনি ঠিক আছেন তো?আমার সাথে কথা বলবেন না??একটু আমার দিকে তাকান না শান্ত!
আর আপনাকে ভাইয়া ডাকবো না কখনও,কখনও ঝগড়াও করবো না,প্লিস তাকান আমার দিকে
.
আহানা শান্তর কোনো উত্তর না পেয়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর চলে যেতে নিতেই শান্ত হাত বাড়িয়ে ওর আঁচল ধরে ফেললো
.
আহানা চমকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসিমাখা মুখে বললো”আপনি ঠিক আছেন তো?”
.
শান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো”হুম,তোমাকে খুঁজেছিলাম অনেক,কই ছিলো?”
.
আমাকে অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশান দিয়েছিলো
.
কিন্তু কেন?
.
বেশি চিৎকার চোঁচামেচি করছিলাম তো,ওসব বাদ দিন,আপনার হাতে কি হয়েছে?বেশি ব্যাথা করে?
.
ব্যাথা বলতে ডাক্তার বলেছে ২০দিন বেড রেস্ট, হাতে চাপ দিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না,আমাকে তাহলে এক হাতেই ল্যাপটপ চালাতে হবে
.
আপনাকে আমি কাজ করতে দেবো না,আমি অফিস সামলাবো
আহানা কিসব ভেবে আবারও করিডোরের দিকে যেতে নিতেই শান্ত আবারও ওর আঁচল ধরে ফেললো
আহানার চোখে মুখে, বুকের ভেতরটা আগুন জ্বলছে,প্রতিশোধের আগুন!
রতনকে সে একটা শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত তার শান্তি হবে না
শান্তর দিকেও তাকাচ্ছে না সে,চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা তাকাচ্ছে না দেখে শান্ত আঁচল হালকা টেনে বললো”যা করার আমি করবো!তুমি কিছু করবা না
বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার প্ল্যান যেই করে থাক না কেন তার শাস্তি সে পাবে,তুমি শুধু আমার পাশে থাকো,একা কিছু করতে যেও না আহানা
.
আহানা চুপ করে থেকে আবারও চেয়ার টেনে বসলো শান্তর কাছে,শান্তর অসুখে ভরা চেহারাটা দেখে আহানা সব ভুলে গিয়ে হাত এগিয়ে এনে শান্তর মাথায় হাত রাখলো
.
শান্ত!আমি একবার আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েছিলাম,সে কষ্টের ঘা এখনও শুকায়নি
তার মধ্যে আমি আমার আরেকজন প্রিয় মানুষকে হারানোর ঘা কি করে সহ্য করতে পারতাম?
এই ভয় ততদিন থাকবে যতদিন না শত্রুদের পতন হচ্ছে,আমার মা জানত না তার সামনে থাকা গোপনশত্রুদের কথা
কিন্তু আমি তো জানি,রতন,মজনু চাচা কিংবা সাইমন
আর তো কেউ নয়,তাহলে এদের কি করে ছাড় দেবো আমরা??
দেখলেন তো কত বড় একটা বিপদ হয়ে গেলো
মা কাল সারা রাত আপনাকে দেখেনি,রিপা কোনোরকম বুঝিয়েছে কিন্তু আজ কি হবে??আজ আপনার হাতে আর মাথায় ব্যান্ডেজ দেখলে মায়ের অবস্থা কেমন হতে পারে ভাবতে পারেন??
কি বলবেন তাকে?
আর আমার এটা ভেবে নিজেকে অসহ্য লাগছে কারণ
আজ আপনার এই এক্সিডেন্টটা যেই করিয়েছিল তার শত্রুতামি আমার সাথে কিন্তু বদলা নিয়েছে আপনার থেকে
ভবিষ্যতে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে,আমি তখন কি করবো??
.
আহানা তুমি এত কেন ভাবতেছো??পুলিশ আছে না?উনারা উনাদের কাজ করবে
.
আহানা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”এই ভরসা দিয়ে দিয়ে সেই আপনার ক্ষতি তো হয়েই গেলো,এরপরেও আপনি আমাকে এমন ভরসা দেন কি করে??
ভালো হতো আমি মরে যেতাম,প্রিয় জনের কষ্ট,মৃত্যু নিজের সচোক্ষে দেখার চেয়ে মরে যাওয়া মাচ বেটার
.
আহানা তুমি থামবা?নাকি ডান হাতের চড় খাবা
.
আহানা ব্রু কুঁচকে আঁচল ছাড়িয়ে বললো”চুপচাপ শুয়ে থাকেন,আমি যাই নাস্তার ব্যবস্থা করি,মা আর খালা,নিতু না খেয়ে আছে

আহানা সবাইকে নাস্তা এনে দিয়ে নিজে আর খেলো না,শান্তর কাছে এসে চুপ করে বসে থাকলো
শান্ত এতক্ষণ ঘুমিয়েই ছিলো,আহানার উপস্থিতি টের পেয়ে সে চোখ খুললো
আহানা ক্লান্ত হয়ে গেছে,,তাই সে শান্তর হাতটা ধরে পাশে মাথা রেখে বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে গেছে
শান্ত ওর ডান হাতটা আহানার হাত থেকে সরিয়ে সেটা দিয়ে আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো,বাম হাতে ব্যান্ডেজ করা তার,নাড়ানোও যাচ্ছে না
.
শান্ত ভেবেছিল রতন মনে হয় আহানার ক্ষতি করে ফেলেছে যার কারনে সে বারবার আহানার নাম ধরে ডেকেছিলো
.
মা আর খালা মিলে শান্তকে দেখতে এসে দেখলো আহানা দিব্যি ওর পাশে মাথা রেখে শুয়ে আছে,আর শান্ত আহানার মাথায় হাত বুলাচ্ছে
.
এই আহানা?তোর এক্সিডেন্ট হয়েছে নাকি শান্তর??এরকম শুয়ে আছিস কেন?উঠ!শান্তর তো নড়তে চড়তেও কষ্ট হচ্ছে নির্ঘাত!
উঠ বলছি!
.
আহানা চোখটা খুলতেই ওর সব হুস আসলো
তখনই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
আহানা মুখে হাত দিয়ে বললো”সরি!আসলে ক্লান্ত লাগছিলো,মাথা এলাতেই চোখটা লেগে এসেছে,আপনার বেশি কষ্ট লেগেছে?”
.
নাহ,এরকম বাচ্চা টাইপ মেয়ে সামলাতে আমার সমস্যা হয় না তেমন একটা
.
আহানা হেসে চলে গেলো,কিছুই বললো না
অন্য সময় হলে সে ঝগড়া করতো,তাই বিষয়টা শান্তর ভালো লাগলো না
আহানা ভেবে রেখেছে সে আর শান্তর সাথে ঝগড়া করবে না কখনও
.
বিকালের দিকে তারা সবাই বাসার দরজার সামনে এসে হাজির,শান্ত সেই হসপিটাল থেকে বাসায় আসা পর্যন্ত ভেবে যাচ্ছে মাকে কি করে সামলাবে
রিপা দরজা খুলতেই শান্ত সবার আগে দেখলো দূরে মা হুইল চেয়ারে বসে আছেন
মা শান্তকে দেখে প্রথমে মুচকি হাসলেও পরেই যখন তিনি দেখলেন শান্তর মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ করা
উনি চাকা ঘুরিয়ে শান্তর কাছে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে শান্তর শরীর ছুঁয়ে দেখলেন তারপর আহানার দিকে তাকালেন
আহানা মাথা নিচু করে আছে
.
শান্তি রহমান নিরবে কাঁদতে থাকলেন এছাড়া আর কিছু বলার শক্তি তার নেই,শান্ত মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো”বাবা ফিরে আসেনি,কিন্তু আমি ফিরে এসেছি মা,তোমার ছেলে তোমাকে রেখে কোথাও যাবে না
বাবা চলে যাওয়ার পর এই পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিয়েছি আর আজীবন দায়িত্বটা আমার কাঁধেই থাকবে,তোমার আর বাকিদের দোয়ায় আমি বেঁচে ফিরে এসেছি,এটা ছোটখাটো ব্যাপার!তুমি চিন্তা করে তোমার নিজের ক্ষতি করবা না,আমার অসুখ আমি সামলে নিতে পারি কিন্তু তোমার অসুস্থতায় আমি ঠিক থাকতে পারি না মা
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে